শুধু তুই ২ পর্ব-২৫+২৬

0
1609

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ২৫
#Tanisha Sultana (Writer)

“বড্ড বেশি কথা শিখে গেছো তুমি
চোখ মুখ শক্ত করে বলে আদি

” হুমম শিখে গেছি। কিছু মানুষের সাথে চলতে হলে কথা শিখতে হয় নাহলে তারা ছুড়ে ফেলে দেবে।

আদি নিধির দিকে পেছন ঘুরে দাঁড়ায়।

“এমনটা কেনো করলেন আদি বলবেন?

” জানি না

বলেই আদি গাড়ি গিয়ে বসে। নিধিও গাড়িতে বসে।

“সত্যি সেটা না যেটা আমরা মুখ দিয়ে বলি সত্যি সেটাই যেটা আমরা আড়াল করি” এই কথার মানেটা যেদিন তুমি বুঝতে পারবে সেদিন সব প্রশ্নের উওর তুমি নিজেই খুঁজে পাবে।

“আর আমি যদিন সত্যিটা জানতে পারবো সেদিনই হবে আপনার সাথে আমার শেষ দেখা তার আগে নয়

আদি সামনের দিকে তাকিয়ে চুপ করে আছে। নিধির ভীষণ রাগ হচ্ছে। কিন্তু কিচ্ছু বলতে পারছে না। চোখ বন্ধ করে রাগ কমানোর চেষ্টা করছে।

একটু পরে ইমন আর পৃতি চলে আসে। আদি আর নিধিকে চুপচাপ থাকতে দেখতে ওদের আর বুঝতে বাকি নেই এখানে ছোটমট একটা ঝড় হয়েছে। ওরা কিছু না বলে চুপচাপ গাড়িতে বসে।

আদি ফুল স্পিডে ডাইভ করছে। নিধি জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে

” ভাইয়া একটু আস্তে ডাইভ কর না প্লিজ। তুই তো জানিস আমি ভয় পায়
ইনোসেন্ট ফেস করে বলে পৃতি।

“জীবনে সব কিছু প্রয়োজন আছে। তোর জন্য তো আর দুই ঘন্টার রাস্তা দশ ঘন্টায় যাবো না
কর্কশ গলায় বলে আদি।

পৃতির মন খারাপ হয়ে যায়। আদি কখনোই ওর সাথে এরকম বিহেব করে নি। ও ভয় পেলে একহাতে জড়িয়ে আস্তে ডাইভ করতো সেই ভাই আজ এরকম বিহেব করলো। পৃতির চোখে পানি এসে যায়।

আদিরও খারাপ লাগছে। এভাবে বলতে চায় নি ও। কিন্তু মাথা ঠিক নেই। তাই এমন বলে ফেলেছে।

” পৃতি মন খারাপ করিস না। আসলে কি হয়েছে বল তো একজনের সাথে ডিল করেছিলো আমাকে তার সাথে বিয়ে দেবে আই মিন তার কাছে আমাকে সপে দেবে কিন্তু আমি রাজি হয় নি তাই আমার ওপর রাগটা তোর ওপর ঢাললো

আদি গাড়ি থামায়।

“আমি পারি না ডাইভ করতে। হয়েছে

” এখানে ডাইভ নিয়ে কথা হচ্ছে না
নিধি নিচু সুরে বলে

“তুমি বেশি কথা কেনো বলো?

” তাহলে কি করবো? বিয়ে করে নেবো সৌরভকে? তারপর আবার আপনার যখন মনে হবে না নাহহ এখন সৌরভ না অন্য কাউকে খুঁজতে হবে। আপনি তো আমাকে সম্পত্তি পেয়েছেন। যে বেশি দাম দেবে তার কাছেই বেঁচে দেবেন

আদি ঠাস করে নিধির গালে থাপ্পড় মারে। থাপ্পড়টা একটু বেশিই জোরে হয়ে যায়৷ গালে পাঁচটা আঙুলের দাগ বসে যায়। ইমন আর পৃতিও চমকে ওঠে। আদি এমন কিছু করবে এটা ওরা চিন্তাও করে নি।

নিধির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। আজ ওবদি কেউ ওকে জোরে ধমকও দেয় নি সেখানে আদি থাপ্পড় মারলো।

আদির গিলটি ফিল হচ্ছে কিন্তু কিছু বলছে না। কারণ আদি জানে সরি বললে থাপ্পড়টা ফিরে আসবে না। আদির দিকটা কেউ বুঝতে পারছে না। আদি কাউকে বলতেও পারছে না। ভেতরে ভেতরে একা একাই পুরছে।

“দেবো না আমি ডিভোর্স। আরও মারেন মেরে ফেলেন। তবুও ডিভোর্স দেবো না।

হেঁচকি তুলতে তুলতে বলে নিধি।

বাড়ি ফিরে নিধি রুমে চলে যায়। কাউকে কিছু বলে না। আর ওদেরও বলতে না করে। পৃতি ইমনেরও মন খারাপ।

রুমে এসে নিধি বেলকনির দরজা বন্ধ করে বসে আছে।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। দুরে একটা গাছে এক জোড়া পাখি বসে আছে। মনে হচ্ছে একটা পাখি আরেকটা পাখিকে কিছু বলছে। হয়ত ঝগড়া করছে নয়ত ভালোবাসার কথা বলছে। একটু পরে ছেলে পাখিটা তার ডানা দিয়ে মেয়ে পাখিটাকে আকড়ে ধরেছে।
এতো কষ্টের মধ্যেও নিধির মুখে হাসি ফুটে ওঠে।

” নিধি তোর খরগোশটা হারিয়ে গেছে। বাবা মা অনেক খুঁজেও পাচ্ছে না।

নিরা দরজার বাইরে থেকে বেলকানির দরজায় নক করে বলে।
খরগোশ টা হারিয়ে গেছে বলে আবার নিধির চোখে পানি চলে আসে।

“কি রে শুনতে পাচ্ছিস তুই

কিছুখন ডাকাডাকি করে যখন নিরা নিধির কোনো সাড়াশব্দ পেলো না তখন চলে গেলো।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে আসছে। সূর্য মাথার ওপর থেকে পশ্চিম দিকে অনেকটা ঢলে পড়েছে। রোদটা একদম নিধির মুখে এসে পড়ছে। বৈশাখ মাসের রোদ। নিধি হাত দিয়ে রোদ আড়াল করার চেষ্টা করছে।
দুইঘন্টা ধরে বসে আছে এখানে নিধি। দরজা খুলে নি। আজ আর খুলবে না বলে জেদ ধরেছে।

আদি ওদের বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে চলে গেছিলো। মাএ বাসায় আসলো আদি। পৃতি বলেদিয়েছে নিধি বাসায় এসে থেকেই বেলকানির দরজা বন্ধ করে বসে আসে।

আদি কান ধরে বলে

” সরি বোন মাথা ঠিক ছিলো না তাই তোকে ধমক দিছি

পৃতি অভিমান মাখা হাসি দিয়ে বলে

“ইটস ওকে।

আদি পৃতিকে জড়িয়ে ধরে।

” ভাইয়া নিধি সকাল থেকেই কিচ্ছু খায় নি কফি ছাড়া।

“হুমম দেখছি

আদি রুমে গিয়ে বেলকনির দরজায় দুবার টোকা দেয়। কোনো সাড়াশব্দ নেই। তারপর গোছলটা সেরে নেয়। আসলে নিধির সাথে কথা বলতে লজ্জা করছে। এভাবে মেয়েটার গায়ে হাত না তুললেও পারতাম।

নিধি ঘুমিয়ে পড়েছে।
আদি আবার দরজায় কড়া নারে

” দরজা খুলো প্লিজ

কোনো সারা নেই

“ওই স্টুপিট দরজা খুলো। আমি জামাকাপড় রোদে দেবো। বেলকানিটা তোমার না

নিঊি ঘুমঘুম চোখে দরজা খুলে। আদি নিধির মুখের দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠে। এ কি হয়েছে মেয়েটার। চোখ মুখ ফুলে গেছে এলোমেলো চুল।

নিধি আদিকে পাশ কাটিয়ে রুমে গিয়ে খাটে শুয়ে পড়ে। আদি জামাকাপড় মেলে দিয়ে এসে নিধিকে ভালো করে সুয়িয়ে দেয়।

ঘুমিয়ে গেলে নিধিকে ফুটপাতে রেখে আসলেও নিধি টের পাবে না। পৃতিকে বলে আদি খাবার নিয়ে আসে রুমে। তারপর নিধিকে ধরে বসিয়ে মুখে খাবার দেয়। ঘুমের মধ্যেই নিধি খাবার চিবিয়ে গিলতে থাকে। নিধি একদম খিদে সয্য করতে পারে না।
একটু একটু করে পুরো খাবারটাই আদি নিধিকে খাইয়ে দেয়। তারপর পানি খাইয়ে আবার সুয়িয়ে দেয়।

আদিরও খুব খিদে পেয়েছে। ও সকাল থেকে কিছু খায় নি। তাই নিজেও খেয়ে নেয়।

রুমে এসে দেখে নিধি উপুর হয়ে শুয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে দুই তিন ঘন্টার মধ্যে ঘুম ভাঙবে না। আদি নিধির পাশে শুয়ে নিধিকে টেনে বুকের মধ্যে নেয়। নিধিও আদির বুকে মাথা রেখে আদিকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। আদি মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে ফেলে। কিছুখনের মধ্যেই আদিও ঘুমিয়ে পড়ে। যদিও কোনোদিন বিকেল বেলাতে আদির ঘুম আসে না কিন্তু আজ নিধি নামক ইডিয়েটের পাল্লায় পড়ে ঘুমিয়ে গেলো।

কারো গরম নিশ্বাস মুখে পড়তেই নিধির ঘুম হালকা হয়ে যায়। নিধি আসলে কোথায় আছে বোঝার চেষ্টা করে। নিজেকে কারো বুকে আবিষ্কার করে নিধি। চোখ খুলে আদির মুখটা দেখতে পায়। আদির ঠোঁটটা নিধির নাকের ওপর। নিধি নড়াচড়া করতে গিয়েও পারে না কারণ আদি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। নিধির নিশ্বাস ভাবি হয়ে আসছে।
নিধির মনে হচ্ছে মানুষের মন দুইটা। একটা মন বলছে এভাবেই থাকি না আরও কিছুখন। আর একটা মন বলছে আদিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দুচারটা কথা শুনিয়ে দিতে।
নিধি কোনটা করবে এটা ভাবছে আর আদির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আদি এবার একটু নরেচরে উঠে আদির মুখটা নিধির ঘাড়ের ওপর রাখে।

এবার নিধি পড়লো আরেক ঝামেলায়। এতোখন তো ভালোই ছিলো। নিধি এবার আদিকে ধাক্কা দিয়ে সরে যায়।

আদির ঘুমটা আগেই ভেঙে গেছে। নিধি জেগে আছে বলে শব্দ করে নি। আর ইচ্ছে করেই ঘাড়ের কাছে মুখ নিয়েছে যাতে নিধি উঠে যায়।

আদি ঘুমচ্ছে বলে নিধি ওয়াশরুমে চলে যায়। লম্বা একটা সাওয়ার নেয়। দিনে গোছল করা হয় নি। গোছল সেরে সাদা টিশার্ট আর সাদাকালো মেশানো স্কার্ট গলায় সাদা পাতলা ওড়না জড়িয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হয়।

আদি এক চোখ খুলে দেখছিলো নিঊি বের হচ্ছে কি না। নিধিকে দেখে দুচোখই খুলে ফেলে। উঠে বসে। নিধির এরকম রুপটা আদিকে মাতাল করে দিচ্ছে। নিধি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল শুকচ্ছে। আদি আস্তে আস্তে উঠে এসে নিধির সামনে দাঁড়ায়। নিধিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিধির চুল মুছিয়ে দেয়।

“গিল্টি ফিল হচ্ছে তাই সরি বলতে এসেছে রাইট

আদি নিজের কাজ করতে করতে বলে

” না। বোনের প্রতি দায়িত্ব পালন করছি

নিধি আদির হাত ধরে সরিয়ে দেয়

“আপনার সাথে কথা বলতে আমার ইগোতে বাঁধে। নিজেকে ছোট ছোট মনে হয়। মনে হয় নিজেকে অপমান করছি। সো প্লিজ আমার থেকে দুরে দুরে থাকেন। আই জাস্ট হেট ইউ

নিধির কথা শুনে আদি চোয়াল শক্ত করে ফেলে। দেয়ালের সাথে চেপে ধরে নিধিকে।

চলবে

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ২৬
#Tanisha Sultana (Writer)

“বিশ্বাস করুন আপনার এমন হুটহাট রেগে যাওয়া আমার কাছে চলে আসা এতে আমি একটুও ভয় পায় না। সো দয়া করে আমার থেকে দুরত্ব বজায় রাখুন

আদির চোখে চোখ রেখে বলে নিধি। আদি হা করে নিধির কথা শুনছে। যে মেয়েকে একটা ধমক দিলে ভয় পেয়ে যেতো সেই মেয়ে বড়বড় কথা বলছে। মানা যায়।
আদি নিধির ঠোঁটটা আঙুল দিয়ে চেপে ধরে শান্ত গলায় বলে

” এবার কথা বলো

নিধি চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে আদির দিকে। ঠোঁট ধরে রাখলে কথা বলবে কি করে?

“কথা বলতে পারছো না তাই না? আমার মুখের ওপর বড়বড় কথা বললে ঠিক এই ভাবেই সুই সুতো দিয়ে ঠোঁট সেলাই করে দেবো। তখন আর কথা বলতে পারবে না। তো তুমি নিশ্চয় চাও না আমি এমনটা করি

নিধি আদিকে জোরে ধাক্কা মারে। আদি দুপা পিছিয়ে যায়

” আমিও ঠিক এই ভাবেই আপনাকে ধাক্কা দিয়ে মুখ থেকে সুতো খুলে কথা বলতে পারবো। সত্যি কথা বলতে আমি এখন আপনাকে পরোয়াই করি না। আমার কাছের মানুষদের দলে আপনাকে রাখি না। আপনার থাকা না থাকা কথা বলা না বলা আমার কাছে সমান।

আদি দেয়ালে ঘুসি মারে।

“তাহলে চলে যাচ্ছো না কেনো? দরজা খোলা আছে চাইলেই চলে যেতে পারো। যাও চলে
আদি অনেকটা চিৎকার করে বলে

“যাবো তো অবশ্যই। আপনার সাথে থাকার কোনো ইন্টারেস্ট নাই আমার। কিন্তু আপনা কথায় সৌরভকে বিয়ে আমি করবো না

আদি দুই হাতে মাথা চেপে ধরে বলে

“আবার এক কথা।

” বলবোই আমি

“সবটা হয়েছে তোমার জন্য। তোমার সাথে আমার বা সৌরভের দেখা না হলে এসব কিচ্ছু হতো না। আমার পরি মারা যেতো না। আমাকে এভাবে প্রমাণ লুকানোর জন্য আশ্রয় খোঁজার জন্য সৌরভের পেছনে ঘুরতে হতো না।

আদির কথা শুনে নিধি হা হয়ে যায়। পরি মারা গেছে। আমার জন্য হয়েছে? কিন্তু কি করে?

আদি বোকা হয়ে যায়। রাগের মাথায় কিসব বলছে।

” কি বললেন আপনি?
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে নিধি।

“আমার কাটা ঘায়ে সবে চামড় ধরেছে তুমি প্লিজ আবার নুনের ছিটা দিয়ে সেটাকে তাজা করে দিও না।

আদি রুম থেকে বেরিয়ে যায়। নিধি এখনও ভাবছে ঘটনা কি? কোনোটার হিসাবই নিধি মেলাতে পারছে না।

দশটা বাজে। সবাই খেতে বসেছে। শাশুড়ী নিধিকে ডেকে গেছে। আদি কোথায় গেছে কেউ জানে না। নিধি খেতে যায়। নিধি চুপচাপ খাচ্ছে।

” নিধি তোমার গালে থাপ্পড় কে মেরেছে?
শাশুড়ীর প্রশ্নে চমকে ওঠে নিধি। এতোই জোরে থাপ্পড় মেরেছিলো যে এখনও দাগটা স্পষ্ট। নিধি গালে হাত দেয়। সবার দৃষ্টি নিধির দিকে।

“আজকে শপিং থেকে আসার সময় ভাইয়া ওকে থাপ

পৃতি বলতে যায় নিধি থামিয়ে বলে

” ইমন থাপ্পড় দিছে

ইমনের কাশি উঠে যায়। পৃতি চোখ গুলো রসগোল্লার মতো হয়ে যায়।
সবাই ইচ্ছা মতো বকা দেয় ইমনকে। তারপর কান ধরিয়ে উঠবসও করায়। ইমন তো হেব্বি রেগে গেছে। নিধির দিকে তাকাচ্ছেও না।

খাওয়া শেষে যে যার রুমে চলে যায়। নিধি ড্রয়িং রুমে পায়চারি করছে ইমনকে সরি বলবে আর আদি আসার অপেক্ষা করছে। ইমন নিধিকে দেখে মুখ বাঁকিয়ে চলে যেতে নেয়

“ইমন ভেবি সরি
নিধি এক কানে হাত দিয়ে বলল।

” তুই মিথ্যে কেনো বললি
রাগ করে বলে ইমন

“কি করবো বল? সত্যিটা বললে তো ওকে সবাই বকতো। এমনিতেই রেগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে। খুব সরি রে।

” ইটস ওকে।

“একটু হেসে বল

ইমন বত্রিশটা দাঁত কেলিয়ে বলে

” সরি

ইমন এক হাতে নিধিকে হালকা জড়িয়ে ধরে।

“এতোটা ভালো হতে নেই রে নিধি।

” হুমমম

ইমনের সাথে কিছুখন গল্প করে নিধি রুমে যায়। রাত বারোটা বেজে গেলো এখনও আদি আসছে না। ফোনে ছিমটাও নেই যে ফোন করবে।

“দুরে কোথাও আছি বসে হাত দুটো দাও বাড়িয়ে

তুমি এলে রংধনু রং খুঁজে পায় তুমি এলে মেঘরাও বৃষ্টি ঝড়ায়”

“গানটা গাইছে কে?

নিধি সুরটাকে অনুসরণ করে বেরিয়ে যায়। যেতে যেতে ছাদে চলে যায়। ছাঁদের দোলনায় বসে কেউ গানটা গাইছে। নিধি ধীর পায়ে লোকটার কাছে যায়। গানটা শেষ হতেই

” তুমি এখানে?

পেছনে না তাকিয়েই বলে আদি। নিধি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। প্রমান করতে চাইছে যে নিধি এখানে নেই। আদির মনের ভুল

“তুমি যখন ছাঁদে পা রেখেছোআমি তখনই বুঝে গেছি। তোমার গায়ের ঘ্রাণ, নিশ্বাসের শব্দ আমি বুঝতে পারি। তো তুমি যদি ভাবো যে আমি নি শব্দে দাঁড়িয়ে থাকবো আর আদি ভাববে মনের ভুল। এটা কখনোই হবে না

নিধি এবার আদির পাশে বসে। আদি গিটার সাইডে নামায়।

আকাশ থালার মতো চাঁদ উঠেছে। অন্য দিনের তুলনায় আজ চাঁদটা একটু বেশিই সুন্দর। চাঁদের আলো নিধির চোখে মুখে পড়েছে। অপূর্ব অদ্ভুত সুন্দর লাগছে নিধিকে। ডান লাগে চাড়ের দাগটা চাঁদের আলোয় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

” আপনি এখানে?

“আমি মাঝেমধ্যেই এখানে আসি।

” ওহহ

“তুমি এখানে?

” আকাশ দেখতে এসেছি।

আদি নিধির ডান গালে হাত দেয় যেখানে থাপ্পড়ের দাগ পড়েছে গেছে। হাত বুলিয়ে দেয়।

“সরি

” ইটস ওকে। আমি রাগ করি নি। রাগ তো তাদের ওপর করে যারা আমাদের আপন কিন্তু আপনি আমার কেউ না।

আদি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। নিধির কোলে মাথা রেখে সুয়ে পড়ে। নিধি কিছুটা চমকালেও কোনো রিয়েক্ট করে না।

“কি জানতে চাও বলো?
আদি চোখ বন্ধ করে বলে।

” আপনি কেনো আমাকে সৌরভের সাথে বিয়ে দিতে চান

“আমি তোমাকে সৌরভের সাথে বিয়ে দিতে চায় না। ইভেন আমি এটাও চায় না যে তুমি সৌরভের সাথে কথা বলো। কিন্তু আমি এটাও চায় না যে তোমার আর আমার সম্পর্কটা থাক। আমি সাথে তুমি ভালো থাকবে না।

নিধি চোখ বন্ধ করে আদির কথা শুনছে।

” আমি এক অদ্ভুত মায়ায় জড়িয়ে গেছি। না তোমাকে ছাড়তে পারছি না তোমার সাথে থাকতে পারছি। তার ওপর সৌরভ অনবরত বলে যাচ্ছে পুলিশকে সব বলে দেবে। কিন্তু তুমি বিশ্বাস করো আমি পরিকে মারি নি। ওকে বাঁচাতে গিয়ে ওর খুনি হয়ে গেলাম।

নিধি চোখ খুলে ফেলে। পরি মরে গেছে। বলছে কি উনি?

“কি বলছেন আপনি?

আদি কথা বলছে না। নিধি আদির গায়ে হাত দিয়ে চমকে ওঠে। জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে।

” এবার কি করবো? ওনাকে রুমে নেবো কি করে?

নিধি কয়েকবার আদিকে ডাকে কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই। আদির ফোন থেকে ইমনকে ফোন করে নিধি। ইমনের সাহায্যে আদিকে রুমে নেয় নিধি। মাথায় জলপট্টি দেয় আর ভাবে

“কি বললো আদি? আদিকে ফাঁসানো হচ্ছে। আর সৌরভের হুমকিতে আদি আমাকে ডিভোর্স দিতে চাইছে যাতে সৌরভ মুখ না খুলে। কিছুটা আদি বললো এখন বাঁকিটা আমি সৌরভের থেকে জানবো।

ঘুমের ঘোরেই আদি নিধির হাত জড়িয়ে ধরে।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে