শুধু তুই Part-20 ( Last Part)

1
3658

#শুধু তুই#
#Part_20(Last)
Writer_Raidah Islam Nova

আমি অনেকখন যাবত ফারিশের জন্য অপেক্ষা করছি।কিন্তু ফারিশের আসার নাম ও নেই।তখন বাবা চলে যাওয়ার পর আমার সাথে কথা বলে সেখান থেকে কোথায় চলে গেল কে জানে?এখন আমি দাঁড়িয়ে আছি একটা ব্রিজে।৷ ব্রীজের পাশে একটা সোলার প্যানেলের বড় আলোক বাতি আছে।তাই ভয় ততটা করছে না। রাত প্রায় ৮/৯।চারিদিকে শুনশান। গ্রামে এতেই অনেক রাত।আমার সাথে আমার ছোট ভাই আছে বলে রক্ষা।নয়তো কবেই স্ট্রক করে মরে পরে থাকতাম।ফারিশ টেক্সট করে এখানে কেন আসতে বলেছে সেটাই বুঝতে পারছি না।পেছন থেকে ফারিশ বললো–

ফারিশঃ ও তোমরা এসে পরেছো?
আমিঃ রাতের বেলা এখানে ডাকার মানটা কি?
ফারিশঃ পেত্নীর সাথে তো বাঁশ বাগানে প্রেম করতে ভালো হয়।তাই এখানে ডেকেছি।(এক চোখ মেরে)
আমিঃ এই আপনি কাকে পেত্নী বললেন? আর বাঁশ বাগান কোথায় পেলেন।?
ফারিশঃ রাগ করছো কেন? আমিতো মজা করলাম।
আমিঃ আমি বাড়ি যাবো।
ফারিশঃ আমিও যাবো।তবে একটা খেলা শেষ করতে এখানে ডেকেছি তোমাকে।হয় সে জিতবে নয় আমি।
আমিঃ আমি আপনার কথার মাথা- মন্ডু কিছু বুঝছি না।বুঝিয়ে বলবেন তো?
ফারিশঃ আমরা এখানে একজনের জন্য অপেক্ষা করছি।
আমিঃ কে আসবে?
ফারিশঃ আসলেই দেখতে পারবে।

আমি ব্রিজের সাথে হেলান দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম।ফারিশ রিজভীর সাথে শালা,শালা বলে দুষ্টুমী করছে।অনেকখন হয়ে গেলো কিন্তু কারো আসার নাম নেই। আমার বিরক্তি লাগছে।হঠাৎ একটা কালো গাড়ি দ্রুত এসে আমাদের সামনে থামলো।গাড়ি থেকে একজন খুব তারাহুরো করে বের হয়ে ফারিশের মাথায় রিভেলবার ঠেকালো।আমার সামনে উল্টো করে ঘুরে থাকার কারণে তার মুখটা দেখতে পাচ্ছি না।রিজভী ও আমি রিতীমতো কাঁপছি ভয়ে।কিন্তু ফারিশের ঠোঁটে হাসির রেখা দেখা যাচ্ছে।

ফারিশঃ ওয়ালকাম,মাই শ্বশুর বাড়ি এলাকা।
আমিঃ আ্যাঁ,এটা আবার কোন ধরনের ইংলিশ? ?
(বির বির করে)

আমি পেছনে দাঁড়িয়ে বুঝতে চায়ছি আসলে ব্যাক্তিটা ছেলে নাকি মেয়ে।পরনে কালো প্যান্ট,বড় কালো ব্লেজার,মাথায় কালো হ্যাট। আমি ভয়ে ভয়ে একটু সামনে এগুতেই ছোট একটা ইটের কোণার সাথে বেজে তার ওপর পরে গেলাম।অসাবধানতার কারণে সেও আমার সাথে পরে গেল।তার রিভেলভার ছিটকে কিছুটা দূরে পরে গেল।ফারিশ তারাতাড়ি করে আমাকে তুললো।কালো ব্লেজারের ব্যাক্তিটা উঠে দাঁড়াতেই আমার চোখ দুটো বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম।

আমিঃ রিটা তুমি???
রিটাঃ হ্যাঁ আমি।
আমিঃ তুমি এখানে কি করছে?
ফারিশঃ কি যে বল না টুনটুনি পাখি? ইনি তো সব নাটের গুরু।
আমিঃ মানে?
ফারিশঃ মানেটা খুব সিম্পল। আমার কাছে থেকে তোমাকে সরানোর জন্য সব প্ল্যান করেছিলো রিটা।কিন্তু দেখো তা আর হলো না।তোমার বাবা- চাচার কাছে ছবি,ভিডিও পাঠানো।ফাদারের কানে বিষ ঢালা,মেহেদীকে ভয় দেখানো,আরোশকে তোমার পেছনে লেলিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে সব কিছুর পেছনে ওর হাত।এম আই রাইট মিস রিটা চৌধুরী?

রিটাঃ হ্যাঁ,সবকিছু আমি করেছি।কারণ আমি ফারিশকে ভালবাসি।যে কোন কিছুর বিনিময়ে আমার ফারিশকে চাই। কিন্তু ও তো তোকে ভালবাসে আইভী।তাই আমি তোকে ওর জীবন থেকে সরানোর জন্য আমি এত কিছু করছি।(রেগে)
আমিঃ তুমি কি করে জানলে আমরা এখানে?
ফারিশঃ কি যে বল না টুনটুনি পাখি? তিনি আমাদের সকল কথা জানে।আমরা কোথায় যাই, কি করি এভরিথিং জানেন তিনি।তাইনা রিটা আফা??
রিটাঃ ??
ফারিশঃ এখানে আমিই আসতে বলেছি ওকে।সব কিছু শেষ করা দরকার।যে গেম তুমি শুরু করেছে সেটা আমি শেষ করি।তোমাকে আমি SMS দিয়েছিলাম সেটা দেখেছো বুঝি।এ মা আমাদের বিয়ে তো আরো কয়েক দিন দেরী আছে।এখনি চলে এসেছো কেন?
আমিঃ আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। ?
ফারিশঃ রিটা আফা কে আমি একটা ছোট মেসেজ দিয়েছি যে আগামী শুক্রবার আমাদের বিয়ে।আর দেখো না আফায় আজকে বিয়ে খেতে চলে এসেছে? তা গিফট আনেন নি আফা?
রিটাঃ কে আফা? তোমাকে আমি—-
ফারিশঃ আরে রাগ করেন কেন আফা।

ফারিশ রিটার সাথে দুষ্টমী শুরু করছে।আর রিটা রাগে ফুঁসছে। আমার ফারিশের কথা শুনে ভীষণ হাসি পাচ্ছে। হঠাৎ রিটা নিচের থেকে রিভালভার তুলে ফারিশের দিকে তাক করলো।ফারিশের এক হাত দূরে রিটা দাঁড়িয়ে আছে। আর ফারিশ শান্ত ভংগী তে দুই হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে হাই তুলছে।আমি ফারিশের কাজ দেখে অবাক হচ্ছি।
রিটাঃ বিদায় ফারিশ।আমি যখন তোমাকে পাবো না তাহলে অন্য কাউকেও পেতে দিবো না।ভেবেছিলাম তোমাকে ভালবেসে জোর করে নিয়ে আগলে রাখবো।তা হলো কোথায়? তুমি তো আইভীর জন্য পাগল।আমি জানি আমি তোমাকে আর কখনই পাবো না।তাহলে তোমাকে বাচিয়ে রেখে কি লাভ আমার?যেটা আমার না হয় সেটা আমি অন্যকেও পেতে দেই না।তুমি যখন আমার হলে না তাহলে আইভীর কি করে হতে দিতে পারি? ফারিশ থাকবে না তো কোন ভেজাল ও থাকবে না।বা বাই মাই ডিয়ার ফারিশ।

রিটার কথা শুনে আমার চোখ মুখে আতংক দেখা দিলো।রিজভী আমার পেছনে লুকিয়ে আছে। ফারিশের চোখে কোন ভয় নেই। আমি ভাবলাম রিটা বোধ হয় মজা করছে।কিন্তু না আমার ধারণা ভুল করে দিয়ে রিটা ফারিশের দিকে পরপর দুটো গুলি করলো।

আমিঃ ফা–রি–শ—–

???

৬ বছর পর…….

কিচেনে কাজ করছে একটা মেয়ে।আর কেউ নয় আমাদের আইভী। সে এখন ৬ বছর আগের সব কিছু ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করেছে।ছোট একটা ফ্ল্যাটে ছোট একটা সংসার।

আমি কিচেন থেকে গিয়ে রুমে ঢুকলাম।রুমের খাটে আমার কলিজার টুকরো ৪ বছরের ছেলে আইজান ঘুমিয়ে আছে। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে ডাকতে লাগলাম।

আমিঃ আইজান বাবা উঠো।অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। মাদরাসায় যেতে হবে তো।উঠো, নয়তো তোমার বাবা তোমাকে রেখে চলে যাবে তো।
আইজানঃ আরেকটু ঘুমাই আম্মু।
আমিঃ না পাখি দেরী হয়ে যাবো।তোমার আব্বুর রেডী হয়ে খেয়ে চলে যাবে।

আমার স্বামী জায়ান খান ও ছেলে আইজান খানকে নিয়ে আমার ছোট সংসার।আমার স্বামী ছোট একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করে।সেলারি যা পায় তা দিয়ে আমাদের দিন আল্লাহর রহমতে ভালোই চলছে।জায়ান খুব নামাজী ও পরহেজগার মানুষ।পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ,রোজায় সে বেশ করাকরি।সবার আগে নামাজ তারপর বাকি কিছু।সবসময় পাঞ্জাবী পরে থাকে।মুখে চাপ দাড়ি। আইজানকে এই বছর মাদরাসায় ভর্তি করেছি।আমাদের দুজনের ইচ্ছা ছেলেকে মাওলানা বানাবো।জায়ান খানের ভাই জায়েদ খানের সাথে এশার বিয়ে হয়েছে। ওরা ভালোই আছে।ওদের সারে ৩ বছরের একটা মেয়ে আছে।দেখতে বেশ মিষ্টি। আমাদের দুই বোনের বিয়ে এক দিনে ও এক সাথে হয়েছে।অনেক বড় করে আমার বাবা- চাচা অনুষ্ঠান করেছে।আমরা দুই বোন সবার দোয়ায় সুখে আছি।

ওয়াসরুমের থেকে এখনো পানির শব্দ আসছে।এই মানুষ টাকে নিয়ে আমি আছি আরেক বিপদে।গোসলে ঢুকলে তার বের হতে মন চায় না।ভাবছেন কার কথা বলছি? আমার পরাণের সোয়ামীর কথা বলছি গো,
পরাণের সোয়ামী?।তার ওয়াস রুমে ঢুকলে আর বের হতে মন চায় না।আল্লাহ জানে কি করে এত সময়?আমি জানতাম মেয়েদের বেশি সময় লাগে ওয়াসরুমে।এখন আমার স্বামীকে দেখে আমার ধারণা পাল্টে গেছে। আমি দরজা ধাক্কাতে লাগলাম।

আমিঃ আইজানের আব্বু তোমার হলো? কত সময় লাগে তোমার? সবসময় নাকি আমি দেরী করি। ছেলেকে মাদ্রাসায় পৌঁছে দিবে কখন? কি গো শুনছো? এই বাবুর আব্বু?ধূর,ছাই ভালো লাগে না।

জায়ান কিছু সময় পর ওয়াসরুম থেকে বের হলো।খাটের দিকে চোখ পরতেই দেখলো পাঞ্জাবি, ঘড়ি,আতর যাবতীয় জিনিস ভাজ করে রাখা।প্রতিদিনের মতো আজও কোন কিছু ব্যাতিক্রম নেই। মুচকি হেসে তৈরি হয়ে নিলো।আমি রুমে ঢুকে দেখি তিনি রেডী হয়ে গেছেন।

আমিঃ কালকের কথা মনে আছে?
জায়ানঃ হুম মনে আছে।
আমিঃ কালকে কি?
জায়ানঃ কাল একটা বিশেষ দিন।
আমিঃ কি বিশেষ দিন?
জায়ানঃ কাল আমাদের আদরের ছেলে আইজান খানের ৪ বছর পূর্ণ হবে।
আমিঃ তোমার তাহলে মনে আছে।আমি ভেবেছি তুমি ভূলে গেছো।সব ব্যবস্থা করেছো?
জায়ান আমাকে পেছন থেকে এক হাত কোমরে রেখে হেচকা টান মেরে কাছে টেনে নিলো।আমার পিঠ তার বুকের সাথে ঠেকে আছে।আমার কাঁধে তার থুঁতনি রেখে বললো
আমিঃ করছো টা কি?ছেলে চলে আসবে তো।
জায়ানঃ কেউ আসবে না।তুমি কি সকালে কোরআন পরেছো?
আমিঃ আসলে হয়েছে কি বাবুর আব্বু?
জায়ানঃ কি হয়েছে??তুমি পরো নি তাই না।
আমিঃ হুম।
জায়ানঃসকালে অন্ততপক্ষে সূরা ইয়াসিনটা পড়া উচিত ছিল তোমার।তুমি জানো না এই সূরার ফযিলত?
আমিঃ হুম ?।
জায়ানঃ তাহলে পড়ো নি কেন?
আমিঃ আমার অনেক ঘুম পেয়েছিলো।প্রত্যেক দিন তো পড়ি।শুধু আজকে পড়ি নি।
জায়ানঃ এটা তুমি ঠিক করোনি।আজকে পড়ে নিবে।
আমিঃ আচ্ছা। খাবে চলো?
জায়ানঃ হুম চলো।

???

এশা সারা বাড়ি দৌড়াচ্ছে।ভাবছেন পাগল হয়ে গেছে নাকি? না,ওর মেয়ে খাবার খাবে না বলে এদিক- সেদিক ছুটছে।আর এশা খাবার হাতে ওকে ধরার চেষ্টা করছে। এশার মেয়ের নাম নিশা।খুব দুষ্টুমী করে।

এশাঃ নিশা মা -মনি একটু খেয়ে নেও। এমন করতে হয় না।এইটুকু খেয়ে নাও।

তখন খাবার টেবিলে এলো জায়েদ।অফিসের জন্য পুরো তৈরি হয়ে এসেছে।দুই ভাই একি কোম্পানিতে কাজ করে।

জায়েদঃ আমার মা-মনির কি হয়েছে?
নিশাঃ আমি তাবো (খাবো)না বাবাই।আমুকে মানা করো।আমি আল তাবো না তাবো না।
এশাঃ নেও ধরো তুমি খাওয়াও তোমার মেয়েকে।আমি আর পারবো না।এক ঘন্টা ধরে ওর পেছনে ঘুরে এতটুকু ও খাওয়াতে পারি নি।
জায়েদঃ আমার অফিসে যেতে হবে তো।
এশাঃ তোমার মেয়ের থেকে তোমার অফিস বড় হয়ে গেল।তুমি এখন নিশাকে না খাইয়ে যেতে পারবে না।
জায়েদঃ আচ্ছা দেও।

জায়েদ নিশাকে কোলে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে।নিশাও চুপটি করে খাচ্ছে। একদম ভদ্র মেয়ে হয়ে।এশা হা করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। এক ঘন্টায় এশা পারলো না।আর জায়েদ দশ মিনিটে খাওয়া শেষ করে দিলো।

এশাঃ ফাজিল মেয়ে। আমি এক ঘন্টা তোর পেছনে ঘুরলাম আর তুই খেলি না।আর বাবার হাতে কয়েক মিনিটে ফিনিশ করে দিলি।আমাকে কি হয়রান টাই না করালি।এখন বাবার ভক্ত হয়ে গেছো তাই কোনো সমস্যা হলো না খেতে।
জায়েদঃ এই না হলে আমার মেয়ে।
এশাঃ যেমন বাবা তেমন মেয়ে।

এশা মুখ ঝামটা মেরে কিচেনে চলে গেলো।নিশা দুষ্টমী হাসি দিয়ে খেলতে চলে গেলো।জায়েদ চুপচাপ খাবার খেয়ে বের হয় গেলো বাড়ি থেকে।

???

অফিস থেকে ফিরছে জায়েদ ও জায়ান।রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছে দুই ভাই। রিটার বান্ধবী পরশী গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছে।ওর বিয়ে হয়ে গেছে। সাথে ছোট একটা বাচ্চা।জায়েদ ও জায়ান কে দেখে পরশি শকড হয়ে গেল।দুজনের পরনে পাঞ্জাবী,মাথায় টুপি,মুখে দাড়ি।এ দুজনকে তো সে চিনে। গত ৬ বছর ওদের সাথে দেখা হয়নি।সামনে এগিয়ে এলো পরশি।

পরশিঃ ফারিশ,জন কেমন আছেন আপনারা?
জায়ানঃ সরি,আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।
জায়েদঃ আমাদের নাম ফারিশ কিংবা জন নয়।
পরশিঃ আরে আমাকে চিনতে পারছেন না।আমি পরশি।রিটার বান্ধবী।
জায়ানঃ দেখুন আমার নাম জায়ান খান আর ও আমার ভাই জায়েদ খান।
জায়েদঃ ভাই চল ঐ যে রিক্সা পেয়ে গেছি।

জায়ান ও জায়েদ রিক্সায় উঠে গেলো।পরশি হা করে ওদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। না,ওর তো ভুল হওয়ার কথা নয়।এটা ফারিশ ও জন।ওদের এতো পরিবর্তন।দুজন মোসলমান হয়ে গেছে। কিভাবে কি? কিছু বুঝছে না।

রিকশায় চরে জায়েদ ও জায়ান রহস্যময় হাসি দিলো।
জায়ানঃ ফারিশ মরে গেছে ৬ বছর আগে।এখন যে বেঁচে আছে সে জায়ান খান।
জায়েদঃ প্রত্যেক মুসলমান একে অপরের ভাই ভাই।
জায়ানঃ তাহলে তো আমি মিথ্যা বলিনি।আমরাও ভাই।মায়ের পেটের আপন ভাই না হই মুসলিম হিসেবে তো আমরা ভাই।

জায়ান ও জায়েদ এক দালানেই থাকে।আইভী ওর ছেলেকে পড়াচ্ছে।বিকেল গড়িয়ে গেছে।জায়ানকে চিনতে পেরেছেন? হ্যাঁ,জায়ানই আমাদের ফারিশ।আর জায়েদ খান –জন স্মিথ। মুসলিম হয়ে দুজনি নাম পাল্টে ফেলেছে।ওরা এখন পাকা মুসোলমান।মুসলিম হয়ে নিজেকে ধন্য মনে করে।

৬ বছর আগে রিটা যখন গুলি করেছিলো তখন গুলিটা ফারিশের গায়ে লাগে নি।পেছন থেকে নাহান এসে ফারিশকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়।যাতে গুলিটা মিস হয়ে যায়।রিটা যখন রেগে পার্টি থেকে রিভেলবার নিয়ে বের হয়েছিল তখন ওকে আর কেউ না দেখলেও নাহান দেখে নিয়েছিলো।নাহান রিভেলবার দেখে বুঝতে পেরেছে ওর বোন কোন অঘটন ঘটাবে। এভাবেই তো ওর বোনের ব্যাপারে সব জানা আছে তার।তাই গাড়ি নিয়ে ওর পেছন পেছন চলে আসে আইভীদের গ্রামে।কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে কি হচ্ছে তা বোঝার চেষ্টা করতে থাকে।যখন দেখে রিটা ফারিশের দিকে রিভেলবার তাক করেছে অবস্থা বেগতিক।তড়িৎ বেগে ছুটে এসে ফারিশকে ধাক্কা মারে।যার কারণে বেঁচে যায় ফারিশ।কিন্তু নাহানের হাতে চোট পায়।ফিরতি রিটা গুলি করার আগে ফারিশ ওর হাত থেকে রিভেলবার কেড়ে নেয়।রিটা এখন লন্ডন থাকে।

নাহান নিজেদের বিজনেস দেখে।পাশাপাশি ভার্সিটি।ওর এবং তৃণার এক ছেলে এক মেয়ে।মেহেদী ও রিনির বিয়ে হয়ে গেছে ফারিশের বিয়ের কয়েক মাস পর।ওদের এক ছেলে আছে।নাম রাহাদীন।

???

পরের দিন…..

আইভী,জায়ান,এশা,জায়েদ,নিশা,আইজান ওরা ছয়জন আজ এতিমখানায় এসেছে।আজ আইজানের জন্মদিন।ওরা জন্মদিন পালন না করে সারাদিন এতিমখানার বাচ্চাদের সাথে কাটাবে।সারাবছর জায়ান সেলারির থেকে কিছু টাকা আলাদা করে রাখে ছেলের জন্মদিনের জন্য। তবে সে টাকা দিয়ে ছেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠান না করে এতিমখানা ও রাস্তার বাচ্চাদের দুপুরে খাওয়ার ব্যবস্থা করে।ওর এই কাজ আইভী, এশা,জায়েদ সবাই পছন্দ করে। কিছু সময় পর মেহেদী,রিনি ও তাদের ছেলে রাহাদিন এলো।
নিশা,আইজান ও রাহাদিন বাচ্চাদের সাথে খেলছে।এশা,রিনি ও আইভি বসে গল্প করছে।জায়ান, জায়েদ, মেহেদী রান্না দিকে তদারকি করছে।সারাটাদিন সেখানে কাটিয়ে সন্ধ্যায় যার যার বাসায় চলে গেল।

রাতে এশা সোফায় মুখ ভার করে বসে আছে ।নিশা ঘুমিয়ে গেছে।এশা আজ ওর বাবার বাড়ি যেতে চেয়েছিলো।কিন্তু জায়েদ মানা করেছে।ল্যাপটপে কাজ শেষ করে এশার সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো জায়েদ।এশার এক হাত ওর দুই হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো।

জায়েদঃ মন খারাপ হয়েছে এশু মনি।
এশাঃ একদম আমার সাথে কথা বলবে না।
জায়েদঃ তোমাকে কি আমি যেতে এইজন্য মানা করেছি কারণ কিছু দিন পর ইশা আপু আসবে।তখন যেয়ো।এখন একা একা বেরানোর থেকে বোনের সাথে বেড়াতে ভালো লাগবে। তুমি যদি চাও এখনি যেতে পারো।আমি মানা করছি না।
এশা কিছু খন ভেবে দেখলো জায়েদের কথাটাই তো ঠিক।ও তো এসব ভাবে নি।
এশাঃ সরি আমি আসলে তোমার মতো ভেবে দেখি নি।আমি কিন্তু অনেক দিন থাকবো?
জায়েদঃ বউ ছারা আমি থাকবো কি করে? এভাবেই তোমাকে পেতে আমার অনেক কাঠ- খড় পোরাতে হয়েছে। জন স্মিথ থেকে মুসলিম হয়ে জায়েদ খান হয়েছি।তোমার বাবাকে কত কষ্ট করে রাজী করে বিয়ে করেছি।বউ ছারা থাকবো বলে কি এসব করিছি নাকি।তোমার ছারা আমারর ভালো লাগে না।
এশাঃ কেন? তুমি কি মুসলিম হয়ে আফসোস করো?
জায়েদঃ তওবা তওবা কি বলো এসব? আমি ভুল ছিলাম আল্লাহ আমাকে সঠিক পথে পরিচালনা করেছে এতেই আমি আলহামদুলিল্লাহ অনেক খুশি।
এশাঃ বুঝতে পেরছি। আর বলতে হবে না।
জায়েদঃ আই লাভ ইউ এশা।
এশাঃ আই লাভ ইউ টু। এখন ঘুমাও।নয়তো সকালে ফজরের নামাজ কাজা হয়ে যাবে।
জায়েদঃ হুম চলো ঘুমিয়ে পরি।

সারাটাদিন আনন্দে কেটেছে আমাদের।আইজানকে ঘুম পারিয়েছি। ছেলেটা দেখতে পুরো ওর বাবার কার্বন কপি।বাবার মতো দেখতে ফর্সা,চোখ দুটোও পেয়েছে ওর বাবার বিড়ালের চোখ ।চুলগুলো অনেকটা লালচে কালার। মনে হয় রং করা।দেখতে মাশাল্লাহ।আমার মুখের গরনের সাথে একটুও মিলে না।দেখতে বিদেশীর বাচ্চা।হবেই তো ইংরেজ বাবার ছেলেতো।নামটাও দুজনের সাথে মিল করে রেখেছি।আইভীর আই এবং জায়ানের “য়া” বাদ দিয়ে নাম রেখেছি আইজান।

জায়ান মানে আমার ফারিশ ওয়াস রুমে গেছে। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশে চাঁদ দেখছি।
জায়ান ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে আমার পেছন থেকে এসে জরিয়ে ধরলো।

জায়ানঃ কি ভাবছো টুনটুনি পাখি?
আমিঃভাবছি।দেখতে দেখতে ৬ বছর কেটে গেলো।মনে হলো কয়েক দিন আগে আমাদের বিয়ে হয়েছে। আমাদের ছেলের বয়স ৪ বছর।আমার এখনো মনে হয় সেদিন তোমার সাথে ভার্সিটিতে দেখা হলো।সময় কি ভাবে পেরিয়ে গেল ফারিশ।
জায়ানঃ তুমি আবারও আমাকে ফারিশ বলছো? তুমি ভুলে গেছো আমি এখন খ্রিস্টান নই আমি একজন মুসলিম। তাই আমাকে তুমি আমার মুসলমান নামে ডাকবে।
আমিঃ উহু।আমি তোমাকে সেই লম্বু তালগাছ, ধলাচান মিয়া বলবো।
জায়ানঃ কি বললে আবার বলো?
আমিঃ কেন কানে শুনতে পাও না নাকি?
জায়ানঃ হুম খুব পাই।আমি কি বুড়ো হয়ে গেছি নাকি?
আমিঃ দু দিন পর ছেলে বিয়ে করাবে আর এখনো বুড়ো হও নি।
জায়ানঃ তাই নাকি? ?আমার মনটা তো এখনো বুড়ো হয়নি।
আমিঃ হয়েছে হয়েছে ঘুমাতে চলো।রাতে তো আবার তাহাজ্জুদের নামাজ পরতে উঠতে হবে সে খেয়াল আছে?
জায়ানঃ হুম আছে।
আমিঃ ছারো তাহলে।
জায়ানঃ টুনটুনি পাখি।
আমিঃ কি হলো?
জায়ানঃ ভালবাসি।
আমিঃ আমিও।
জায়ানঃ কতটুকু?
আমিঃ অনেক।ভালো না বাসলে কি তোমাকে পেতাম নাকি? আমারতো সেদিন মনে হচ্ছিল আমি তোমায় হারিয়ে ফেলেছি।সেদিন যদি নাহান না থাকতো তাহলে আমি তোমাকে সারা জীবনের জন্য হারিয়ে ফেলতাম।আচ্ছা, ধরো আমি যদি তোমার জীবন থেকে হারিয়ে যেতাম।তখন কি করতে?

জায়ান আমার কপালে ওর কপাল ঠেকিয়ে বললো–

জায়ানঃ চুপ, একদম এসব কথা বলবে না। সবসময় মনে রাখবে আমি তোমার ছিলাম,তোমার আছি এবং তোমারই থাকবো। তোমাকে কেউ আমার কাছ থেকে আলাদা রাখতে পারবে না।আল্লাহ আমাকে হেদায়েত দিয়ে মুসলিম বানিয়েছে।তুমি আমার জীবনে জান্নাতী হুর হয়ে এসেছো।আমি ভুল পথে ছিলাম তাই জীবনে তোমাকে আল্লাহ ইসলামের আলো দেখানোর জন্য পাঠিয়েছে। তার জন্য আমি বার বার একটা কথা বলবো আমার #শুধু তুই#

—————————-(সমাপ্ত)——————————

যারা পুরো গল্পে আমার সাথে ছিলেন তাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ। খুব শীঘ্রই নতুন গল্প নিয়ে হাজির হবো।ততদিন পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন।
❤️আল্লাহ হাফেজ ❤️

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে