শুধু তুই ২ পর্ব-১৩+১৪

0
1606

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ১৩
#Tanisha Sultana (Writer)

“চিল্লানি দিলা কেন? আদি চোখ মুখ শক্ত করে বলে

নিধি এখনো চোখ বন্ধ করে আছে।

” কি হলো

আদির দমকে নিধি চোখ খুলে। আবার বন্ধ করে

“সার্কাস হচ্ছে

” আপনি প্লিজ কিছু পড়ে আসেন
নিধি চোখ বন্ধ রেখেই বলে। আদি এবার নিজের দিকে তাকায়। গালি গায়ে আদি

“আজিব তো। আমি কিছু পড়ে আসবো মানে? আর জীবনে কখনো কোনো ছেলেকে খালি গাঁয়ে দেখো নাই

” দেখছি বাট আপনার মতো দেখি নি

“দেখবাও না। গোটা দুনিয়ায় এক পিছ ই আছি
আদি ভাব দেখিয়ে বলে।
নিধি মুখ ভেংচি দিতে গিয়েও থেমে যায়।

” ভীষণ বিচ্ছিরি লাগছে আপনাকে। জিম করতে পারেন না

“আমি রেগুলার জিম করি

” তাও এমন বিচ্ছিরি বডি

“তোমার চোখ বিচ্ছিরি

” আপনার চোখও। আমার এতো সুন্দর হাসি আর ঠোঁটকে আপনি বিচ্ছিরি বলেছিলেন তার শোধ নিলাম

বলেই নিধি দরজা আটকাতে যায় আদি শক্ত করে দরজা ধরে

“তোমার অবস্থা দেখছি

নিধি এবার নিজের দিকে তাকায়। একটু একটু লজ্জা করলেও নিধি নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে

” ভালোই আছি

“পাগল যে তুমি

” সাট আপ ইডিয়েট একটা

আদির ডাইলোক আদিকপই ফিরিয়ে দিয়ে নিধি দরজা অফ করে দেয়

গোছল শেষে ড্রেস চেঞ্জ করে নিধি খুড়িয়ে খুড়িয়ে রুমে আসে। আদি বেলকনিতে ছিলো। জামাকাপড় রোদে শুকতে দিতে হবে। কিন্তু নিধি আর হাঁটতে পারছে না। খাটে বসে পড়ে।

” শুনছেন

আদিকে ডাক দেয়। আদি রুমে আসে

“শুনছেন কি?

” শুনছেন মানে আপনাকে ডাকলাম

“আমার নাম নেই?

” মেবি আছে

“মেবি না। আমার নাম আছে। আদিল চৌধুরী

” আই নো

“নেক্সট টাইম থেকে আমার নাম ধরে ডাকবা

” স্বামীর নাম ধরে ডাকলে স্বামী তাড়াতাড়ি মরে যায়।৷ আর আপনি মরে গেলে আমার বাবা মা আমাকে গিলে খাবে

“কোথায় লিখা আছে এটা?

” ইতিহাসের শেষের পৃষ্ঠার আট পৃষ্ঠা পরের আগের দুই পৃষ্টার মাঝামাঝি।

“সাট আপ
নিধি কেঁপে ওঠে

” কথায় কথায় ধমক দেবেন না একদম। বাচ্চা একটা মেয়ে আমি যদি পিত্তি গলে মরে যায়

“ভালো মানুষ সহজে মরে না

” খারাপ মানুষ তাড়াতাড়ি মরলে তো আপনি এতোদিন

“আমি খারাপ

” খারাপের হোল স্কয়ার আপনি

“আর তুমি কি?

” গুড গার্ল

“ইহহহহহহ আইছে

” হুমমম আইছি

“ইডিয়েট ননসেন্স স্টুপিট গাঁধা

” ভাগ্যিস এই কয়টা ইংরেজি শিখছিলেন বিদেশ থেকে নাহলে সর্বনাশ হয়ে যেতো। আপনি কি করে মানুষকে বোঝাতেন যে আপনি বিদেশ থেকে এসেছি

“আমি এই জন্য তোমায় এইসব বলি?

” অবশ্যই হ্যাঁ। আমার না ভালো একটা ইংরেজি টিচার আছে। খুব ভালো ইংরেজি শিখায় ওনার থেকে আরও কয়েকটা শিখে নিয়েন ওয়ার্ড

“ইডিয়েট

“আমি জানি

” হুর

” আমার জামাকাপড় রোদে মেলে দিয়ে আসুন

নিধি আদির দিকে জামাকাপড় এগিয়ে দিয়ে বলে। আদি হাত ভাজ করে চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে বলে

“এই বাড়িটা কার?

” আমাদের

“আমার

” আপনার মা বলেছে এখন আর আমার বলতে কিছু নেই সব কিছুই আমাদের। আপনার জিনিস আমার আর আমার জিনিস আপনার

“কটা

” সত্যি কথা বললেই কটা

“আমার বাড়ি এটা। আর আমার বাড়িতে থেকে আমার মুখের ওপর কথা বলবা না। আমি যে টা বলবো সেটাই শেষ কথা বুঝেছো

” হুমম বুঝলাম আপনি আমাকে হেল্প করবেন না

নিধি উঠে দাঁড়ায় খুঁড়িয়ে হাঁটতে যায় আদি হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। নিধি হা হয়ে যায়

“সব সময় গায়ে পড়ার ধান্দায় থাকো

নিধি ঠাস করে আদিকে সরিয়ে বলে

” পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করা যায় এতোদিন শুনতাম কখনো দেখি নি আজ দেখলাম। আমি একটু সব্ভশান্ত বলে যা খুশি তাই করবেন। আপনি তো মোটামুটি শিশু নির্যাতন করছেন। কথায় কথায় ধমক আর পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া। এভাবে থাকা যায়?

আদি মাথা চুলকে বলে

“তো চলে যাও

চলে যাও কথাটা শুনে নিধির বুকের ভেতর ধক করে ওঠে। নিধি মাথা নিচু করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বেলকনিতে যায়। আকাশের দিকে তাকায়

” নাহহ ওনার সাথে ফ্রেন্ডশিপও করা যাবে না। উনি খুব খারাপ একটা মানুষ। আমি আর ওনার কথা ভাববো না। আমি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে ভাববো। স্বামীর ঘর থেকে চলে গিয়ে বাবার ঘাড়ের ওপর চড়ে খাবো? সেটা আমি করবো না। কোনোরকম একটা জব পেলেই চলে যাবো। অনেক দুরে

নিধি একটা বড় করে শ্বাস নেয়।

দুপুরের রান্না হয় নি। আদি তখন বেরিয়ে গেছে। নিধি রান্না ঘরে যায়। আজকেও করলা ছাড়া আর কিছু নেই। নিধি করলাই রান্না করে। রান্না শেষে নিধি বাড়িতে ফোন করে। এতোদিন ফোন ছিলো না তারওপর বাবা মায়ের ওপর রাগ করে ছিলো বলে কথা হয় নি। বাবাকে বলে বিকাশে টাকা পাঠাতে।

এবার নিধি ফোনটা নিয়ে বের হয়। টাকা তুলতে হবে আর কিছু সবজি কিনতে হবে। কিচ্ছু চেনে না নিধি। বাসা থেকে বের হয়ে গেটের কাছে এসে নিধি কনফিউজড হয়ে যায়। দুই দিকে দুইটা রাস্তা গেছে তো নিধি কোন দিকে যাবে? অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেই বাম দিকে যাবে। হাতে টাকাও নাই যে রিকশা নেবে। তাই নিধি হেঁটেই যাচ্ছে কিন্তু কোনো দোকান আর পাচ্ছে না। অনেকটা হাঁটার পরে একটা বাজার পায় নিধি। নিধির খুশি আর দেখে কে।

বিকাশ করুন সাইনবোর্ড টাঙানো ওই দোকানে গিয়ে নিধি টাকা তোলে। দোকান থেকে বেরোনোর সময় দেখে দোকানের পাশে একটা লোকটা দুইটা খরগোশের ছানা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিধির আবার খরগোশ ভীষণ পছন্দের। লোকটার কাছে দাম জিজ্ঞেস করে ৩০০০ টাকা। নিধি সাত পাঁচ না ভেবে কিনে নেয়। তারপর বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বাসার দিকে রওনা দেয়। বাজার করার কথা ভুলে যায়।

বাসায় এসে নিধি শুধু ছানাটাকেই দেখে যাচ্ছে আর ভাবছে কি নাম দেওয়া যায়। পিক তুলে ফেসবুকেও পোষ্ট দেয়।

“তুই মেয়ে না ছেলে জানি না রে। কিন্তু তোকে আমি ছানা বলে ডাকবো আপাতত। পরে যখন মাথায় সুন্দর নাম আসবে তখন তোর ভালো একটা নাম দেবো।

নিধি ছানার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কতো কিউট দেখতে। ছানাও এদিক সেদিক হাঁটাহাঁটি করছে।

আদি বাসায় এসে নক না করেই ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে আবার দরজা বন্ধ করতে যাবে তখন পায়ের কাছে নরম কিছু অনুভব করে। নিচের দিকে তাকিয়ে আদি চমকে দুই হাত দুরে সরে যায়

” এটা কি?

নিধি ছানার জন্য ঘাস আনতে গেছিলো বাগানে। রুমে ঢুকে বলে

“ও আমার বন্ধু ছানা।

ছানাও নিধিকে দেখে দৌড়ে নিধির কাছে যায়। নিধি কোলে তুলি ঘাস খাওয়াতে খাওয়াতে চলে যায়।

আদির মুড ভালো নেই তাই আর বেশি কিছু বলে না। ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলের সামনে গিয়ে দেখে করলা রান্না করছে। আদি একটু মুচকি হেসে তৃপ্তি করে খায়।

নিধি এতোখন ছানাকে নিয়ে মেতেছিলো বলে খুদার কথা ভুলে গেছিলো। এবার খিধায় পেট ব্যাথা করছে। আর করলা তো নিধি মরে গেলেও মুখে তুলবে না।

“ধুর বাজার থেকে কিছু কিনে আনলে এখন খেতে পারতাম।

ডিম ভাজার গন্ধ নাকে আসে নিধির

” কেউ কি ডিম ভাজি করছে

নিধি কিচেনে গিয়ে অবাক হয়ে যায়।

“আমি কি ঠিক দেখছি
নিধি চোখ ডলে আবার তাকায়

” আপনি রান্না করছেন

আদি নিধির দিকে না তাকিয়েই বলে

“হ্যাঁ তো? আগে তো আর নিধি ছিলো না পরি ছিলো। আর পরি তো নিধির মতো ধমক দিলে ভয় পেতো না

নিধি চমকে তাকিয়ে আছে আদির দিকে

” পরি

আদির এবার হুশ আসে ও কি বলছে। কথা ঘোরানোর জন্য বলে

“আমার জন্য এতো ভালো রান্না করলে তাই ভাবলাম তোমার জন্য ডিম ভাজি করে দেই

আদি ডিম প্লেট এ তুলে খাবার টেবিলে রাখে। নিধি এখনও ওখানে ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। পরি নামটা মাথা থেকে বের হচ্ছে না

” হেই স্টুপিট কি নিয়ে গবেষণা করছো?

“পরি

আদি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে

” কে পরি

“এখুনি বললেন আপনি?

” কখন বললাম? পরি নামটা তো আমিই এখন শুনলাম তাও তোমার মুখ থেকে। তা পরি কে?

নিধি একটু আদির দিকে তাকিয়ে খেতে বসে যায়। আদি হাঁপ ছেড়ে বাঁচে

“ভ্যাগিস মেয়েটা গাঁধা নাহলে সব বুঝে যেতো

নিধি খাচ্ছে আর ভাবছে

” লাটসাহেব যতই কথা ঘুরাক না কেনো আমি জেনেই ছাড়বো পরি কে? আগেও তো সৌরভের কাছ থেকে পরি নামটা অনেক শুনেছি। কে এই পরি? আর লাটসাহেবের সাথে কেনো থাকতো? এই রহস্যের সমাধান করতে পারলে আমি আব্বুকে প্রমাণ দিতে পারবো আদি খারাপ ছেলে আর আব্বু আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে। ইসসস কি বুদ্ধি আমার।

চলবে

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ১৪
#Tanisha Sultana (Writer)

“সব সময় এতো কি ভাবো বলো তো? পৃথিবীকে চমকে দেওয়ার মতো কিছু আবিষ্কার করছো কি?

” পৃথিবীকে চমকাতে পারবো কি না জানি না তবে আমার আব্বুকে চমকে দিতে পারবো এমন কিছু আবিষ্কার করছি

“ওয়াও গাঁধারাও আজ কাল বুদ্ধি খাটাচ্ছে গ্রেট

নিধি খাওয়া শেষ করে হাত ধুতে ধুতে বলে

” আপনার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছে আমার নেই

“আমারও। তবে কাজ করতে হবে এখানে থাকলে

” আর যদি না করি

“বাসা থেকে বের করে দেবো

” ওকে

বলেই নিধি রুমে চলে যায়। আদি প্লেট গুছাচ্ছে৷ নিধি আবার ফিরে এসে আদির হাত থেকে প্লেট নেয়

“আপনার কাজ করতে হবে না। আমি করে দিচ্ছি

আদি হাত ভাজ করে দাঁড়ায়।

” এই তো কাজ করবে না বলে চলে গেলে।

“কাজ করবো না বলেছি না কি? আমি তো এমনি গেছিলাম

” নটএভার কাজ করবে করো

আদি যেতে নেয়

“শুনুন

” তোমাকে না বলেছি এই যে শুনছেন, শুনুন, ওগো, হ্যাঁ গো এগুলো না বলতে

“ওগো হ্যাঁ গো কবে বললাম?

নিধি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে। আদি আমতাআমতা করে বলে

” এখনো বলো নি কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি বলতে

“ওভারস্মার্ট

” ইউ

“ঝগড়া করার মুড নাই।

” আমারও

“যা বলছিলাম খরগোশ কি খায়?

” কিহহহহহহ

“খরগোশ কি খায় আই মিন খরগোশদের খাবার কি?

” কেনো কি করবা

“ওই যে আমি একটা কিনেছি না ওকে খাওয়াবো

” গাজর আর ঘাস খায়

“আমাকে গাজর এনে দিবেন

” মনে থাকলে

আদি রুমে চলে যায়। নিধি ছানাকে কোলে করে আদির রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কখন আদি বের হবে তার অপেক্ষা করছে। কিন্তু আদি বের হচ্ছে না

“ধুর বাবা পা ব্যাথা হয়ে গেলো। কখন বের হবে?

তখন আদি দরজা খুলে বের হয়। কোট সুট আর হাতে ব্যাগ নিয়ে। নিধিকে দেখে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে

” তুমি এখানে?

“না মানে আপনার নাম্বার টা দেবেন প্লিজ

” আমার নাম্বার নিয়ে আমাকে ডিস্টার্ব করবে

“আরে না না জাস্ট রাতে আপনাকে ফোন দিয়ে গাজরের কথা মনে করয়ে দেবো

” লাগবে না

“যদি আপনার মনে না থাকে

” আমি তোমার মতো গাঁধা না

আদি দরজা পর্যন্ত যায় আবার ঘুরে তাকায়

“দরজা বন্ধ করে দিও

আদি বেরিয়ে যায়। নিধি দরজা বন্ধ করে দিয়ে ছানাকে নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে বসে। বাগান থেকে আনা ঘাস খাওয়ায় ছানাকে।

তখন নিধির ফোন বেজে ওঠে

” হেলো

“কেমন আছো নিধিরা?

” সৌরভ আপনি? নাম্বার কই পেলেন?

“ভালোবাসি তো তাই ওপরওয়ালাই জোগাড় করে দেয়

” ওহহহ। আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি

“হুম করো

” পরি কে?

সৌরভ কিছুটা চমকে ওঠে

“কোন পরি?

” সেই পরি যার সাথে আগে আদি থাকতো

“ঠিক বুঝলাম না

” হেয়ালি কইরেন না প্লিজ

“যদি বলি পরি আদির বউ ছিলো তাহলে কি তুমি আমার কাছে চলে আসবে

” বউ ছিলো

“আমি বলি নি। যদি হতো তাহলে কি তুমি আমার কাছে চলে আসতা

” যদি শব্দটা এখানে কেনো আসছে?

“পরি ছিলো খুব খুব ভালো একটা মেয়ে। আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড। সব সময় হাসি খুশি থাকতো। সবাইকে মাতিয়ে রাখতো।

” আদির কি হতো?

“সেটা তোমার আদির কাছে জিজ্ঞেস করো

“ওকে

” লাভ ইউ

“লাইক ইউ বাট ডন্ট লাভ

নিধি ফোন কেটে দেয়।

” সৌরভ এমন ঘুরিয়ে কথা কেনো বললো? লাটসাহেবের বউ তো পরি কখনোই হতে পারে না। তাহলে কে? গার্লফ্রেন্ড?
ধুর এতো ভাবলে আমি পাগল হয়ে যাবো। আস্তে আস্তে জানতে হবে। তারাহুরো করলে হবে না। লাটসাহেবের সাথে তো আমি থাকবোই না। উনি আমার মতো এতো ভালো একটা মেয়েকে ডিজার্ভ করে না

নিধি জোরে একটা শ্বাস নেয়। কলিং বেল বাজে

নিধি দরজা খুলে দেখে মনি দাঁড়িয়ে আছে

“আপু তুমি ভেতরে আসো

মনি ভেতরে আসে।

” নিধি তারাতাড়ি এটা পড়ে আসো
নিধির হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলে

“কিন্তু কেনো?

” আজ আমাদের পার্টি আছে তাই তোমাকে নিয়ে যাবো

“আমি যাবো না

” বেশি কথা না বলে যাও

মনি ঠেলেঠুলে নিধিকে পাঠায় শাড়িটা পড়তে। মনি সুন্দর করে শাড়ি পাড়িয়ে দেয় নিধিকে। তারপর হালকা মেকাপ। সব মিলিয়ে দারুণ লাগছে নিধিকে

“পারফেক্ট এবার চলো

” আপু এভাবে কি করে যাবো? এই দেখো পেট বেরিয়ে গেছে। এতো পাতলা শাড়ি

“আরে কিচ্ছু হবে না। এটা ফ্যাশন

মনি টানতে টানতে নিয়ে যায় নিধিকে। মনি ডাইভ করছে নিধি পাশে বসে আছে

” আপু ওনাকে বলে আসলাম না
নিধি আমতাআমতা করে বলে। মনি এক গাল হেসে বলে

“তোমার উনি ওখানেই আছে। যেখানে আমরা যাচ্ছি

নিধি চোখ বড়বড় করে তাকায় মনির দিকে। যে মানুষ জাস্ট ওড়না ছাড়া বের হলে বকে আজ তো নিধি পাতলা একটা শাড়ি পড়েছে না জানি আজ কি বলবে।
ভেবেই নিধি ঢোক গিলে।

” কি হলো?

“আজ উনি খুব বকবে আমাকে

” কেনো?

“এরম একটা শাড়ি পড়েছি

” কিচ্ছু বলবে না। আমরা যেখানে যাচ্ছি সেখানের সব মেয়েরা ছোট ছোট ড্রেস পড়ে তো তোমার লাটসাহেব তোমাকে কিছু বলবে না। তাছাড়া আমার ড্রেস দেখো

নিধি মনির দিকে তাকায়। হাতা কাটা একটা শর্ট ড্রেস পড়েছে। দারুণ লাগছে মনিকে।

একটা বড় বাড়ির সামনে মনি গাড়ি থামায়

“চলো

নিধি ঢোক গিলে মনির সাথে সাথে যায়। পুরো বাড়িটা লাল নীল বাতি বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। মনি নিধিকে নিয়ে একটা ফাঁকা জায়গায় বসে

” নিধি একটু বসো আমি তোমার উনিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি

মনি মুচকি হেসে চলে যায়। নিধি এবার সেলফি তুলায় ব্যস্ত হয়ে যায়। এতোখন সেলফি তুলতে পারে নি

“তুমি এখানে?

নিধি চমকে তাকিয়ে দেখে আদি।

” মনি আপু নিয়ে এসেছে। মাথা নিচু করে বলে নিধি।

“কি পড়েছো এটা তুমি? চোখ মুখ শক্ত করে বলে আদি।

” না মানে

“কি মানে মানে করছো? আদিল চৌধুরীর বউ তুমি। ভুলে যাও কেনো? তুমি জানো না এরকম শরীর দেখানো শাড়ি আমার পছন্দ নয়
কর্কশ গলায় বলে আদি।

নিধির এবার ভয় করছে। পাবলিক প্লেসে যদি ইডিয়েট ননসেন্স স্টুপিট গাঁধা বলে তো মানসম্মান থাকবে না

” কি হলো চুপ কেনো? ছেলেদের ইমপ্রেস করতে এসেছো তুমি এইরকম নাগীনি সাজ দিয়ে

“আদি বাহহ ভাবিকেও নিয়ে এসেছিস দেখি

সৌরভ শুভ আর রিয়াদ (আদির বন্ধু) ওরা পেছন থেকে বলে।

” ভাবি কেমন আছেন? রিয়াদ মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে।

“আলহামদুলিল্লাহ। আপনি

” ভালো

“আপনাকে কিন্তু আজ দারুণ লাগছে।
সৌরভ নিধির পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলে।

আদির গা জ্বলে যাচ্ছে। ভীষণ রাগ হচ্ছে।

” আপনাকে কিন্তু আজ আমার সাথে ডান্স করতেই হবে ভাবববি
সৌরভ বলে।

“না না আমি ডান্স করতে পারি না

নিধি আদির দিকে তাকিয়ে বলে

” আরে আদিকে ভয় পাচ্ছ তো? আদি কিছু বলবে না। তাছাড়া বন্ধু বউ তো আমাদেরও অর্ধেক বউ
সৌরভ বাঁকা হেসে বলে। সৌরভের সাথে বাকিরাও তাল মেলায়। নিধি কি করবে বুঝতে পারছে না। আদি তো রেগে আগুন হয়ে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে

সৌরভ হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে

“তো চলো
নিধি আদির দিকে তাকিয়ে আছে। সৌরভ নিধির হাত ধরে ডান্সফ্লোরে নিয়ে যায়। মিউজিক অন করে। আদি অগ্নি দৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে। এক সেকেন্ডের জন্য ও দৃষ্টি সরাচ্ছে না।

সৌরভ টান দিয়ে নিধিকে কাছে নিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে

” আজ যেমন আদির সামনে দিয়ে তোমাকে নিয়ে এলাম ডান্স করার জন্য ঠিক তেমনি খুব তারাতাড়ি তোমাকে আদির সামনে দিয়ে নিয়ে যাবো বিয়ে করার জন্য। আজ আদি চুপ ছিলো সেদিনও চুপ করে থাকবে।

নিধি সৌরভকে সরানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সৌরভের শক্তির সাথে পেরে উঠছে না। সৌরভের দৃষ্টি যায় নিধির পেটের দিকে।

আদির আর সয্য হচ্ছে না। মিউজিক অফ করে নিধির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

“আল্লাহ এবার আমার কি হবে? এই লাটসাহেব আমার সাথে এবার না জানি কি করবে?

সৌরভ নিধির হাত ধরে ছিলো আদি টান দিয়ে নিধির হাত আদির হাতের মুঠোয় নিয়ে যায়।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে