#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ১৬
#Tanisha Sultana
বাড়িতে এসে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে নিধি। আজ আর স্কুলে যাবে না। পুরো সময়টা মায়ের সাথে কাটাবে। বাবা নতুন চাকরি পেয়েছে। অফিসে গেছে। খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে মাকে আদির করা ব্যবহার গুলো। কিন্তু তবুও বলছে না নিধি।
আজ এবাড়িতেই থাকবে বলে ঠিক করেছে নিধি। ওই বাড়িতে ফেরার বিন্দু মাএ ইচ্ছে নিধির নেই।
আজ দুপুরেই আদি বাড়ি ফিরে আসে। অফিসে তেমন কাজ নেই৷ বাড়িতে এসেই দেখতে পায় সবাই এক জায়গায় বসে গল্প করছে। এসব আদির কোনো কালেই ভালো লাগে না। রুমে চলে যায়।
লম্বা একটা সাওয়ার নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। আশ্চর্য বেপার হলো নিধিকে দেখতে পাচ্ছে না। কি হলো? মেয়েটা কোথায়? হয়ত আম ছিঁড়ে খাচ্ছে। আজ আদি ওকে হাতে নাতে ধরবে। আর ইচ্ছে মতো বকে দেবে।
রাগে গিজগিজ করতে করতে ছাঁদে যায়। নাহহহ নিধি নেই। বেশ অবাক হয় আদি। কোথায় গেলো?
ছাঁদ থেকে আসার সময় রান্না ঘর মায়ের ঘর দেখে আসে সেখানেও নেই। হয়ত স্কুল থেকে ফেরে নি।
ঘুমিয়ে পড়ে আদি।
বিকেলের দিকে ঘুম থেকে উঠে একটু হাঁটতে বের হয়।
নিধি ওর কাজিন রনির সাথে বের হইছে। আজ ইচ্ছে মতো ফুসকা খাবে্ রনি খাওয়াবে।
স্কুলের কাছেই ফুসকার দোকান। খুব মজা করে রনি আর নিধি ফুসকা খাচ্ছে। আদি দুর থেকে নিধিকে পেছন থেকে দেখে। মনে হচ্ছে ওটা নিধি। আবার মনে হচ্ছে নিধি না। শিওর হওয়ার জন্য এগিয়ে যায়। দেখে নিধি একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে ফুসকা খাচ্ছে। মাঝেমধ্যে আবার ছেলেটা নিধিকে ফুসকা খাইয়ে দিচ্ছে।
“এটা তোমার স্কুল
আদির মতো কন্ঠ পেয়ে নিধি পেছনে তাকায়। আদি কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
“আপনি এখানে?
নিধি দাঁড়িয়ে বলে।
” বাড়ি চলো
নিধির হাত মুঠো করে ধরে বলে আদি।
“খাওয়া শেষ করে যাক।
রনি বলে।
” দরকার নেই
মামা কতো হয়েছে? ফুসকা ওয়ালাকে জিজ্ঞেস করে আদি। বিল মিটিয়ে নিধির হাত ধরে হাঁটা শুরু করে। রনি ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
কিছুটা হাঁটার পরে আদি বলে
“ছেলেটা কে?
” যেই হোক আপনাকে বলবো কেনো?
আদি আর কিছু বলে না।
“হাতটা ছেড়ে দেওয়া হোক
নিধি বলে।
আদি হাত না ছেড়ে আরও শক্ত করে ধরে। নিধি ভেংচি কাটে।
একদম রুমে এসে নিধির হাত ছাড়ে আদি। নিধি হাফ ছাড়ে।
” আমাকে না বলে কখনো কোথাও যাবে না।
“যাবো
” গেলে পা ভেঙে রেখে দেবো
” গোমড়ামুখো কোথাকার।
ভেংচি কেটো বলে নিধি রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আদি ঠোঁট মেলে একটু হাসে।
শশুড় মশাইয়ের ফোন দিয়প কল করে মাকে জানিয়ে দেয় ও চলে এসেছে এবাড়িতে।
আজ রাতের রান্নাটা নিধি করবে বলে ঠিক করেছে। শাশুড়ীকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছে। কোমরো ওড়না গুঁজে রান্না শুরু করে দেয় নিধি। আদি বেশি তেল মশলা দিয়ে রান্না খায় না। এটা নিধি জানে না।
গরুর মাংস আর রুটি রান্না করে নিধি।
খাবার টেবিলে খাবার সাজিয়ে ফট করে পিক তুলে ফেসবুকে পোষ্ট দেয় “প্রথমবার রান্না করলাম”
আদি রুমে বসে ফেসবুক দেখছিলো। তো নিধির সদ্য করা পোষ্টটা চোখে পড়ে।
“বাঁদরটা রান্না করেছে?
সবার খাওয়া শেষ হলে নিধি খেতে বসে। তখনই শাশুড়ী মা বলে
” তোমার আর আদির খাবার রুমে নিয়ে যাও। বরের সাথে খেতে হয়।
নিধি নিজের খাবার গুছিয়ে আদির খাবার বেরে রুমে নিয়ে যায়।
আদি ল্যাপটপে করাজ করছিলো নিঊি আদির সামনে খাবার নামিয়ে রেখে বিছানায় বসে নিজে খাওয়া শুরু করে।
প্রথমবার রান্না করলেও বেশ ভালো রান্না করেছে নিধি। নিজের খাবার খেয়ে নিজেই মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
আদি এইরকম খাবার খায় না। কিন্তু নিধি নিজে একা একা রান্না করেছে বলে খাওয়ার লোভ সামলাতে পারে না। গরুর মাংসতে আদি এলার্জি আছে। তবুও খাওয়া শুরু করে।
খাওয়া শেষ করে নিধি পড়তে বসে।
“শোনো
আদি নিধির পাশে বসে বলে।
” বলুন
বইয়ের দিকে নজর দিয়ে বলে নিধি।
“আমাকে কাল চিটাগাং যেতে হবে।
” তো
“তুমি যাবে আমার সাথে।
” নাহহহহ
“তোমার কাছে জানতে চায় নি। যা বলছি শোনো
নিধি মুখ বাঁকিয়ে তাকায় আদির দিকে।
” তোমার এক্সামের তিন মাস বাঁকি আছি। আমি তোমাকে প্রতিদিন দুই ঘন্টা করে পড়াবো। চলবে?
“নাহহহহ চলবে না। আমি যাবো না।
” অতিরিক্ত কথা বলা আমার পছন্দ না।
আদি রাগ দেখিয়ে ব্যাগ প্যাকিং শুরু করে দেয়।
ব্যাগ গোছানো শেষ করে দেখে নিধি বইতে মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে আছে। আদি নিধির থেকে বই সরিয়ে নেয়। বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বই গুলো গুঁছিয়ে টেবিলে রাখে। নিধিকে ঠিকভাবে শুয়িয়ে দিয়ে আদিও নিধির পাশে শুয়ে পড়ে। অফিসের অনেক কাজ বাকি আছে। কিন্তু আদির কোনো কাজ করতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
আজ নিধিকে অন্য ছেলের সাথে দেখে আদির কিছুটা খারাপ লেগেছে। বাড়ন্ত বয়স। ভুল করার বয়স এটা। নিধি একবার ভুল করে আদিকপ বিয়ে করে ফেলেছে। এবার যদি আদির থেকে অবহেলা পেয়ে অন্য কাউকে খুঁজে নেয়? নিধি তো আদির বিয়ে করা বউ। আদির উচিৎ নিধিকে সময় দেওয়া।
আদি নিধির মুখের দিকে একটু ঝুঁকে।
“এবার আমাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক করে নেবো। এভাবে আর কতো দিন? তুমি যে মেয়ে নতুন খুঁজে নিতে তোমার দুই দিনও লাগবে না। খুব তো বড় গলায় বলেছিলে ভালোবাসি। এখন কোথায় গেলো ভালোবাসা? অন্য ছেলের সাথে ভালোই তো ফুসকা খাচ্ছিলে। চাপা বাজ একটা।
বিরবির করে বলে আদি।
নিধি একটু নরেচরে আদির পেটের ওপর পা দেয়।
” ইডিয়েট একটা
খুব সকালে আদি নিধির থেকে সরে আছে। মাঝখানে কোলবালিশ দিয়ে নিধির দিকে পেছন ফিরে শুয়ে পড়ে।
ইচ্ছে না থাকলে নিধিকে আদির সাথে যেতে হয়। সবার থেকে বিদায় নিয়ে ওরা বেরিয়ে পরে। আদি নিধিকে বোরকা পড়িয়েছে। এতো গরমের মধ্যে বোরকা পরে নিধির অবস্থা শেষ। বাসের পেছনের ছিটে বসে আছে ওরা। মারাক্তক গরম আজ। কাঁঠ ফাঁটা রোদ্দুর।
রাস্তার মাঝখানে বাস দাঁড়িয়ে আছে। বাস বোঝাই যাএী তবুও বাসের কন্টাক্টার ডেকেই যাচ্ছে। নিধির বেশ বিরক্ত লাগছে। শুধু চোখের ওপরে একটুখানি কপাল ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না নিধি।
আদির পরনে সাদা শার্ট ভিজে শার্টের নিচের গেঞ্জি দেখা যাচ্ছে।
নিধি এবার অধর্য হয়ে উঠে দাঁড়ায়।
“কি হলো
আদি জিজ্ঞেস করে।
” এই যে কন্টাক্টার মামা এদিকে
“কি কন
” দুই মিনিটের মধ্যে যদি বাস না ছাড়েন তাহলে আপনাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবো। আর ডাইভারকে আমার ছিটে বসিয়ে আমি ডাইভ করবো। বলে দিলাম
রেগে চেঁচিয়ে বলে।
“আপা আর একটু পরেই যামু
” কেমন মানুষ আপনারা? পা ফেলার জায়গা নেই তবুও লোক ডেকেই যাচ্ছেন।
” শোনেন যারা দাঁড়িয়ে যাবেন তারা কেউ দাঁড়িয়ে যাবেন না। ওনার কাছে ছিট চান। যদি না দিতে পারে তাহলে
সবাই নিধির কথায় সায় দেয়।
কন্টাক্টার ডাইভারকে গাড়ি চালাতে বলে।
নিধি বসে পড়ে।
“বেশি কথা বলো কেনো তুমি? আদি রেগেমেগে বলে
নিধি আদির হাতে একটা খাতা ধরিয়ে দিয়ে বলে।
” বাতাস দেন
আদি নিধিকে বাতাস দিতে থাকে।
“একদম অতিরিক্ত কথা বলবা না। অচেনা কারো সাথে কথা বলবা না। চিটাগাং গিয়ে সারাক্ষণ রুমের মধ্যে থাকবা।
আদি বলতে থাকে। নিধি বাসের জানালার সাথে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমতে থাকে। আদির এরকম বোরিং কথা শুনলে নিধির শুধু ঘুম পায়।
আদি নিধির মাথাটা নিজের কাঁধে রাখে। বাসের জানালা খুলে দেয়। আর শো শো করে বাতাস আসতে শুরু করে। নিধি আদির শার্ট মুঠো করে ধরে পরম শান্তিতে ঘুমতে থাকে।
চলবে
#শুধু তুই ৩
#পর্বঃ১৭
#Tanisha Sultana
বাসায় এসে নিধি বোরকা না খুলেই শুয়ে পড়ে। আদিও বেশ ক্লান্ত। এতোটা জার্ন তারওপর আবার বাসে। টারটিখানি কথা না।
“হেই ইডিয়েট চেঞ্জ করে ঘুমাও
আদি ধমক দিয়ে বলে। নিধির কান ওবদি আদির ধমক পৌছায় না। আদি নিধির লাগেজটা একপাশে রেখে দেয়। নিজের লাগেজ খুলে শার্ট আর টাউজার বের করে ফ্রেশ হতে যায়।
ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে নিধিকে টেনে তুলে। নিধি বসে বসেও ঘুমচ্ছে।
” ওই উঠো। চোখ খুলো
আদি কিছুটা জোরে বলে।
নিধি পিটপিট করে চোখ খুলে। আবার শুয়ে পড়তে যায়। আদি থামিয়ে দেয়। নিধি বিরক্ত হয়ে তাকায় আদির দিকে।
“পবলেম কি আপনার? তেঁতে উঠে বলে নিধি।
” চেঞ্জ করে কিছু খেয়ে ঘুমাও। শান্ত গলায় বলে আদি।
“ধুরররর
সারাক্ষণ মা বাবার মতো খেকখেক করে। তুই বর তুই আদর করবি ভালোবাসা দিবি ভালোবাসা নিবি
তুই কেন সারাক্ষণ খেকখেক করবি। বেশ রেগে বলে নিধি।
আপনাআপনি আদির ভ্রু কুচকে যায়। কপালে দুটো ভাজ ফেলে নিধির দিকে তাকায়।
” এই যা এবার থাপ্পড় খাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে যা নিধি।
নিধি চোখ মুখ খিঁচে বিরবির করে বলে।
“যাও
আদি খুকখুক করে কেঁশে বলে। আদির এরকম কথা শুনে নিধি চোখ খুলে। এক গাল হাসি দিয়ে ফ্রেশ হতে যায়।
আদি নুডলস রান্না করে। নিধি একদম গোছল করে বের হয়। ঢিলেঢালা টিশার্ট আর প্লাজু। ভেজা চুল গুলো মুছছে এক হাত দিয়ে আরেক হাতে ভেজা কাপড়চোপড়। আদি নুডলস হাতে বসে ছিলো। নিধির বের হওয়া দেখে নিধির দিকে।
গভীর চোখে আদি নিধির দিকে তাকিয়ে আছে। এভাবে তাকিয়ে থাকা ঠিক না ভেবে আদি চোখ সরিয়ে নেয়।
” এখানে তুমি ছাড়াও একজন পুরুষ মানুষ থাকে। এটা মাথায় রেখে ড্রেস পড়বা।
গম্ভীর সুরে বলে আদি।
নিধি আদির দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকায়।
“আমি এইসবই পড়বো। পুরুষ মানুষের আমাকে দেখতে অসুবিধা হলে বলে দিক চলে যাবো। তেজী গলায় বলে নিধি।
” ইডিয়েট
গোমড়ামুখো
নিধি দাঁত কটমট করতে করতে জামাকাপড় বেলকনির গ্রিলের সাথে মেলে দিয়ে আসে। আদির পাশে বেশ দুরত্ব রেখে বলে। নুডলসের বাটি হাতে নিয়ে টামচে পেচিয়ে মুখে পুরতে গিয়ে কিছু একটা ভাবে তারপর বাটিটা বিছানার মাঝখানে রেখে ফোন খুঁজে কয়েকটা পিক তুলে। তারপর খাওয়া শুরু করে।
আদি পুরোটা দেখছিলো। মুখে নুডলস পুরে নেয়।
“তুমি সব কিছু ফেসবুকে পোষ্ট কেনো করো? এতে তোমার কি লাভ হয়? চিবতে চিবতে বলে আদি।
” ভালো লাগে। আমি মনে করি যা ভালো লাগে যা মন চায় তাই করা উচিৎ।
“স্টুপিট একটা।
আদি চোখ পাকিয়ে বলে।
নিধি তারাতাড়ি খাওয়াটা শেষ করে বাটি রেখে শুয়ে পড়ে।
” তোমার কিন্তু আমার কাছে পড়ার কথা ছিলো। আদি নিজের বাটিটা টেবিলে রেখে বলে।
“আজ এনার্জি নেই। কাল পড়বো। নিধি কোম্বল দিয়ে মুখ ঢেকে বলে।
” সবে তো বিকেল। এখন একটু পড়ো।
নিধি আর কিছু বলে না। ঘুমের ভাব ধরে থাকে। এখন ওর পড়তে ইচ্ছে করছে না।
আদি নিজে অন্য রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে।
রাত নয়টার দিকে নিধির ঘুম ভেঙে যায়। বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। জোরে জোরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। পৃথিবীতে নিধিই একমাত্র মেয়ে যে বিদ্যুৎ চমকানো, তেলাপোকা এইসবে ভয় পায় না।
জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় নিধি। দুইতালা ছোট একটা বাড়ি। দুই তালায় মোট চারটা বাসা। নিচে দুইটা ওপরে দুইটা। নিধি ওপরের রুমটায় আছে। জানালা খুলে দিতে জোরে বিদ্যুৎ চমকে ওঠে। নিধি দুই কানে হাত দিয়ে চোখ মুখ খিঁচে ফেলে। ভয় পেয়ে না। মা বলেছে বিদুৎ চমকানোর আলোটা চোখে পড়লে চোখের হ্মতি হয় তাই। শব্দ চলে গেলে নিধি তাকায়। পাশের বাসার ছাঁদে নানানরকমের ফুলগাছ। ফুলগাছে নানারকমের ফুলও ফুটে আছে। বৃষ্টির ফোঁটা ফুলগাছে আর ফুলকে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে। মারাক্তক সুন্দর লাগছে।
নিধি অনমনে হেসে ফেলে।
জানালা দিয়ে হাত বারিয়ে বৃষ্টি ছোঁয়ার চেষ্টা করে। বৃষ্টির ফোঁটা হাতে এসে পড়ছে নিধি।
“ওখানে কি করছো তুমি?
আদির কন্ঠ পেয়ে নিধি চট করে হাত ভেতরে ঢুকিয়ে নেয়।
” কিছু না
হাতটা পেছনে লুকিয়ে বলে নিধি।
“এসো পড়তে বসো। দায়িত্ব নিয়ে ফেলছি এবার তুমি ফেল করলে আমার নাক কাটা যাবে।
নিধি ভেংচি কেটে বই নিয়ে বিছানায় বসে। আদি নিধির পাশে বসে।
” বই বের করো।
একঘন্টা নিধিকে পড়ায় আদি। এই এক ঘন্টায় বৃষ্টি একটুও কমে নি। আপন গতিতে নেমেই যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে বিদুৎ চমকানো তো আছেই। বেশ শীত করছে।
“আপনার গাছের সব গুলো আম এই ঝড়ে পড়ে যাচ্ছে।
নিধি হিসাববিজ্ঞান অংক করছিলো। তারমধ্যে বলে ওঠে।
আদি শান্ত চাহনিতে নিধির দিকে তাকায়।
” আমি বাড়ি থাকলে সকাল বেলা লঙ্কা গুড়ো আর লবন দিয়ে কতো মজা করে আম গুলো খেতে পারতাম। ইসসসসস
এখন আম গুলো কে খাবে?
কলম মুখে দিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে নিধি।
“খাওয়ার মানুষ অনেক আছে। তুমি পড়ো। ইডিয়েট
ধমক দিয়ে বলে আদি।
“” গোমড়ামুখো কোথাকার।
বিরবির করে বলে নিধি।
আরও কিছুখন পড়ানোর পরে আদি বলে আজ আর পড়তে হবে না। এতে নিধি বেশ খুশি হয়। মুখের ওপর পড়বো না বলার সাহস নিধির নেই। ফ্রী তে ধমক খাওয়ার ইচ্ছে নেই। তাই বলতে পারছিলো না এখন আদি চলে যাওয়ার পরে জগ পেতে বৃষ্টির পানি ধরবে।
এক গাল হেসে নিধি বই বন্ধ করে গুছিয়ে ফেলে।
আদি
“বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে একা থাকতে পারবা?
আদি জিজ্ঞেস করে।
” একদম পারবো। আমি ছোট খাটো জিনিসে ভয় পায় না।
সাহস দেখিয়ে বলে নিধি। আদি এক পলক নিধির দিকে তাকিয়ে চলে যায়। আদি যেতেই নিধি লাফিয়ে ওঠে। শীলা বৃষ্টি হচ্ছে। এবার নিধি পাথম কুরাবে।
কিচেন থেকে জগ এনে আবার জানালা খুলে হাত বারিয়ে জগ ধরে রাখে। ঝন ঝন করে জগের মধ্যে বৃষ্টির পানি আর পাথর পড়ছে। নিধির খুশি আর দেখে কে।
জগ ভরে গেলে হাত ভারি হয়ে আসে। খুব সাবধানে জগটা রুমে নিয়ে আসে। একটা পাতিলে জগের পানি ঢেলে সেখান থেকে পাথর গুলো আলাদা করে নেয়। পরে পাতিলের পানি ফেলে দেয়। সেই পাথরের পিক তুলে ফেসবুকে আপ দেয়। এসব করতে করতে বৃষ্টি থেমে যায়।
আদি রুমে বসে ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছিলো। হঠাৎ চিটাগং চলে আসার কারণটা অফিস না। অন্য কারনে ওরা এখানে চলে এসেছে। কারণটা আদি আর আদির বাবা ছাড়া কেউ জানে না।
ফোনের ডাটা অন ছিলো আদির। একটা নোটিফিকেশন আসে। আগ্রহ নিয়ে নোটিফিকেশন চেক করতে গিয়ে দেখে নিধি পাথর ফেসবুকে পোষ্ট করেছে।
“এই মেয়েটা আস্ত একটা বাঁদর। মাএ কাল জ্বর সারছে আবার আজকেই জ্বর আসবে। একে আমার সাথে এনেই আমি ভুল করেছি। একবার সব গুলো পাথর ওকে আমি খাওয়াবো।
আদি চোয়াল শক্ত করে নিধির রুমে যায়। নিধি পাঘর গুলো বোতলে ভরে টেবিলের ওপর রেখে বিছানায় বসে পড়ছিলো।
” আমার না সব সময় ইচ্ছে করে থাপ্পড় দিয়ে তোমার গালটা লাল করে রাখি।
আদির কথা শুনে নিধি দুই গালে হাত দেয়।
“আমার না এলার্জি আছে। আপনি আমাকে থাপ্পড় মারলে কি হবে জানেন? আপনি ঠিক যতটা জোরে থাপ্পড় মারবেন তারথেকেও বেশি আমার গালটা ফুলে যাবে। কারণ আমার এলার্জি আছে। নিধি অসহায় ফেস করে বলে।
” এই তুমি কি আমাকে পাগল করে ছাড়বে? কোমরে হাত দিয়ে বলে আদি।
“আমি কি করলাম?
ঠোঁট উল্টে বলে নিধি।
” বৃষ্টিতে ভিজছো কেনো? এখন তোমার জ্বর হবে আর আমার সেবা করতে হবে। বিরক্ত হয়ে বলে আদি।
“জ্বর হবে না। কারণ আমি ঔষুধ খেয়েই বৃষ্টির পানিতে হাত দিছিলাম।
একটু হেসে বলে নিধি।
” উদ্ধার করে দিয়েছেন আমাকে। ইডিয়েট
নিধি ঠোঁট বাঁকায়।
“ভেংচি দিলা কেন? আদি ধমক দিয়ে বলে।
” ধমক দেই নি তো। চুমু দিছি। নিধি আবারও ঠোঁট বাঁকা করে বলে।
“পাগল হয়ে যাবো আমি
বলে আদি চলে যায়।
নিধি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
” এই পোলাডার মুখে কেউ একটু মিষ্টি ভরে দে না। আর কতোকাল এর এই তেঁতো তেঁতো কথা শুনবো? কবে এসে মিষ্টি করে বলবে “এই ফাল্গুনী পূর্নিমা রাতে চল হারিয়ে যায়” কবে? কবে? কবে? কবে আমরা হানিমুনে যাবে? কবে বাচ্চা কাচ্চার মুখ দেখবো? কেউ আল্লাহ দয়া করেন❤️
নিধি দেয়ালের দিকে তাকিয়ে হাত তুলে বলে।
চলবে