শুধু তুই পর্ব-৩০+৩১

0
2816

#শুধু তুই
#পর্বঃ৩০
#Tanisha Sultana (Writer)

“হাসতেছো কেন?

শাশুড়ী হাসি চেপে বলে

” এমনি। সায়ান উঠছে

“হুম গোছল করতেছে?

” কেনো? ভাইয়ার গায়ে ও কি ইঁদুর মরা গন্ধ না কি?
মনা বলে

“না আমি ভিজিয়ে দিছি😁

” ইউ আর গ্রেট ভাবি

“দেখতে হবে না কার বউ😎

” হুম করলা, গোমড়ামুখো, নিরামিষ সায়ানের রোমান্টিক মিষ্টি বউ

“মা তুমি তো ফাটিয়ে দিয়েছো।

” কার শাশুড়ী দেখতে হবে না😎

তুলিও ওদের সাথে সাহায্য করে। রান্না শেষে তুলি সায়ানকে ডাকতে যায়। সায়ান কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনতেছিলো আর গেমস খেলতেছে। তুলি সায়ানকে কয়েকবার ডাকে সারা দেয় নাই। তুলি একটা নকল টিকটিক নিয়ে আসে জুজুর থেকে তারপর সায়ানের মোবাইলের ওপর ছেড়ে দেয়।

সায়ান এক চিৎকার দিয়ে লাফ দিয়ে ওঠে। তুলি হাসতে হাসতে শেষ

“এটা কি হলো😡

” আপনারে গুনে গুনে এিশবার ডাকছি সারা দেন নাি তাই এই পদ্ধতি

“এখানে কি চায়

” আপনারে খেতে ডাকতে আইছি

“আমি খাবো না

” কেনো?

“তুমি তো সবাইরে সব বলে দিছো। লজ্জায় মুখ দেখাবো কি করে

” মুখ ঢেকে চলেন

“তোমাকে তো আমি

” কিহ চুম্মা দিবেন

“থাপ্পড় দিবো দাঁড়াও তুমি

তুলি এক দৌড়ে চলে যায়। খাবার টেবিলের সামনে গিয়ে হাঁপাতে থাকে।

” কি রে কি হইছে? (জিসান)

“আর কইস না তোর ভাই দৌড়ানি দিছে

” কেন তুই কি করছিলি

“মোবাইলের ওপর টিকটিক ছাড়ছিলাম😁

” দোস্ত তুই তো মানুষ না

“তাহলে আমি কি😡

” এলিয়েন

“আর তুই হিরো আলম

” এতো বড় অপবাদ দিতে পারলি

“হ পারলাম

” কষ্ট দিলি

“কোথায়

” কিহহ

“কোথায় কষ্ট দিছি

” মনে

“ওহহহহ

” হুম

“হুমমম

কাল জিসানের গায়ে হলুদ। বাড়ি সাজানো হচ্ছে। এই বিয়ের মধ্যেই নিরবের কোনো একটা ব্যবস্থা করবে তুলি।

হঠাৎ তুলির গা গুলিয়ে আসে। ওয়াশরুমে গিয়ে বমি করে দেয়। সায়ান কাজ করছিলো। তুলি খুশিতে নাচতে নাচতে গিয়ে সায়ানকে জড়িয়ে ধরে

” কি হয়েছে?

“আপনি বাবা হতে যাচ্ছেন। যাই সবাইকে বলে আসি

সায়ান তুলিকে টেনে রুমে নিয়ে আসে।

” এখানে আনলেন কেন?

“খুইলা কও

” আমার শরম করে🙈

“কি হইছে সেটা বলো😡।

” বমি হইছে

“তো

” তো আমি প্রেগন্যান্ট

“একদিনে কিছু হয় না

” আমার থেকে বেশি জানেন

“হুম জানি

” কচু জানেন আপনি।

“তুলি শুনো

” আপনি শুনেন

“ঠিক আছে চলো ডাক্তারের কাছে যায়

” আমার টুনুমুনু। চলো জান উম্মা

“পাগল

” আপনারই বউ

ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে সায়ান তুলি

“আমি প্রেগন্যান্ট তাই না ডাক্তার আংকেল। আমি জানতাম তাও উনি নিয়ে আসলেন। দেখছেন আপনি৷ খালি বেশি বুঝেন।

” তুমি চুপ করবা

“আপনি চুপ করুন। ডাক্তার আপনি বলুন ছেলে না মেয়ে। আমি তো ৯০% শিওর মেয়ে হবে। আমার মা বলে আমি যখন পেটে ছিলাম তখন না কি খালি বমি করতো। তো আমার ও মেয়ে হবে। তবে ছেলে হলেও পবলেম নেই

” মানে (ডাক্তার)

কিহ মানে মানে করছেন। বলেন কি হবে

” আসলে।

“আসলে নকলে পরে হবে আগে বলুন

” ফুড পয়জেন হইছে

“কিহহহহহহ📢📢📢

সায়ান আর ডাক্তার কান চেপে ধরে

” ওই জামাই চলেন

“এখন মানলা তো

” এতো কওয়ার কি আছে

গাড়িতে বসে সায়ান হেসেই যাচ্ছে।

“এতো হাহা করার কি আছে। কাছে আসবো ম
না। যতই ক্লোজ আপ এর এড দেন

” পাগল না কি তোমার কাছে যাবো

“আসবি না তো

” নাহহ

তুলি সায়ানের কলার ধরে কাছে আনে

“দুই মাসের মধ্যে বেবি চায়

” হুমমম

তুলি কলার ছেড়ে গ্লাস দিয়ে বাইরে তাকায়। দেখে নিরব দাঁড়িয়ে আছে

“এখানে দাঁড়িয়ে আছে কেনো বেডাটা। মতলব কি? দাঁড়াও বেবি তোমাকে তো জিসানের বিয়ের মধ্যে মজা দেখাবো

সন্ধায় তুলি জিসান সায়ান মনা আড্ডা দিতেছে।

” দোস্ত (জিসান)

“কও(তুলি)

“ইউটিউব দেখে সার্জারী শিখছি। তোর ডেলিভারিটা আমিই করবো (জিসান)

” আমিও তো শিখছি। তোর বউয়ের ডেলিভারি আমি করবো (তুলি)

“তোরা থাম (মনা)

” পাগলরা কি কখনো চুপ থাকতে পারে(সায়ান)

“তুই পাগল তোর বউ পাগল (তুলি)

” হাছা কথা কইছোস😁 (জিসান)

“তুইও পাগল (তুলি)
ও জামাই

” বলো (সায়ান)

“মদ খামু (তুলি)

” ভাবি কও কি (মনা)

“ইয়াম্মি খেতে তোমারেও দিমু (তুলি)

” একদম না

“আমি খামু তাই আপনার কি (তুলি)

” তোমার লুঙ্গি ডান্স দেখার ইচ্ছে নেই🤣🤣

মনা জিসান 🤣🤣

“তুলি🙄

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে তুলি। সায়ান পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে

” আমার জামাই এতো রোমান্টিক হলো কবে

“যবে থেকে তোমার পাল্লায় পড়ছি

” তাহ ঠিক।

সায়ান তুলি দোলনায় বসে

“জানো যখন জুঁই হারালাম নিজের ভাগ্যের ওপর খুব রাগ হতো। নিজেকে অনলাকী মনে হতো। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আল্লাহ আমাদের থেকে যা নেয় তার থেকে বেশি দেয়৷ আমি তোমাতেই সন্তুষ্ট। তোমার আঙুল ধরে চলতে চায়। ছোট্ট সংসার সাজাতে চায়। ভালো থাকতে চায়। লাভ ইউ তুলি

” লাভ ইউ টু। আমি আপনার বেবির মা হতে চায়

“তুলি তুমি ছোট আর একটু বড় হও

” আমার অনেক ফ্রেন্ড মা হয়ে গেছে। আমাকে আপনার ছোট মনে হয় কেনো?

“ঠিক আছে দেখছি

” হুম দেখুন। আপনাকে কিছু বলতে চায়

“বলো

” নিরব বেঁচে আছে

“হুমমম

” তাও আপনি চুপচাপ

“আমি নিরবের লাইফ টা শেষ করে দিছি। নতুন কোনো শাস্তি দিতে চায় না

” ওহহহহ

চলবে।

#শুধু তুই
#পর্বঃ৩১
#Tanisha Sultana (Writer)

আজ জিসানের গায়ে হলুদ। ছেলের বাড়ি থেকে তত্ত্ব নিয়ে মেয়ের বাড়িতে যাওয়া হবে। তুলি তিন ঘন্টা যাবত সেজেই যাচ্ছে। আর জুজু তুলির পিছনে ঘুমছে

“ও মা আমাকে সাজিয়ে দাও

” এই তো সোনা লিপস্টিক টা লাগিয়ে তোমাকে সাজিয়ে দেবো।

তুলি লিপস্টিক লাগাতে লাগাতে বলে। সায়ান বসে বসে তামাশা দেখছে।

“জুজু সোনা এসো আমি রেডি করিয়ে দেই

সায়ান জুজুকে সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দেয়। তুলি সাজিয়ে দেয়। জুজু চলে যায়।
তুলি আয়না দেখতে দেখতে বলে

” একদম নুসরাত ফারিয়ার মতো লাগছে আমাকপ তাই না

“জঘন্য লাগছে

” সয়তানরা ভালো জিনিস চোখে দেখে না

“এরকম সাজার মানে কি?

” কিরকম সাজছি

“পেট বের করে শাড়ি পড়ছো কেনো?

” আমার পেট অনেক সুন্দর তাই মানুষকে দেখাতে যাচ্ছি

“তুলি মেজাজ গরম করবানা

” আমি কি করলাম

“ভালো করে শাড়ি পড়ো

” আরে এরকম স্টাইলের শাড়ি এভাবেই পড়তে হয়। অন্য ভাবে পড়লে হ্মাত লাগবে। ইউটিউব দেখে পাক্কা এক ঘন্টা লাগিয়ে শাড়িটা পড়েছি।

“সায়ান টান দিয়ে তুলির শাড়িটা খুলে দেয়।

” করছেনডা কি?

“দেখো কি করি

” আমার শাড়ি😭

“চুপ😡

তুলি সায়ানের ধমকে চুপ করে যায়। সায়ান তুলিকে শাড়ি পরিয়ে দেয়।

“পারফেক্ট। দেখো

তুলি আয়নায় তাকিয়ে দেখে মোটামুটি হয়েছে। তুলি চলে যেতে নেয় সায়ান হাত ধরে

” আমার কিউট বউটা কি রাগ করেছে

“সত্যি আমি কিউট

” হুমমম

তুলি খুশি হয়ে সায়ানের গাল টেনে চলে যায়। বিয়ে বাড়ির সবার কাছে ঘুরে ঘুরে বলে সায়ান শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে। তুলি জুজু আর সায়ান ছবি তুলছে তখন জুজু বাবা বলে দৌড়ে চলে যায়। সায়ান তুলিও পেছনে যায়। গিয়ে দেখে জুজু নিরবের কোলে। মনাও নিরবের কাছে যায়

নিরব বলে

“মনা আমি বিবাহিত জুজু আমার মেয়ে

” জানি

“তারপরও

“ভালোবাসি তোমায়। তুমি বিবাহিত তোমার মেয়ে আছে এতে আমার কিচ্ছু এসে যায় না। ভালোবাসলে বিয়ে করতে হবে সারাজীবন একসাথে থাকতে হবে এমনটা তো নয়। দুর থেকেও ভালোবাসা যায়। আমি তোমাকে দুর থেকেই ভালোবাসতে চায়। জুঁই আপু বেঁচে থাকলে আমি নিজে তোমাকে জুঁইয়ের কাছে ফিরিয়ে দেবো

” তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো আর আমি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তোমার লাইফে এসেছি। তোমার ভাইয়ের থেকে তোমাকে আলাদা করার জন্য ভালোবেসেছি। আমার নিজের ওপর নিজেরি রাগ হচ্ছে

“নিরব ইটস ওকে। ভাইয়ার সাথে দেখা করবে না

” কোন মুখে যাবো। আমি কতো অন্যায় করেছি ওর সাথে

“সরি বলে দিও

” ঠিক আছে

নিরব আর মনা সায়ান তুলির সামনে যায়। নিরব মাথা নিচু করে বলে

“সরি সায়ান। তোকে ভুল বুঝেছি। আসলে প্রিয়ার মৃত্যুটা আমি মেনে নিতে পারি নি। জেদের বসে জুঁইকে বিয়ে করি। বিয়ের দুই মাস পরেই তোদের ওই পার্টিতে ঙান হারায়। জুঁইয়ের বাবা তোর নামে মিথ্যা অপবাদ দেয় যে তুই আমায় মেরে ফেলেছিস৷ আসলে আমি পাগল হয়ে গেছিলাম মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। আর জুঁইয়ের বাবা চায় নি তার মেয়ে একটা পাগলের সাথে সংসার করুক। তাই এতো নাটক।

তুই আমার মেয়েটাকে আগলে রেখেছিস। যদি তুলি না বলতো তাহলে তো আমি জানতেই পারতাম না আমার মেয়ে আছে। ভেবেছিলাম জুঁই বেবিটা নষ্ট করে দিয়েছে। থ্যাংক্স এন্ড সরি

সায়ান নিরবকে জড়িয়ে ধরে। কিছু খন ইমোশনাল ড্রামা চলে।

“জুঁইয়ের খবর জানোস? (সায়ান)

” কাল আমার থেকে দশ লাখ টাকা নিয়ে কানাডা চলে গেছে সজীবের সাথে। ও ওর লাইফটা নতুন করে সাজাতে চায়। আমি অনেক রিকোয়েস্ট করেছিলাম কিন্তু থাকবে না আমার সাথে।

“ভালোই হয়েছে। আমি জানি তুই মনাকে ভীষণ ভালোবাসিস। বিয়ে করবি। জুজু তুমি কি মনাকে মামনি বানাবে

” কি মজা মনা আন্টি আমার মা হবে

জুজু তো খুব খুশি। বড়োরা মিলে সিদ্ধান্ত নেই জিসান তন্নির সাথে মনা নিরবেরও বিয়ে হবে।

ভালোভাবেই দুই জোড়া বিয়ে সম্পূর্ণ হয়।
রাতে তুলি এতো এতো খাবার নিয়ে বসেছে। জিসান তন্নি আর সায়ান হা করে দেখছে তুলিকে

“দোস্ত রাহ্মস হইলি কবে? এতো খাইলে তো দুইদিনে আমাদের হাতে বাটি ধরায় দিবি (জিসান)

” আমি কি খাবার গুলো আমি খাওয়ার জন্য নিছি না কি? (তুলি)

“তাহলে (তন্নি)

তুলি সায়ানকে টান দিয়ে পাশে বসিয়ে বলে

” আমার জামাই খাইবো। দেখনা কেমন শুকায় গেছে। আমার ফিউচার বেবিরা তো কইবো আমি ওদের বাবাকে খেতে দেয় না

সায়ানের হেচকি উঠে যায়

“এএতো খাবার

” জিসান তুলি একটু বাইরে যা তো

“কেনো?

” জামাইয়ের হেঁচকি বন্ধ করতে হবে

“বন্ধ হয়ে গেছে। সায়ান হেঁচকি বন্ধ করে বলে

” গুড এবার খাও

জিসান ভিডিও করছে

“সায়ান মাহবুবরে ট্যাগ কইরা পোষ্ট করমু আমার ব্রো খাচ্ছে (জিসান)

” এই না। এমন করিস না (সায়ান)

“জিসান পোষ্ট করবে না যদি আপনি আমাদের ঘুরতে নিয়ে যান (তুলি)

” তার মানে ব্লাকমেইল করার জন্য এমনটা করছো (সায়ান)

“ইয়াহ। ইয়েস ওর নো

অনিচ্ছা সত্ত্বেও সায়ান ইয়েস বলে।

এরকম দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসায় দিন কাটছে সায়ান তুলির।

আজ সকাল থেকেই তুলির মাথা ঘুরছে বমি হচ্ছে। কিন্তু কাউকে বলছে না কারণ একবার বলছিলো ফুটপয়জন হইছিলো। এখনও হয়ত তাই হইছে।

তুলি ওয়াশরুম থেকে বমি করে বের হয়। বিছানায় যাওয়ার মতো শক্তি নেই। পরে যেতে নেয় সায়ান ধরে

” তুলি কি হয়েছে

“ফুটপয়জন

” কিভাবে বুঝলা

“বমি হচ্ছে

” কখন থেকে

“সকাল থেকে

সায়ান তুলিকে বিছানায় সুয়িয়ে দেয়

” বলো নি কেনো?

“যদি বকা দেন

” পাগল একটা

তুলি আবার উঠে বসে

“আবার কি

” বমি করমু

সায়ান তুলিকে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়। এভাবে তিন চার হয়

“তুলি চলো ডাক্তারের কাছে যেতে হবে

তুলির কথা বলার শক্তিও নেই।৷ সায়ান তুলিকে কোলে নিয়ে বের হয়।

জিসান ডাইভ করছে। সায়ান তুলিকে ধরে বসে আছে।

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে