শুধু তুই ৩ পর্ব-৪০

0
1722

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ৪০
#Tanisha Sultana

“কে রাখলো?
আদি নিধির মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলে।
” আআমি জানি না
থেমে থেমে বলে নিধি। আদির স্পর্শে ভীষণ নার্ভাস লাগছে। তারপর আবার কে এসব করলো তারও টেনশন হচ্ছে। আদির নিশ্বাস নিধির চোখে মুখে আচড়ে পড়ছে।
“আচ্ছা
নিধির কোমর জড়িয়ে ধরে নিধিকে খানিকটা উঁচু করে বলে আদি।
নিধি হকচকিয়ে যায়। চোখ বড়বড় করে আদির দিকে তাকায়। আদির মুখে দুষ্টু হাসি দেখে মিয়িয়ে যায় নিধি। সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নেয়। শ্বাস আটকে যাওয়ার মতো অবস্থা। পরে যাওয়ার ভয়ে দুই হাতে আদির চুল আকড়ে ধরে। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়।
” কি যেনো বলছিলে?
আদি নিধির দিকে তাকিয়ে বলে।
নিধি ভ্রু কুচকে ফেলে। চোখ না খুলেও মুখটা গোল করে ফেলে। মনে করতে থাকে আসলেও কি আদি কিছু বলেছিলো।
“কি হলো বলো?
আদি তারা দিয়ে জিজ্ঞেস করে। নিধির মনে যতটুকু পড়ছে তাতে আদি কিছুই বলে নি।
নিধি ঘাবড়ে যায়।
” আমাকে নামিয়ে দিন।
পরে যাওয়ার ভয়ে আতষ্ঠ হয়ে বলে নিধি।
“ভয় পাচ্ছো?
পাল্টা প্রশ্ন করে আদি।
” না মানে আমি অনেক ভারি। ককখন ব্যালেন্স হারিয়ে
(বলার মাঝে জীভ দিয়ে একটু ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়) ওই আরকি।
পরে গেলে ব্যাথা পাবো
ইনিয়েবিনিয়ে বলে নিধি। চোখে মুখে এখনও ভয় স্পষ্ট।
“সিরিয়াসলি
তোমার মতো চার পাঁচটা পিচ্চিকে এক সাথে কোলে তুলে ফেলে দিতে পারবো।
আদি নিজের মার্সেলের দিকে একবার তাকিয়ে কিছুটা ভাব নিয়ে বলে।
অন্য সময় হলে নিধি নির্ঘাত ঝগড়া করতো কথার পিষ্টে কথা বলতো। কিন্তু এখন অস্বস্তি আর জড়তার ভিরে কিছুই বলতে পারে না।
আদি নিধিকে ঘোরাতে শুরু করে। নিধি আদির গলা জড়িয়ে ধরে।
” প্লিজ নামিয়ে দিন। পরে যাবো
চিৎকার করে বলে নিধি
বেশ কয়েকবার গোল গোল করে ঘুরিয়ে খাটে বসে পড়ে নিধিকে কোলে নিয়েই। নিধি ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে। ভয়ে হাত পা কাঁপছে। আদির গলা জড়িয়ে ধরে হাঁপাচ্ছে।
আদি মুচকি হাসে।
“এতো ভয় পেলে চলে মিসেস আদিল চৌধুরী। একটু তো সাহসী হও
আদি নিধির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে।
” পানি
নিধি আদির গলা ছেড়ে কাঁধে মাথা বলে।
“ওকে নামো
নিধি তারাহুরো করে নেমে যায়। বিছানায় আধশোয়া হয়।
আদি নিধির দিকে এক পলক তাকিয়ে পানি আনতে চলে যায়।

এক গ্লাস পানি এনে নিধির সামনে ধরে। নিধি এক ঢোকে পুরো পানিটা শেষ করে ফেলে।
আদি গ্লাসটা রেখে দিয়ে এসে নিধির পাশে বসে। নিধি চোখ বন্ধ করে আছে বুকে হাত দিয়ে।

” খুব তো বলতে তোমার বর নিরামিষ।
আদি খাটে গোল হয়ে বসে বলে।
“আপনি তো নিরামিষ ই
তালে তালে নিধি বলে ফেলে।
নিধির কথা শেষ হওয়ার আগেই আদি দুই পাশে হাত রেখে নিধির দিকে ঝুঁকে।
নিধি ঘাবড়ে যায়
” আজ প্রুফ করে দেবো।
আদি নিধির নাকে নাক ঘসে বলে। নিধি লজ্জায় দুই হাতে মুখ ঢাকে।
আদি কিছু একটা ভাবে।
“নাহহ এভাবে না।
নিধি চোখ খুলে তাকায়।
” একটু রোমান্টিক বেপার সেপার আছে না?
নিধির ওপর থেকে সরে আসে আদি।
“একটা কথা বলি
আদি নিধির পাশে এসে শুয়ে পড়ে নিধির হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে।
” হুমমম
নিধি আদির থেকে একটু সরে গিয়ে বলে।
আদি এবার নিধির থেকে একেবারে সরি আসে। চিৎ হয়ে শুয়ে মাথার ওপরের ছাদের দিকে তাকায়।
“আমার তোমাকে প্রয়োজন। জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত আমার তোমাকে চাই। তোমাকে ছাড়া আমি শূন্য। আমি আজ থেকে আমাদের নতুন জীবন শুরু করতে চাই। আজ বলছি কেনো? এখন থেকে। তোমাকে ভালোবাসতে চাই।
তুমি বলেছিলে না এমনভাবে ভালোবাসতে যাতে তুমি সবাইকে বলতে পারো আমার আর বেস্ট বর। তোমার বরের মতো আর কেউ কখনো তার বউকে ভালোবাসতে পারবে না। ওতোটাই ভালোবাসবো তোমায়।
আজ থেকে কখনো কোনো কষ্ট পেতে দেবো না তোমায়। আই প্রমিজ। ভালোবাসায় মুরিয়ে রাখবো। খুব ভালোবাসি তোমায়।
খুব
ভীষণ
প্রচন্ড
মারাক্তক
দুইহাত প্রসারিত করলে যত দুর যায় তার থেকেও বেশি।
এক আকাশ সমান ভালোবাসি আমার পিচ্চি বউটাকে।

নিধি চোখের কোনে পানি চলে আসে। জীবনের সবচুকু চাওয়া আজ নিধি পেয়ে গেছে। আর কি চাই?

” তুমি কি আমার হবে?
আদি নিজের একটা হাত বারিয়ে দিয়ে বলে। নিধি প্রশান্তির হাসি হেসে চোখের কোনে জমে থাকা পানি মুছে আদির হাতটা ধরে।
আদি মুচকি হেসে নিধির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে বলে
“আজকে তোমার নিরামিষ বরটা আমিষ হয়ে যাবো। কেমন ফিল করছো?
নিধি লজ্জা পেয়ে ” ধ্যাত” বলে আদির বুকে মুখ লুকায়।
“আমার পাগলি
হয়ে গেলো আদি নিধির মিল।

সারা রাতই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ে। এই বৃষ্টি খুব সহজে শেষ হওয়ার নয়। কাল সারা রাত ছিলো আজও হয়ত সারা দিন থাকবে। আজ আবার ইভার বিয়ে।
নিধি আদির বুকে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। ঘুম ভেঙে গেছে কিছুখন আগেই। জীবনে শ্রেষ্ঠ একটা রাত পার করেছে। প্রিয় মানুষটির ভালোবাসা পেয়েছে। এতোদিন যার একটু এটেনশন পাওয়ার জন্য এতো লড়াই করেছে। আজ তার ভালোবাসা পেয়ে পরিপূর্ণ হয়েছে নিধি।
ভালোবাসার মানুষটির থেকে একটু ভালোবাসা পাওয়া যে কতোটা সুখের সেটা যারা পায় তারাই জানে।
ঘুমন্ত আদির মুখের দিকে এক পলক তাকায় নিধি। কতো নিষ্পাপ মুখটা। এই মুখটা দেখে নিধি সারাজীবন কাটিয়ে দিতে চায়। কখনো চোখের আড়াল করতে চায় না নিধি। যত বাঁধা আসুক যত ঝড় আসুক কখনোই নিধি আদির হাত ছাড়বে না। যতদিন প্রাণ আছে ততোদিন আদি নিধিকে কেউ আলাদা করতে পারবে না।
নিধি মুখটা এগিয়ে নিয়ে আদির কপালে একটা চুমু দেয়।
“খুব ভালোবাসি আপনাকে। আমি কখনো ভাবি নি যে আপনার ভালোবাস পাবো। মরিচিকার পেছনে ছুঁটেছি আমি। আজ আমি সার্থক। পরিপূর্ণ আমি।

” আমিও আজ পরিপূর্ণ
চোখ বন্ধ রেখেই নিধির কোমর জড়িয়ে ধরে বলে আদি।
“আপনার ঘুম ভাঙলো কখনো?
নিধি থেমে থেমে আতস্থ হয়ে বলে।
” যখন পিচ্চিটা চুমু দিলো তখন।
মুচকি হেসে বলে আদি।
নিধি লাজুক হাসে।
“আচ্ছা ছড়ুন। আজ তো ইভা আপুর বিয়ে। তারাতাড়ি যেতে হবে আমাদের।
আদির হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলে নিধি।
” বিয়ে তো বিকেলে এখন তো সকাল
মিষ্টি করে হেসে বলে আদি।
নিধি আদির হাসি মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
“আপনার এই হাসিটাই আমি সারাজীবন দেখতে চাই। কখনো আর মুড অফ করবেন না। বা গোমড়ামুখো হয়ে থাকবেন না। সব সময় হাসি খুশি থাকবেন।
আদির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে নিধি।
“ওকে তবে তোমাকেও সব সময় দুষ্টুমি করতে হবে। আমার দুষ্টুমিষ্টি বদমাইশ নিধিকেই ভালো লাগে। লজ্জা ভয় জড়তা তোমাকে মানায় না। তবে লজ্জা যখন নারীর ভূষন তখন একটু আতটু লজ্জা পেয়ো কিন্তু লজ্জা পেয়ে লাল নীল হইয়ো না। বা লজ্জা পেয়ে আমার থেকে পালাই পালাই করবে না। ডান
নিধি একটু হাসে।
” ডান

নিধি ফ্রেশ হয়ে গোলাপি রংয়ের একটা শাড়ি পড়ে নেয়। এখন থেকে প্রতিদিন শাড়িই পড়বে। শাড়ি পড়লে ওকে বড় বড় লাগে।
ডেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে চিন্তা করছে কে করলো এরকম মহৎ কাজ। নিধি আর আদির জন্য একদম ফুলসজ্জা খাট সাজিয়ে দিলো। কাল তো সবাই গেছিলো ইভাদের বাড়িতে। তাহলে কে করলো? আজ নিধিকে এটা জানতেই হবে। যে করেই হোক। তাকে খুব ভালো করে মিষ্টি করে একটা থ্যাংকু বলে দেবে নিধি। তার জন্যই তো আদি কাল ওকে ভালোবাসি বললো।
রাতের কথা মনে পড়তেই একরাশ লজ্জা এসে জড়ো হয় নিধির চোখে মুখে। কিন্তু এখন তো লজ্জায় লাল হয়ে বসে থাকলে চলবে না। কাজ আছে। তারপর আবার কে করলো তাকে খুঁজতে হবে। সাজুগুজু করে ইভাদের বাসায় যেতে হবে। এতোগুলা কাজ রেখে বসে বসে লজ্জা পেলে আদি খুব বকা দিবে। রোমান্টিক বরটা আমার গোমড়ামুখো হয়ে যাবে। যেটা নিধি একদম করবে না।

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে