শুধু তুই ২ পর্ব-১+২

0
3000

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ১
#Tanisha Sultana (Writer)

আদিল চৌধুরী নামটা শুনলেই বুক ধরফর করে, হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে,কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে যায়। এই লোকটা নিধির জাত শক্র। এখন না কি এই লোকটার সাথেই নিধিকে শপিং এ যেতে হবে। ভাবা যায়। আর পৌরসু এই লোকটাকেই বিয়ে করতে হবে। কে জানে কি আছে কপালে।

“পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে যাও। আদি গাড়িতে অপেক্ষা করছে।

বাবার কথা নিধি অসহায় ফেস নিয়ে বাবার দিকে তাকায়।

” যদি কোনো তাল বাহানা করো তো তোমার রাতে খাওয়া বন্ধ।

বাবার কথা শুনে নিধির কান্না পাচ্ছে।

“আমার যে পরিমাণ হাত পা কাঁপছে এই হাত পা কন্ট্রোল করতেই তো দশ মিনিট লেগে যাবে। পাঁচ মিনিটে কি করে রেডি হবো

নিধির এসব ভাবনার মাঝেই গাড়ির হর্ণ বেজে ওঠে। নিধির বাবা চলে যায়। নিধির মা একটা লাল গাউন বের করে দেয়

” এইটা চট করে পড়ে আয়।

“মা বলছিলাম কি

নিধির কথা শেষ হওয়ার আগেই নিধির মা নিধির হাতে একটা মেকাপ বক্স হাতে ধরিয়ে দেয়

” একটু ভালো করে সাজুগুজু করে যাবি। আদির মতো স্মার্ট মর্ডান ছেলের সাথে শপিং এ যাবি বলে কথা

“স্টুপিট ইডিয়েট ননসেন্স এসব ধমক খাওয়ার জন্য আজ কাল সাজুগুজু করে যেতে হয় আমার জানা ছিলো না।

নিধির মা নিধির কথা বুঝতে পারে না। নিশি ড্রেসটা পড়ে। আর হালকা একটু লিপস্টিক ব্যাস সাজ কম্পিলিট।

গাড়িতে বসে বোর হচ্ছে আদিল।

” কখন থেকে বসে আছি। এই মেয়েটা কি আসবে না কি আসবে না? ইডিয়েট একটা। ধুর

নিধি দৌড়াতে দৌড়াতে আসে আর ভাবছে

“নিশ্চয় আমাকে আজ মেরে গুম করে দেওয়ার জন্য শপিং এ নিয়ে যাচ্ছে। বিদায় পৃথিবীর। ফেসবুকে একটা পোষ্ট দেয়। মরে গেলে তবুও পোলাপান গুলো বলবে
নিধিরা নিধি মরার আগে শেষ পোষ্টটা ছিলো
” বিদায় পৃথিবীর ”
নিধি পোষ্ট করে আদির দিকে তাকিয়ে দেখে আদি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।

“গাড়িতে বসার জন্য ইনভাইড করতে হবে না কি?

আদির কথায় নিধি চট করে গাড়ির দরজা খুলতে যায় কিন্তু পারে

” ইয়ে মানে বলছিলাম কি

“কি বলছিলে

” খুলতে পারছি না

নিধি আসহায় ফেস নিয়ে গাড়ির দরজা দেখিয়ে বলে। আদি খুলে দেয়। নিধি গাড়িতে বসে আদির দিকে তাকায়। আদিও লালা একটা শার্ট পড়ে এসেছে।

“বিশ্বাস করেন আমি আপনাকে কপি করে এই সেম কালারের ড্রেস পড়ি নি। আম্মু বললো এটা পড়তে তাই পড়েছি (গলায় হাত দিয়ে বলে) সত্যি

” আমি কি তোমাকে কিছু বলছি
আদি ভ্রু কুচকে বলে

“না মানে বলেন নাই কিন্তু বলতেন। তাই আমি আগে ভাগে বলে দিলাম

” ওভারস্মার্ট

আদি গাড়ি স্টার্ট দেয়।
“আজ বকলো না কেনো? আগে তো ড্রেসের একটা সুতোর সাথে ওনার শার্টের মিল থাকলে তুলকালাম বাধিয়ে দিতো। এখন এখন ভালো।
নিধি মনে মনে ভাবছে

” নিধি তোমার নাম রাইট

আদি গাড়ি ডাইভ করতে করতে বলে

“হুমমম
” এহহহহহ এমন ভাব করছে যেনো জানেই না। ছোট বেলায় কি মারটাই না মারতো আমাকে। হনুমান একটা। বিদেশে গিয়ে নামটাও ভুলে গেছে। অবশ্য ওনার নামটাও মেবি ভুলে গেছে। আর না হলে ভুলে যাওয়ার ভান করছে। না হলে বোঝাবে কি করে আমি বিদেশে গিয়ে অনেক বড়লোক প্লাস অহংকারী হয়ে গেছি। যতসব

নিধি মনে মনে আদিকে ঝাড়ছে।

“কোন ক্লাসে পড়ো?

” অনার্স ফাস্ট ইয়ার

“গুডডড

” হহ

“হ কি শব্দ? জ্বী ইয়েস হ্যাঁ এসব বলতে হয়। জানো না? যতসব

(” আইছে পন্ডিত আমারে শেখাতে। আরে তোর আগেই এসব শিখেছি আমি। যদিও প্রতিবাদ করার সাহস আমার নাই। কিছু বলতে গেলেই যদি চড় মেরে দেয়। না বাবা চুপ করেই থাকে।)

“আমার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে জানো

” ইয়াহহ

“বিয়েটা তুমি ভেঙে দাও

” আসলে হয়েছে কি আমি না দুইমাস আগে একটা প্রেম করছিলাম। তো বাবা জেনে গেছিলো। দুইদিন না খাইয়ে রেখেছিলো।

“তো

” তো এখন যদি কোনো রিজন ছাড়া আমি বিয়ে ভাঙার কথা বলি তো বাপি আমাকে উল্টো করে ঝুলিয়ে পেটাবে

“ওহহহ

” বলছিলাম কি আপনি ভেঙে দিন না

“আমার কাছে যদি উপায় থাকতো তো তোমাকে নিয়ে এখন বের হতাম না

নিধি মুখটা কালো করে বলে

” ওহহ

“আমার নিজের জীবনেরই ঠিক ঠিকানা নাই তারওপর আবার বউ। লাইফটা এবার শেষ আমার

” আপনি কি মাফিয়া দলের লিডার না কি?
কথাটা বলেই নিধি জীভ কামড়ে ধরে।

“ইস এটা আমি কি বললাম এবার আমার এতো সুন্দর গালে দুই না চার পাঁচটা থাপ্পড় পড়বে। দাঁত গুলোও পড়ে যাবে।
নিধি দুই গালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবছে। অনেকখন হয়ে গেলো তবুও গালে থাপ্পড় পড়লো না দেখে নিধি আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখে আদি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে

” না মানে আমি আসলে

আমতাআমতা করে বলে নিধি।

“কারেক্ট। রিজন পেয়ে গেছো তো তোমার বাবাকপ এটাই বলো।

নিধি ভাবে

” এটা বললে যদি বাবা বিশ্বাস না করে আর আমাকে

“কি হলো? তোমার বাবাকে ফোন করো আর এটা বলো। দেখবে বিয়ে ভেঙে গেছে

” বলছিলাম কি? বাবা যদি বিশ্বাস না করে

“এতো নেগেটিভ ভাবো কেনো তুমি? পজিটিভ কিছু নেই তোমার মাথায়। ননসেন্স। ফোন করো

নিধি ফোন বের করে বাবাকে কল করে

” হুম নিধি বলো কি হয়েছে?

“বাপি আদি মাফিয়া দলের লিডার।

” তুমি এখন আমার সামনে থাকলে চাপকে গাল লাল করে দিতাম। হিরের টুকরো ছেলেকে মাফিয়া বানিয়ে দিলে। আজ বাড়ি আসো তুমি। দেখাচ্ছি মজা

নিধির বাবা ফোন কেটে দেয়। আদি চোখ ছোটছোট করে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে নিধি গাল ফুলিয়ে বসে আছে।

“এই লোকটার জন্য জন্ম থেকেই বকা খেয়ে আসছি। অসভ্য লোক একটা। কথাই বলবো না এর সাথে। নিধি ডাটা অন করে ফেসবুকে ঢুকে দেখে ৭৮ টা কমেন্ট হয়েছে আর সবাই আল দ্যা বেস্ট বলেছে।

” মানে বুঝলাম না। আমার কোনো পোষ্টই পোলাপান সিরিয়াসলি নেয় না। ভাবছি সবাই সেড রিয়েক্ট দেবে বলবে কি হয়েছে তা না। ধুর কেউ ভালোবাসে না আমাকে

নিধি এসব ভাবনায় ব্যস্ত। সায়ান পাঁচ মিনিট ধরে গাড়ি থামিয়ে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে। নিধির আদির দিকে চোখ পড়তেই আদি ভ্রু নাচায় মানে “কি ভাবছো” নিধি মাথা নাড়ায় মানে “কিছু না”

নিধি গাড়ি থেকে নেমে আদির সামনে যায়

“আইডিয়া

আদি অতি উৎসাহিত হয়ে জানতে চায় ” কি”

“আপনি আপনার বাবাকে বলবেন নিধি ভালো মেয়ে না। অনেকগুলো ছেলের সাথে এফেয়ার আছে। কি যেনো বলে কি যেনো বলে ওহহ প্লেগার্ল টাইপের মেয়ে

” ধুর

আদির ধুর শুনে নিধির মুখের হাসি উড়ে যায়। মুখটা ছোট করে বলে

“কেনো?

“তোমার বাপি যেমন তোমাকে থাপড়ে গাল লালা করতে চাইছে আমার বাবাও সেম কথা বলবে

“ওহহহ

” তুমিও যেমন স্টুপিট তোমার বুদ্ধি গুলোও তেমন স্টুপিট। ননসেন্স

নিধি মনে মনে আদি বকতে বকতে হাঁটছে

“আমি না স্টুপিট তুই। কতো ভালো আইডিয়া ছিলো একবার তো ট্রাই করতে পারতো। নাহহ তা করবে না। যদিও প্লেনে কাজ হওয়ার সম্ভবনা ০% তারপর ধমক তো খেতো। এই হনুমানটা ধমক খেলে আমার যে কি ভালো লাগতো

” এই যে মিস শপিং মলের গেট এটা৷ বাই এনি চান্স আপনি কি অন্য কোথাও যাচ্ছেন

আদির কথায় নিধি তাকিয়ে দেখে সত্যিই ভুল পথে যাচ্ছে

“আমি সত্যিই গাধা

শপিং মলে ঢুকে আদি নিধিকে তাড়া দিচ্ছে তাড়াতাড়ি করার জন্য। নিধির আবার একটা ভালো গুন একটা ড্রেস চুজ করতে একঘন্টা লেগে যায়।

” পাঁচ মিনিট সময় দিলাম এর মধ্যে ড্রেস চুজ করতে না পারলে এখানেই বেঁধে রেখে যাবো

আদির ধমকে হাতে যে ড্রেসটা ছিলো ওইটাই প্যাকিং করে দিতে বলে নিধি।

“ধুর যার জন্য এই গাঁধাটাকে শপিং করাতে নিয়ে এলাম তাই তো হলো না। বিয়ে ভাঙার কোনো রিজনই তো খুঁজে পাচ্ছি না। এবার আমাকে এই গাঁধার গলায় মুক্তোর মালা হতে হবে। কপাল আমার
সায়ান বিরবির করে বলছে।

” এর সাথে আমি থাকবো কি করে? এ তো প্রথম দিনই আমার হার্ট অ্যাটাক করিয়ে ছাড়বে। আল্লাহ বাঁচাও। যে করেই হোক বিয়েটা ভাঙতে হবে। নাহলে নিধি আর নিধি থাকবে না হার্টের রুগি হয়ে যাবে। আল্লাহ বিয়ে ভাঙার একটা রিজন দেখাও প্লিজ
নিধি বিরবির করে বলছে।

চলবে

#শুধু তুই ২
#পর্বঃ২
#Tanisha Sultana (Writer)

“বববলছিলাম কি?

” তুতলানোর কিছু নেই ক্লিয়ার করে বলো

আদি মন দিয়ে ডাইভ করতে করতে বলে।

“আমার খিদে পেয়েছে
চোখ বন্ধ করে বলে নিধি। এই বুঝি ধমক দিবে বলবে ” এতো খাই খাই করো কেন? খাইতে খাইতে তো ড্রাম হয়ে যাচ্ছ। কোনো খাওয়া টাওয়া হবে না।
কিন্তু নিধির ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে আদি একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামায়। নিধি চোখ খুলে দেখে আদি নামছে।

“নামার জন্য কি ফুলের বিছানা বিছাতে হবে

নিধি চট করে নামে। এই লোকটা কখনোই কোনো কথা সোজা করে বলতে শেখে নি। থাকবো কি করে এর সাথে আল্লাহ জানে। হনুমান একটা।

” খাবার অর্ডার করো

নিধি ওর পছন্দ মতো খাবার অর্ডার দেয়।

“আপনি

” জাস্ট এক গ্লাস ঠান্ডা পানি।

ওয়েটার চলে যায়।

“খালি পানি খাবে কেনো? নিশ্চয় ওনার কাছে টাকা নেই বেশি। তার ওপর আমি এতো গুলো খাবার অর্ডার দিলাম তাই হয়ত পানি খেতে চাইছে। যাক বাবা ভালোই হলো। লোকটা এখন আমাকে পেটুক ভাববে আর বিয়েটা ভেঙে দেবে। আহা আহা কি যে ভালো লাগছে।

নিধির ভাবনার মাঝেই খাবার চলে আসে। নিধি হাপুসহুপুস খেতে থাকে। আদি পানির গ্লাস হাতে নিয়ে হা করে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে

” রাহ্মস না কি মেয়েটা? এতো এতো খাবার খাচ্ছে। ওহ গড। একে বিয়ে করলে তো একে খাওয়াতে খাওয়াতে আমি শেষ হয়ে যাবো। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই। কপাল খারাপ

নিধির চোখ আদির দিকে পড়তেই আদি চোখ ফিরিয়ে নেয়। গ্লাসের পানি শেষ করে এক নিশ্বাসে

“তাড়াতাড়ি গিলেন প্লিজ

নিধি আদিকে ভেংচি দিয়ে বেশি বেশি করে খাবার মুখে দিতে থাকে। আর তারপর যা হওয়ার তাই। খাবার গলায় আটকে যায়। আদি পানি এগিয়ে দেয়

” এভাবে রাহ্মসের মতো খাওয়ার কি আছে? খাবার তো পালিয়ে যাচ্ছে না

“যাহহ বাবা নিজেই তাড়াতাড়ি খেতে বললো এখন নিজেই বলছে। মিথ্যে বাদি কোথাকার। গিরগিটি তো মিনিটে মিনিটে রং বদলায় আর এই বিদেশি লাটসাহেব সেকেন্ডে সেকেন্ডে রং বদলায়। কিন্তু আফসোস এই কথা ওনাকে শোনানোর সাহস নিধিরা নিধির নেই। তাই মনে মনে বলছে হচ্ছে। আজব কপাল আমার

” আমাকে চোখ দিয়ে না গিলে খাবার গিলো

আদির কথায় নিধি আদির থেকে চোখ ফেরায় আর খাওয়ায় মন দেন।

খাওয়া শেষে আবার গাড়িতে এসে বসে। প্রায় সন্ধা হয়ে গেলে। রাতটা পোহালেই কাল গায়ে হলুদ। সময় যেনো ঝড়ের গতিতে ছুটছে।

“নিধিরা

” বলুন

“প্লিজ ডু সামথিং

” সেম টু ইউ

“কার পাল্লায় পড়লাম ধুর

আদি রেগে গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দেয়। নিধির বিরক্ত লাগছে তাই ফোন থেকে গান চালায়।

” এতো রোদ্দুর তুই এনে দিলি তাই
তোর বৃষ্টি আমি একটু পেতে চায়………
মেঘলা হয়ে যাক আরও পাঁচটা বারো মাস
কোনো বিকেল বেলাতে তুই আমার হয়ে যাস…….
শুধু তুই শুধু তুই
আর চাইছি না কিছুই……

নিধি মন প্রাণ দিয়ে গান শুনছে। আদি কখন থেকে গাড়ি থামিয়ে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে সে খেয়াল নিধির নেই

“এই যে ননসেন্স আপনার বাড়ি চলে এসেছি। আপনার সাথে এখানে সারা রাত বসে থাকার ইচ্ছে আমার নেই

নিধি গান বন্ধ করে গাড়ি থেকে নামে

” থ্যাংক্স আমি ভেবেছিলাম আপনি আমাকে মেরে গুম করে দেবেন। কিন্তু মারলেন না তার জন্য এতোগুলো থ্যাংকু

বলেই নিধি দৌড়। নিধি যে কি করে কথা গুলো বললো তা নিধি নিজেও জানে না।

আদি হাবলার মতো তাকিয়ে আছে

“কি বলে গেলো? কিছুই তো বুঝলাম না

নিধি নিজের রুমে এসে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়
” আজকের মতো বেঁচে গেছি।

নিধিকে রুমে ঢুকতে দেখে নিধির মা আর বোন নিরা নিধির রুমে ঢুকে

“নিধি আমার দেবর কি কিনে দিলো তোকে দেখি
(নিরা আদির বড় ভাই আশিকের বউ)

” ঘোড়ার ডিম কিনে দিছে যতসব

বলেই আলমারি থেকে একটা ড্রেস নিয়ে নিধি চেঞ্জ করতে যায়। নিরা আর মা শপিং ব্যাগ খুলে দেখে কি কিনছে।

আজ আদি আর নিধির গায়ে হলুদ। নিধিদের বাড়িতেই দুজনের গায়ে হলুদের ব্যবস্হা করা হয়েছে। আদি একটা হলুদ পানজাবি পড়েছে আর নিধি হলুদ শাড়ি। নিধি শাড়ি পড়ে একদম হাঁটতে পারে না। তো শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে নিজের রুমে।

“এখন কি করবো? আমি তো এক পা হাঁটতে গেলেই ধপাস করে পড়ে যাবো। বাগান পর্যন্ত যাবো কি করে? এতো এতো মেকাপ আর ফুলের গহনার বোঝা নিয়ে আমি এতোদুর যাবো কি করে?

আদিকে আদির মা বলে

” আদি নিধি কই

“আজিব তো আমি জানবো কি করে?

” মেবি ওর রুমে আছে যাও ওকে নিয়ে আসো

“মানে কি? এতো এতো মানুষ থাকতে আমিই কেনো যাবো ওকে আনতে

” আমি বলছি তাই

“ডিজগাস্টিং লাগছে এসব আমার। জাস্ট এই বিয়ের ঝামেলা মিটে যাক আমি বিদেশে চলে যাবো। একেতো একটা বলদ মেয়ের সাথে বিয়ে দিচ্ছ

“নিধির মতো ভালো মেয়ে তুমি আর দুটো খুঁজো পাবে না

” খুঁজতে চায়ও না

“কথা বাড়িও না যাও

” ডিজগাস্টিং

রাগে গজগজ করতে করতে আদি নিধির রুমের দিকে যায়। আসলে সবাই ইচ্ছে করেই নিধিকে একটা ঘরে রেখে এসেছে।

নিধি লাফিয়ে লাফিয়ে এগোচ্ছে

“বাঁদরের মতো লাফাচ্ছ কেনো?

আদি চোখ মুখ শক্ত করে বলে। আদির কন্ঠে নিধি চমকে ওঠে

” এই লাটসাহেব এখানে কেনো? কি বলবো এখন আমি? ধমক গুলো যা দেবে না। আল্লাহ হেলেপ

“কথা কানে যাচ্ছে না

” ইয়ে মানে আমি শাড়ি পড়ে হাঁটতে পারি না

চোখ বন্ধ করে বলে নিধি। আদির সামনে কথা বলতে গেলেই নিধির হার্টবিট বেড়ে যায়।

“তো

আদি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে

” তো লাফিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি

“ওহহহহ গড এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম আমি। শাড়ি পড়ে হাঁটতে পারো না তো লেহেঙ্গার বা ড্রেস কিছু একটা পড়তে। তা না করে এখন এমন ড্রামা করার মানে কি? এক মিনিট এক মিনিট তুমি কি ভাবছো সিনেমার হিরোদের মতো আমি তোমাকে কোলে করে নিয়ে যাবো?? এসব ভেবে থাকলে ভাবনার জগৎ থেকে বের হও।

” ভাবে কি এই লোকটা নিজেকে? শাহরুখ খান না কি সালমান খান কোনটা? বিদেশি ইঁদুর। লাটসাহেব একটা। ওনার কোলে উঠতে আমার বয়েই গেছে। সব সময় দুই অহ্মর বেশি বুঝে। নিরামিষ ইডিয়েট
নিধি মনে মনে বলে।

আদি নিধির বেডের ওপর থেকে একটা লেহেঙ্গার নেয়। লেহেঙ্গারটা নিধি কিনেছিলো হলুদে পড়ার জন্য কিন্তু আদির মা শাড়ি দিয়ে শাড়ি পড়তে বলেছিলো তাই শাড়ি পড়েছিলো।

“এটা পড়ে আসো আর চলো।

” কিন্তু

“আমার সময়ের অনেক দাম। তোমার এই ফালতু কথা শুনে সময় নষ্ট করতে চায় না

নিধি লেহেঙ্গারটা নিয়ে চলে যায়। দশ মিনিটে নিধি লেহেঙ্গার পড়ে বের হয়

” একটা লেহেঙ্গার পড়তে দশ মিনিট সময় লাগিয়ে দিলে। টাইম মেইনটেইন করতে শিখো। দুই মিনিটের কাজ দশ মিনিটে করলে। ভেরি গুড। এর সাথে না কি আমাকে সারাজীবন থাকতে হবে। পাগল হয়ে যাবো আমি

নিধির খুব রাগ হচ্ছে। এই লোকটা এমন কেন? কিন্তু কিচ্ছু বলার সাহস নেই। এখন থেকে এই লাটসাহেব ধমক দেবে ওখান থেকে বাবা মা আর আপি। এদের ওপর যে কি কালো জাদু করেছে বিদেশি হনুমান টা আল্লাহ জানে

নিধি জোরে জোরে হেঁটে চলে যায়। আদিও পেছন পেছন যায়। আদি আর নিধিকে এক সাথে আসতে দেখে সবাই মুচকি হাসে।

ভালো ভাবেই হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়। এবার নিধি কিছুটা হলুদ নিয়ে রান্না ঘরে যায়। হলুদে লঙ্কা গুড়ো মিশিয়ে আদিকে হলুদ লাগিয়ে দেবে

“কাল থেকে এতো এতো অপমান করেছো মিস্টার লাটসাহেব এবার আমি সব কিছুর প্রতিশোধ নিবো। নিদিরা নিধিকে তুমি চেনো না। এইবার দেখবা চান্দু নিধি কি জিনিস

শয়তানির একটা হাসি দিয়ে নিধি ভালো করে হলুদ আর লঙ্কা গুড়ো মিক্স করে। তারপর

” বুক চিনচিন করছে হায়
মন তোমায় কাছে চায়….

গানটা গাইতে গাইতে আদিকে খুঁজছে। আদি কারো সাথে ফোনে কথা বলছে

“এবার পেছন থেকে গিয়ে হলুদ লাগিয়ে আমি দৌড় দেবো। এখান দিয়ে দৌড়ে সোজা রুমে চলে যাবো আর দরকা বন্ধ করে দেবো। কেউ ডাকলে বলবো আমি চেঞ্জ করছি। কেউ বুঝতেও পারবে না কাজটা আমি করেছি। উফ কি টেলেন্ট আমি। আমার জন্যই আমি প্রাউড ফিল করছি

নিধি নিজেকে নিজে বাহবা দিয়ে এক পা একপা করে এগোতে থাকে। যখনই আদির মুখে হলুদ লাগাতে যাবে আদি পেছন ঘুরে আর হলুদের বাটি নিধির পায়ের ওপর পড়ে। নিধির পা জ্বলে যাচ্ছে
ভয় প্লাস পায়ের জ্বালায় নিধির কান্না চলে আসে। আদি শয়তানির একটা হাসি দিয়ে বলে

” আমাকে জব্দ করতে এসেছিলে? কথায় বলে না অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়লে সেই গর্তে নিজেকেই পড়তে হয়। এতোদিন বিশ্বাস করতাম না কিন্তু আজ হাতে নাতে প্রমাণ পেলাম। নেক্সট টাইম এমন কিছু করার সাহসও দেখাবা না

আদি চলে যায়। নিধির এবার নিজের ওপর নিজের রাগ হচ্ছে

“গাঁধা আমি একটা। একটা কাজও ঠিক করে করতে পারি না। সব সময় গন্ডগোল করি আর আমি নিজেই ফেঁসে যায়। আল্লাহ গো পা টা কি যে জ্বালা করছে।

নিধি রুমে গিয়ে পায়ে বরফ দেয়।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে