# শুধু তুই
Part- 01
Writer _ Raidah_ Islam _Nova
ভার্সিটির ১ম দিন এসেই যে এমন একটা পরিস্থিতিতে পরতে হবে ভাবতেই পারিনি।আজ আমাদের নবীন বরণ অনুষ্ঠান।অনুষ্ঠানের বদলে ভার্সিটির মাঠে ধুমছে মারামারি হচ্ছে।মাঠের মধ্যে একটা ফর্সা দেখতে ছেলে অনেক গুলো ছেলেকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে উরাধুরা মারছে। আমি গ্রামের মেয়ে। যদিও আমি এসব খুব ভয় পাই কিন্তু আজ আমার খুব ভালো লাগছে দেখতে।মনে হচ্ছে কোনো হিরো তার হিরোইনের জন্য একশন সিন করছে।প্রচুর মানুষ ভির করে আছে।কিন্তু কেউ সাহস করে কিছু বলতে পারছে না।স্যার -রা পর্যন্ত ভয়ে ভয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ১মে ভেবেছিলাম ভার্সিটির ভি. পি বোধহয়।পরে শুনি এতক্ষণ ধরে যে ছেলেগুলোকে মারছে সেগুলোই ভি. পি ও তার দলের ছেলে।অনেকক্ষণ মারার পর ফর্সা ছেলেটা হাঁপিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিলো।পেছন থেকে সামনে ঘুরলো।এবার আমরা সবাই ছেলেটাকে দেখলাম।রীতিমতো সব মেয়েদের ছোটো খাটো হার্ট অ্যাটাক হওয়ার মতো অবস্থা।
গায়ের রং ধবধবে সাদা।চোখ দুটো বিড়ালের চোখের মতো।চুলগুলো কুচকুচে কালো। জিম করা বডি।মুখটা গম্ভীর।দেখে মনে হয় জীবনেও হাসে নি।হাইট ৬ ফুট ৪ ইঞ্চি।তাল গাছ বললেও ভুল হবে না।বয়সটা হয়তো ২৬। সঠিক জানি না।আমার মনে হলো এরকমই হবে।ছেলেটা দেখতে, শুনতো সব দিক দিয়ে এক কথায় পুরো বিদেশি। হ্যাঁ, ছেলেটা বিদেশিই।জন্ম ইংল্যান্ডের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে।ওদের দেশের মধ্যবিত্ত আর আমাদের দেশের ধনীর মধ্যে বোধহয় তত পার্থক্য নেই। আমরা সবাই আরো অবাক হলাম যখন স্পষ্ট ও শুদ্ধ বাংলায় ছেলেটা কথা বলে উঠলো। আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।এতো সুমধুর কারো কন্ঠ হতে পারে।
ছেলেটিঃ মেয়েদের কে সম্মান করতে শিখ। সম্মান না করতে পারিস অন্ততপক্ষে অসম্মান করিস না।এরাও তো কারো না কারো মা-বোন।আজ ছেড়ে দিলাম।পরের বার কিন্তু তোকে আর তোর পোষা কুকুরদের এমন হাল করবো যে তোরা কেউ তোদের চেহারার দিকে তাকাতেও ভয় পাবি।
মাটিতে পরে থাকা রক্তাক্ত ছেলেগুলোকে উদ্দেশ্য করে বললো।কথাগুলো বলে এক মিনিটও দাড়ালো না। ভিড় ঠেলে আমাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় এক পলক আমার দিকে তাকালো।চাহনিটা খুব মায়াবী। ক্রাশ খাওয়ার জন্য ওর চোখের চাহনিটাই যথেষ্ট। কি জানি কি ভাবলো আমার দিকে তাকিয়ে।হয়তো এটাই যে বেসরকারি ভার্সিটিতে সব বড়লোকের মেয়েরাই তো নবীন বরণে শর্ট শর্ট ড্রেস পরে এসেছে।কিন্তু আমি এই গরমে বোরকা কেনো পরে এসেছি।সবার থেকে ভিন্ন রকম ভাবে কেনো এসেছি। আমি সঠিক জানি না কি ভেবেছে? আমার মন বললো হয়তো এমনটাই ভেবেছে।চোখ নামিয়ে পাশে থাকা বাইকে উঠে গেইট দিয়ে চলে গেলো। ও চলে যেতেই ভি. পি রেগে চিৎকার করে উঠলো। ভি.পি – র নাম মেহেদী।
মেহেদীঃ তোকে আমি দেখে নিবো।আমার সাথে শত্রুতা করে তুই ভালো করলি না।এর ফল তোকে ভোগ করতেই হবে।
রাগে গজ গজ করতে করতে মাঠ ছেড়ে মেহেদী ও তার দল চলে গেল।আমরা যারা নতুন তারা কিছুই বুঝলাম না।আমি ও আমার বান্ধবী প্লাস বোন এশা দুজন দুজনের দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।এক সিনিয়র আপুর কাছে ছেলেটার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেই সে রেগে গেলো।
আপুঃ তোমরা ঐ বাজে ছেলেটার কথা বলছো।এক নাম্বারের খারাপ ছেলে।কারো কথা শুনে না।মাস্টর্সে পরে।সবার সাথে বাজে ব্যবহার করে।কোনো স্যারকেই মানে না।যেটা ইচ্ছে হবে সেটাই করবে।কারো কথা শোনার মানুষ সে নয়।তোমরা আমার মুডটাই নষ্ট করে দিলে ওর কথা জিজ্ঞেসা করে। (রেগে)
এশাঃ আপি ওনার নাম কি???
আপুঃ তোমাদের দেখছি ওর নামও জানতে ইচ্ছে করছে।বাই দ্যা ওয়ে ওর পেছন পেছন ঘুরো না কিন্তু। ও ছেলে হিসেবে মোটেও ভালো না।কে জানি কখন আবার কি করে বসে।
আমিঃ না,আপুনি আমরা উনার পেছনে মোটেও ঘুরবো না।যাস্ট নামটা জিজ্ঞেসা করছি।বললে বলবেন না বললে নেই। তাই বলে এতোগুলো কথা আপনি আমাদের শোনাতে পারেন না।
ও মা, মেয়েটার কি দেমাগ। বাপরে বাপ।আমি এসব কথা বলতেই আমাদের কতো কিছু শুনিয়ে দিলো।শর্ট ড্রেস পরা, পায়ে হাই হিল।গট গট করে চলে গেলো।
আমিঃ এশা তোকে ইচ্ছে করছে মাথায় তুলে আছার মারতে।মানুষ খুঁজে পাস না।দেখে বোঝাই যাচ্ছে বড়লোক বাপের আদরের দুলালি।দেমাগ দেখেছিস।পা যেনো মাটিতে পরে না।ছেলেটার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেই মনে হলো গায়ে ফোস্কা পরলো।ছেলেটা বোধ হয় তার সম্পত্তি। ঢং দেখে বাঁচি না।
এশাঃ আমারও তাই মনে হয়।বাদ দে। আমাদের কি? চল অনুষ্ঠানে যাই।
—- ওর নাম ফারিশ জে স্কিনার।
আমরা দুজন পেছন ঘুরে তাকাতেই দেখলাম লম্বা মতো দেখতে একটা ছেলে। চোখ দুটো ঐ ছেলেটার মতোই।কিন্তু চুলগুলো পাটের কালার।আমার কাছে এই কালারটা পাট কালারই মনে হয়। এই কালারের নাম আমার জানা নেই।গায়ের রং উজ্জ্বল ফর্সা।হাইট ৬ ফুট ২ ইঞ্চি।বয়স আর কতো হবে ২৫/২৬।দুই হাত গুঁজে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ও দেখতেও বিদেশিদের মতো।
এশাঃসরি, আপনি—
ছেলেটাঃ হাই,আমি জন স্মিথ।( হাত বাড়িয়ে)
আমিঃ আসালামু আলাইকুম।
জন হাত সরিয়ে নিয়ে খুব সুন্দর করে সালামের উত্তর নিলো।
জনঃ অলাইকুম আস সালাম।
আমি ও এশা দুজন অবাক চোখে জনের দিকে তাকিয়ে আছি।নাম শুনে তো মনে হচ্ছে খ্রিস্টান ধর্মালম্বী।এতো সুন্দর করে আমাদের সালামের উত্তর কি করে দিলো???জন আমাদের অবাক হওয়ার কারণটা বুঝতে পারলো।
জনঃ অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমি দশ বছর ধরে বাংলাদেশে আছি।সবার সাথে মিলে মিশে থাকার কারণে অনেক কিছুই আমি পারি।
আমিঃ আপনি বাংলাদেশী নন???
জনঃ জ্বী না।আমি ও ফারিশ ইউরোপিয়ান।
এশাঃ মানে??
জনঃ আপনারা ঐ মেয়েটাকে যে ছেলের কথা জিজ্ঞেস করলেন ওর নাম ফারিশ জে স্কিনার।আমার বন্ধু।
আমিঃ ভি. পি কে যেই ছেলেটা মারলো।তার নাম।
জনঃ হুম।
আমিঃ বাপরে কি নাম।মনে হচ্ছে দাঁত গুলো সব ভেঙে যাবে।ভারী অদ্ভূত নাম তো।
জন মুচকি হাসলো।
জনঃ আসলে ঐ মেয়েটা নাম রিটা।ও ফারিশকে খুব ভালোবাসে।কিন্তু ফারিশ ওকে পাত্তাও দেয় না। কোনো মেয়ে যেনো ফারিশের দিকে না তাকায় সে জন্য সবাইকে এসব বলে বেড়ায়।
এশাঃ ওওও এবার বুঝতে পেরেছি।
আমিঃ যদি কিছু না মনে করেন একটা প্রশ্ন করি।
জনঃ নিশ্চই।
আমিঃ আপনারা দুজন কি ক্রিশ্চান??
জনঃ হুম।
জনের কথা শুনে আমি খুব হতাশ হলাম।জানি না কেন? আমার মনটা সত্যিই খুব খারাপ হয়ে গেলো।
জনঃ আপনাদের পরিচয় তো দিলেন না।
এশাঃ আমি এশা আক্তার।ও আমার চাচাতো বোন আইভি ইসলাম।
জনঃ বাহ্,খুব সুন্দর নাম তো।আপনারা নিশ্চই মুসলিম।
আমিঃ জ্বী হ্যাঁ।
জনঃ আপনাদের সাথে পরিচিত হয়ে খুব ভালো লাগলো।আপনারা কি গ্রাম থেকে এসেছেন?
আমিঃ হুম।
জনঃ এ জন্যই আপনাদের ব্যবহার এতো সুন্দর।গ্রামের মানুষ খুব ভালো হয়।শহরের মানুষ গুলোর মধ্যে কোনো ফিলিংস নেই। সবাই যার যার স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত।
আমিঃ ভালো খারাপ নিজের কাছে।আমরা নিজেরা ভালো না হতে পারলে কখনই অন্য কেউ আমাদের ভালো করতে পারবে না।তাছারা পরিস্থিতি বলতেও একটা জিনিস আছে। যা আমাদেরকে বদলে দেয়।
জনঃ আপনি খুব সুন্দর করে কথা বলেন।অনেকদিন পর এমন কাউকে পেলাম যে আমার সাথে এভাবে কথা বললো।সাধারণত আমি ও ফারিশ কোনো মেয়ের সাথে মিশি না।ফাইনালি এমন দুজন পেলাম যাদের সাথে মেশা যায়।এখানে তো সব মেয়েদের অহংকার নিয়ে থাকে।বড়লোকের বিরাট কারবার যাকে বলে আর কি।
এশাঃ আপনারা তো ইউরোপিয়ান।এতো সুন্দর করে বাংলা কি করে বলতে পারেন।
জনঃ শিখে নিয়েছি।আমাদের বাংলা ভাষায় কথা বলতে খুব ভালো লাগে।
আমিঃকথাটা শুনে মনটা ভালো হয়ে গেলো। আপনার মতো যদি সবাই হতো।
জনঃ এখানে দাঁড়িয়ে কথা বললে অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাবে।ভেতরে চলুন।
জনের সাথে কথা বলতে বলতে ভেতরে ঢুকলাম।ব্যবহারটা খুব ভালো।খুব মিশুক একটা ছেলে। কিভাবে অল্প সময়ে আমাদের সাথে মিশে গেলো।
অনেকক্ষন ধরে বকবক করছি।এই যাঃ আমার পরিচয়টাই তো দেওয়া হয়নি।আমি আইভি ইসলাম। আমার বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। আমার ছোট একটা ভাই আছে। ওর নাম রিজভি ইসলাম।ক্লাস নাইনে পড়ে। আমি গ্রামের একটা কলেজ থেকে GPA-5 পেয়ে ঢাকার এই নামকরা প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি।
আমার বয়স ২১ বছর।আমি দেখতে মোটেও সুন্দরী নই।আমার গায়ের রং শ্যাম বর্ণের।চুলগুলো কোমর পর্যন্ত।আমার ঠোঁট দুটো নাকি খুব সুন্দর,হালকা গোলাপি কালার।আমার চেহারাটা বলে অনেক মায়াবি।সবাই এমনটা বলে।কিন্তু আমার মা জানে আমি কোন মাকাল ফল?।কাজে তো একেবারেই নেই অকাজে সবার আগে।মায়ের কাজ কমাতে না পারলেও বাড়াতে তো পারি।সেটাই কয়জন পারে।আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। আমার বাবা ছোটো খাটো কাপড়ের ব্যবসা করে।গ্রামের বাজারে আমাদের নিজস্ব কাপড়ের দোকান আছে।তাতেই আমাদের পরিবার খুব ভালো চলে।আমরা বাবা- মা নামাজ নিয়ে অনেক সচেতন। সব কিছুর আগে নামাজ।আমার বাবা নামাজ, তাবলীগ,আল্লাহের রাস্তায় সময় ব্যয় এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকে।ধর্মের ব্যাপারে সে খুব করাকরি।
আমি সব জায়গায় বোরকা পরে যাই।যার কারণে নবীন বরণে সবাই ভিন্ন ভিন্ন ড্রেস পরে আসলেও আমাকে বোরকা পরে আসতে হয়েছে। আমি নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি।আমার এখন বোরকা পরে সব জায়গায় যেতে ভালো লাগে।নিজেকে কমফরটেবল মনে করি।আজও বোরকা সাথে ওরনা দিয়ে হিজাব বেধে এসেছি।এশা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড প্লাস আমার কাজিন।আমার বাবা ও চাচা দুই ভাই।চাচা বড় বাবা ছোট।চাচ্চুর অবস্থা আমাদের থেকে ভালো।চাচ্চু বর্তমানে একটা ছোট বিজনেস চালাচ্ছে। এশা ও ইশা দুই বোন।ইশা আপুর বিয়ে হয়ে গেছে।
এশা ও আমি সমবয়সী।বাড়িতে কাকি ও এশা থাকে।কাকি আমাকে অনেক আদর করে।আমার চাচা আমাকে এই ভার্সিটিতে ভর্তি করে দিছে।তাদের বাড়ি থেকেই পড়া- লেখা চালাতে হবে।চাচ্চুতো বাবাকে সাফ সাফ বলে দিয়েছে আমাকে ও আমার পড়া- লেখা নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না।আমার ও এশার পড়ার সকল খরচ তিনি চালাবেন।বাবা মানা করেছিলো কিন্তু চাচা তা মানবে না।শেষ পর্যন্ত বাবাকে রাজি হতেই হলো।বাবা- মা কেউ আমাকে ঢাকা দিতে চায় নি।এভাবেই দেশের অবস্থা খারাপ।তার ওপর দিন কালও ভালো না তাই।
চাচা,চাচি ও এশার অনুরোধ তারা আমাকে ঢাকা পাঠিয়ে দিলেন।আসার সময় মায়ের কি কান্না, বাবার মনটা খারাপ,ভাইটাও কাদঁছে।বাবা আমাকে কখনো চোখের আড়াল করতে চাইতেন না।আমার মনটাও খুব খারাপ ছিলো।আবার খুশিও লাগছিলো।আমার অনেক স্বপ্ন ছিলো ঢাকার কোনো নামকরা ভার্সিটিতে পরবো।তাই চাচা চাচিকে মানা করিনি।তাদের সাথে ঢাকা চলে এলাম।ম্যানেজমেন্টে অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছি। এশার ডাকে আমার হুশ ফিরে এলো।এতোক্ষণ নিজে নিজে কত কিছু ভেবে ফেললাম।
এশাঃ কি রে আই কোথায় হারিয়ে গেলি?
এশা আমাকে আই বলে ডাকে আর আমি ওকে এশু বলি।
আমিঃ কই কোথাও না।
এশাঃ কখন থেকে তোকে আমি ডেকে চলছি।তোর কোনো হুশ আছে।
আমিঃ ও আমি খেয়াল করি নি।জন ভাইয়া কোথায়?
এশাঃ বাইরে আমাদের জন্য আইসক্রিম আনতে গেছে। আমার কোনো দোষ নেই। আমি মানা করছি শোনে নি।
আমিঃ তাই বলে তুই তাকে যেতে দিবি???
এশাঃ অনেকবার বলেছি কিন্তু মানে নি।
কিছুখন পরে জন তিনটা আইসক্রিম হাতে ফিরে এলো।চেয়ার টান দিয়ে এশার পাশে বসলো।
জনঃ আপনাদের আইসক্রিম।
আমিঃ আপনি এটা আনতে কেন গেলেন??
জনঃ আমার খুব খেতে ইচ্ছে করছিলো।একাএকা খেলে আপনারা যদি নজর দেন তাহলে তো আমার পেট ব্যাথা করবে।
আমি ও এশা হেসে উঠলাম।
আমিঃ আমরা খাবো না।
জনঃ কেন? ও বুঝেছি আমি খ্রিস্টান তার জন্য।
আমিঃ না, না,। ছি ছি ছি কি বলেন? আপনি কোন ধর্মের সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়।সবচেয়ে বড় কথা আমরা মানুষ।
জনঃ তাহলে জলদি ধরেন।গলে যাবে তো।
আমরা দুজন জনের হাত থেকে আইসক্রিম নিয়ে খেতে শুরু করলাম।
আমিঃ আপনার বন্ধুকে যে দেখছি না।
জনঃ ওকে আর দেখবেন ও না।
আমিঃ কেনো??
জনঃ ও বেশি একটা এদিকে আসে না।সবার কাছে আমি ও ফারিশ খারাপ ছেলে হিসেবে পরিচিত।কেউ আমাদের সহ্য করতে পারে না।সব হয়েছে ফারিশের জন্য।অনেক রাগী ছেলে।কারো কথা শোনার পাত্র সে নয়।সবসময় ঝামেলায় জড়িয়ে থাকে।মারামারি, গুন্ডামী করা ওর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ওকে বাঁচাতে গিয়ে আমি ফেঁসে যাই।
এশাঃ আপনাদের বাবা- মা কোথায়? তাদের ছেরে এই দেশে থাকতে কোনো সমস্যা হয় না।
এশার কথা বলতে জনের মুখটা কালো হয়ে গেলো।
জনঃ আমার ও ফারিশের বাবা- মা নেই। আমরা এতিম।
আমিঃ ও সরি।আমরা না জেনে আপনাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম।আমরা রিয়েলি সরি।
এশাঃ আই এম সরি।আমার এই প্রশ্নটা করা ঠিক হয়নি।আমাকে মাফ করে দিবেন।
জনঃ ইটস ওকে।কোনো সমস্যা নেই।
আমরা তিনজন চুপ হয়ে গেলাম।সবার মাঝে একটা পিন পিনে নিরবতা কাজ করছে।আমি নিরবতা ভেংগে কথা বললাম।
আমিঃ জন ভাইয়া, আপনার বন্ধু ফারিশ ভি. পি কে কেনো মারলো???
জনঃ ওকে যে জানে মারেনি সেটাই বেশি।শালা,বাটপার।মেয়েদের সাথে উশৃংখল পানা করে।আজ নতুন ভর্তি হওয়া অনার্স ১ম বর্ষের একটা মেয়েকে রেগিং দিয়েছে যে সবার সামনে মাঠের মাঝে মেয়েটার ওরনা খুলতে হবে।তারপর হাঁটু গেড়ে বসে মেহেদীকে প্রপোজ করতে হবে।
কথাটা শুনে আমার ও এশার মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো।
এশাঃ ছি কত বাজে ঐ ছেলেটা।
জনঃ ভাগ্যিস ঠিক সময়ে আমরা দুজন চলে এসেছিলাম।নয়তো সবাই মিলে মেয়েটাকে হ্যারেস করতো।
এশাঃ আপনারা খুব ভালো।
জনঃ আমরা মোটেও ভালো নই।আমরা অনেক খারাপ।আমাদের সাথে মিশলে আপনারাও খারাপ হয়ে যাবেন।
আমিঃ যে ছেলে, মেয়েদের কে সম্মান করে সে কখনো খারাপ ছেলে হতে পারে না।এটা আমি বিশ্বাস করি।
জনঃ সবাই যদি আপনাদের মতো বুঝতো।
এশাঃ আমরা কি ভালো ফ্রেন্ড হতে পারি??
আমিঃ যদি আপনার কোনো আপত্তি না থাকে।
জনঃ আমার মতো ছেলের সাথে বন্ধুত্ব?? হাসালেন আপনারা।( তাচ্ছিল্যের সুরে)
এশাঃ কেনো?
জনঃ আমাদের মতো ছেলের চাল- চুলোর ঠিক নেই। সেখানে আবার বন্ধুত্ব। আমাদের সাথে মিশলে আপনাদের সবাই খারাপ বলবে।
আমিঃ ছারুন তো ওসব।কে কি বললো তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না।প্লিজ, বলুন না আপনারা আমাদের বন্ধু হবেন কি না।
জনঃ ফারিশ হবে কি না জানি না।কিন্তু আমার আপত্তি নেই।
এশাঃ আপনার ঐ ফারিশ না হরিশ তাকেও আমরা আমাদের বন্ধু করে নিবো।আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।
এশার কথা শুনে আমরা দুজন হেসে উঠলাম। হঠাৎ ……………..
( চলবে)