#শুধু_তোমায়_ঘিরে💞
#writer_Nondini_Nila
#Part_1
রোদে তীব্র আলোয় মধ্যে রাস্তা বরাবর দাঁড়িয়ে আছে। রোদের তাপমাত্রা আজকে প্রচন্ড বেশি। তখন কোথা থেকে আমার উপর কেউ ছাতা ধরলো। আমি বিরক্ত হয়ে মাথা উচু করে তার দিকে তাকালাম। সে আমি তাকাতেই ৩২ টা দাঁত বের করে হেসে বললো,
“আসসালামু আলাইকুম ম্যাডাম, ভাল আছেন?
ছেলেটার কথা শুনে আমার রাগের মাত্রা বেড়ে গেল।একে দেখলেই আমার বিরক্তে নাক মুখ কুঁচকে আসে মন চাই থাপড়িয়ে এর গাল লাল করে দেয়।
কিন্তু আমি নিরুপায় এটা আমি করতেই পারব না। তবুও সালামের জবাব দিলাম, আর দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
“আপনি এখানে কি করছেন আবার আমাকে ফলো করা শুরু করছেন?
ছেলেটা সামান্য হেসে বলল,
“সেতো আমি সবসময়ই করি। এটাই তো আমার কাজ।
“তোমাকে আমার মন চায় কি করতে জানো?
“জানি তো ম্যাম আপনার আমাকে খুন করে ফেলতে মন চায়।
“তাও তোমার ভয় করে না।
“আপনি তো সেটা করতেই পারবেন না। আপনার মতো নরম মনের মেয়ে কাউকে খুন করতে পারে না। শুধু ভাবতে পারে আর ভাবনা দিয়ে তো কিছু হয় না। কিন্তু স্যারের কথা না শুনলে সত্যি খুব করে ফেলবে।
ভয়ার্ত কন্ঠে বলল।
আমি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছি বিরক্ত হয়ে তারপর বললাম,
“যাও এখানে থেকে।
“ছাতাটা ধরেন।
‘ছাতা কেন ধরবো।
ভ্রু কুটি করে বললাম।
“বাপে রে কি রোদ দেখেন না। আপনি তো ঘেমে গেছেন।তা যদি আপনাকে ছাতা না দেই স্যার জানলে তো আমাকে খন্ড করে ফেলে।
“এত ভয় পেয়ে তুমি তোমার স্যারের সাথে থাকো কিভাবে? ওমন গুন্ডার সাথে থাকো লজ্জা করে না।
সামনে ছেলেটা বলল,
“কি যে বলেন ম্যাডাম লজ্জা কেন করবে? স্যার গুন্ডামি করে জানি কিন্তু স্যারের মনটা খুব ভালো আর স্যার সব ভাল কাজই করে। স্যারের জন্য আজ আমি বেঁচে আছি স্যার আমার পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছে স্যারের মত মানুষ হয় না। স্যার.
“আচ্ছা থামো তোমার স্যারের গুন গান গাইতে বলি নাই আমি।
রেগে বললাম কিছু একটা বলা যায় না একদম স্যারের গুনো গান গাইতে শুরু করে দেয় যত্তসব।
“ম্যাডাম ছাতা টা ধরেন।
রেগে না করতে যাব তখন দেখি গাড়ি চলে এসেছে। আমি ছাতার আড়াল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম।
ছেলেটার দৌড়ে এসে বলল,
“ম্যাডাম ছাতা নিয়ে যান। আজকে প্রচুর রোদ।
“দরকার নাই তুমি যাও।
“দরকার হতো না যদি আপনি স্যারের দেওয়া গাড়িটা ইউজ করতেন কিন্তু আপনিতো স্যারের জিনিস ইউজ করেন না কেন যে স্যারকে সহ্য করতে পারেন না বুঝি না।
আমি তার কথার প্রতি উত্তর করলাম। গাড়ির ড্রাইভারকে বললাম,” মামা চলেন।
এতক্ষণ কার সাথে কথা বলছিলাম ওর নাম হচ্ছে রুস্তম। যে একজন আমার ফলো কারী অ্যাসিস্ট্যান্ট। সব সময় আমাকে ফলো করো আমি কোথায় যাই কি করি না করি।প্রথমে ব্যাপারটা আমি জানতাম না আস্তে আস্তে জানতে পেরেছি আর জেনেও বেশকিছু লাভ হয়নি আমি তাকে আমার পেছন থেকে সরাতে পারি নাই কারণ তার উপরে যিনি আছেন তিনি যাকে দেখলে আমার কাপাকাপি উঠে যায়। উঠবে না কেন সে হচ্ছে একজন গুন্ডা , সন্ত্রাসী , মাফিয়া বস যাকে দেখে সবাই কাপে। তার নাম শুনলেও সবাই ভয় পেয়ে যায়। আর তার খুবলে কিনা না পড়লাম আমি।
আমি ছোঁয়া। পৃথিবীতে আপন বলতে আমি নিজেই।ছোট থাকতেই বাবা মা মারা গেছে বড় হয়েছি চাচার বাসা লাথি খেয়ে।শেষে সেখানে থেকে বিতারিত হয়ে বর্তমানে দুইবছর যাবত একটা বাসা ভাড়া করে ঢাকা শহরে আছি।আমার সাথে আছে একজন সহপাঠী যার জন্য থাকতে পারছি ফ্রেন্ড কম বোন বেশি।আমরা দুই ভার্সিটিতে পড়ি দুজনে ও পরে প্রাইভেট আমি ন্যাশনাল।
ওরা অনেক ধনী পরিবারের। কিন্তু ওর মন খুব ভালো।
আমি অনার্স প্রথম বর্ষে লেখাপড়া করি।
ভার্সিটিতে এসে ভাড়া মিটিয়ে ভেতরে চলে গেলাম। ভার্সিটিতে আমার তেমন ফ্রেন্ড নাই একাই ক্লাস শেষ করলাম তারপর গেটের বাইরে এসে গাড়ির জন্য ওয়েট করতে লাগলাম।
তখনই একটা গাড়ী এসে থামলো আমার সামনে গাড়িটা দেখে আমার হাত পা কাপাকাপি শুরু করে দিলো। এই গাড়িটা দেখলে আমার এই অবস্থা হয়।এখন গাড়ির ভেতর থেকে যে বের হবে তাকে দেখে যে আমার কি হবে সেটা শুধু আমি জানি।ঠিক তাই হলো এখন গাড়ির দরজা খুলে খুব নায়কি ইস্টাইলে বেরিয়ে এলো মাহের। মাহেরের এর দিকে তাকিয়ে আমার চোখদুটো স্থির হয়ে গেল।
সাদা শার্ট পড়ে আছে বুক পর্যন্ত খোলা তাই সাদা বুক দেখা যাচ্ছে। চোখে সানগ্লাস পড়েছিল হাতে ব্লেজার যেটা গাড়ির ভেতরে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে সানগ্লাস খুলে একটা বাঁকা হাসি দিল ঠোঁট কামড়ে। এই টুকুই আমার জন্য যথেষ্ট। একটা বড়সড় ক্রাশ খেলাম নিজের শত্রুর উপর। মাহের অত্যন্ত সুদর্শন একজন পুরুষ। মাহের হাসলে গালে টোল পড়ে। ঠোঁটদুটো রক্তের মত টকটকে লাল। কপালে গুছ ফালিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে যখন হাসে এত সুন্দর লাগে কি বলব আমি নিজে ফিদা হয়ে যায়।কিন্তু এই লোকটা আমার জীবনে অভিশাপ। আই জাস্ট হেট ইউ।
আমি দাঁড়িয়ে থেকেই থরথর করে কাঁপছি। মাহের নিজের বাম হাত উঁচু করে ঘড়িতে সময় দেখে নিল তারপর সচা একদম আমার কাছে এসে দাঁড়ালো কিন্তু স্পর্শ করল না শরীরের কোথাও আমার মাহের আমার থেকে যথেষ্ট লম্বা তাই ঘাড় নিচু করে আমার একদম মুখের কাছে এসে বলল,
“সুইটহার্ট আমার জন্য অপেক্ষা করছিলে বুঝি।
এত কাছে এসে কথা বলাতে মাহিরে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস সব আমার মুখে বাড়ি খেলো যেন শরীর তো আগে থেকেই থরথর করে কাঁপছিল এখন হার্টবিট বেড়ে গেল। ওরনার কোনা আমি শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে।
হঠাৎ মনে হল আমার আশেপাশে কোথাও মাহের নেই। আমি ফট করে চোখ মেলে তাকালাম,
ঠিকই মাহের আমার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে ফোনে কথা বলছে।আমি ঢোক গিলে আশেপাশে তাকালাম ঠিকই আমার আশেপাশে ছেলে মেয়ে যারা আছে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে মাহের এর দিকে।
পাশে দুইটা মেয়ে কথা বলছিল,
দোস্ত এটা মাহের চৌধুরী না মাফিয়া বস।
আরেকজন বলল হ্যাঁ দোস্ত এই তো সেই কি হ্যান্ডসাম দেখছিস।
হ্যা রে দোস্ত কি সুন্দর কত হ্যান্ডসাম উফ। এর সাথে যদি প্রেম করতে পারতাম।
কি বলছিস এর সাথে প্রেম করবি গুন্ডা তোকেনা শুট করে দেবে।
ধুর প্রেমিকাকে কেউ শুট করে না কি। আমাকে শুট করবে না কিন্তু প্রেম করবো কি করে?
আমি মেয়ে দুটোর কথা কান খাড়া করে শুনছিলাম।তখনই মাহের আমাকে এসে বাম হাত শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল।
আমি চমকে ওঠে তাকিয়ে দেখি মাহের। মেয়ে দুটো বড় বড় চোখ করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।আশেপাশের সবাই সেদিকে মাহেরের কোন তোয়াক্কা নাই। ও গাড়ি দরজা খুলে দিয়ে আমাকে ভেতরে বসতে বলে আমি কাচুমাচু হয়ে ভিতরে বসে পড়ি।মাহের ফোনে কথা বলতে বলতে অন্য পাশে গিয়ে গিয়ে দরজা খুলে ভেতরে আসে।
মাহের গাড়ি স্টার দিলো।
আমি জড়োসড়ো হয়ে বসে আছি ছাদের এক কোনায়। মাহের ড্রাইভিং করছে আর এয়ার ফোনে ফোনে কথা বলছে।
আমি একবার মাহের এর দিকে তাকিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকি। জানালা দিয়ে সুড়সুড় বাতাস এসে আমাকে ছুয়ে যাচ্ছে। আমি চোখ বন্ধ করে বাতাস অনুভব করছি।
তখনই আচমকা গাড়ি থেমে যায়।আচমকা গাড়ি থেমে যাওয়ায় বাতাস থেমে যায় আমি চোখ খুলে ফেলি।মাহের এর দিকে তাকানোর আগেই মাহের আমার হাতের বাহু ধরে হেঁচকা টানে একদম কাছে টেনে নেয়। আমি আচমকা টানে ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি আর দুহাতে মাহেরের বুকের কাছে শার্ট খামচে ধরি।
“চোখ খোল সুইটহার্ট।
মাহের এর জরানো কন্ঠে আমি কাঁপতে কাঁপতে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালাম।
ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে মাহের এ দৃষ্টি খুব তীব্র ভাবে আঘাত করে আমাকে।
চোখ সরাতে চেয়েও সরাতে পারছিনা।
#চলবে