#শুধু তুই ২
#পর্বঃ১৯
#Tanisha Sultana (Writer)
পুরো একঘন্টা সাওয়ার নিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নিধি। ভালো করে শরীর থেকে পানি না মুছে ড্রেস পড়ায় অনেকটা ভিজে গেছে জামাটা। চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। চুল থেকেও টপটপ করে পানি পড়ছে।
আদি খাটের মাঝখানে গোল হয়ে বসে আছে। কখন নিধি বের হবে? একঘন্টা যাবৎ মেয়েটা বাথরুমে আছে। আবার সাওয়ারের আওয়াজ পেয়েছে আদি। একবার ভাবছি নক করবে আবার ভাবছে যা খুশি করুক আমার কি?
দরজা খোলার শব্দে আদি দরজার দিকে তাকায়। নিধিকে দেখে আদির বুকের ভেতর মোচর দেয়।
“এতো রাতে সাওয়ার কেনো নিলে?
” আপনাকে বলতে হবে?
চোখ মুখ শক্ত করে জবাব দেয় নিধি।
আদির মুখটা কালো হয়ে যায়। সত্যি ই তো আমাকে কেনো বলবে? আর আমিই বা প্রশ্ন কেনো করছি?
“আমাকে অবশ্যই বলতে হবে। কেনোনা তুমি আমাকে ইমপ্রেস করার জন্য এতোরাতে শাওয়ার নিয়ে শরীর সাথে লেপটে থাকা ড্রেস পড়ে আমার সামনে এসেছো। যাতে আমি বেসামাল হয়ে কিছু একটা করে ফেলি। কিন্তু তোমাকে তো আমি আগেই বলেছি আমার তোমার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নাই।
নিধির ভীষণ রাগ হচ্ছে।
” ইন্টারেস্ট নেই তাই সারাদিন ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে থাকেন যদি ইন্টারেস্ট থাকতো তাহলে তো খেয়েই ফেলতেন
কথা গুলো বলে নিধি নিজেই লজ্জা পায়। আদি হা করে তাকিয়ে আছে। এই গাঁধ মেয়েটা এই কথাগুলো বললো আদির বিশ্বাস হচ্ছে না।
“কি বললা তুমি?
” শুনতে পান না কালা না কি?
“আর কয়েকঘন্টা পরে চলে যাবা। কোথায় একটু হ্যাপি মুডে থাকবা তা না এমন ধানিলংকা রুপ ধারণ কেনো করছো
নিধি কিছু না বলে সুয়ে পড়ে।
” এই এভাবে এখানে শোয়া যাবে না
“কেনো?
” আমার বালিশ ভিজে যাবে
“যাক
নিধি চোখ বন্ধ করে ফেলে।
” আমি কেনো এতো ভেঙে পড়ছি? এটা ঠিক না। আমি তো জানতাম আমাদের মিল হওয়া ইম্পসিবল। তাছাড়াও আমি তো সৌরভকে ভালোবাসতাম। নাহহ আমি ভেঙে পড়বো না। আমাকে স্টং থাকতে হবে। আমি এখন খুব তাড়াতাড়ি আদিকে মুক্তি দিয়ে দেবো।
এসব ভাবতে ভাবতে নিধি ঘুমিয়ে পড়ে। আদির চোখে ঘুম নাই। আদি বেলকানিতে চলে যায়। সিগারেট ধরায়।
“কাল নিধি চলে যাচ্ছে। কিন্তু ও তো কিছু দিনের জন্য যাচ্ছে। পৃতির বিয়ের পরেই ডিভোর্স পেপারটা নিধিকে দিয়ে সই করিয়ে আনবো। ঝামেলা শেষ।
আদি এসব ভাবছে আর একটার পর একটা সিগারেট ফুরচ্ছে।
তিনটার দিকে নিধির ঘুম ভেঙে যায়। পাশে তাকিয়ে দেখে আদি নেই। নিশ্চয় আমি এখানে ঘুমিয়েছি বলে উনি এখান থেকে চলে গেছে।
নিধি উঠে ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় গুছিয়ে নেয়। তারপর কিচেনে গিয়ে করলা ভাজি আর রুটি বানায়। ততখনে আদির বাবাও উঠে গেছে।
নিধি আদির বেলকনিতে গিয়ে দেখে আদি বসে আছে আকাশের দিকে তাকিয়ে।
” শুনছেন
নিধির ডাকে আদি একবার নিধির দিকে তাকায়। তারপর আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে
“হুমম
” বাবা আপনাকে খেতে ডাকছে
“বাবা আমার তোমার না। আংকেল বলে ডাকবা
নিধি মুখটা ছোট করে বলে
” হুমমম
নিধি আদি আর আদির বাবাকে খাবার বেরে দেয়। খেতে খেতে আদির বাবা বলে
“তাহলে তুমি কবে যাচ্ছ
” বিয়ের দিন চলে যাবো
“বোনের বিয়ে তোমার
” তো কি আমার কাজ বাদ দিয়ে ওখানে গিয়ে লাফালাফি করবো? আমার এইসবএ কোনো ইন্টারেস্ট নেই।
আদির বাবা আর কিছু বলে না চুপচাপ খাওয়া শেষ করে।
আদির বাবা আর নিধি চলে যাচ্ছে। আদির বাবা আদিকে বলেছিলো কিছুটা পথ এগিয়ে দিতে কিন্তু আদি না বলে দিয়েছে। যাওয়ার সময় নিধি বারবার পেছন ঘুরে তাকায় এই আশায় হয়ত আদিকে একবার দেখতে পাবে। কিন্তু আদির দেখা মেলে না। তাই ছানাকে কোলে নিয়ে হাঁটতে শুরু করে নিধি।
অফিসে বসে আছে আদি। কোনো কিছুই ভালো লাগছে না। বিরক্ত লাগছে। তখন বসের ছেলে রোহন আসে আদির কেবিনে
“হেই আদি
” তুমি
রোহন আদির সামনাসামনি চেয়ার টেনে বসে
“বাবা বলছিলো তোমার বোনের সাথে দেখা করতে
এমনিতেই আদির রাগ ছিলো তারপর আবার নিধির কথা শুনে রাগটা দ্বিগুন বেরে যায়। তবুও রাগটা কন্ট্রোল করে বলে
” ও আমাদের বাড়িতে চলে গেছে
“ওহহহ কোনো বেপার না। আমিও যাচ্ছি তোমাদের শহরে। আসলে আমার কাজিনের বিয়ে। ওখান থোকে তোমার বোনের সাথে দেখা করে নেবো। আর তোমার বাবার সাথে পাকা কথাও বলে আসবো
আদির এবার রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।
” আসছি
বলেই রোহন চলে যায়। হাতের কাছে থাকা কাঁচের গ্লাসটা ভেঙে ফেলে আদি। তবুও রাগ করছে না। রাগে শরীর কাঁপছে। মনি আসে আদির কেবিনে
“আদি কি হয়েছে?
আদি চোখ বন্ধ করে বসে আছে চেয়ারে।
” কিছু না
“তাহলে এমন রেগে আছিস কেনো? আর এই গ্লাসটাই ভাংলি কেনো?
আদি এবার চোখ খুলে বলে
” বললাম তো কিছু না
মনি আদির পাশে চেয়ার টেনে বসে আদির হাতের ওপর হাত রাখে
“বেস্ট ফ্রেন্ড আমি তোর। আঠারো বছর যাবৎ একসাথে আছি। তোর চোখ দেখেই আমি তোর মন খারাপের কারণ বুঝতে পারি
” তাহলে বল আমার কি হয়েছে?
আদি কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে
“নিধির সাথে ঝামেলা হয়েছে?
” ওর সাথে আবার সব ঠিকঠাক ছিলো কবে? ও তো নিজেই একটা ঝামেলা। তবে এখন খুব ভালো হয়েছে। নিয়ে গেছে বাবা ওকে।
“এখন তোর মেজাজ খারাপের কারণটা ক্লিয়ার হলো
” ওই গাঁধার জন্য আমার মন খারাপ না। বেঁচে গেছি আমি। আর ও আমায় প্রমিজ করেছে আর ফিরবে না। খুব তাড়াতাড়ি ডিভোর্স দিয়ে দেবে
“ওহহহ। ডিভোর্সের পরে আবার নিধির বিয়ে হবে
মনি মজা করে বলে। আদির মাথাটা একরু ঠান্ডা হয়েছিলো মনির কথা শুনে আবার আগুন জ্বলে ওঠে৷ চেয়ার ছেড়ে উঠে চেচিয়ে বলে
” হলে হোক। আমার কি? একটুও ফিলিংস নেই ওই গাঁধার প্রতি আমার।
“কুল কুল এতো রেগে যাচ্ছিস কেনো?
” আমি একটুও রেগে নেই আমি
ফস করে নিশ্বাস ছেড়ে বলে আদি
মনি আদিকে আর একটু জ্বালানোর জন্য বলে
“রেগে নেই তাই চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে বাই চান্স যদি রেগে যেতিস তাহলে কি হলো
” একদম ওই গাঁধাটার মতো কথা বলবি না। ওর কথা শুনলেই
আদি থেমে যায়। মনি মুচকি হেসে বলে
“ওর কথা শুনলেই কি
” কিছু না
আদি বেরিয়ে যায়।
সারা রাস্তা নিধি একটাও কথা বলে নি। বাবা এটা সেটা অনেক কথাই বলেছে নিধি শুধু হ্যাঁ হুম বলেছে। ছানাকে কোলে নিয়ে নিধি নিজের বাড়ি ঢুকছে। শশুড়মশাইকে বলেছে দুইদিন নিজের বাড়ি থেকে তারপর যাবে আদিদের বাড়িতে। শশুড়মশাইও আপত্তি করে নি।
দুইবার কলিং বেল বাজানোর পরে নিধির মা দরজা খুলে। নিধিকে দেখে অবাক
“নিধি তুমি
নিধি মাকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে।
” রাস্তার পাশে আমার লাগেজ আছে নিয়ে এসো
অন্য সময় হলে নিধির মা রাগ করতো। আমাকে কাজের লোক পেয়েছিস না কি এসব বলতো কিন্তু আজ কিচ্ছু বললো না। একটু মুচকি হেসে যায় লাগেজ আনতে।
নিধির বাবা রুমে বসে চা খাচ্ছিলো আর খবরের কাগজ পড়ছিলো। সকালে পড়া হয় নি। আজ নিরা আসবে বলে বাজার করতে গেছিলো। নিধি কোনো কথা না বলে ছানাকে একপাশে রেখে বাবার কোলের মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।
নিধির বাবা কিছুটা চমকে যায়
“মামনি তুমি
” শশুড়মশাই আজকেই নিয়ে এলো। আমি বললাম দুটোদিন তোমাদের কাছে থেকে তারপর ওবাড়িতে যাবো।
নিধির বাবা মুচকি হেসে নিধির মাথায় হাত বুলায়।
নিধির মা লাগেজ নিধির রুমে রেখে নিধির পাশে বসে পড়ে। এতোদিন পরে মেয়েকে পেয়ে বাবা মা দুজনেরই খুব আনন্দ হচ্ছে
“বলছি নিধি আদি আসলো না
আদি নামটা শুনে নিধির বুকের ভেতর কেমন একটা করে ওঠে। নিধির মা নিধিকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে
” কি রে বল
নিধি চোখ বন্ধ করে বলে
“পৃতির বিয়ের দিন সকালে আসবে বেরি
” ১৮ দিন পরে
নিধির বাবা বলে।
“হুমম
তারপর নিধি বাবা মায়ের সাথে গল্প শুরু করে দেয়। কক্সবাজারে কি করেছে কোথায় কোথায় ঘুরেছে। রোদের কথাও বলে। এখন নিধির মুডটা মোটামুটি ভালো হয়ে গেছে।
আদি বাসায় এসে পৃতিকে ফোন দেয়। পৃতি রেডি হচ্ছিলো নিধিদের বাড়িতে যাবে বলে।
” হ্যাঁ ভাইয়া বল
“কি করছিস
” কিছু না। তুই এইসময় ফোন দিলি সব ঠিকঠাক তো
“হ্যাঁ সব ঠিকঠাক।
তখন পৃতিকে নিরা ডাক দেয়। বলে রোহন এসেছে। পৃতি ফোন কানে রেখেই বলে
” রোহন কে?
রোহন নামটা শুনে আদি চমকে ওঠে
“ওই ছেলেটা খুঁজে খুঁজে আমার বাড়ি ওবদি চলে গেছে। ওকে আমি খুন করে ফেলবো
আদি রেগেমেগে ফোন আছাড় মারে
চলবে
#শুধু তুই ২
#পর্বঃ২০
#Tanisha Sultana (Writer)
আদি নিধির রুমের বেলকনিতে বসে আছে। মনটা ভালো নেই। নিধিকে মিছ করছে আবার করছেও না। কেমন একটা দোটানায় পড়ে গেছে আদি।
সৌরভ ফোন দেয় আদিকে
“বল
” শুনলাম নিধি চলে গেছে।
“চলে যায় নি। চলে যাওয়া মানে বুঝিস তুই? চলে গেলে আমাদের ডিভোর্স হয়ে যেতো। আমরা আলাদা হয়ে যেতাম। ও আমাদের বাড়িতে গেছে। আর সব সময় বউ সাথে রাখবে হবে এমনটাতো নয় তাই না?
আদি স্বাভাবিক ভাবেই কথা গুলো বলে। সৌরভ শব্দ করে হাসে। আদি হয়ত হয়ত হাসির কারণটা বুঝে।
” আদি তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। তোর কোনো হ্মতি করতে আমার ভালো লাগবে না। নিধিকে ছেড়ে দে। ভালোবাসি খুব নিধিরাকে।
“ও আমার বউ
” দেখ তোর পাস্ট সম্পর্কে জানলে নিধিরা তোকে ঘৃণা করবে শুধু নিধিরা না তোর পরিবারও। আমি এটা চাইছি না
“ঘৃণা করার মতো কিছু নেই সৌরভ। ভালো বাসতাম আমি পরিকে। ও তো তোকে ভালোবাসতো আমি কি ওকে ঘৃণা করেছি
” তুই হয়ত ভুলে যাচ্ছিস পরি তোর গার্লফ্রেন্ড ছিলো আর পরি প্রেগন্যান্ট ছিলো। তোরা একবাড়িতে থাকতিস। আরও অনেক কিছু। বলবো না কি?
“স্টপ সৌরভ
আদি চেচিয়ে বলে।
” দেখলি তুই ভয় পাচ্ছিস। তুই ঠিক কিরকম টাইপের ছেলে নিধিরাকে বলতে বাধ্য করিস না।
আদি ফোন কেটে দেয়। কেনো সব সময় আমার সাথেই এমনটা হয়? কেনো আমি ভালো থাকার কোনো রিজন খুঁজে পায় না? আমি কি এতোই খারাপ?
আদি এসব মনে মনে বলে।
নিধি এখন রান্না করছে। পৃতি আর নিরা নিধির পেছন পেছন ঘুরছে। কড়াইতে তেল দিয়ে নিধি ওদের দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়
“পবলেম কি তোদের?
” বল না ভাইয়া তোর সাথে কি কি করেছে?
পৃতির প্রশ্নে নিধি হা হয়ে যায়।
“কি করবে?
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে নিধি
” তুই বুঝতে পারছিস না
নিরা হতাশ হয়ে জিজ্ঞেস করে।
“না তো। তবে যদি তোরা রোমাঞ্চের কথা জিজ্ঞেস করিস তাহলে বলবো নিরামিষ ছেলেরা কখনো রোমাঞ্চ বুঝে না।
” বলিস কি
“হুমম। জানিস তো আপি মনের মধ্যে একজনকে রেখে আরেক জনের সাথে সংসার করাটা খুব কঠিন। ভীষণ কষ্ট হয়।
অনমনে বলে নিধি। নিরা আর পৃতি চুপ হয়ে যায়।
“আপি আমি থাকতে পারবো না রে আদির সাথে। এটা রিয়েল লাইফ ছিনেমা নয়। ছিনেমাতে এমনটা হয় একজনকে ভালোবেসে আর একজনে মেনে নেয়। আদিও আমার সাথে থাকতে চায় না আর আমিও চায় না। বিশ্বাস কর এতোদিন এক সাথে থাকার পরেও কখন এক মুহূর্তের জন্য আমার বা ওর মনে হয় নি আমরা বাকি জীবনটা এক সাথে কাটাবো। সব সময় ও চিন্তা করেছে কিভাবে আমি ওর থেকে দুরে যাবো আর আমিও তাই। প্লিজ আব্বুকে বোঝা। আমরা ভালো নেই। খুব কষ্ট আছি আমি। এভাবে বাঁচা যায় না আপি
নিধি নিরার হাত ধরে বলে। নিধির চোখে পানি চিকচিক করছে। নিরা নিধির গালে হাত দিয়ে বলে
” আমি দেখছি
নিরা আর পৃতি চলে যায়। এবার নিধির চোখের পানি গড়িয়ে পাড়ে। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে নিধি চোখের পানি মুছে ফেলে।
নিধি ঠিক করে নিয়েছে কাল ওবদি যা কিছু হয়েছে সব ভুলে যাবে। আর সেটাই চেষ্টা করছে। রান্না শেষ করে খাবারের পিক তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে নিধি। হাতে এক জায়গায় তেল ছিটে এসে কিছুটা পুরে গেছে সেটাও স্টোরিতে দেয়।
অফিস থেকে ফিরে করলা ভাজি আর ভাত রান্না করে গোছল শেরে আদি একটু ফেসবুকে যায়। সময়ের অভাবে ফেসবুকে যাওয়া হয় না। প্রথমেই নিধির স্টোরি চোখে পড়ে। পোড়া জায়গাটা দেখে আদির বুকের ভেতর ধক করে ওঠে। ফোন দিয়ে নিধিকে ইচ্ছে মতো বকতে ইচ্ছে করছে কিন্তু আদি তা করলো না।
খাবারের পিক গুলো দেখলো। তারপর নিধি আর ছানার হাসিমাখা একটি সেলফি দেখলো। দুই ঘন্টা আগে আপলোড দিছে। কমেন্ট চেক করে দেখে। সৌরভ লিখেছে “ভালোবাসা” আর রোহন কমেন্ট করছে “আমার তুমি”
আদির এখন আর রাগ হলো না ওদের ওপর। রাগ হচ্ছে নিধির ওপর। ও যদি পিক আপলোড না দিতো তাহলে তো ওরা কমেন্ট করতে পারতো না।
আদি ফোনটা রেখে খেতে যায়।
এভাবেই পাঁচদিন কেটে গেলো। কাজের চাপ আর সৌরভের বলা কথা গুলো ভেবে প্রায় নিধিকে ভুলে আছে আদি। কথায় আছে “যখন মায়া বাড়িয়ে লাভ হয় না তখন মায়া কাটাতে শিখতে হয় ” আদি সেটাই করছে।
নিধি শশুড় বাড়ি এসেছে দুইদিন হলো। বিরক্ত লাগছে সব কিছু। এতোদিন একসাথে থাকলো মানবোতার খাতিরেও তো একবার ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারে কেমন আছো? আমাকে সব সময় ইডিয়েট বলে অথচ নিজেই একটা ইডিয়েট।
নিধি টিভি দেখছে। আজ পৃতির এংগ্রেসমেন্ট। বাড়িটা সাজানো হচ্ছে। পৃতি আর নিরা শাড়ি চুজ করছে। শশুড় শাশুড়ী আর ইমন কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছে।
শশুড়ের ফোন বেজে ওঠে
“আদি ফোন দিছে
আদি নামটা শুনে নিধির বুকের ভেতর মোচর দিয়ে ওঠে।
” কেমন আছো?
“ভালো। তুমি?
” ভালো। আসবে কবে?
“কাল আসবো
” সত্যিই কাল আসবা
কাল আদি আসবে শুনে নিধির হার্ট বিট বেড়ে গেছে। মনে মনে ভীষণ খুশি লাগছে আবার খারাপও লাগছে। নিধি ওখান থেকে রুমে চলে যায়।
আদির খুব করে নিধির ভয়েস টা শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু আদি নিধির ফোনে ফোন দেবে না। বাবার ফোনে ফোন দেওয়ার আগে আদি মনে মনে বলেছিলো যদি ইডিয়েটটা ফোনটা রিসিভ করতো। কিন্তু তা হলো না।
কিছুখন কথা বলে আদি ফোন কেটে দেয়।
“কাল উনি আসবে তাতে আমার কি? আমার তাড়াতাড়ি ডিভোর্স দিয়ে দিতে হবে।
বিকেল বেলা নিধি গোলাপি লেহেঙ্গার পড়েছে পাতলা ওড়না। পেটের অনেকটা অংশ বেরিয়ে আছে। শুধু নিধি না সবাই এরকম লেহেঙ্গা পড়েছে। ভারি মেকাপ গহনাতে নিধিকে দারুণ লাগছে।
রোহন পৃতির হবু বরের কাজিন। পৃতির থেকেই নিধি ফেসবুক আইডি জেনেছিলো। সামনে থেকে নিধিকে দেখে নাই শুধু পিক দেখছে। আজ সামনে থেকে দেখবে ভাবতেই রোহনের মনটা নেচে উঠছে।
গেস্টরা সব এসে পড়েছে। রাফিনরাও (পৃতির বর) চলে এসেছে। নিধি এক পাশে দাঁড়িয়ে দেখছ।
“তোকে তো আজ দারুণ লাগছে
পেছন থেকে ইমন বলে
” আমাকে আবার দারুণ লাগলো না কবে?
নিধি একটু ভাব নিয়ে বলে
“আজ ভাই দেখলে খেয়ে ফেলতো
” নিরামিষ রে। দেখেই বলতো এখানে ফটোশুট হচ্ছে নাকি মডেলিং? ছেলেদের ইমপ্রেস করার জন্য পেট বের করে রেখেছো ইডিয়েট ননসেন্স স্টুপিট গাঁধা
নিধি আদিকে নকল করে বলে
“এই তুই আমার ভাইকে কপি করছিস
” কি করবো বল সারাদিন এইসব শুনতে শুনতে মুখস্থ হয়ে গেছে।
ইমন আর নিধি একসাথে হেসে ওঠে।
নিধির এখানে কেমন কেমন লাগছে এতো মানুষের মধ্যে। তাই একটু বাইরে যায়। বাইরে বেরিয়েই দেখতে পায় আদির দাদিমা নানু নিরা আর কয়েকজন মহিলা বসে গল্প করছে।
“এই যে ছোট নাতবউ এইহানে আসো
নিধি দাদিমার কাছে যায়
” বসো
বসে।
“এহন কও খুশির খবর কবে দিবা? বড় নাতবউরে তো কবে থিকা কইতিছি সে তো আমার কথা কানেই তুলে না।
নিধি একগাল হেসে বলে
” যেদিন তোমার নাতির সাথে আমার ফুলসজ্জা হবে তার কয়েকদিন পরেই খুশির খবর দেবো
সবাই তো হা হয়ে যায় নিধির কথায়
“তোমাগো ফুলসজ্জা হয় নাই
নানু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে
” না তো। তোমার নিরামিষ নাতি তো সারাক্ষণ খালি বলে হেই স্টুপিট এটা কেনো করলে? ওটা কেনো করলে? এসব বলেই সময় শেষ ভালোবাসার সময়ই পায় না
“আসুক একবার আমিও মজা বুঝামু
দাদি কিছুটা রেগে বলে
” হুমম আচ্ছা করে মজা বুঝিও। আমি এখন আসি কিউট দাদিমা
নিধি এক দৌড়ে আবার অনুষ্ঠানের ওই খানে যায়। বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়।
“হেই নিধিরা নিধি
নিধি চমকে পাশে তাকায় দেখে লম্বা ফর্সা চাপ দাঁড়িওয়ালা একটা ছেলে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে
” জ্বি বলুন
“তুমি আদির বোন?
নিধি পড়লো ঝামেলায় কি বলবে বুঝতে পারছে না
” কি হলো বলো
“না মানে বোনের মতো
” বোনের মতো কি বোন তুমি আদির।
“হবে হয়ত
” আমি রোহন। যার সাথে তোমার বিয়ের কথা চলছে
“আমার বিয়ের কথা চলছে
” হ্যাঁ। দেখো সবাই কি সুন্দর ডান্স করছে তুমিও চলো
“না না থাক
” থাকবে কেনো যাও ডান্স করো
কারো কন্ঠ শুনে নিধি আর রোহন ওই দিকে তাকায়। নিধির চোখ আপনাআপনি বড় হয়ে যায়। “যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধা হয় ”
নিধি ভাবছে কোন দিকে দৌড় দেবে
চলবে