শুধু তুই ৩ পর্ব-৪১ এবং শেষ পর্ব

0
2002

#শুধু তুই ৩
#অন্তিম পর্ব
#Tanisha Sultana

ভালোবাসার মুহুর্ত গুলো খুব তারাতাড়ি শেষ হয়ে যায়। বছর দিন এগুলো তো চোখের পলকে চলে যায়।
আদি আর নিধির দিনগুলোও খুব তারাতাড়ি চলে যাচ্ছে। খুব সুখে কাটছে দুজনের দিন।
সেইদিন তোহার আদি নিধিকে সারপ্রাইজ দিয়েছিলো ফুলসজ্জার খাট সাজিয়ে।
ইভার বিয়ের দিন সেটা স্বীকার করে নেয় তোহা। মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিয়ে নিধির গালে হাত রেখে বলেছিলো “খুব ভালো থাকবে তোমরা। দোয়া করি তোমাদের জন্য”
নিধি জড়িয়ে ধরে ছিলো তোহাকে। খুব ভালো লেগেছিলো নিধি। তোহার মধ্যে নিজের বোনকে খুজে পেয়েছিলো।
ইভার বিয়ের দিনই চলে গেছিলো তোহা আর নানু। অনেক করে থেকে যেতে বললেও থাকে নি।

বছর পেরিয়ে গেছে। নিধি এখন আঠারো বছরের একজন সাবালিক। অনেক বড় হয়ে গেছে। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছে এখন৷ তার গোমড়ামুখো আদি এখন মন প্রাণ দিয়ে ব্যবসা করছে।
শাশুড়ীর সাথে নিধির সম্পর্ক অনেক ভালো হয়ে গেছে। এখন নিধির বাবা মা শশুর শাশুড়ী সবাই এক বাড়িতেই থাকে। অবশ্য এই প্রস্তাবটা নিধির শাশুড়ীই দিয়েছে। সেদিন নিধি শাশুড়ীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছিলো। শাশুড়ীর মধ্যে নিজের মাকে খুঁজে পায় নিধি।

কয়েকদিন যাবত নিধি মাথা ঘোরে একটু পরপরই বমি পায় শরীরটা খুব ক্লান্ত লাগে।
কলেজ থেকে ফিরে এসে নিধি ড্রেস চেঞ্জ না করেই বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। পা চলছে না। বসে থাকতেও কষ্ট হচ্ছে। কলেজ থেকেও দুই তিনবার বমি করেছে।

“একি তুমি অসময়ে শুয়ে আছো যে
আদি অফিস ব্যাগ টেবিলে নামিয়ে রেখে বলে।
আদিও বেশ ক্লান্ত। আজ একটা মিটিং ছিলো। তারাতাড়ি মিটিং শেষ হয়ে যাওয়াতে তারাতাড়ি বাড়ি ফিরে এসেছে। কিন্তু নিধিকে এভাবে অসময়ে শুয়ে থাকতে দেখে একটু চিন্তা হয়।
ট্রাই টা একটু ঢিলা করে নিধির দিকে এগিয়ে যায়।
” নিধি আর ইউ ওকে?
বিচলিত হয়ে নিধির কপালে হাত দিয়ে বলে।
নিধি চোখ খুলে। ক্লান্ত শুকনো ঠোঁট মেলে একটু হাসে।
“আপনি এখন এখানে?
” সেটা পরে বলছি। আগে বলো তোমার কি হয়েছে?
নিধির পাশে বসে বলে।
নিধি আদির কোলে মাথা রাখে। আদির কোমর জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে নেয়।
“আমার না খালি বমি পায়। মাথা ঘোরায়। ক্লান্ত লাগে।
আদুরি গলায় বলে নিধি।
আদি নিধির মাথায়,হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
” উঠে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নাও। ডাক্তারের কাছে যাবো।
“কেনো?
নিধি চট করে মাথা তুলে বলে।
” সেটা পরে বলবো। এখন যা বলছি করো।
আদি কিছুটা কঠোর গলায় বলে।
নিধি মুখটা গোমড়া করে আর একটু আরাম করে শয়।
“নিধি
আদি কিছুটা গম্ভীর গলায় বলে।
” যাচ্ছি
নিধি বিরক্তি নিয়ে উঠে ফ্রেশ,হতে যায়।

পুরো পাড়ায় মিষ্টি বিদায় আদির বাবা। তার বাড়িতে অতিথি আসছে। অফিসের সমস্ত কর্মচারীদেরও খাওয়ায়।
আদি খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। পাঁচ মিনিট নিধিকে জড়িয়ে ধরে ছিলো। বাবা হওয়ার অণুভুতিটাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অনুভুতি।
নিধিও ভীষণ খুশি।
আজকে আদি নিধিকে একটা বোডিং স্কুলে নিয়ে আসে। গাড়ি থেকে নেমে নিধি স্কুলটার দিকে তাকিয়ে কিছুটা অবাক হয়
“আমাকে এখানে কেনো নিয়ে আসলেন?
আদির এক হাত আকড়ে ধরে বলে
” এখানে একটা অনাথ মেয়ে আছে। যে মেয়েটার বাবা মা সবাই থাকতেও সে একা৷ জুঁইয়ের মেয়ে। অবৈধ সন্তান জুঁইয়ের। খুব ভালো মেয়ে জানো। ভালোবাসার কাঙাল। মেয়েটা সমস্ত খরচ জুঁই চালাই। কিন্তু কখনো বুকে জড়িয়ে ধরে মা বলার অধিকার দেয় না। একটা মা কি করে এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারে?
আদির চোখের কোনে পানি চলে আসে। নিধির চোখেও পানি।

আদি নিধিরহ
হাত ধরে ভেতরে প্রবেশ করে। কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করে এতো মধুর দৃশ্য দেখবে এটা কখনোই ভাবে নি। জুঁই জুজুকে কোলে নিয়ে কাঁদছে। জুঁই মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। জু্ঁই সরি বলেই যাচ্ছে।
আদি নিধি হেসে ফেলে। জুঁইয়ের সামনে না গিয়ে বেরিয়ে যায় ওরা।

সময় কেটে যাচ্ছে। দুইটা মা দুইটা বাবা আর একটা দেওর আর আদির যত্নে খুব ভালো যাচ্ছে নিধির দিন। নিজেকে খুব খুব সুখী মনে হয় নিধির। গলা ছেড়ে গান গাইতে ইচ্ছে করে
“আমার মতো এতো সুখী নয়ত কারোর জীবন”

কিন্তু এখন গান গাইলে আদি সাহেব বকা দিবে। তাই চুপচাপ আছে।
কেটে যায় নয়টা মাস।
নিধির পা ফুলে গেছে। আদি এখন নিধির পায়ে তেল মালিশ করছে। নিধি আরামসে পপকোন খাচ্ছে।
“আচ্ছা আপনি কখনো বিরক্ত হন না?
নিধি মুখে পপকোন পুরে বলে।
” কেনো?

“এতো জ্বালাই আপনাকে।
” তুমি আমাকে এতো বড় একটা উপহার দিচ্ছো। এই উপহারের কাছে এই টুকু জ্বালানি কিছুই না।
নিধি হাসে।
আদি গালে হাত দিয়ে নিধির দিকে তাকায়
“ভালোবাসি
নিধির হাত টেনে নিয়ে নিধির হাতে একটা চুমু দিয়ে বলে আদি।
” আমিও। অনেকটা বেশি ভালোবাসি।
আদি আলতো করে জড়িয়ে ধরে নিধিকে।

অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আদির পরিবার আর নিধির বাবা মা। আদি ছটফট করছে। কখন ডাক্তার এসে বলবে আপনার বউ আর বাচ্চা ঠিক আছে। মনে মনে হাজারবার আল্লাহকে ডেকে যাচ্ছে।
একটু পরেই একজন নার্স সাদা টাওয়ারে মুরিয়ে একটা বেবি নিয়ে বের হয়।
আদি সবার আগে দৌড়ে নার্সের কাছে যায়।
“আপনার মেয়ে হয়েছে।
আদি নার্সের কথা না শুনে দৌড়ে কেবিনে ঢুকে যায়। আদির মা নার্সের কাছ থেকে বাচ্চাটাকে নেয়।

ডাক্তাররা আদিকে দেখে হকচকিয়ে যায়।
” একি মিস্টার চৌধুরী আপনি ভেতরে আসলেন কেনো?
“আমার নিধি ঠিক আছে।
বিচলিত হয়ে বলে আদি।
” হুম উনি ঠিক আছে।

আদি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। চোখ বন্ধ করে নেয়। চোখের কুর্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরে।

নিধিকে কেবিনে দেওয়া হয়। নিধির ঙ্গান ফিরেছে। সবাই দেখা করে গেছে নিধির সাথে।
এখন আদি ঢোকে কেবিনে মেয়েকে কোলে নিয়ে।

আদি নিধির পাশে মেয়েকে শুয়িয়ে দেয়। নিধির কপালে একটা চুমু দেয়।
“আমার পৃথিবী দুইটা।
” আমারও দুইটা কলিজা
আদি আর নিধি এক সাথে হেসে ফেলে। পিচ্চিটা কি বুঝলো কে জানে। পিচ্চিটাকে হেসে ওঠে।

সমাপ্ত।

শুধু তুই সিজন-০১ পড়তে লেখাটি উপর ক্লিক করুন

শুধু তুই সিজন-০২ পড়তে লেখাটি উপর ক্লিক করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে