শুধু তোমায় ঘিরে পর্ব-০৩ | বাংলা ধারাবাহিক গল্প

0
1856

#শুধু_তোমায়_ঘিরে💞
#Writer_Nondini_Nila
#Part_3

ফোনটা এই পর্যন্ত দশবার বেজে গেছে আমি ইচ্ছে করেই রিসিভ করিনি চুপ করে বিছানায় শুয়ে আছি চোখ বন্ধ করে। ফোনের শব্দে বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করছি।
তখন হুড়মুড় করে উঠে বসলো ঐশী। চোখ কচলে রেগে আমার দিকে তাকালো।
ফোনের আলোতে ওর মুখ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
তুই কি আমাকে শান্তিতে ঘুম পারতে দিবিনা।
আমি আবার কি করলাম?
আবার জিজ্ঞেস করছিস কি করলাম ফোন রিসিভ করছিস না কেন ?
আমার কথা বলতে অসহ্য লাগে তাই।
তাহলে কেটে অফ করে দিচ্ছিস না কেন? এইটা শব্দটা আমার ঘুমের বারোটা বেজে গেল!
কাটলে বাসায় এসে উপস্থিত হবে সেটা কি ভালো হবে?
তাহলে সাউন্ড টা তো কমিয়ে রাখতে পারিস।
হ্যাঁ কিন্তু আমি সাউন্ড কমানো ভুলে গেছি।
ওফ তোর সাথে আসলেই কথায় পারা যায়না। তোকে কে বলেছিল ইন্ডোয়েট ফোন কিনে দিতে?
সেটা আমি কি জানি মাহের কে জিজ্ঞেস কর?

ঐশী আমার দিকে কিছুক্ষণ নাক মুখ কুঁচকে তাকিয়ে থেকে রেগে গটগট করে ওয়াশরুমে চলে গেল।
ফোন বাজা অফ হয়ে গেছে তখনই এসএমএসের শব্দ আসলো। আমি আর এসএমএস দেখলাম না সিওর এসএমএসে কোন হুমকি আছে যা দেখলে আমার ফোন রিসিভ করতে হবে। তার থেকে বরং ঘুমিয়ে পরি যা হওয়ার সকালে হবে।
ঐশী আসার আগেই আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম ভাঙলো লেট করে। উঠে দেখি দশটা বেজে গেছে। ঐশী রুম নেই আমি একাই পরে মরার মত ঘুমাচ্ছি।
উঠে আমি ফোন ধরে দেখে দেখি ঠিকই মাহের রাতে ফোন রিসিভ করার জন্য অনেক এস‌এসমেস দিয়েছে শেষে গুড নাইট লিখেছে আর বলেছে কাল রাতে নাকি জার্মানি গেয়েছে।
কালকে চলে গেছে মেসেজটা পড়ে আমি না চাইতে ও বুকের ভেতর ব্যথা অনুভব করলাম। লোকটা কালকে চলে গেল শুনেছিলাম আজকে যাবে।
তারপর নিজের আফসোস নেই কথাটা ভেবে নিজেই বোকা বনে গেলাম গিয়েছে ভালোই হয়েছে। দুইদিন অন্তত শান্তিতে থাকতে পারবো।

এতো লেট করে উঠেছি যে আজকে আর ভার্সিটিতে যেতে পারলাম না। বাসায় বসে রইলাম। আজকাল কেউ ডিস্টার্ব করার নেই সকালের নাস্তা করে আবার ধপ বিছানায় শুয়ে পরলাম।
ঘুম আসছেনা মাহের এর সাথে প্রথম দেখা হওয়া থেকে কথাগুলো মনে পরতে লাগলো। সেদিন ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে অভিশপ্ত দিন।

তিন মাস আগের কথা.
জীবনটা আমার ভালোই চলছিল নিজের খেয়াল-খুশি মতো চলেছিলাম। চাচার বাসায় কষ্টেই ছিলাম এখান থেকে বের হতে পেরে আমার অভাব ছিল কিন্তু নিজের ইচ্ছামত চলতে পারতাম। কিন্তু সমাজে একটা মেয়ে চলা খুবই কঠিন।কথা বিপদের সম্মুখীন হতে হয়েছে কিন্তু মহান আল্লাহ আমাকে সাহায্য করেছে।
ভার্সিটি আর একটা পার্টটাইম জব ছাড়া আমি আর কোন দিকে যাইতাম না। তো ঐশী আমাকে একদিন জোর করে একটা পার্কে নিয়ে যায় শুক্রবার করে। প্রথমে যাওয়ার জন্য রাজি না থাকলে সেখানে গিয়ে খুব ভালো লাগে। আমরা সেখানে সময় কাটাতে থাকি।
সেখানে কিছু বাচ্চারা থাকে তো বাচ্চাদের সাথে ছোটাছুটি করি ছোটাছুটি করে হাতে আমরা সবাই রেস্ট করি এমন সময় ঐশী বলে ওঠে আমাকে গান গাইতে।আমি কখনো গান শিখিনি কিন্তু মীরাক্কেলে আমার আবার গানের গলাটা একটু ভালো আর সেইটা একদিন ঐশীকে শুনিয়েছিলাম। তো করলো শুরু সবাই মিলে জোর আমি না করছি কে শুনে কার কথা শুনাতেই হবে সবাই মিলে জেঁকে ধরলো।
না পেরে রাজি হয়ে গেলাম।

~~~তোমার ইচ্ছে গুলো, ও ইচ্ছে গুলো
তোমার ইচ্ছে গুলো,ইচ্ছে হলে, আমায় দিতে পার , আমার ভালো লাগা ভালোবাসা তোমায় দেব আর ও।
তোমার ইচ্ছে গুলো, ও ইচ্ছে গুলো
তোমার ইচ্ছে গুলো,ইচ্ছে হলে, আমায় দিতে পার , আমার ভালো লাগা ভালোবাসা তোমায় দেব আর ও।
তুমি হাতটা শুধু ধরো আমি হব না আর কারো,
তোমার সপ্ন গুলো আমার চোখে হচ্ছে জরোসরো।
তোমার ইচ্ছে গুলো, ও ইচ্ছে গুলো
তোমার ইচ্ছে গুলো,ইচ্ছে হলে, আমায় দিতে পার , আমার ভালো লাগা ভালোবাসা তোমায় দেব আর ও।~~~

এদিকে মাহের ছদ্মবেশে ও আর ওর অ্যাসিস্ট্যান্ট কে নিয়ে পার্কে এসেছে। কারণ জানতে পেরেছে বিপক্ষে দল এই পার্কে একটা বোমা রেখেছে। তো তাই তাদেরকে রক্ষা করার জন্য আর বোমাটা খোঁজার জন্য ওর আশা। পুরো পার্ক তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে কিন্তু তেমন সন্দেহজনক কিছুই পায়নি।
তাই রেগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে সুপারি গাছে ডান হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রুস্তম।
“স্যার আমার বিশ্বাস ওরা আমাদের বোকা বানিয়েছে।
সেতো আমি বুঝতেই পেরেছি রুস্তম আর কেন এমনটা করেছে সেটাও আমার মাথায় খুব ভালোভাবে ঢুকেছে এখন।
কেন স্যার?
বাসায় কল লাগাও।
বাসায় কেন?
রেগে রুস্তম এর দিকে তাকাতেই রুস্তম আর জিজ্ঞেস করার সাহস পেল না। ঢোক গিলে তাড়াতাড়ি ফোন বের করে বাসার কল লাগিয়ে যা শুনতে পেল তাতেও স্তব্ধ হয়ে গেল।
স্যার বাসায় আক্রমণ হয়েছে।
এবার বুঝতে পেরেছ কেন এটা করেছে?
জি স্যার আপনাকে বাসা থেকে সরানোর জন্য।
তাহলে এখন কি হবে স্যার পেনড্রাইভটা কি আপনি বাসায় রেখে এসেছিলেন?
মাহেন বাঁকা হাসলো রুস্তমের কথায় তারপর নিজের প্যান্টের পকেট থেকে একটা ছোট্ট কিছু একটা বের করে রুস্তমকে দেখালো।
আপনার মাথায় অনেক বেশি বুদ্ধি।
তা তো থাকতেই হবে। যাই হোক আমি হলাম মাফিয়া বস আমার সাথে টক্কর দিয়ে এত সহজে তো সবাই পার পেয়ে যাবে না।এই পেনড্রাইভটা নিতে চাইলে নিহালকে আমাকে 500 ডলার দিতে হবে না হলে সোজা পুলিশের কাছে।
বলেই মাহের শয়তানী হাসি দিল।

কথাগুলো বলছিল তখন মাহের এর কানে আসে একটা কন্ঠ। যে তার অপূর্ব কন্ঠে গান গাইছে। কন্ঠটা কানে আসতেই মাহের এর বুকের ভেতর হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। গানের অপূর্ব সুরে মাতাল ও বিভোর হয়ে যায়। এক পা দু’পা করে গানের মালিককে খুজতে লাগে।
কি অসাধারণ কন্ঠ মনটা ভড়ে আসে।মাহের সেই সুরে মরিয়া হয়ে ওঠে।
ও ওই কন্ঠের নারীর প্রেমে পরে যায় তার এক ঝলক মায়াবী মুখ দেখে।
ও থমকে যায় মুগ্ধ হয়ে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে ছোঁয়া চোখ বন্ধ করে ঠোট নাড়িয়ে গানের সুর তুলছে আর দূরে থেকে একজন তার প্রতি আকর্ষিত হচ্ছে।
খোলা চুল, কপালে ছোট টিপ ঠোঁটে লিপস্টিক বিহীন গোলাপি ঠোঁট।গায়ের রং উজ্জল শ্যামলা ফর্সা। মেয়েটি গান গাওয়া শেষ করে চোখ মেলে তাকালো সাথে সাথে মাহের নিজের বুকে হাত দিলো। কি চাহনী যা মাহের কে খুন করতে সক্ষম। কাজল বিহীন টানা চোখ ঘন কালো পাপড়ি চোখের মাহের সেকেন্ডের মাঝে চোখের প্রেমে পরে যায়।
মেয়েটি বাচ্চাদের প্রশংসা শুনে হাসছে তারপর সবার সাথে খিলখিলিয়ে হেসে কথা বলছে কি বলছে তা মাহের শুনতে পাচ্ছে না আর না শুনতে চাইছে ও তো ওর মায়াবতী দিকে মুগ্ধ তাকিয়ে আছে।কি হাসি যা মাহেরকে প্রেমে ফেলে দেয় হা করে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
পাশে দাঁড়িয়ে হতদম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে মাহের এর দিকে তাকিয়ে আছে রুস্তম অবিশ্বাস্য চোখে।
স্যার
মাহের শুনছে না হা করে তাকিয়ে আছে সামনের মেয়েটার দিকে অপলক।রুস্তম মাহেরকে ধাক্কা দিতেই সম্মতি পায়।
বিরক্ত হয়ে তাকায় রুস্তম এর দিকে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে