#শুধু তুই ২
#অন্তিম পর্ব
#Tanisha Sultana (Writer)
আদি দুপুরেই চলে গেছে। নিধি খুব খুশি। কারণ এখন সৌরভের বেপারে জানতে পারবে। বাবাকে দিয়ে সিম কিনিয়ে আনে নিধি। সৌরভকে কয়েকবার ফোন দেয় কিন্তু রিসিভ করে না। নিধির এবার চিন্তা হচ্ছে। সৌরভ যদি কক্সবাজার থেকে যায়। তাহলে তো আদির সাথে দেখা হবে। আর আদির বিপদ। কি করবে এবার নিধি ভাবছে। আবার আদিকেও কল করতে পারবে না। আদি জিজ্ঞেস করবে সিমটা কার। আর নিধি আদিকে কখনোই মিথ্যা বলতে পারে না।
অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেয় সৌরভের বাড়ি যাবে। রেডি হয়ে পার্স নিয়ে বের হবে তখন টিভির নিউজের দিকে নজর যায়।
“আজ সকাল আটটায় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে শেখ সৌরভ। পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নেমেছিলো সে।
সৌরভ মরে গেছে শুনে নিধির চোখ থেকে পানি গাড়িয়ে পরে। খাবাপ হোক মানুষ তো। এতোদিনে পরিচিত। একটা বছর রিলেশনশিপ এ ছিলো। সৌরভ কখনো নিধিকে নিধি বলে ডাকতো না নিধিরা বলতো। কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে। সব কিছু ভুলে যাওয়া সম্ভব না। সৌরভ বেঁচে থাকলেও পারতো। হয়ত সুধরে যেতো। নতুন করে জীবন শুরু করতো।
নিধি চোখের পানি মুছে রুম থেকে বের হয়। বাবার ফোন থেকে আদিকে কল ল
করে কিন্তু আদি কল রিসিভ করছে না। নিধির ুবার ভীষণ টেনশন হচ্ছে। একটা সময় আদির ফোন আর ফোন ঢুকছে না। বন্ধ বলছে। হয়ত নিধি এতোবার কল করেছে তাই বন্ধ হয়ে গেছে। তবুও নিধি চেষ্টা করছে।
বিকেল গড়িয়ে রাত হয়ে গেলো আদির কোনো খবর নেই। নিধি দরজা বন্ধ করে রেখেছে। নিধির মা খেতে ডেকেছে নিধি বলেছে খিদে নেই।
রাত বারোটার দিকে নিধি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরে।
সকাল বেলা দরজায় নক করার শব্দে নিধির ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে দেখে আদি দাঁড়িয়ে আছে। নিধি আদিকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়। আদি নিধির মাথায় হাত বুলায়
” কাঁদছো কেনো?
“আপনি কেনো আমার ফোন তুললেন না?
হেঁচকি তুলে বলে নিধি।
আদি নিধিকে ধরে রুমে এনে খাটে বসিয়ে দেয়। আদি ফ্লোরে নিধির সামনে হাঁটু মুরে বসে।
” কাল সৌরভকে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে কবর দিতে দিতে অনেক রাত হয়ে গেছিলো।
নিধি চুপ হয়ে যায়।
“জানো সৌরভকে না পরির পাশেই কবর দিয়েছি। চাকরিটাও ছেড়ে দিয়েছি। বাড়িটা বিক্রি করতে বলেছিলো বাবা কিন্তু আমি এটা করবো না। আমি আর কখনোই কক্সবাজার যাবো না
আদির চোখে পানি টলটল করছে।
” সৌরভ পরি এদের নাম আমার জীবন থেকে মুছে ফেলতে চায় আমি।
আদি চোখ মুছে
“চলো আমাদের বাড়িতে যাবো।
” এখনই
“হুমমম
আদি আবার চুপ হয়ে যায়। উঠে খাটে বসে।
” সৌরভ মেরেছিলো পরিকে। কেনো জানো? পরির পেটের বাচ্চা ছিলো পরির আর পরি বলেছিলো তোমাকে আর আমাকে এটা বলে দেবে তাই সৌরভ পরিকে মেরে ফেলে। এতোটা জঘন্য ছিলো সৌরভ।
নিধি আদির কাঁধে হাত রাখে।
“বাদ দিন এসব কথা।
” হুমমম। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি
আদি ফ্রেশ হতে যায়। নিধিও রান্না ঘরে চলে যায় আদির জন্য খাবার বানাতে। গিয়ে দেখে নিধির মা আগেই খাবার রেডি করে বসে আছে
“কি রে তুই এলি আদি বাবা কোথায়? খাবে না
” আসছে।
নিধি টেবিলে তাকিয়ে দেখে সব কিছু করলার আইটেম
“আম্মু এতো করলা
” আদির জন্য
“আর আমি খাবো কি?
” এগুলোই খাবি।
“তুমি তো জানো আমি করলা খেতে পারি না
” অভ্যাস করতে হবে।
নিধি গাল ফুলিয়ে টেবিলে বসে। নিরা নিধির বাবা আর আদিও চলে আসে। সবাই মিলে গল্প করতে করতে খাওয়া শেষ করে।
দুপুরের দিকে ওরা বাড়িতে চলে আসে। নিধি সব সময় আদির পেছন পেছন থাকে। আদিকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করে।
আজ পৃতির গায়ে হলুদ। সকাল সকাল নিধি উঠে কোনটা শাড়ি পড়বে আদি কোনটা পানজাবি পড়বে সব ঠিক করে রাখে। তারপর গোছল করে রান্না করতে যায়। কোমরে ওড়না গুজে রান্না করছে। নিরা চেয়ার টেনে নিধির পাশে বসে আছে। নিধি নিরাকে কোনো কাজই করতে দিচ্ছে না।
রান্না শেষ করে টেবিলে খাবার সাজিয়ে আদিকে ডাকতে যায়। আদি এখনও ঘুমচ্ছে।
“এই যে উঠুন অনেক বেলা হলো তো
আদি নরেচরে শয়। নিধি আদির কাছ থেকে কোলবালিশ নিয়ে যায়। তাও আদি উঠে না। ধাক্কায় তাও খবর নাই
” ও গো শুনছো? উঠো না গো
আদি লাফ দিয়ে উঠে বসে। নিধি ভ্রু কুচকে তাকায়
“এতোখন উঠলেন না কেনো?
আদি নিধিকে টেনে বুকে নিয়ে বলে
” এতোখন তো মিষ্টি করে ডাকো নাই
নিধি মুচকি হাসে
“চলুন খুব খিদে পেয়েছে।
” হুমম পাঁচ মিনিট
আদি পাঁচমিনিটে ফ্রেশ হয়ে আসে। তারপর আদি আর নিধি এক সাথে খেতে যায়।
বিকেল বেলা হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায়। আদি নিজে হাতে নিধিকে শাড়ি পড়িয়ে দেয়। সাজিয়ে দেয়। পুরো হলুদ অনুষ্ঠানে আদি নিধি এক সাথেই ছিলো।
ভালোভাবেই পৃতির বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়।
আট বছর পরে
অফিসে আদির চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে পাঁচ বছরের পিচ্চি মেয়ে আরিহা। আদি মেয়েটার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে।
“বাপি আইসক্রিম খাবো
চকলেট মুখে পুরতে পুরতে বলে। আদি টেবিলের ওপর তাকায় কিছুখন আগে বলেছে আপেল খাবে এনেছে। তারপর জুস তাও এনে দিয়েছে। চকলেট জিরস চকোফান সব কিছুই আনা হয়ে গেছে। বাকি ছিলো আইসক্রিম সেটাই এবার আনতে হবে
” মামনি এতো কিছু আনিয়েছো কিচ্ছু তো খেলে না। এখন আবার আইসক্রিম।
“তুমি আমার কোনো কথা শুনো না। মামনির কলেজে গেলে ওখানের আংকেলরা আমাকে এতো এতো সব এনে দেয়
গাল ফুলিয়ে বলে আরিহা।
আদি ফোন করে আইসক্রিম ও আনতে বলে। কিছুখনে আইসক্রিম ও চলে আসে।
” সরি সরি লেট হয়ে গেলো
নিধি তারাহুরো করে আদির কেবিনে ঢুকতে ঢুকতপ বলে।
আদিকে এরকম দাঁড়িয়ে কাজ করতে আর আরিহার সামনে এতো খাবার দেখে নিধি ফিক করে হেসে ফেলে।
“এবার স্বীকার করো তোমার মেয়ে আমাকে জ্বালায়।
” আমার মামনি গুড গগগগার্ল
আদি বলে।
নিধি আরিহার পাশে গিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
“সেটাই তো। বাপ মেয়ে মিলে আমাকে একটু ও জ্বালাও না
” তুমি বলতে চাইছো আমরা তোমায় জ্বালাই
আদি রেগে বলে।
“স্টপিট। তোমারা একদম ঝগড়া করবে না। আমি ঘুরতে যাবো বলে সকাল থেকে কিউট কিউট সেজে বসে আছি আর তোমরা আমাকে নিয়েই যাচ্ছো না
” এখনি নিয়ে যাবো মামনি
আদি বলে
আরিহা চেয়ার থেকে নেমে আদির ল্যাপটপ বন্ধ করে দেয়। তারপর আদি আর নিধির হাত ধরে টান দিয়ে বলে
“চলো
মেয়ের বায়না আদিকে আর পায়কে চলে যায় ঘুরতে।
নিধি এখন একটা কলেজের শিক্ষিকা। আদিও নতুন একটা জব নিয়েছে। নিরার একটা ছেলে হয়েছে যে আরিহার থেকে দুই বছরের বড়।
সমাপ্ত