#শুধু তুই ২
#পর্বঃ৩১
#Tanisha Sultana (Writer)
নিধি আদির কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করে চোখ বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস নিয়ে বলে
“রোহন ভাইয়া আমি বিবাহিত। আদি আমার হাজবেন্ড। সেদিন আদির সাথে ঝগড়া হয়েছিলো তাই ও বলেছিলো আমি ওর বোন। প্লিজ আমাদের মধ্যে থার্ড পারসন হবেন না।
রোহন চুপ করে আছে। নিধি লাউড স্পিকারে দেয়।
নিধি একবার আদির দিকে তাকিয়ে বলে
” রোহন ভাইয়া চুপ করে আছেন কেনো কিছু বলেন?
রোহন একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
“এই সত্যি কথাটা বলতে এতোদিন লাগলো? আমি আগেই সব জানতাম। শুধু তোমার মুখ থেকে শুনতে এইরকম করতাম।
নিধি নিশ্বদে একটু হাসে।আদিও হাসে
“সরি রোহন
আদি অপরাধীর মতো বলে
” আরে ভাই মনের কথা বুঝতে এতো সময় লাগলে হবে? আগলে রেখো নিধিকে। কাল অস্ট্রেলিয়া চলে যাবো। হয়ত আর কখনো দেশে ফেরা হবে না।
“বিয়ের পরে যেতেন
” সত্যি বলতে তোমার সামনে যেতে চাইছি না। আর বিয়েতে তোমাকে আদির সাথে দেখে আমার খারাপ লাগবে। ভালোবাসা তুমি ভালোবাসা হয়েই থাকবে। ভালো থেকো।
রোহন ফোন কেটে দেয়। নিধি পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। এই কয়দিনে এতো ভালোবেসে ফেললো কেমনে?
আদি পেছন থেকে নিধিকে জড়িয়ে ধরে
“আমার ভাবনাকুমারী ভাবনায় আমি না থেকে অন্য কেউ থাকলে আমার ভালো লাগে না। ভালোবাসতেই পারে তা নিয়ে এতো ভাবতে হয় না।
নিধি ভাবনায় বিভোর থেকেই বলে
” হুমম
আদি নিধির ঘাড়ে গভীর ভাবে চুমু দেয়। নিধি আদির হাত খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
আদি নিধির গালে নাক ঘসে বলে
“নিধি আমার বেবি চায়
নিধি চমকে আদির দিকে তাকায়
” এখনই বেবি
আদি নিধিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে
“এতো চমকালে কেনো?
” আমি এতো তাড়াতাড়ি বেবি নিবো না। দুই তিন বছর পরে।
“নাহহ আমার এখনি চায়।
নিধি মাথা নিচু করে চুপ করে আছে। নিধির এখন বেবি নেওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই। পুরো লাইফ ক্যারিয়ার সব পড়ে আছে। আর এখন বেবি নিলে তো সব সময় বেবি নিয়ে থাকতে হবে।
” নিধি আই নিড ইউ। ভালোবাসতে চায় তোমায়। তুমি কি
নিধি লজ্জায় লাল নীল হয়ে আদিকে জড়িয়ে ধরে। আদিও মুচকি হাসে।
❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️❤️
রাতে
নীরার শরীর আরো খারাপ হয়ে যায়। কিচ্ছু খেতে পারছে না। নিধির বাবা এসেছে নিরাকে আর নিধিকে নিতে। ড্রয়িং রুমে বসে আছে নিরা নিধি আদির বাবা মা নিধির বাবা ইমন পৃতি আকাশ।
নিধির বাবার অনেক করে বলার পরে আদির বাবা রাজি হয় নিরা আর নিধিকে যেতে দিতে। নিধিকে জামাকাপড় প্যাক করতে বলা হয়েছে। দুদিন থাকবে ওখানে।
নিধি রুমে যায়। আদি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।
নিধি একটা ব্যাগে জামাকাপড় ভরছে
“না গেলে হয় না?
আদি আসহায় ফেস করে বলে।
নিধি জামাটা খাটের ওপর রেখে আদির পাশে বসে বলে
” যেতেই হবে। দুদিন পরেই চলে আসবো
“দুইদিন
” হুমমম
আদি নিধির ঠোঁটে আলতো করে একটা চুমু দেয়।
তারপর নিধির গালে হাত দিয়ে বলে
“আমারও কয়েকটা শার্ট প্যান্ট গুছিয়ে নাও
নিধি অবাক হয়ে বলে
” কেনো?
“আমিও যাবো
” মানে?
“শশুড়বাড়ি যাবো
বলেই আদি চলে যায়। নিধি আদির জামাও প্যাক করে।
আদি ডাইভ করছে নিধি পাশে বসে আছে। আর পেছনে বসেছে নিধির বাবা আর নিরা।
নিধির আদির ওপর রাগ হচ্ছে। সবার সামনে বলে দিলো ” আমি নিধিকে ছাড়া দুইদিন থাকতে পারবো না। আমিও যাবো ওর সাথে ” সবাই মিটমিট করে হাসছিলো।।নিধির তো ইচ্ছে করছিলো মাটির সাথে মিশে যেতে। দুইদিনে কি মরে যেতো। যতসব
আদি নিধির মুখ দেখে বুঝতে পারছে ভাবনাকুমারী রাগ করেছে। আদি একহাতে ডাইভ করছে আর একটা হাত দিয়ে নিধির হাত ধরে। নিধি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। আর রাগী দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকাচ্ছে। আদি মনের সুখে শিশ বাজাচ্ছে আর গাড়ি ডাইভ করছে।
“গাড়িতেও শান্ত হয়ে বসতে পারছো না? এতো নরাচড়া করছো কেনো?
বাবার ধমকে নিধি শান্ত হয়ে বসে। মনে মনে আদিকে প্রচন্ড বকা দিচ্ছে। আর আদি মিটমিট করে হাসছে।
বাড়িতে এসেই নিধি হনহনিয়ে রুমে চলে যায়। নিঅি মায়ের সাথেও কথা বলে না। আদি পেছনে ব্যাগ নিয়ে আসে। নিরা তো এসেই সোফায় বসে পড়ে। প্রচন্ড ক্লান্ত ও। নিধির মা আদিকে দেখে চমকে ওঠে। আদি আসবে এটা উনি স্বপ্নেও ভাবে নি। হা করে তাকিয়ে আছে আদির দিকে।
নিধির বাবা মায়ের কাছে গিয়ে ধাক্কা দেয়।
” জামাই প্রথমবার আমাদের বাড়িতে এলো আর তুমি তাতে আপ্যায়ন না করে হা করে তাকিয়ে আছো
রাগী কন্ঠে বলে আদির বাবা। নিধির মা নরেচরে দাঁড়ায়।
“আরে আদি বাবা এসো না এসো
আদি মুচকি হাসে
” কেমন আছেন আন্টি
“আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো?
” ভালোই। আমি রুমে যাচ্ছি
আদি নিধির রুমে যায়।
নিধি হাত কচলাচ্ছে আর পায়চারি করছে। মনে মনে ঠিক করেছে আদি সরি না বলা পর্যন্ত আদির সাথে কথা বলবে না।
আদি রুমে এসে ব্যাগটা রাখে। নিধি আদিকে দেখে ঘুরে দাঁড়ায়। আদি বুঝতে পেরেও কিছু বলে না। লম্বা হয়ে সুয়ে পড়ে।
যদিও এখন তবুও প্রচন্ড গরম।
“ইডিয়েট একগ্লাস ঠান্ডা ফ্রিজের পানি লেবু আর চিনি দিয়ে শরবত বানিয়ে নিয়ে এসো।
নিধি না শোনার ভান করে সোফায় বসে গালে হাত দিয়ে। গাল টা আগে থেকেই ফুলা ছিলো। এখন আরও একটু বেশি করে ফুলায়।
আদি একহাতের ওপর ভর দিয়ে আধশোয়া হয়ে বলে
” কথা কানে যাচ্ছে না? শরবত চেয়েছি আমি
কিছুটা জোরে বলে আদি।
“আম্মু আমাদের বাড়িতে গেস্ট এসেছে সে লেবুর শরবত খাবে
চেচিয়ে মাকে বলে নিধি।
” আমি তোমার কাছে চেয়েছি
কিছুটা রেগে বলে আদি।
“আমাকে সরি না বললে আমি কারো সাথে কথা বলবো না
নিধি বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে বলে।
” ওহহ এই বেপার। আমার হবু বেবির মামনি আমার ওপর রাগ করেছে।
“এটা বুঝতে এতোখন লাগলো?
” আজিব না বললে বুঝবো কি করে?
“ভালোবাসলে ঠিকই বুঝতেন। ভালোবাসেন না তো।
” কইছি তোমারে
“সব কথা মুখে বলতে হয় না
” এতো কটা কেনো তুমি?
বিরক্ত হয়ে বলে আদি
“আমি কটা? কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে নিধি।
” হুম
আদি আরাম করে শুয়ে বলে।
“ঠিক আছে। আমি কটা তো? কথা বলতে হবে না কটার সাথে।
গাল ফুলিয়ে বেলকনিতে চলে যায় নিধি।
নিধির মা আদির জন্য লেবুর শরবত নিয়ে আসে।
” বাবা নিধি কই?
আদি শরবতে চুমুক দিতে দিতে বলে
“বেলকনিতে
নিধির মা বেলকনিতে চলে যায়।
” বলছিলাম আদি বাবা কি খায় বল তো
“আদি আবার তোমার বাবা হলো কবে থেকে?
অবাক হয়ে বলে নিধি
” বেশি কথা বলিস না। জামাইদের বাবা বলতে হয়।
“করলার জুস বানিয়ে দাও। তারপর করলা ভাজি ভর্তা আর করলা দিয়ে মাছ রান্না করো।
” এগুলো তুই খাবি?
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে নিধির মা
“আরে না তোমার জামাই
” ওহহ
“আম্মু তোমার ফোনটা কোথায়?
” রুমে। কেনো বলতো?
“এমনিতেই। যাও না রান্না করো। ওনার হয়ত খুব খিদে পেয়েছে।
নিধির মা চলে যায়।৷ নিধি এখনো বেলকানিতে দাঁড়িয়ে আছে।
” ধুর আদিটা সাথে না এলে কতো ভালো হতো। এই দুইদিনেই সৌরভের বারোটা বাজিয়ে দিতে পারতাম। এখন হলো আরেক ঝামেলা।
নিধি মনে মনে বলছে।
“বউ এদিকে আসো
আদি ভেতর থেকে ডাকে। নিধি যায়
” বলুন
“সরি
” হুমমম
“রাগ করো না প্লিজ
আদি ইনোসেন্ট ফেস করে এক কানে হাত দিয়ে বলে। নিধির রাগ নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। নিধি মুচকি হাসে।
” হইছে
নিধি আদির পাশে বসে। আদি নিধির কোলে মাথা দেয়।
“মাথায় হাত বুলিয়ে দাও
নিধি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
সকাল বেলা নিরাকে ডাক্তার দেখে গেছে। নিরা প্রেগন্যান্ট। সবাই তো ভীষণ খুশি। নিধির তো খুশির কোনো সীমাই নেই। ও খালামনি প্লাস কাকিমনি হবে ভাবা যায়। সব সময় নিরার কি লাগবে না লাগবে সেই খেয়াল রাখছে নিধি। আর বেচারা আদি একা একা রুমে বসে আছে। ব্রেকফাস্ট করার সময় একঝলক নিধিকে দেখেছিলো।
নিধি নিরার রুম ভালো করে পরিষ্কার করে মায়ের সাথে রান্নায় সাহায্য করে ক্লান্ত হয়ে রুমে আসে। গোছল করবে বলে।
আদি এতোখন ফোনে গেমস খেলছিলো নিধিকে দেখে ফোন রেখে নিধির দিকে তাকায়। নিধি কাবাড থেকে জামাকাপড় নিয়ে গোছল করতে যায়। গোছল সেরে বেরিয়ে আয়নার সামনে চুল মুছছে
” আমি যে তোমাদের বাড়িতে এসেছি তুমি কি সেটা ভুলে গেছো?
নিধি আদির দিকে তাকিয়ে বলে
“ও মা ভুলে কেনো যাবো?
” তো সারাদিন একবারো খোঁজ নিলা না।
“সরি বিজি ছিলাম।
” হুম তা তো থাকবেই আমি তো ঘুর্ণিঝড়ে উড়ে এসেছি
“সরি বললাম তো
” এখনই আমাকে কক্সবাজার চলে যেতে হবে
“কিহহ
কিছুটা চমকে বলে নিধি।
” হুমম অফিসের জরুরি কাজে।
“আসবেন কবে?
” পৃতির বিয়ের দিন রাতে।
“তিন দিন
” হুমমম
“ওহহহ
নিধি আদির সামনে দাঁড়িয়ে বলে
” না গেলে হয় না
“না হয় না যেতেই হবে। মনি একা পারবে না
” ওহহহ
চলবে