শুধু তুই ৩ পর্ব-৩৮+৩৯

0
1521

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ৩৮
#Tanisha Sultana

বিয়ে বাড়ির হট্টগোলের মধ্যে ইভার পাশে এক কোনে বসে আছে নিধি। সবার মধ্যে থেকেও নেই। মনের মধ্যে আদির করা অদ্ভুত কর্মকান্ডের কথা মনে পড়ছে আর না চাইলেও মুচকি হেসে ফেলছে। সবাই একে একে ইভাকে হলুদ লাগাচ্ছে। আর পাশে নিধি বসে আছে৷ আদি এসেও ইভাকে হলুদ লাগিয়ে গেছে। নিধি দিকে তাকিয়ে ছিলো। নিধি মুখ তুলে তাকায় নি আদির দিকে। মানুষটাকে বড্ড লজ্জা লাগছে।

হলুদের পর্ব শেষ হলেই নিধি স্টেজ থেকে নেমে যায়। এক কোনে গিয়ে দাঁড়ায়। আজ আর কোথাও সৌরভকে দেখে নি নিধি। হয়ত কোনো কাজে বিজি।
দুজন মহিলা নিধির দিকে এগিয়ে আসে।
“তোমার নাম কি?
নিধির চিবুক ধরে বলে একটা মহিলা।
নিধি কিছুটা ঘাবড়ে যায়। চেনা নেই জানা নেই হঠাৎ করে মহিলাটা এসে বললো
” নিধিরা নিধি। হতদম্ভ করে বলে নিধি।
“বাবার নাম কি?
তোমার বাবা কি করে?
বাসা কোথায়?
কোন ক্লাসে পড়ো?
ভাবি দেখেন তো আমার ছেলের সাথে মানাবে না কি? পাশের মহিলাটাকে বলে।
নিধি বেআক্কল বনে যায়। এতোগুলো প্রশ্ন। কোনটা ছেড়ে কোনটার উওর দেবে? হাত দিয়ে শাড়ির আচলে গিট লাগাচ্ছে নিধি। একটা ঢোক গিলে। মহিলা দুটো পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করছে। সুন্দর করে খোপা করা চুল গুলো খুলে দেখছে৷ নিধি পারছেও না এখানে থাকতে আর যেতেও পারছে না। বিরক্ত লাগছে।
” তোমার বাবার নাম্বারটা দাও তো মামনি?
মহিলাটি আবার বলে ওঠে।
নিধি কিছুটা চমকে ওঠে। এখন কি বলবে ভাবছে? মহিলাটি যে তার ছেলের বিয়ের জন্য নিধিকে পছন্দ করেছে এটা নিধি বুঝতে পেরেছে

“আন্টি ওর বিয়ে হয়ে গেছে।
পেছন থেকে আদি বলে। নিধি যেনো প্রাণ ফিরে পায়। বুকে হাত দিয়ে নিশ্বাস ফেলে। মহিলা দুটো ভেবাচেকা খেয়ে আদির দিকে তাকায়।
” আমার বউ ও। ছয় মাস আগেই আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে।
হেঁটে নিধির পাশে এসে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে।
“এতো ছোট মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে?
মহিলাটি বলে ওঠে।
” আপনিও তো এতো ছোট মেয়েকে আপনার ছেলের জন্য পছন্দ করেছেন
আসলে কি হয়েছে বলেন তো আজকালকার ছোট ছোট মেয়েরাই পাকনা বেশি৷ স্কুলে নিকনিক করো বেড়ায় শেষমেশ বাধ্য হয়ে বাবা মা বিয়ে দিয়ে দেয়।
নিধিও সেই রকম। তাই তো ধরে বেঁধে আমার সাথে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।
নিধিকে ঠেস মেরে বলে আদি।
নিধি কটমট চোখে তাকায় আদির দিকে।
মহিলা দুটো একবার নিধির দিকে তাকিয়ে চলে যায়।
নিধি কোমরে হাত দিয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় আদির দিকে।
“আমি নিকনিক করতাম? এতো বড় কথা বললেন আমাকে? আমি কখনোই নিকনিক করতাম না। খুব ভালো মেয়ে আমি। ভীষণ ভালো মেয়ে।
নিধি চেঁচিয়ে বলে। আদি দুই হাত কানে গুঁজে নেয়। তা দেখে নিধি আরও রেগে যায়।
” বুঝেছি তো
নতুন পাইছেন তো তাই এখন আমাকে ভালো লাগছে না। আমার ধুত ধরছেন। আমার কথা শুনবেন না বলে কারনেও আঙুল দিয়েছেন। জানি তো আমি। মানুষ নতুন কাউকে পেলে পুরনো মানুষটাকে ভুলে যায়।
অভিমানের সুরে বলে নিধি।
“হুমমম
আদি কানে আঙুল দিয়েই বলে।
আদির মুখে হুমম শুনে নিধি আরও হ্মেপে যায়। তরতর করে রাগ বাড়ছে।
” কি বললি তুই?
দ্বীগুন জোরে চেঁচিয়ে বলে নিধি। আদি চমকে কান থেকে হাত সরিয়ে তাকায়৷ একটু আগে নিধি কি বলেছে স্বর্ণ করতেই দাঁত দিয়ে জীভ কাটে।
“ইয়ে মানে
আদি ইনিয়ে বিনিয়ে কিছু বলতে যায় নিধি আদির পায়ে পারা দেয়।
” নেক্সট টাইম এই রকম কথা বললে না খুন করে জেলে বসে থাকবো বলে দিলাম।
বলেই নিধি হনহনিয়ে চলে যায়।
আদি মুচকি হাসে।
আদি ভয় পাচ্ছে পিচ্চি মেয়েটাকে। পিচ্চি মেয়েটার রাগ আদিকে ভয় পাওয়াচ্ছ। মেয়েটার হাতে খুন হওয়ার ভয় নয়৷ মেয়েটার কাছে বকা খাওয়ার ভয়। মিষ্টি মিষ্টি ঝগড়া লাগার ভয়। মেয়েটার নাক গুলানোর ভয়। কেঁদেও মেকাপ নষ্ট করার ভয়। ছোট ছোট দুষ্টুমি আদি আগে কখনো করতো না। ছোট থেকেই খুব ভদ্র আর কথা কম বলা আদির স্বভাব। জুঁইয়ের সাথে সম্পর্ক থাকা কালিনও কখনো আদি এরকম দুষ্ট মিষ্টি ঝগড়া করে নি। এটা আদির পছন্দ না। কিন্তু নিধি নামের এই পিচ্চি মেয়েটা যেদিন থেকে আদির জীবনে এসেছে সব কিছু পাল্টে দিয়েছে আদিকে ঝগড়া করতে শিখিয়েছে। হাসতে শিখিয়েছে। অভিমান করতে শিখিয়েছে। অভিযোগ পুশে রাখতে শিখিয়েছে। প্রেমে পড়তে শিখিয়েছে। ভালোবাসতে শিখিয়েছে। বড্ড রীনি আদি মেয়েটার কাছে।

এই মেয়েটা দুরে চলে গেলে আদি বাঁচবে না। থাকতে পারবে না। মরেই যাবে। এই মেয়েটা আদি আগলে রাখবে। সারাজীবন আগলে রাখবে। মনের মধ্যে পুশের রাখা যত ইচ্ছে স্বপ্ন আছে সব এই মেয়েটাকে দিয়ে পূরণ করবে। পৃথিবীর সব সুখ এনে দেবে নিধি নামের পিচ্চি মেয়েটার পায়ের কাছে।

এসব ভেবে মুচকি হাসে আদি।
নিধি দৌড়ে গাড়িতে চলে গেছে। বিয়ে বাড়িতে প্রচুর মানুষ কেউ ওকে কাঁদতে দেখলে নানান কথা জিজ্ঞেস করবে। যেগুলোর উওর দেওয়া কঠিন। তাই নিধি নিরবে কাঁদার জন্য গাড়িতে চলে গেছে। আদির “হুমমম” শব্দটা নিধিকে কাঁদাচ্ছে।

আদি জিসানকে তোহাকে নিয়ে বাসায় ফিরতে বলে ইভার সাথে কথা বলে নেয়। যে ওরা চলে যাচ্ছে। ইভার মা খাবার প্যাক করে আদির হাতে ধরিয়ে দেয়। আদি আর না করে না। বিরিয়ানি নিধির ভীষণ পছন্দ। বিরিয়ানি দেখে যদি মহারানীর রাগ ভাঙে। তাই নিয়ে নেয়।

আদি খাবারের প্যাক গাড়ির পেছনের ছিটে রেখে নিধির পাশে বসে। গালে হাত দিয়ে নিধির কান্না দেখছে। কান্না করার মতো তো আদি কিছু বলে নি। তবুও মেয়েটা কাঁদছে। আদি জানতো এখন নিধি কাঁদবে। এই মেয়েটা কখন কি করবে বা করতে পারে তার সবটা আদি মুখস্থ।
এখন আদি শান্তনা দিতে গেলে আরও দ্বীগুন জোরে কাঁদবে।
তবুও আদি গলা ঝেড়ে নেয় কিছু বলার জন্য।
“কাঁদছো কেনো? কেউ কিছু বলেছে? কে বলেছে? কি বলেছে? কেনো বলেছে? তার নামটা একটা বলো? দেখো আমি কি করবি? মেরে তক্তা বানিয়ে দেবো আমার বউকে কথা শোনায় কতো বড় সাহস। জাস্ট নামটা বলো? যদি এতো এতো মানুষের মধ্যে তাকে খুঁজতে আমার কষ্ট হবে তবুও তাকে আমি খুঁজে বের করবো।
হাতা গুটাইতে গুটাইতে বলে আদি।
নিধি ভেজা চোখ দুটো দিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে আদির দিকে তাকায়। কিন্তু কিছু বলে না।
নিধির শান্ত চাহনি দেখে আদি হতাশায় পড়ে যায়। নিজেকে নিজেই বকতে থাকে। কেনো যে ” হুমমম” বলতে গেলো।

নিধি আদিকে অবাক করে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে আদির বুকে মাথা রাখে। আদি পরম যত্নে নিধির মাথায় হাত বুলায়।
“সরি আমি মজা করে বলেছিলাম।আর কখনো এমন বলবো না৷ এবারের মতো সরি। পরেরবার এমন কিছু করলে আমাকে খুন করে তুমি জেলে গিয়ে বসে থেকো৷ কেমন?
আদি মুচকি হেসে বলে। নিধিও হাসে কিন্তু সেটা আদির আড়ালে। আদিকে তো একটা শাস্তি দিতেই হয়।

নিধি আদির শার্টে নাক মুছে নিজের ছিটে এসে বসে তৃপ্তির হাসি হাসে।
আদি শার্টের দিকে একবার তাকাচ্ছে তো একবার নিধির দিকে।
” এটা কি করলে তুমি? ইয়াক ঘৃন্না করছে। এভাবে আমি বাসায় যাবো কি করে?
নাক সিটকে বলে আদি।
নিধি আদির শার্টের দিকে তাকাতে ওরও বমি পাশ। নাক সিটকে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
আদির রাগ উঠে যায়।
“তোমাকে তো আমি
বলেই তুই হাত তুলে নিধির দিকে এগিয়ে যায়।
” আল্লাহ বাঁচাও
নিধি চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে বলে।

চলবে

#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ৩৯
#Tanisha Sultana

নিধি কান ধরে বারবার সরি বলেই যাচ্ছে। চোখ খিঁচে বন্ধ করে আছে৷ আদি শক্ত চোখে তাকিয়ে আছে নিধির দিকে। শার্টের দিকে তাকাতেই আদির মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এটা কোনো কথা? শার্টে নাক মোছা কোন ধরনের অভদ্রতা? এই মেয়েটা লাইফটাকে নরক জঙ্গল বানিয়ে দিচ্ছে। নিজেকে কোনো জোকার মনে হচ্ছে। খুব করে বকে দিতে ইচ্ছে করছে নিধিকে। কিন্তু নিধির ইনোসেন্ট ফেস দেখে বকা দিতে বাঁধছে। কেমন করে মুখ করে আছে যেনো ভাজা মাছ উল্টে খেতে পারে না। অথচ এই মেয়েটা মারাক্তক দুষ্টু। যাকে বলে নবেল প্রাপ্ত।

ঠোঁট গোল করে বিরক্তির নিশ্বাস ছাড়ে আদি। শার্ট খুলে পেছনের ছিটে ছুঁড়ে মারে। এখন আদির পরনে শুধু সেন্টার গেঞ্জি। নিধি চোখ হালকা খুলে দেখে আদি নিধির থেকে সরে গেছে। নিধি পুরোপুরি চোখ খুলে। চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিকঠাক করে নেয়।
“আসলে হয়েছে কি আমি খুব ইমোশনাল হয়ে গেছিলাম। তাই হুট করে আপনার শার্টে নাক মুছে ফেলেছি। কি আর করবেন বলেন? আমি তো আপনার একটা মাএ বউ তাই না?
ভাব দেখিয়ে বলে নিধি।
” সিরিয়াসলি
ইমোশনাল হয়ে কেউ শার্টে নাক মুছে? এসব আজগুবি কথা তুমি ছাড়া আর কারো কাছে শোনা যায় না। ইডিয়ট।
আদি কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলে।
“ইয়ে মানে আমি মুছি। তাছাড়া আপনার শার্টটা এতো সফ্ট আর সাইনিং যে খালি নাক মুছতে ইচ্ছে
আদি চোখ পাকিয়ে তাকাতেই নিধি চুপসে যায়। একটা ঢোক গিলে বলে
” ইয়ে মানে নাহহহ আপনার শার্টে নাক মুছতে ইচ্ছে হয় না। আমি আর কখনোই আপনার শার্টে নাক মুছবো না দরকার পড়লে আপনার টাওয়াল দিয়ে মুছবো। বা আপনার রোমাল প্যান্ট। আরে আরে এখনই অব্ভ্যাস করে ফেলুন। বাচ্চা কাচ্চা হলে তো এমনটাই করবে।
আদি দাঁত কটমট করে। কাঁচা চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে নিধিকে। ননস্টপ বকবক করেই যাচ্ছে। একটুও ভয়ডর নেই। নেহাত আদি ওর ইনোসেন্ট ফেস দেখে গলে গেছে। নাহলে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দিতো।

“প্লিজ দাঁত কটমট করবে না। বাই এনি চান্স যদি দাঁত ভেঙে যায় তাহলে আমার ফিউচার বেবিরা তো আপনাকে বাবা না বলে দাদু বলবে।
আল্লাহ তখন আমি কি করবো? না না প্লিজ দাঁত কটমট করিয়েন না। রাগ হলে চুল টানুন। নাহহ চুলও টানা যাবে না। চুল পড়ে গেলে তো আমার আরই টাক হয়ে যাবে। হাই আল্লাহ
নিধি বিচলিত হয়ে বলে।
আদি মাথা চেপে ধরে।
” ও মা কি হলো আপনার? মাথা ব্যাথা করছে । না কি চুল? আমার কথায় বিরক্ত হচ্ছেন আমি জানি তবুও আমি চুপ করবো না। কারণ এসব সত্যি কথা। আপনাকে মানতে হবে। আমি কিন্তু
নিধি এক নাগারে কথা বলতে থাকে। আদি নিজের ছিট বেল খুলে ফেলে। নিধির ছিটে হাত দিয়ে নিধির দিকে ঝুঁকে ঠুস করে নিধির গালে চুমু দেয়। নিধি স্তব্ধ হয়ে যায়। অর্ধেক বলা কথাটা গলায় আটকে যায়। গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। মুহুর্তেই ফর্সা গাল দুটো লাল হয়ে যায়। চোখ তুলে আদির দিকে তাকাতে পারছে না নিধি। আদি এমন কিছু করবে ভাবতেই পারে নি।

আদি নিজের ছিটে এসে বসে। ছিট বেল্ট পড়ে নেয়।
আদি নিধির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
“বাঁচা গেলো। এখন অন্তত শান্তি মত ডাইভ করতে পারবো।
আদি গাড়ি চালানো শুরু করে। নিধি তো মুখে কুলুপ এঁটেছে।
” এতোখন তো খুব কথা বলছিলে এখন কথা কই গেলো? আসলে তোমাকে চুপ করানোর রাস্তা এটাই। এখন থেকে যখনই তুমি বেশি কথা বলবে আমি তোমাকে এভাবেই চুপ করাবো।
মুচকি হেসে বলে আদি।

নিধি আদির অগোচরে এক পলক তাকাতে চায় আদির দিকে। কিন্তু আদির দিকে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। নিধির লজ্জা আরও বেরে যায়। লজ্জায় আস্ত হয়ে গেছে।

বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। শীতকালে বৃষ্টি হওয়ার ফলে শীত বেরে গেছে। কিন্তু নিধির খুব করে নিধির ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে ভিজতে। কতোদিন বৃষ্টিতে ভেজা হয় না। খুব করে ইচ্ছে করছে জানালা খুলে হা বাড়িয়ে দিয়ে বৃষ্টি উপভোগ করতে। কিন্তু লাটসাহেবের জন্য সেটা করা যাবে না। জানালা খুললেই বকা দিবে।
নিধির ভালোই শীত লাগছে। নিধি আদির দিকে তাকায়। আদিরও নিশ্চয় খুব ঠান্ডা লাগছে। তার গায়ে তো কিছুই নেই পাতলা একটা গেঞ্জি ছাড়া।।
“আপনার কি খুব বেশি ঠান্ডা লাগছে?
নিধি মিনমিনিয়ে জিজ্ঞেস করে।
” নাহহ ঠিক আছি।
আদি এক পলক নিধির দিকে তাকিয়ে বলে।
“সরি
” কেনো?
আপনার শার্ট নষ্ট করে দিলাম। তাই তো আপনার ঠান্ডা লাগছে।
অপরাধীর সুরে বলে নিধি।
“সেরকমটা না
আদি মুচকি হেসে বলে।
নিধি নিজের শাড়ির আচল ছাড়িয়ে আদির গায়ে জড়িয়ে দেয়।
” কি করছো তুমি?
“এতে ঠান্ডা কমবে
ভালো করে জড়িয়ে দিয়ে বলে নিধি।
” হুমমম।

রাত দশটার দিকে আদি নিধি বাসায় পৌছায়। বৃষ্টির বেশ কমেনি বরং কিছুটা বেড়েছে। এখন গাড়ি থেকে নেমে বাসায় পৌছাতে পৌঁছাতে ভিজে যাবে। কিন্তু গাড়িতেও কতোখন বসে থাকবে। আদি নিধির শাড়ি গুটিয়ে নিধির কাছে দেয়।
“এই বৃষ্টি আবারও আর সময় পেলো না।
আদি বিরবির করে বলে।
” বৃষ্টি ভালো তো। আমার তো দারুণ লাগছে।
নিধি খুশিতে গদগদ করে বলে।
“তোমার তো দারুণ লাগবেই। ইডিয়েট না তুমি?
নিধি ভেংচি কাটে আদিকে।
আদি ছিট বেল খুলতে খুলতে দেখে নিধি নেমে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজছি।
“ইডিয়েট একটা
আদি বিরবির করে বলে।
আদি গিয়ে নিধির হাত ধরে।
” তারাতাড়ি চলো। ভিজে যাচ্ছো তো।
আদি নিধির হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে যেতে বলে।
নিধি বিরক্তির শব্দ বের করে মুখ দিয়ে।
“নিরামিষ একটা। রোমান্টিক ওয়েদার কোথায় একটু এক সাথে ভিজবো তা না টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে।
নিধি মুখ বাঁকিয়ে বলে।
আদি থেমে যায়। নিধির কথা গুলো শুনে ফেলে আদি।
” এটা হয়ত বা রোমান্টিক ওয়েদার বাট এখন শীত কাল। বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা লেগে যাবে। যেটা আমি চাইছি না। শীত চলে গেলে সারাদিন রাত বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে রোমাঞ্চ করবো। কেমন?
আদি চোখ টিপে বলে। নিধি ভরকে যায়। এতো আস্তে বলা কথা কি করে শুনলো?
“এবার যাওয়া যাক।
আদি সামনের রাস্তা দেখিয়ে বলে।
নিধি লাজুক হাসে।

দুজনই ভিজে একাকার হয়ে গেছে। নিধির এবার ভীষণ ঠান্ডা লাগছে। কাপছে রীতিমত।
” চলো তারাতাড়ি চেঞ্জ করতে হবে।
আদি আর নিধি রুমে চলে যায়। কিন্তু রুমে গিয়ে দুজনই অবাক। সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো পুরো রুমটা। একদম ফুলসজ্জা খাট সাজানো। নিধি বেশ লজ্জা পেয়ে যায়।
“এসব করলো কে?
আদি পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে বলে।
” বুঝতে পারছি না।
নিধি বলে।
“ঠিক আছে বুঝতে হবে না তুমি চেঞ্জ করে আসো।
আদি তারা দিয়ে বলে।
নিধি কাবাড থেকো ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
কিন্তু ওয়াশরুমে গিয়ে নিধি আরও অবাক। কারণ সুন্দর একটা শাড়ি রাখা ওখানে।
” কে রাখলো? নিশ্চয় জিসান হবে।
নিধি মনে মনে খুব খুশিই হয়। চট করে শাড়িটা পড়ে নেয়।

আদি রুমে চোখ বুলিয়ে মুচকি হাসে।
“যাক তাহলে আজকেই ফুলসজ্জাটা সেরেই ফেলি। আজ একটু আমিষ হই। একদম পিচ্চিটার মনের মতো।
মনে মনে বলে আদি।
রুমে থেকেই ভেজা জামাকাপড় পাল্টে নেয় আদি।

নিধি ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হয়। শাড়িটা ঠিক মতো পড়তে পারে নি। কোনোরকমে পেঁচিয়ে এসেছে। এক হাতে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছছে আরেক হাত দিয়ে শাড়ি ধরে রেখেছে।
আদির সামনে এভাবে যাবে কি করে? ভাবতেই লজ্জা লাগছে নিধির।
” শাড়ি পেলে কই?
এক হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে বলে নিধির।
নিধি কেঁপে ওঠে। হঠাৎ আগমনে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। এতোখন তো কোথাও দেখা গেলো না আদিকে। তাহলে এখন কোথা থেকে বের হয়েছে?
“ওওওয়াশরুমে রাখা ছিলো।
থেমে থেমে মাথা নুয়িয়ে বলে নিধি।
” ওহহহ আচ্ছা

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে