#শুধু তুই ২
#পর্বঃ১৭
#Tanisha Sultana (Writer)
একটা সাততলা বিল্ডিং এর সামনে আদি গাড়ি থামায়।
“এবার নিশ্চয় এই বিল্ডিং এর ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে আমাকে ফেলে দেবে। কিন্তু একটা প্রশ্ন আমাকে মারতে চাইলে তো বাসায় বিশ টিশ খাইয়ে মারতে পারতো। তা না করে এখানে মারার জন্য আনলো কেনো? না কি পাচার করে দেবে আমায়? আল্লাহ বাঁচাও
” ওই ভাবনা কুমারী নামো
আদির কথায় নিধি চমকে ওঠে। কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে
“এই বিল্ডিং এর ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে আমাকে ফেলে দেবেন বলে নিয়ে এসেছেন?
আদির খুব হাসি পাচ্ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে হেসে ফেললে এই গাঁধাকে বলদ বানানো যাবে না। তাই হাসি চেপে গম্ভীর মুখ করে বলে
” হুম অনেক জ্বালাইছো আমায় তাই তোমাকে খুন করে প্রতিশোধ নেবো
“প্রমিজ আপনার সব কথা শুনবো প্লিজ আমায় মেরে ফেলেন না
” ওকে। এখন আমার সাথে আসো। আর হ্যাঁ অপ্রয়োজনীয় কথা বলবে না
নিধি মাথা নেরে আদির পেছন পেছন যায়। লিফটে করে সাত তলায় যায়। আদি সোজা নিজের কেবিনে চলে যায়। নিধি ঘুরে ঘুরে দেখছে।
“ওহহ এটা ওনার অফিস। উনি তাহলে আমাকে অফিস দেখাতে নিয়ে এসেছে। আমিও না শুধু শুধু ভয় পেলাম।
তারপর সামনে তাকিয়ে দেখে আদি নেই
“এ বাবা উনি কোথায় গেলো? এখন কি হবে?
নিধি এবার আদি বলে ডাক দেয়। চারপাশের মানুষ জন সবার দৃষ্টি নিধির দিকে। মনি দৌড়ে আসে
” আরে নিধি তুমি? কার সাথে এলে?
“লাটসাহেবের সাথে। কিন্তু উনাকে খুঁজে পাচ্ছি না
নিধি ইনোসেন্ট ফেস করে বলে।
” আমার সাথে এসো
মনি নিধিকে নিয়ে যায়। আদির কেবিন দেখিয়ে দিয়ে মনি নিজের কেবিনে চলে যায়। নিধি হুরমুর করে ভেতরে ঢুকে
“আচ্ছা মানুষ তো আপনি। আমাকে ফেলেই চলে এলেন
নিধি কোমরে হাত দিয়ে বলে। আদি ফাইল দেখতে দেখতে বলে
” বলদের মতো এদিক সেদিক তাকিয়ে হাঁটলে এমনটাই হয়।
নিধি আদিকে ভেংচি কেটে চেয়ার টেনে বসে।
“কথায় কথায় ইডিয়েট স্টুপিট ননসেন্স গাঁধা বলদ এসব বলবেন না। আমার একটা সুন্দর নাম আছে। নাম ধরে ডাকবেন না হলে ওই বলে ডাকবেন।
” তোমার নামটা আসলে তোমার সাথে যায় না।
“কি বললেন আপনি?
নিধি রেগে বলে
” শুনতে পাও না কালা না কি?
“আমাকে আপনি নিধি বলে ডাকবেন
” সরি পারবো না
“ইডিয়েট
” একদম আমার ডাইলোক কপি করবা না
“কপি করি নি। আমি আজ থেকে আপনাকে এই নামেই ডাকবো।
” ডাইকো
নিধি রেগে জানালার কাছে যায়। জানালা দিয়ে নিচের দিকে তাকায়। মানুষ গুলোকে ছোট খুব ছোট দেখাচ্ছে। নিধি ছানার কথা মনে আসে। পেছন ঘুরে দেখে আদি নেই
“যাহ বাবা উনি আবার কোথায় গেলো?
নিধি দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। দরজা খুলবে কি খুলবে না এটাই ভাবছে। একটু ভাবার পরে দরজা খুলে আর সৌরভের মুখোমুখি হয়। সৌরভ আদির কেবিনেই ঢুকতে যাচ্ছিলো। নিধি চোখ বড়বড় করে তাকায়। সৌরভও কিছুটা অবাক
” তুমি এখানে?
নিধি দরজার কাছ থেকে সরে দাঁড়িয়ে বলে
“না মানে ওনার সাথে এসেছি।
” বাবাহ তোমার বর তো দেখছি তোমাকে ছাড়া কয়েকঘন্টাও থাকতে পারে না। কি জাদু মন্ত করছো?
“সেরকম কোনো বেপার না
” তাহলে কাজের জায়গায়ও তোমাকে কেনো কি এসেছে?
“আমিও তো সেটাই ভাবছি। নিধি মনে মনে বলে।
সৌরভ ভেতরে গিয়ে বসে।
” এই যে নিধিরা এখানে এসে বসো। তুমি এখানে এসে ভালোই করেছো। এমনিতেও অনেকদিন তোমার সাথে মন খুলে কথা বলতে পারি না। আজ সুযোগটা পেয়েছি।
নিধি দরজার দিকে উঁকি ঝুঁকি মারছে। আদি কেনো আসছে না সেটাই ভাবছে। সৌরভের একটা কথাও নিধির কানে যায় নি।
“ওই
সৌরভ এইবার একটু জোরে ডাকে। নিধি চমকে ওঠে।
” এখানে বসতে বলছি।
“আমি এখানেই ঠিক আছি।
নিধি আমতাআমতা করে বলে। সৌরভ উঠে নিধির কাছে যায়। নিধির হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিতে যায় নিধি হাত সরিয়ে নেয়। তখন মনি আসে
” নিধি
সৌরভ মনিকে দেখে ফাইল হাতে নেয়।
“আদি একটু কাজে আটকে গেছে। তুমি আমার সাথে এসো।
সৌরভের দিকে তাকিয়ে
” তুই এখানে
“আদির কাছে এসেছিলাম। এই ফাইল গুলো চেক করাতে
” ফাইল গুলে আমাকে দে আমি দেখিয়ে নেবো
“হুমম
সৌরভ নিধির দিকে এক পলক তাকিয়ে মনির কাছে ফাইল দিয়ে বেরিয়ে যায়।
” উনি কখন আসবে আপু
“পাঁচ মিনিটে চলে আসবে
মনির সাথে যায় নিধি। পাঁচ মিনিট মনির কেবিনে বসে থাকার পরে আদি আসে।
” মনি আমি এখন চলে যাচ্ছি বাকিটা তুই সামলা
“ঠিক আছে
” চলুন গাঁধা
নিধি ধুমধাম করে উঠতে গিয়ে পড়ে যেতে নেয় আদি কোমর জড়িয়ে ধরে। মনি মুচকি হাসে
নিধি আদির কাছ থেকে সরে গিয়ে রেগে বলে
“ধরলেন কেন আপনি আমাকে?
” না ধরলে পড়ে যেতা। আর পড়ে গেলে কোমর বা পা না ভাঙলেও নাটক করতা। পরে আমার তোমাকে কোলে নিতে হতো। কিন্তু তোমার মতো হাতিকে কোলে নেওয়ার কোনো শক আমার নাই তাই ধরলাম। ক্লিয়ার
আদি হাঁটা শুরু করে। নিধিও রাগে কটমট করতে করতে আদির পেছনে যায়।
অফিস থেকে বেরোনোর সময় আদির বসের সাথে দেখা
বস আদিকে দেখে জিজ্ঞেস করে
“হেই আদি কেমন আছো?
” এই তো স্যার আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?
“বেশ আছি। তো তুমি এখন চলে যাচ্ছ না কি?
” হ্যাঁ স্যার। আমার এদিকের কাজ শেষ
“ওহহহ
বসের এবার নিধির দিকে চোখ পড়ে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলে
” আদি ও কে?
আদি নিধির দিকে তাকায়। নিধি দাঁত কেলিয়ে আদির দিকে তাকিয়ে আছে। নিধি শিওর আদি এবার বলবে এটা আমার বউ। আর নিধি এটা নিয়ে আদিকে লেগপুল করবে।
“ও আমার বোন
আদির কথা শুনে নিধির হাসি বন্ধ হয়ে যায়।চোখ ছোটছোট করে আদির দিকে তাকায়। বস নিধির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
” খুব মিষ্টি মেয়ে তো। ভাবছি তোমার বোনকেই আমার ছেলের বউ বানাবো
বসের কথা শুনে আদির কাশি উঠে যায়। নিধি দাঁত কেলিয়ে বসের দিকে তাকায়
“আংকেল আপনি এই বয়সে কতো স্মার্ট তার মানে আপনার ছেলে আরও কিউট। আমি রাজি বিয়েতে। এবার আপনি আমার ভাইইইকে বলে তাড়াতাড়ি বিয়ের ব্যবস্থা করেন
” হুমম তা তো করবোই। তোমাকেই আমি আমার রোহনের বউ করবো। আদি তোমার বাবার নাম্বার দাও
“স্যার বলছিলাম কি?
” আমি কিচ্ছু শুনতে চায় না। তোমার বাবার নাম্বার দাও। আমি আজকেই তোমার বাবার সাথে কথা বলবো। আর খুব তাড়াতাড়ি গিয়ে দিন তারিখ ঠিক করে আসবো। এতো কিউট মেয়ে হাত ছাড়া আমি করবো না
বসের সাথে না পেরে আদি ওর বাবার নাম্বার দেয়। নিধির খুব ভালো লাগছে আদিকে এমন ঝামেলায় পড়তে দেখে। আরও বলো বোন।
লিফটে আদি রাগে আগুন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিধি খুশিতে গান গাইছে।
“মন যে করে এই উরুউরু
নাচতেও ইচ্ছে করছে কিন্তু এখানে তো আর নাচা যাবে না
“স্টপ
আদি ধমক দেয়। নিধি গান বন্ধ করে
” ওকে গান বন্ধ করলাম। জানেন আপনার না নোবেল পাওয়া উচিৎ।
আদি রাগী দৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকায়
“ভাবছেন কেনো? আপনিই ফাস্ট পুরুষ যে কি না নিজের বসের ছেলের সাথে নিজের আপন বউকে বিয়ে দিচ্ছেন। আমি তো খুব খুশি। বসের ছেলের কি যেনো নাম বললো ওহহ রোহন। নাম শুনেই তো আমি প্রায় ক্রাশ খাইলাম। না জা নি ওনাকে দেখে আমার কি অবস্থা হবে।
আচ্ছা আপনি দেখেছেন ওনার ছেলেকে? নিশ্চয় অনেক হট
আদি নিধিকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। নিধি ভরকে যায়।
” কককি করছেন
আদি নিধির খুব কাছে চলে এসেছে। আদির নিশ্বাস নিধির মুখে পড়ছে। নিধির খুব অসস্তি হচ্ছে। নিধি মাথা নিচু করে। আদি নিধির ঠুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে।
“রোহন খুব হট? তুমি ক্রাশ খাইছো তাই তো? খুব বিয়ে করার শখ?
নিধি কিছুই বলতে পারছে না। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। ঘামতে শুরু করে দিয়েছে নিধি। হাত পা কাঁপছে।
চলবে
#শুধু তুই ২
#পর্বঃ১৮
#Tanisha Sultana (Writer)
“প্লিজ একটু সরে দারান না
নিধি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে। আদি আরও একটু কাছে চলে আসে। এখন আদি আর নিধির দুরত্ব ১ ইঞ্চিরও কম। নিধি একটু নরাচরা করবে সেই জায়গা টুকুও নাই
” কেনো? ভাল্লাগছে না? রোহন কতোটা হট হবে সেটা বোঝাচ্ছি।
আদির কথা গুলো নিধির মুখে বাড়ি খাচ্ছে। নিধির লজ্জা ভয় দুটোই একসাথে কাজ করছে। ফাস্ট টাইম কোনো ছেলের এতোটা কাছে নিধি। ভালো লাগছে নিধির আবার খারাপও লাগছে।
“সেটা আপনাকে বোঝাতে হবে না আমি রোহনের কাছ থেকেই বুঝে নেবো
নিধি থেমে থেমে বলে।
নিধির কথা আদির কান ওবদি পৌছায় না। আদির দৃষ্টি নিধির ঠোঁটের দিকে। হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক লাগিয়েছিলো বোধহয় নিধি। আবছা আবছা আছে। বাকিটা মুছে গেছে। ঠোঁট কাঁপছে নিধির। যা আদিকে আরও বেশি আসক্ত করছে।
” আমি কি কিছু করছি?
এইরকম একটা মুহুর্তে এইরকম কথা করলার মতো মনে হচ্ছে নিধির। চোখ তুলে আদির দিকে তাকায়
“এরকম কাঁপছো কেনো?
আদির এই কথাটা নিধির কাছে মাদক মাদক লাগছে। নিধি আবেগেই চোখ বন্ধ করে ফেলে।
আদি নিধিকে ছেড়ে দিয়ে দুরে গিয়ে দাঁড়ায়। নিধির এখন আদির দিকে তাকাতেই লজ্জা লাগছে। আদি মাথা চুলকায়।
আদি কিছু বলতে যাবে তার আগেই লিফটের দরজা খুলে যায়। নিধি এক দৌড়ে বেরিয়ে যায়। আদিও পেছন পেছন বের হয়।
গাড়িতে উঠতে নিধির ভয় করছে। যদি আবার এমন করে। তাই নিধি গাড়ির দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আদি হনহনিয়ে গাড়িতে বসে
” তুমি যাবে না কি আমি একাই যাবো
নিধি কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে বুকে থু থু দিয়ে গাড়িতে বসে। আদি ফুল স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে। নিধির ভীষণ ভয় করছে। এই বুঝি এক্সিডেন্ট করলো
“দেখুন আমার এতো তাড়াতাড়ি মরার শক নাই।
” আমার আছে
“তো মরবেন একা মরেন আমাকে কেনো টানাটানি করছেন
” তোমার থেকে পাঁচ ইঞ্চি দুরে আমি টানাটানি কিভাবে করলাম
নিধি নিজের কপালে নিজের একটা চাপড় মারে। কথার কথা বলে একটা কথা আছে যেটা এই লোকটা বুঝে না।
আদি খুব জোরে গাড়ি ব্রেক করে। নিধি কিছুটা সামনে ঝুকে যায়। আর ভীষণ ভয় পায়। রাগী দৃষ্টিতে আদির দিকে তাকায়
“গাড়ি ডাইভ করতে না পারলে বলবেন আমি পারি না। শুধু শুধু মানুষের সুন্দর জীবনটাকে এক্সিডেন্টমন করার জন্য গাড়ি ডাইভ করতে যান কেনো? যতসব আজাইরা মানুষ
শেষের কথাটা আস্তে করে বলে নিধি।
আদি দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে বলে
” কাল বাবা তোমায় নিতে আসবে। তুমি ঠিক আর ২০ ঘন্টা আছো আমার কাছে। আর আমি চাইছি না এই বিশ ঘন্টা তোমার সাথে মিছবিহেব করতে। সো কথা বার্তা সাবধানে বলো।
কাল আমি চলে যাবো। আমার তো খুশি হওয়ার কথা কিন্তু আমি কেনো খুশি হতে পারছি না। বুকের বা পাশে ফাঁকাফাঁকা লাগছে। আমি চলে গেলে কি লাটসাহেব আমাকে মনে করবে? হয়ত করবে না। পরির কথা ভাববে। আমাকে তো পছন্দই করে না।
নিধি পাশে তাকিয়ে দেখে আদি নেমে যাচ্ছে। নিধিও নামে। বিকেল হয়ে গেছে। নিধি গাড়ি থেকে নেমে অবাক। কারণ আদি ওকে সমুদ্রের নিয়ে এসেছে। সূর্যের আলোয় সমুদ্রের পানি চিকচিক করছে। আশেপাশে আরো অনেক মানুষ আছে।
আদি জুতো খুলে গাড়িতে রেখে পানির মধ্যে গিয়ে দাঁড়ায়। নিধিও আদিকে অনুসরণ করে। নিধি আদির পাশে গিয়ে দাঁড়ায়
“তো আমি কাল চলে যাচ্ছি। আপনার কেমন লাগছে
” খুব ভালো লাগছে। অবশেষে ঘাড় থেকে বোঝা নামলো। যদিও পৃতির বিয়ে উপলক্ষে কিছু দিনের জন্য বাবা তোমাকে নিতে চাইছে। কিন্তু আমি মনে মনে প্রে করছি যাতে এটাই তোমার শেষ যাওয়া হয়।
“হুমমমমম আমিও আর আসবো না আপনি না চাইলে প্রমিজ।
আদি এক পলক নিধির দিকে তাকায়। কেনো জানি আদির নিধির কথা পছন্দ হলো না। হাজবেন্ড হয় আদি ওর। এতো সহজেই বলে দিলো আসবো না। বলতেও তো পারতো “কেনো আসবো না? আপনার বাড়ি তো আমারও বাড়ি সো আমি আসবো” এরকমটা কেনো বললো না
আদি এসব ভাবছে। নিধি আদির মুখের সামনে চুটকি বাজায়
“ওই হেলো ভাবনাকুমার। পৃথিবীকে চমকে দেওয়ার মতো কিছু আবিষ্কার করবেন ভাবছেন না কি
নিধির কথায় আদি একটু হাসে। নিধিও হাসে।
অভিমান অভিযোগ দুজনের মনেই আছে কিন্তু প্রকাশ করবে না কেউ।
” আমাকে কপি করলে কেনো?
“আপনাকে কপি করলাম কই? আপনার ডাইলোক আপনাকে শোনালাম।
আদি আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
” ভালো
আদি আর নিধি পাশাপাশি হাঁটছে পানির মধ্যে দিয়ে। একটু পরপর ঢেউ আসছে। সূর্যটা ডুবে গেছে কিছুখন আগেই। চারপাশে হালকা হালকা অন্ধকার নেমে এসেছে। দুর থেকে একটা গানের সুর ভেসে আসছে
“ভাল্লাগে হাঁটতে তোর হাত ধরে”
নিধিরও আদির হাতটা ধরে হাঁটতে মন চাইছে। এই মুহূর্তে সৌরভ এখানে থাকলে নিধির অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হতো না। কিন্তু আদির হাত ধরতে নিধির ভয় করছে। হয় বকবে না হয় এখানেই রেখে যাবে।
নিধি নিজের মাথায় গাট্টা মারে
“তুইও না নিধি কি সব ভাবিস। লাটসাহেব কখনোই তোর হাত ধরবে না। আর আমিও ধরবো না। কিন্তু তবুও হঠাৎ করেই এই অদ্ভুত ইচ্ছেটা হলো। যে ইচ্ছে কখনো পূরণ হওয়ার নয়। কাল চলে যাবো। হয়ত হয়ত না এটাই আমার শেষ রাত কক্সবাজারে।
আদি হাঁটতে হাঁটতে অনেক দুরে চলে গেছে। নিধি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আদির দিকে অপলক তাকিয়ে ভাবছে। আদি আবার পিছিয়ে আসে
” ভাবনাকুমারী আবার এখানেও ভাবতে শুরু করে দিয়ে
আস্তে করে কথাটা বলে আদি। তারপর নিধির সামনে হাত নারিয়ে বলে
“সমুদ্র নিয়ে গবেষণা করা শেষ হলে আমরা যেতে পারি
নিধি সমুদ্রের পানির দিকে একবার তাকিয়ে বলে
” হুমম চলুন
সমুদ্রের কাছেই একটা হোটেলে যায় আদি নিধি। সমুদ্রের টাকটা মাছ ভাত খেয়ে বাসায় ফেরে।
বাসার দরজার খুলেই দেখে আদির বাবা বসে আছে
” বাবা তুমি? তোমার না কাল আসার কথা
“আজকেই এলাম। তিনটার ট্রেনে নিধিকে নিয়ে ফিরবো।
” ওহহ।
আদি রুমে চলে যায়। নিধি শশুড়মশাইয়ের সাথে কিছুখন গল্প করে বাবাকে নিধির রুমে শুতে দিয়ে আদির রুমে যায় নিধি।
দরজায় নক করে
“ভেতরে আসবো
” হুম আসো
আদি ফোনে গেমস খেলছিলো।
“আসলে বাবা আমার রুমে থাকবে তো আমি
নিধি আমতাআমতা করে বলে
” এখনে শুয়ে পড়ো
“আপনি
” একদিন নাহয় তোমার সাথে বেড শেয়ার করলাম
আদি ফোনে মনোযোগ দিয়েই বলে
নিধি আমতাআমতা করছে। আদি ফোন রেখে বলে
“কোনো বেপার না শুয়ে পড়ো
তবুও নিধি দাঁড়িয়ে আছে
” তাহলে যাও বেলকনি বা ছাঁদে ঘুমাও
সাথে সাথে নিধি শুয়ে পড়ে। আদিও নিধির পাশে লম্বা হয়ে শয়
“তো ইডিয়েট বাসায় গিয়ে সবার কাছে বলবেন আমি আপনাকে দিয়ে কাজ করিয়েছি তাই তো
নিধি আদির দিকে ঘুরে
” করিয়েছেন তো
“তো বলতে হবে?
” হবে না? আব্বুকে জানাতে হবে না কতো ভালো ছিলাম।
“যাকে খুশি বলো ডোন্ট কেয়ার বাট কোনোভাবে আমার মা যেনো জানতে না পারে।
” আপনার মাকেই তো আগে বলবো
নিধি দুষ্টুমি করে বলে
“প্লিজ সব কিছুর জন্য সরি। আসলে আমি বুঝতে পারি নি কি করে তোমার থেকে মুক্তি পাবো তাই মিছ বিহেব করতাম। যদি জানতাম তুমি নিজে থেকেই আমাকে ছেড়ে দেবে তো কখনোই এমনটা করতাম না।
নিধির মুখটা কালো হয়ে যায়। একটা মানুষ ওর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কতো ছটফট করেছে। এতোটাই অপ্রিয় কি নিধি
” গড প্রমিজ আপনি না চাইলে আমি আর কখনোই আপনার কাছে ফিরবো না
আদি প্রশান্তির হাসি দেয়। নিধি আদির দিকে পেছন ঘুরে। প্রচুর কান্না পাচ্ছে নিধির। চোখের পানি আটকে রাখা খুব কঠিন বেপার। নিধি যেটা পারে না।
নিধি উঠে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। সাওয়ার অন করে শব্দ করে কেঁদে ফেলে।
চলবে