শুধু তুই পর্ব-৫+৬+৭

0
3003

#শুধু তুই
#পর্বঃ৫
#Tanisha Sultana (Writer)

সায়ান জিসানকে টেবিলে বসায়।

“এবার তুই খা

তুলি মুখ টিপে হাসছে। বাহবা পাওয়ার জন্য এতোকিছু উল্টে মুরগি হয়ে গেলো।

” ভালো হয় নাই
জিসান মুখটা ছোট করে বলে

“খুব ভালো হয়েছে খা

সায়ান জোর করে জিসানের মুখে খাবার ঢুকিয়ে দেয়।। জিসান দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। সায়ানের মা আর সায়ান তুলির দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায়। তুলি মাথা নিচু করে বলে

” আমি তো রান্না করতে গেছিলামই কিন্তু জিসান বললো ও করবে

“কেউ আপনার কাছ থেকে এক্সকিউজ চায় নাই। আর মা তুমি জানো না ছাগল দিয়ে কখনো হাল চাষ হয় না।

” আমি তো ভেবেছিলাম একলিস্ট রান্না বারাটা পারে

“কেনো ভাববে তুমি? এই তোমার ভাবনার জন্য রাতের খাবারটা খাওয়া হলো না।

সায়ান রেগে মেগে রুমে চলে যায়।

” তোমার জন্য আমার ছেলে না খেয়ে চলে গেলো। আর তুমি (সায়ানের বাবা) কি মেয়ে ঘরে এনেছো দেখো

সায়ানের মাও চলে যায়।

“তুমি রান্না পারো না আগেই বলতে পারতে এমন সিনক্রিয়েট টা না করলেই পারতে। মনা তুলিকে বলে চলে যায়।

” তুলি কোনো বেপার না আমি তোমায় রান্না শিখিয়ে দেবো। সায়ানের কাকিমা হাসিমুখে বলে।

“তুমি আমায় বকলে না কেনো? তুলি সায়ানের বাবাকে বলে। সায়ানের বাবা তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে

“সব ঠিক হয়ে যাবে।

ছাঁদে বসে আছে তুলি। মনটা ভীষণ খারাপ। ইউটিউব দেখে বেশ কয়েকটা রান্না শিখে নিয়েছে।

” কিউটি পাখির মন খারাপ কেনো?

তুলি পেছনে তাকিয়ে দেখে জিসান।

“এমনি

জিসান তুলির পাশে বসে বলে

” আমার বাড়ির মানুষরা এমনই। তেতো তেতো কথা বলে

“হুম করলার বংশধর

জিসান ফিক করে হেসে ওঠে

” সিরিয়াসলি তুলি তুই আমাদের করলার বংশধর বানিয়ে দিলি

“তা নয়ত কি? সবাই মুখটাকে পেঁচার মতো করে রাখে।

” ঠিক আছে বুঝলাম। তুই এখন রুমে চলে যা নাহলে কিন্তু ভাইয়া তোকে রেখেই দরজা লক করে দেবে

“জিসান আমি তোর ভাইয়ের সাথে থাকতে চায় না। প্লিজ কিছু কর

তুলি জিসানের হাত ধরে বলে

” কি হচ্ছে এখানে?

সায়ানের রাগী গলার কথা শুনে চমকে ওঠে জিসান আর তুলি। তুলি জিসানের হাত ছেড়ে দেয়। জিসান সায়ানের কাছে গিয়ে মুখে হাসির রেখা টেনে বলে

“তোর বউ তোর সাথে থাকবে না তাই বলতে এসেছে আমার কাছে

” কেনো তুই কি উকিল না কি?

“তা না বাট আমাকে ডিভোর্সে ব্যবস্থা করতে বলছে

” ঠিক আছে তুই মন দিয়ে কাজটা কর

সায়ান চলে যায়। জিসান মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে

রাত দুটো ছুঁই ছুঁই। তুলি সোফায় শুয়ে আছে। ঘুম আসছে না। সায়ানের ফোনটা বেজে ওঠে।

“হেলো
……

” আমি এখুনি আসছি

সায়ান তারাহুরো করে বিছানা থেকে নেমে আলমারি থেকে শার্ট নিয়ে চলে যায়।

“কোথায় গেলো উনি? কি এমন কাজ তাও আবার এতো রাতে?
ধুর এসব ভেবে আমার কি? যা খুশি করুক।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে তুলি রুটি আলুর দম বানায়। তারপর চায়ের পানি চুলায় বসিয়ে খাবার টেবিল সাজায়। একে একে সবাই খাবার টেবিলে চলে আসে। তুলির শাশুড়ী একবার সরুচোখে তুলির দিকে তাকায়। জিসান খাবার খেতে খেতে বলে

” জান্টুস কোথা থেকে আনিয়েছিস?

“আমি বানিয়েছি

জিসান বিষম খায়। জিসানের মা পানি এগিয়ে দেয়।

” আস্তে খেতে পারিস না? সব কিছুতেই এতো তারাহুরো কেনো তোর?

জিসান পানি খেয়ে একটু শান্ত হয়ে বলে

“এখোনো তো বিয়ে করলাম না আর তুমি বলছো তারাহুরো করি

” জিসান থুক্কু ছোট ভাই মেয়ে দেখবো না কি?

“তোমার দাঁত কেলাতে হবে না। সায়ান কোথায়?

শাশুড়ীর কথায় তুলির মুখটা কালো হয়ে যায়।

” কি হলো বলো?

“জানি না। মাথা নিচু করে বলে তুলি

” জানি না মানে? তোমার স্বামী কোথায় গেছে তুমি জানো না। কেমন বউ তুমি

“আহ তুমি থামবে (বাবা)

” কেনো থামবো? কেমন মেয়ে ও

“মা তুমি জানো তোমার ছেলে কোথায় গেছে? জিসানের কথায় সায়ানের মা চুপসে যায়।

” তুমি মা হয়ে জানো না তোমার ছেলে কোথায় যাচ্ছে কি করছে? আর তুলি তো দুদিন হলো এসেছে ও কি করে জানবে?

জিসানের কথায় তুলি খুশি হলো

“বেশ বলেছে তো। করলা শাশুড়ী এখন কথা বলো

মনে মনে তুলি বলছে আর হাসছে।

” খেতে বস

সবাই চুপ চাপ খেয়ে চলে যায়।

“নাহহ আজ ওনার থেকে জেনেই ছাড়বো উনি কোথায় যাচ্ছে। জিজ্ঞেস করলে তো বলবে না। বুদ্ধি দিয়ে জানতে হবে। ভাব তুলি ভাব কি করা যায়।

তুলি এবার রেডি হয়ে অফিসের জন্য বের হয়।
একটা ফার্মেসির সামনে সায়ানকে দেখে তুলি গাড়ি থেকে নেমে সায়ানের পিছু নেয়। পিছু নিতে নিতে একটা হাসপাতালে চলে আসে। সায়ান ডাক্তারের সাথে কথা বলছে।

সায়ান তুলির দিকে তাকাতেই তুলি পায়ে ব্যাথার নাটক করতে যায় আর পেছন থেকে কেউ ধাক্কা মারে। তুলি মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। সায়ান তুলির কাছে আসে। তুলি উঠার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।

” আপনি এখানে?

“পপপায়ে ব্যাথা তাই ডাক্তার দেখাতে এসেছি।

” এতো এতো হাসপাতাল থাকতে আপনি এখানেই কেনো এলেন? সায়ান চিৎকার করে বলে। তুলি ভয় পেয়ে যায়। কি বলবে ভাবছে

“আআআআআআ

” সাট আপ
নার্স নার্স। জোরে জোরে ডাকে। দুটো নার্স দৌড়ে আসে

“এই পাগলটাকে বের করে দিন এখুনি

তুলি চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরে। নার্স দুটো তুলিকে টেনে হাসপাতালের বাইরে নিয়ে যায়।

রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটছে তুলি। আনমনে হাঁটছে।

” কেনো এমন করলো উনি? কি আছে ওই হাসপাতালে? জানতে হবে আমাকে? আমি তো চলে যাবোই তবে তার আগে সায়ানের সব কেচ্ছা ফাস করবো। করবোই

“তুলি মা তুমি এখানে?

কারো কথায় তুলি থেমে যায়। পেছনের মানুষটাকে দেখে তুলি হু হু করে কেঁদে ফেলে।

তুলির বাবা তুলিকে জড়িয়ে ধরে।

” মামনি কাঁদে না

“কেনো করলে এমনটা বাবা? ও বাড়ির কেউ আমাকে ভালোবাসে না। আমি থাকতে চাই না বাবা ওখানে। প্লিজ বাবা

হেঁচকি তুলে বলে তুলি।

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ৬
#Tanisha Sultana (Writer)

অফিসে পা রাখার সাথে সাথে মায়া দৌড়ে এসে তুলিকে বলে

“সায়ান স্যার তোমাকে তার কেবিনে ডাকছে

তুলির তো হাত পা থান্ডা হয়ে যাচ্ছে। না জানি কতো বকা দেবে এখন।

” কি হলো যাও

“বলছি যেতেই হবে?

” হুম যাও

অসহায় মুখ করে তুলি সায়ানের কেবিনের দিকে পা বাড়ায়।

“মে আই কাম ইন স্যার

সায়ান তুলির দিকে তাকিয়ে আছে।

” আসবো স্যার

এতেও সায়ান কিছুই বলে না

“স্যার আসবো📢

সায়ান হকচকিয়ে যায় তুলির চিল্লানিতে। রেগে চোখ মুখ শক্ত করে বলে

” কি হচ্ছে এসব

তুলি ভেতরে এসে বলে

“এতোখন ধরে পারমিশন চাচ্ছি আপনি তো কথায় বলছেন না

” তাই বলে চিল্লাবে ইডিয়েট

তুলি সায়ানকে ভেংচি কেটে অন্য দিকে তাকায়।

“সকালে আপনার সাথে ওমন বিহেভ করা আমার ঠিক হয় নাই

তুলি সরু চোখে সায়ানের দিকে তাকায়

” বাই এনি চান্স আপনি কি সরি বলতে চাচ্ছেন

“সরি মাই ফুট। জাস্ট মনে হলো ওমন করা ঠিক হয় নাই

” আমি জানি আপনিও জানেন তাহলে আবার বলার কি আছে?

“আমার ইচ্ছে হয়েছে বলেছি। তাতে আপনার কোনো সমস্যা?

” নাহ

“গুড। আউট

” হুম

“গেট আউট

” ওহহ তাহলে আপনি আরও একটা ওয়ার্ড পারেন

“মানে

” আমি ভেবেছিলাম আপনি জাস্ট সাট আপ বলতে পারেন এখন দেখছি গেট আউটও বলতে পারেন

“মাথা মোটা ইডিয়েট

তুলি এক দৌড়ে বেরিয়ে যায়। বাইরে বেরিয়ে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়।

” আল্লাহ বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ। আস্ত একটা হনুমানের হাত থেকে বাঁচিয়েছো।

সারাদিন আর তুলি সায়ানের সামনে যায় না। রাতের রান্নাটাও তুলি করে। খাবার টেবিলে সাজিয়ে চেয়ারে একটু বসে। প্রচুর ক্লান্ত থাকায় চোখ লেগে আসে।

সায়ান খাবার খাওয়ার জন্য এসে দেখে তুলি টেবিলে ঘুমিয়ে আছে। সায়ান টেবিলে বারি দেয়। তুলি ধরফরিয়ে ওঠে।

“এটা ঘুমানোর জায়গা না

তুলি উঠে দাঁড়ায়। একে একে সবাই চলে আসে। তুলির শাশুড়ী বারবার তুলির দিকে তাকাচ্ছে। তুলিকে ক্লান্ত লাগছে।

” মনা ওকে (তুলিকে উদ্দেশ্য করে) রুমে চলে যেতে বল। ওর খাবার আমি দিয়ে আসবো

তুলি একটু একটু করে হাঁটতে থাকে।

“তুলি তুই তো হাঁটতেও পারছিস না। জিসান তুলির কাছে এসে বলে।
তুলি সকালে ব্যাথা পেয়েছিলো। সারাদিন দৌড় ঝাপ করলেও এখন পা টা প্রচুর ব্যাথা করছে তুলির।

” জিসান ঠিক আছি আমি
নরম গলায় বলে তুলি।

“আমি দেখতে পাচ্ছি তুই ঠিক নেই। চল তোকে রুমে দিয়ে আসি।

তুলির খুব খারাপ লাখ। কথা কাটাকাটি করার মুড নেই। তাই জিসানের হাত ধরে রুমে চলে যায়।

তুলি শুয়ে আছে। সায়ানের ফোনটা বেজে ওঠে। সায়ান রুমে নেই। তুলি সাহস করে ফোনটা রিসিভ করে।

” সায়ান জুজু তোমার সাথে কথা বলবে। আমি জানি তুমি তোমার লাইফ নিয়ে বিজি। তোমার বউ আছে। কিন্তু কি করবো বলো আমার এই অনাথ মেয়েটা যে তোমাকে চায়। কথা বলছো না কেনো সায়ান?

তুলি ফোনটা কেটে দেয়।

“কে এই মহিলা? অনাথ মেয়ে মানে কি? জুজু যদি সায়ানের মেয়ে হয় তাহলে ও অনাথ কি করে হয়। তাহলে কি জুজু সায়ানের মেয়ে না?

হাজারটা প্রশ্ন তুলির মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে। একটারও হিসেব মিলাতে পারছে না তুলি।

” মামনি খাবারটা খেয়ে নাও

শশুরের ডাকে তুলি ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়। বাবা তুলিকে খাইয়ে দিচ্ছে

“আংকেল জুজুর সাথে আপনাদের কি সম্পর্ক। কে হয় জুজু?

” জুজু কেউ হয় না আমাদের। আর এই জুজুর জন্য তোমাকে এবাড়িতে আনা হয়েছে।

“মানে

” তুমিই পারবে আমার সায়ানের জীবনটাকে সাজাতে। আমার ছেলেটা না বড্ড নরম মনের মানুষ

“কিন্তু আংকেল আমাকে

তুলির কথা শেষ হওয়ার আগেই সায়ান রুমে চলে আসে

” তোমার খাওয়ানো শেষ হলে যাও

“হুম শেষ

সায়ানের বাবা প্লেট নিয়ে চলে যায়

” বাবার সাথে একটু ভালো করে কথা বলতে পারেন না

“না পারি না

সায়ান সোফায় শুয়ে পরে। তুলি একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে লাইট অফ করে শুয়ে পরে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখপ জুজু আর ওই মহিলাটা সবার সাথে কথা বলছে। জুজু তুলিকে দেখে দৌড়ে তুলির কাছে আসে। তুলি কোলে তুলে নেয়

” কেমন আছে আমার জুজু সোনা

“খুব ভালো। জানো আজ আমার বার্থডে। সন্ধায় পার্টি আছে তুমি কিন্তু অবশ্যই যাবে।

” আআমি

“হ্যাঁ তুমি যাবে।

জুজু তুলির কোল থেকে নেমে সায়ানের কাছে যায়

” ও পাপা নতুন মাকে নিয়ে যাবে তো

জুজুর মুখে নতুন মা শুনে তুলি চমকে ওঠে।

“ঠিক আছে নিয়ে যাবো

” লাভ ইউ পাপা

“লাভ ইউ টু সোনা।

তুলি আর জিসান পাশাপাশি হাঁটছে। উদ্দেশ্য ভার্সিটি।

” ও জিসান

“বল

” তোর ভাইয়ের কাছে থেকে মুক্তি পাবো কি করে

“আমার ভাই কি তোকে ধরে রেখেছে

” তা না বাট তোর ভাইয়ের রহস্য সমাধান না করে আমি কোথাও যাবো না

“ভেরি গুড

“ফুসকা খামু

” এখন

“হুম চল না

জিসান আর তুলি ফুসকা খেতে যায়। রাস্তার পাশে সায়ানকে দেখে তুলি দাঁড়িয়ে পরে। সায়ান জুজু আর জুজুর মা শপিং মলে ঢুকছে।

” কি হলো দাঁড়িয়ে গেলি কেনো?

তুলি সায়ানদের দিকে ইশারা করে।

“ভাইয়া এবার বারাবাড়ি করছে

জিসান সায়ানদের কাছে যেতে নেয় তুলি থামিয়ে দেয়।

” তোর ভাই ওদের সাথে ভালো থাকলে আমি ওনার সুখের বেবস্থা করবো

“মানে

” জাস্ট ওয়েট এন্ড সী

তুলি উল্টো পথে হাটা ধরে জিসানও তুলির পেছনে যায়।

চলবে

#শুধু তুই
#পর্বঃ৭
#Tanisha Sultana (Writer)

সোফায় পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে তুলি। সায়ানের অপেক্ষায় আছে। আজ সায়ানের পেট থেকে সব কথা বের করবে। তাই সোফার পেছনে মদের বোতল রেখেছে কায়দা করে সায়ানকে খাইয়ে দেবে। তারপর সায়ানের সিক্রেট শুনবে।

দু’ঘন্টা ধরে বসে আছে। দরজা খোলার শব্দে তুলি নরেচরে বসে

“বেবি তুমি চলেছো?

” হুম জান চলে এসেছি

সামনে তাকিয়ে দেখে জিসান। তুলি জিসানকে দুইচারটা থাপ্পড় দেয়

“হারামি তুই এই সময় এখানে কেন?

” তুই মদ আনলি ওইটা আমি আর তুই খাবো তাই

“তোর ভাইরে খাওয়ামু

” যখন দেখছিস আমার ভাই তোকে পাত্তা দিচ্ছে না তখন তুই ভিলেনদের মতো মদ খাইয়ে আমার ভাইয়ের নোংরামি করে আমার ভাইয়ের ইজ্জত লুটে নিবি। হায় আল্লাহ আমারে নেও একেবারে না কিছু দিনের জন্য
নেকা কান্না করে বলে জিসান। তুলি মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে

“যেমন তোর ইডিয়েট ভাই তেমন ইডিয়েট তুই

” কেনো কেনো? হাছা কই নি

“তোর ভাইয়ের প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নাই। ওই রকম হাজারটা সায়ান তুলির পেছনে ঘুরঘুর করে। তুলি পাত্তা দেয় না😎

” সেটাই তাহলে এই ড্রিংক কেনো?

“মদ খেলে মানুষ সত্যি কথা বলে

” কোথায় লেখা আছে?

“তোর মাথায়। মুডটাই নষ্ট করে দিলি

” আর কথা বলবো না। প্লানটা বল প্লিজ

“এটা তোর করলা ভাইকে খাইয়ে তোর ভাইয়ের পেটে যত কথা আছে সব শুনে ফেলবো আমি

” তারপর

“তারপর আমি ডিভোর্স নিয়ে চলে যাবো আর তোর ভাইকে সুন্দর একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দেবো

” আর তুই

“আমি আর কি রোমান্টিক একটা ছেলে দেখে বিয়ে করে নেবো

” আমায় বিয়ে করবি

জিসান সিরিয়াস হয়ে বলে। তুলি শক খায়। জিসানের দিকে গম্ভীর চোখে একটু তাকিয়ে হো হো করে হেসে ওঠে

“হাসসিস যে

তুলি পেটে হাত দিয়ে হাসছে। মন ভোলানো হাসি। তুলির হাসি দেখে জিসানও হেসে ফেলে। তুলি একটু হাসি থামিয়ে বলে

” নাইস জোকস। তুই এতো মজা করতে পারিস

“মাঝে মাঝে মনের মাঝে জমিয়ে রাখা কথা গুলো আমরা জোকস হিসেবে বলি

” কেনো?

কারণ সামনে থাকা মানুষটা যদি ভুল বুঝে বা দুরে সরে যায়

“জিসান তুই ঠিক আছিস
তুলি জিসানের কপালে হাত দেয়

” মনে হয় ভাই চলে আসছে আমি যাই

জিসান তারাহুরো করে চলে যায়।

“যাহ বাবা এর আবার কি হলো?

সায়ান রুমে আসে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘড়ি খুলছে। তুলি একবুক সাহস নিয়ে সায়ানের সামনে মদ ভরা জুসের গ্লাস নিয়ে যায়।

” আআআপনার জুস
কাঁপা কাঁপা গলায় বলে তুলি।

“আমি জুস খাই না। সায়ান আয়নার দিকে তাকিয়ে বলে

” প্লিজ খান না

সায়ান তুলির দিকে তাকায়। করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুলি।

“হঠাৎ আমার জন্য জুস আনলেন? মতলব কি?

” কোনো মতলব নেই। ভালোবেসে এনেছি। স্বামী বলে কথা

“দেখুন

” দেখাদেখি পরে হবে আগে খান

“এই মেয়ের হঠাৎ কি হলো যে এতো দরদ উতলে পরছে। নিশ্চয় গন্ডগোল আছে
সায়ান মনে মনে বলে।

” কি হলো ধরুন

সায়ান বাঁকা হেসে বলে

“আপনি আগে খান বউ বলে কথা

” এই সেরেছে এখন আমি কি করবো( বিরবির করে বলে তুলি)
জোরপূর্বক হেসে বলে

“আমি কি করে খাবো আপনার জন্য এনেছি

” তাতে কি? স্বামী স্ত্রী এক গ্লাসে খেলে মহব্বত বারে।

“খান না

” খান না প্লিজ

সায়ান এবার জোর করে তুলিকে খাইয়ে দেয়। তুলির মাথা ভারি লাগছে। চোখ ঘোলা ঘোলা লাগছে। আরও খেতে ইচ্ছে করছে

“আমি আরও খাবো

” কিহহহহহ

“আরও মদ খাবো। কি ইয়াম্মি খেতে আমি তো পুরোটা খেয়ে নেবো

তুলি সোফার পেছন থেকে মদের বোতল বের করে টেবিলের ওপর বসে খাওয়া শুরু করে। আর গান গায়
” মদ গাজা আর কিসের নেশা তোমার নেশায় কাটে না”

“এবার কি করবো? এই ইডিয়েট যে হারে মদ গিলছে আমার তো আজ বারোটা বাজিয়ে ছাড়বে
বিরবির করে বলছে সায়ান।

” ওই জামাই আমি আরও খাবো যা আমার জন্য মদ নিয়ে আয়

তুলির কথায় সায়ান ভরকে যায়।

“এই মেয়ে ভদ্র ভাবে কথা বলুন

তুলি এবার দাঁত কেলিয়ে ঢুকতে ঢুলতে সায়ানের কাছে আসে। সায়ানকে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে নেয়। সায়ানের দু গালে হাত দিয়ে বলে

” আচ্ছা আমি তোর কোথায় কিছ করবো রে? তোর গাল ভর্তি শুধু দাঁড়ি আর দাঁড়ি। আমি কিছ করবো কোথায়?

“মমানে কি? সায়ান তুতলিয়ে বলে

” কিছ মানে বুঝোস না। আরে চুম্মা পাপ্পি উম্মমমমমমমা

তুলি দুর থেকেই কিছ ছুড়ে দেয়। সায়ান চোখ বন্ধ করে অন্য দিকে ঘুরে যায়। তুলি হো হো করে হেসে সায়ানকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে

“লজ্জাবতী। লজ্জায় গালটা লাল টমেটো হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে খেয়ে ফেলি

” সাট

সায়ানকে থামিয়ে

“তুই সাট আপ। কালকেই দাঁড়ি কেটে ফেলবি

” কেনো?

তুলি চোখ রাঙিয়ে বলে

“মুখে মুখে তর্ক করছিস।

” ঠিক আছে তর্ক করবো না আপনি বসুন আমি আপনার জন্য মদ নিয়ে আসছি

তুলি সায়ানের গাল টেনে বলে

“আমার টুনুমুনু

সায়ান তুলিকে কোনোরকম বসিয়ে বাইরে চলে যায়।
রান্না ঘরে লেবুর শরবত বানাচ্ছে তখন জিসান আসে

” ব্রো শরবত কার জন্য

“ওই ইডিয়েটের জন্য

” কেনো

“মদ খেয়েছে

জিসান হো হো করে হেসে ওঠে

” ছাগলের মতো হাসছিস কেনো?

জিসান তো হাসি থামাতেই পারছে না

“তুই হেহে কর আমি আসছি

সায়ান লেবুর শরবত নিয়ে চলে যায়। রুমে ঢুকে সায়ানের চোখ কপালে ওঠে। তুলি মোবাইলে লুঙ্গি ডান্স গানটা চালিয়ে স্কার্ট ধরে নাচা শুরু করে দিছে।
সায়ানের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসে। ফোন বের করে তুলির নাচ ভিডিও করে।
তুলি এবার সায়ানের সামনে এসে সায়ানকে টেনে নিয়ে যায় নাচার জন্য। তারপর সায়ানকে ধরে উরাধুরা নাচ শুরু করে দেয়।

বেশ কিছুখন নাচার পরে তুলি হাঁপিয়ে যায়। সায়ান লেবুর শরবত দেয় তুলি ঢকঢক করে গিলে ফেলে। তুলি সায়ানকে নিয়ে ঠাস করে বিছানায় শুয়ে পরে। সায়ান তুলিকে ভালো করে শুয়িয়ে দেয়

” উফ আল্লাহ বাঁচাইছো। ধন্যবাদ

সায়ান বেলকনিতে চলে যায়। সিগারেট ধরায়।

সকালে তুলি কোনোরকম চোখ খুলে ঘড়ির দিকে তাকায়। ১১ঃ৪৫ বাজে লাভ দিয়ে তুলি উঠে।

“নতুন মা এতোখানে তোমার ঘুম ভাঙলো

তুলি তাকিয়ে দেখে সায়ানের কোলে জুজু বসে আছে।

” তুমি কখন আসলে?

“সেই সকালে। তোমাকে কতো ডাকলাম তুমি উঠলে না।

” উঠবে কি করে। কুমিরের মতো ঘুমায়।

তুলি কটমট চোখে সায়ানের দিকে তাকায়। তারপর ওয়াশরুমে চলে যায়।
ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দেখে জিসান হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তুলি ভ্রু কুচকে জিসানের দিকে তাকিয়ে আছে। হাসার রহস্য বোঝার চেষ্টা করছে।

“গাধার মতো হাসসিস কেনো?

” লুঙ্গি ডান্স
তুলি এবার জিসানের কাছে গিয়ে ওর হাত থেকে ফোনটা নেয়। ফোনের স্কিনে তাকাতেই তুলির চোখ কপালে। তুলির নাচের ভিডিও।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে