#শুধু তুই #
#Part_07
Writer- Raidah Islam Nova
অনেকখন ধরে এশা, আইভিকে খুঁজছে।সেই যে কখন গেলো মেয়েটা? এখনো আসার নাম নেই। কে জানে কোন বিপদ হলো নাকি? এ মেয়েটাকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। নিশ্চয় আবার কোনো না কোনো ঝামেলায় জড়াবে? এছারাতো আর কাজ নেই। এসব কথা ভাবতে ভাবতে এশা ক্লাস থেকে বের হলো।সামনেই আইভিকে দেখলো।আইভি একটা মেয়েকে হাত ধরে নিয়ে আসছে।
আমি রিনিকে হাত ধরে নিয়ে আসছি।বেচারি খুব ভয় পেয়ে গেছে।বারবার আমাকে জিজ্ঞেস করছে এর জন্য কোনো ঝামেলায় পরতে হবে নাকি? আমি ওলরেডি ওকে না হলেও ১০-১২ বার এই কথার উত্তর দিয়েছি যে, মি.নাহান যেহেতু আমাদের আশ্বাস দিয়েছে তাহলে আমাদের কিছুই হবে না।তারপরও ওর ভয় একটুও কমছে না।হঠাৎ দেখলাম এশা আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে।
এশাঃ আইয়ু,কোথায় ছিলি তুই? তোকে কত খুঁজেছি আমি জানিস? আমিতো ভাবলাম ওয়াস রুম থেকে হাওয়া হয়ে গেছিস।কোন ঝামেলা থেকে এলি? তোর সাথেই তো সব ঝামেলা দেখা দেয়।এই মেয়েটা কে?
রিনির দিকে তাকিয়ে একদমে আমাকে এসব কথা বললো।আমি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।এতো কথা একদমে মানুষ কি করে বলে?
আমিঃ আস্তে আস্তে এশু।এতো কথার উত্তর আমি কি করে দিবো? এত এত প্রশ্ন? একটু হাঁফ ছারতে দে।সব বলবো।তুই একটু শান্ত হো।
এশাঃ আমি কখন থেকে তোর ওয়েট করছি? তোর আসার নাম নেই। সারা ভার্সিটি আমার তিনবার চক্কর দিয়ে ফেলেছি।তারপরও তোর খোঁজ নেই।তোর সাথে ও কে?( রিনির দিকে তাকিয়ে)
আমিঃ ও তোর সাথে পরিচয় করে দেই। ওর নাম রিনি।আমাদের ডিপার্টমেন্ট ছাত্রী।
এশাঃ আসসালামু আলাইকুম। আমি এশা।
রিনিঃ অলাইকুম আস সালাম। ভালো আছো?
এশাঃ হুম।তুমি ভালো আছো?
রিনি মাথা দুলিয়ে বুঝালো ও ভালো আছে।
আমিঃ রিনি আজকে থেকে তুমি আমাদের ফ্রেন্ড।
এশাঃ আমাদেরকে তুই করে বলবে? ফ্রেন্ডকে তুমি করে বললে পর পর লাগে।
রিনিঃ আচ্ছা।ধন্যবাদ আইভি।
আমিঃ ফ্রেন্ডদের মধ্যে নো থ্যাংকস নো সরি, অনলি মারামারি। মনে যেনো থাকে।
এশাঃ সবি বুঝলাম আইয়ু,কিন্তু একটা বিষয় বুঝলাম না।রিনির সাথে তোর পরিচয় কি করে হলো?
আমিঃ রাস্তায় যেতে যেতে তোকে সব বলবো।চল বাড়ি যাই।
এশাঃ আরো দুইটা ক্লাস বাকি আছে।
আমিঃ আজ আর কোনো ক্লাস করবো না।ভালো লাগছে না।আমারা রিনিকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে বাসায় চলে যাবে।ও কে একা ছারা যাবে না।এভাবেই অনেক ভয় পেয়েছে।
রিনিঃ তারাতাড়ি চলো।
এশাঃ আবার তুমি?
রিনিঃ সরি।( জিহ্বায় কামর দিয়ে)
আমিঃ আবার তুই সরি বললি।বুঝেছি তুই আমাদের বান্ধবী হিসেবে মানিস নি।( মুখ গোমরা করে)
রিনিঃ ভুল হয়ে গেছে। আর বলবো না।
এশাঃ ওকে এবারের মতো ছেরে দিলাম।পরের বার কিন্তু তোর খবর নিয়ে ফেলবো।
আমরা তিনজন হাসতে হাসতে বাসার দিকে পা বারালাম।হাঁটতে হাঁটতে এশাকে পুরো ঘটনা খুলে বলতে লাগলাম।
???
মেহেদী সোফায় বসে বসে আপেল খাচ্ছে।ভার্সিটি থেকে এসে ফ্রেশ না হয়েই মনের সুখে বসে আছে।আর হাতে থাকা আপলটাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কামড় দিচ্ছে।হঠাৎ করে ওর নাক বরাবর একটা ঘুসি পরলো।আপেলটা ছিটকে একদিকে মেহেদী আরেকদিকে ছিটকে পরলো।আচমকা এমন হওয়ায় মেহেদী ঘাবরে গেলো।সামনে তাকিয়ে নাহানকে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো।ওর চোখ – মুখ লাল হয়ে রয়েছে। কপালের রগ ফুলে ফেঁপে উঠছে।
মেহেদীঃ কি হয়েছে ভাইয়া?( ভয়ে)
নাহান কিছু না বলে মেহেদীর শার্টের কলার ধরে উঠিয়ে মুখের মধ্যে একটা পাঞ্চ মারলো।
মেহেদীঃ বলবেতো ভাইয়া আমি কি করেছি? আমাকে মারছো কেন? আমার দোষটা কি বলবে তো?
মেহেদী যত কথা বলছে ওর শরীরে ঘুষির পরিমাণ আরো বেড়ে যাচ্ছে।নাহান সর্ব শক্তি দিয়ে ওকে মারছে।মেহেদীর নাক, মুখ দিয়ে রক্তের ধারা বইছে। তাতেও নাহানের রাগ কমেনি।মেরেই চলছে।অনেকখন মনের আশ মিটিয়ে মেরে তারপর মেহেদীকে ছারলো।বেচারা মেহেদী ফ্লোরে রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে।নাহান হাঁপিয়ে গেছে। সোফায় বসে মাথাটা পেছনের দিকে হেলিয়ে দিয়ে হাত- পা চারদিকে ছড়িয়ে দিলো।চোখ দুটো বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে।মেহেদী ফ্লোরেই পরে আছে।শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি নেই যে সেখান থেকে উঠবে।
তারপরও কোনো রকম মাথাটা উঠিয়ে বললো।
মেহেদীঃ ভাইয়া প্লিজ বলো না আমি কি করেছি? আমায় এভাবে কেন মারলে?
মেহেদীর গলার স্বর পেয়ে নাহানের চোখ দুটো দপ করে জ্বলে উঠলো।এক লাফে সোফা থেকে উঠে চারিদিকে কিছু খুঁজছে।একসময় পেয়েও গেলো।বুক সেলফের কোণার দিক থেকে ক্রিকেট ব্যাটটা হাতে নিয়ে খুব জোরে মেহেদীর পায়ে দুটো বারি মারলো।মেহেদি চিৎকার করে নিজের পা ধরে রেখেছে।
নাহানঃ তুই জানিস না, তুই কি করেছিস?
মেহেদীঃ আমি সত্যি ভাইয়া কিছু বুঝতে পারছি না।
নাহানঃ তুই আজকেও একটা মেয়ের সাথে অসভ্যতামি করেছিস।
মেহেদী এতক্ষণে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে চুপ হয়ে গেলো।সারা শরীর ব্যাথায় অবশ হয়ে আসেছে।কেনো যে সে এতো মার খেলো তাও বুঝে গেছে।নাহান কাউকে মারার সময় তার মুখ থেকে কোন কথা শুনতে পছন্দ করে না।তখন কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলো মারের পরিমাণ বেড়ে যাবে।আর মেহেদী ওকে বারবার একি প্রশ্ন করছিলো।যাতে নাহানের রাগটা সাত আসমানের চূড়ায় উঠে ছিলো।
নাহান, মেহেদীকে নিজের ভাইয়ের থেকে কোন অংশ কম দেখে না।রিটা ও মেহেদী দুজনি ওর খুব আদরের।তবে সেটা প্রকাশ করে না।মেহেদী ছোট বেলায় একবার দুষ্টুমি করার কারণে প্রচুর মার খেয়েছিলো নাহানের হাতে।তারপর থেকে মেহেদী নাহানকে অনেক ভয় পায়।ওর এসব কুকির্তীর কথা নাহান বেশি কিছু জানতো না।জানবে কি করে মেহেদীর ভয়ে কেউ কখনো কমপ্লেন করার সুযোগ পায়নি।কিন্তু আজ আইভির কারণে নাহান জানতে পারলো।
নাহান মেহেদীর সামনে এসে এক হাত দিয়ে ওর থুঁতনি ধরে মুখটা উঁচু করলো।মেহেদীর ইতিমধ্যে হাত – পা কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে।আবার কি মার দিবে?
যা হজম করেছে তা থেকে উঠতেই ১৫ দিন লেগে যাবে।আরো মার খেলেতে চিরদিনের জন্য পংগু হয়ে যাবে।
নাহানঃ মেয়েটার সাথে এমন কেন করলি?
মেহেদীঃ ভাইয়া, আমি বুঝতে পারি নি।
নাহানঃ মিথ্যে কথা বলিস না।তুই ইচ্ছে করে এমনটা করেছিস।তুই তো আজকে ১ম করিস নি।এর আগে আরো অনেক মেয়েকে হ্যারাস করেছিস।কি ভেবেছিস তুই আমি কিছু জানি না।আমি তোর সব খবর জানতাম।ভেবেছিলাম সময়ের সাথে সাথে তুই ঠিক হয়ে যাবি।কিন্তু না।তুই দিনকে দিন বেয়াদব ও লাগামহীন হয়ে গেছিস।তোকে ভি. পি করে আমি বড় ভুল করেছি।আমি তোকে এ জন্য ভি. পি করেছি যাতে তুই মেয়েদেরকে প্রটেক্ট করতে পারিস।সেখানে তুই কি না এসব করছিস।তোর ওপর দায়িত্ব না দিয়ে আমি যদি ফারিশকে দিতাম তাহলেও আমার মান- সম্মান থাকতো।ফারিশ আর কিছু না পারুক মেয়েদের সম্মান করতে পারে। আর তুই কি করলি? তোর ওপর আমার অনেক বিশ্বাস ছিলো।তুই সব ভেংগে দিলি।
নাহান হতাশ হয়ে ফ্লোরে বসে পরলো।মেহেদী ছলছল চোখে নাহানকে জড়িয়ে ধরলো। মেহেদীর কোনো ভাই- বোন নেই। নাহানকে নিজের বড় ভাই মনে করে।কখনও নাহান কে মন খারাপ দেখতে পারে না।
মেহেদীঃ আই এম সরি ভাইয়া। আমি আর কখনও এরকম করবো না।কোনো মেয়েকে সম্মান দিতে না পারি অপমান করবো না।প্লিজ তুমি আমাকে মাফ করে দেও। তুমি আমার সাথে রাগ করো না।আমি জীবনেও বাজে কাজ করবো না প্রমিস।তুমি আমাকে ভুল বুঝো না।তুমি ছারা পৃথিবীর আর কেউ আমাকে যে বুঝতে পারে না।
মেহেদী নিঃশব্দে নাহানের কাঁধে মুখ গুঁজে কাঁদছে। নাহানের কাঁধে ঠান্ডা কিছুর স্পর্শে মেহেদীর দিকে তাকালো।শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বড় একটা নিশ্বাস নিলো।রাগটা কমে যাওয়ায় মেহেদীর জন্য খারাপ লাগছে।২য় বার মেহেদীকে এভাবে মারলো।
নাহানঃ তোকে একটা মেয়ে ধোঁকা দিয়েছে। তাই বলে পুরো নারী জাতিকে তুই ঘৃণা করিস না।সবাই একরকম না।তুই তাদেরকে সম্মান করতে শিখে নে।তোর দিকে তাকালে যেনো একটা মেয়ে ভরসা পায় সেভাবে নিজেকে তৈরি কর। দেখবি তুই সবকিছুতে খুশি নামক বস্তুটাকে খুঁজে পাবি।একজন তোকে ধোকা দিয়েছে বলে তার রাগ সারা নারী জাতির ওপর ওঠাতে পারিস না।এটা অনেক বড় ভুল।
মেহেদীঃ আই এম সরি ভাইয়া। আমি কখনো এমন করবো না।আমি কালকে গিয়ে ঐ মেয়েটার কাছে ক্ষমা চাইবো।শুধু ঐ মেয়ে নয় যার যার সাথে বেয়াদবি করেছি তাদের কাছেও মাফ চেয়ে নিবো।আমি প্রমিস কারো সাথে বাজে ব্যবহার করবো না।কানে ধরেছি।আমার শিক্ষা হয়ে গেছে।
নাহানঃ চল তোকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাই।
মেহেদীঃ যাবো না।এভাবে কাউকে মারে।আমিতো মরেই যাচ্ছিলাম।আমি যাবো না ডক্টরের কাছে।মারার সময় মনে ছিলো না।এই অবলা,ছোট্ট, মাসুম শিশুটাকে তুমি এভাবে মারতে পারলে।( গাল ফুলিয়ে)
নাহানঃ তুই কি যাবি নাকি আরো মার খাবি।
মেহেদীঃ ঠিক আছে চলো।তুমি অলরেডী কোমর ভেংগে দিছো।আর মার খেতে চাই না।
নাহান, মেহদীকে ধরে ধরে নিচে নামলো।গাড়িতে উঠিয়ে হাসপাতালে উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
কিছু মানুষ খারাপ হওয়ার পেছনে অনেক বড় ভয়ানক অতীত থাকে।আমরা তার পেছনের অতীত না জেনে তাকে খারাপ বলে আখ্যায়িত করে ফেলি।যা করা আমাদের উচিত নয়।তাছারা সবার অতীত জানা আমাদের পর্সিবল নয়।কিছু মানুষ খারাপ হওয়ার পেছনে পরিস্থিতি নামক শব্দটাও জড়িত।খারাপ সময়টা সবাই সঠিকভাবে কাটিয়ে উঠতে পারে না।
মেহেদীর জীবনেও একটা ভয়ানক অতীত আছে।যার ভেতর থেকে ও বের হতে পারে নি।ক্লাস নাইন থেকে অনার্স ২য় বর্ষ পর্যন্ত একটা মেয়েকে পাগলের মতো ভালবেসেছে।কিন্তু সেই মেয়েটা ওকে ধোঁকা দিয়ে অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করে লন্ডন চলে গেছে।মেহেদীর ৬ বছরের ভালবাসাকে গলা টিপে চলে যেতে মেয়েটার বুক একবারও কাপে নি।বরং খুশি মনে মেহেদীকে ছেড়ে চলে গেছে। তারপর থেকে মেয়েদেরকে ও দেখতে পারে না। কয়েক বার আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলো।কিন্তু নাহানের জন্য বেঁচে ফিরেছে।ওকে এই অবস্থা থেকে বের করতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নাহানের।নাহান ওকে এতো বড় ড্রিপশন থেকে বের করছে।
???
সারাদিনের ভেজালে আমার কিংবা এশা কারোর জন ও ফারিশের কথা একবারো মনে হয় নি।ওদেরকে একবারও দেখি নি।বিকাল থেকে আকাশটা ভার হয়ে আছে।আমার মনটাও বেশি ভালো না।আকাশটার অবস্থা খারাপ দেখলে আমার মনটাও খারাপ হয়ে যায়।বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে ছিলাম।এশা পরে পরে ঘুৃমাচ্ছে।আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজেকে খুব বিষন্ন ও একা মনে হচ্ছে।বৃষ্টিতে ভেজা হয় না অনেকদিন ধরে। বৃষ্টির পানি আমার সহ্য হয় না।জ্বর চলে আসে।বাইরে ঝির ঝির বৃষ্টি পরছে।আমি বাইরের দিকে তাকিয়ে ভাবছি ভার্সিটিতে একের পর এক শুধু ঝামেলায় জড়িয়ে পরছি।যত এসবের থেকে দূরে থাকতে চাচ্ছি ততই জড়িয়ে যাচ্ছি।
ছোট বেলাটা তো খুব ভালো ছিলো।কত আনন্দ, মজা,দুষ্টমি মাখা ছিলো।নিজেকে কখনো একা মনে হতো না।সারাদিন এপারা ওপারা ঘুরে বেরানো,বড়শি দিয়ে মাছ ধরা,বৌছি,কানামাছি খেলা।আজ এসব সৃতি।সেগুলো হাজার চেষ্টা করলেও ফেরত পাবো না। ছোট বেলায় সবসময় ভাবতাম কবে বড় হবো? এখন মনে করি ইস, আবার যদি ছোট হতে পারতাম।বৃষ্টির বেগ আগের থেকে বেড়েছে। দমকা হাওয়ায় একপশলা বৃষ্টির পানি আমাকে ভিজিয়ে দিলো।ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলাম ঠান্ডা পানির স্পর্শ। বারান্দার দরজাটা আটকে দিয়ে রুমের বাতি জ্বালিয়ে দিলাম।আজ আর কিছু ভালো লাগবে না।
( চলবে)