#শুধু তুই
#পর্বঃ২৮
#Tanisha Sultana (Writer)
সায়ানের হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ। তুলি সায়ানকে ধরে বলে
“আপনার এই অবস্থা কি করে হলো?
কথা বলার শক্তি সায়নের নেই। সায়ান তুলির কাঁধে মাথা রাখে।
” জিসান জিসান
জিসান চিৎকার করে জিসানকে ডাকে। জিসান ছুটে এসে দেখে এই অবস্থা।
“কি করে হলো তুলি
” আমি কিছু জানি না। আমাকে হেল্প কর
জিসান আর তুলি সায়ানকে ধরে রুমে নিয়ে আসে।
“আমি ডাক্তারকে কল করছি
জিসান ডাক্তারকে কল করে। বাড়ির সবাই চলে আসে। সায়ানের মা তো কান্না কাটি শুরু করে দিছে। একটু পরে ডাক্তার আসে। কিছু ঔষুধ লিখে দিয়ে চলে যায়।
তুলি সায়ানের মাথার কাছে বসে আছে। একে একে সবাই চলে যায়। তুলির ফোনে ফোন আসে। তুলি চোখের পানি মুছে ফোনটা রিসিভ করে
” হেলো। কে বলছেন?
“জুঁই
” তুমি
“অনেক ভেবে দেখলাম এভাবে লাইফ কাটানো যায় না তাই ভাবছি সায়ানের লাইফে ব্যাক করবো
” মানে
“মানে কাল থেকে সায়ানের বাড়িতে থাকতে যাবো। আজ একটা পরিহ্মা নিলাম সায়ানের। দেখলাম বেচারা এখনো আমাকে ভালোবাসে
” তুমি এটা করো না আপু
“আমি এটাই করবো। না হলে কি করবো আমি? নিরব তো চলে গেছে। আমি একা একা থাকবো না কি?
” নিরব বেঁচে আছে।
“আমিও জানি
” তাহলে
“নিরব একটা সাইকো আর সায়ানের জন্যই নিরবের এই অবস্থা।
” আপু শুনো আমার কথা
“তুলি তুমি অনেক ভালো ছেলে পাবে। সায়ানকে ছেড়ে দাও
” সায়ান আমার স্বামী। মরে যাবো কিন্তু সায়ানকে ছাড়বো না।
তুলি ফোন কেটে দেয়।
“ছোট বেলায় ভাবতাম ইস যদি আমার জামাই নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে হইতো। এখন তাই হলো। করবো কি আমি? ওই ডাইনিরে তো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করবো। আসুক না। আমিও দেখি কি করে আমার জামাইরে কাইরা নেই
তুলি আবার সায়ানের পাশে এসে বসে।
” কি কপাল আমার বিয়ের পর থেকে কন্টিনিউ জামাই নিয়ে লড়াই করে যাচ্ছি। নেহাত ভালোবেসে ফেলেছি নাহলে থাপড়াইয়া দাঁত ফেলাই দিতাম
তুলি সায়ানের পাশে বসে বকবক করে যাচ্ছে। সায়ানকে ডাক্তার ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে গেছে তাই ঘুমচ্ছে।
সকালে তুলি ফ্রেশ হয়ে সায়ানের জন্য খাবার নিয়ে রুমে এসে দেখে সায়ান মাথা ধরে বসে আছে।
“গুড মর্নিং জান
সায়ান তুলির দিকে তাকায়
” জান😱
তুলি সায়ানের পাশে বসে গাল টেনে বলে
“হ তুমি আমার জান। এবার যান তো ফ্রেশ হয়ে আসুন
সায়ান উঠতে নেয় তুলি হাত ধরে টেনে বসিয়ে দেয়
” কি হলো
“আপনার এই অবস্থা কি করে হলো
” জুঁইকে দেখলাম একটা গাড়ি করে চলে যাচ্ছে আমি গাড়ির পেছনে দৌড় দিছিলাম। এক্সিডেন্ট করছি
“ভেরি গুড। ভালোবাসা উতলিয়ে পড়ে তাই না
” তুমি কখনো কাউকে ভালোবেসেছো
“হুম আপনাকে
” তুমি আমাকে ছাড়তে পারবে
“নাহহ
” তুমি জাস্ট কয়েক দিন আমাকে ভালোবাসো তাতেই আমাকে ছাড়তে পারবে না তাহলে আমার ভালোবাসা দশ বছরের তাহলে তুমি বলো আমি কি করে ভুলবো
তুলি মন খারাপ করে উঠে যেতে নেয় সায়ান হাত ধরে
“আমাকে একটু সময় দাও তুলি। সব ঠিক হবে
তুলি সায়ানকে জড়িয়ে ধরে
” তুই আমার শুধু আমার। ওই জুঁই ফুলকে আমি তেল বানিয়ে শাশুড়ীর পায়ে মালিশ করাবো
সায়ানকে ছেড়ে দিয়ে
“বিয়ের পর থেকে আপনাকে নিয়ে লড়াই করে যাচ্ছি। জিলিপির পেছে আটকে যাচ্ছি। ভালোবাসার জন্য পিছু পিছু ঘুরছি। নেহাৎ আপনি সময় চেয়েছেন নাহলে
” নাহলে
“আপনারে রেপ করতাম
😱😱😱😱
এই মাইয়া কয় কি?
” ঠিকি কইছি
যান খাবো
সায়ান ফ্রেশ হয়ে আসে। সায়ান খাচ্ছে তুলি তাকিয়ে আছে
“তাকিয়ে আছেন কেন?
” খাওয়াই দেন
“অসুস্থ আমি খাওয়াই দিবো তোমারে
” হুমমম
“হা করো
তুলি হা করে সায়ান খাওয়াই দেয়। খাওয়া শেষে তুলি সাজুগুজু করতে বসে
” কোথাও যাইবা
“না তো
” তাহলে সাজছো কেনো?
“অনেক দিন ফেসবুকের প্রোফাইল কভার পিক চেঞ্জ করা হয় না। তাই সাজুগুজু করে পিক তুলে আপলোড দিবো
” দুইদিন আগেও না চেঞ্জ করছো
“আমার তো ঘন্টায় ঘন্টায় চেঞ্জ করতে মন চায়।
” পাগল যে তুমি
“আপনিও তো পাগলের জামাই
” কপাল
“লাকী আপনি আমার মতো একটা কিউট টুনুমুনু বউ পাইছেন
” সাথে গোলুমলুও
“আপনিও
” আমি যথেষ্ট ফিট
“মি টু
” তোমার সাথে তর্কে পারা যাবে না
“আসেন কেন
” সেটাই
“ভালো একটা শার্ট পরেন দেখি
” কেনো
“কভারে কপাল পিক দিমু
” না
“তুই পরবি না তোর ঘাড় পড়বো
তুলি জোর করে সায়ানকে নীল একটা শার্ট পড়ায়। তারপর জিসানরে ডেকে আনে পিক তোলার জন্য। কয়েকটা স্টাইলে পিক তোলার পরে তুলি বলে
” আপনি আমার কপালে চুমু দিবেন জিসান পিক তুলবো
“পারবো না
” তাহলে আমি এখন জিসানের সামনে আপনার
“করছি
” গুড জামাই
পিক তোলার পরে জিসান সুয়ে পড়ে। সায়ান আট তুলিও বসে পড়ে
“পিক তুলতে তুলতে জীবন শেষ (জিসান)
” সেম (সায়ান)
“আমার তো আরও পিক তুলতে মন চাইতেছে (তুলি)
” বোইন প্লিজ মাপ কর
সায়ানের ফোনে ফোন আসে। সায়ান বেরিয়ে যেতে যেতে বলে
“আমি একটু পরেই আসছি। জরুরি কাজ আছে
” আরে শুনুন। যাহ চলে গেলো। নিশ্চয় ডাইনিটাকে আনতে গেছে। আসো তুমি। এবার তুলির আদর দেখবা জুঁই বেবি। জন্মের মতো সায়ানের নাম ভুলিয়ে দেবো। আর তোমাকে ব্যবহার করে নিরবকে জাত করবো। জাস্ট ওয়েট এন্ড সি
চলবে
#শুধু তুই
#পর্বঃ২৯
#Tanisha Sultana (Writer)
মেইন দরজার কাছে বসে আছে তুলি। সায়ান জুঁইকে নিয়ে ফিরবে তখন তুলি জুঁইয়ের গায়ে লংকা গুড়ো ঢেলে দেবে তাই। কিন্তু ওদের ফেরার নামই নাই। তুলির এবার ঘুম পাচ্ছে। কোনোরকম চোখটা খোলা রেখেছে।
হঠাৎ কলিং বেল বাজায় তুলি হাত পেছনে রেখে দরজা খুলে দেয়। একি সায়ান একা জুঁই ফুল কই?
তুলি সায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। সায়ান ভেতরে আসতে আসতে বলে
“চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছ কেনো?
” জুঁই ফুল থুক্কু আপু কই
“হাসপাতালে ভর্তি করে রেখে আসছি?
” কেনো?
“জুঁইয়ের বাবা বললো জুঁই না কি পাগল হয়ে গেছে। আমি ছাড়া কাউকে চিন্তে পারছে না। ওকপ আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসতে বললো। আর আমি মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি করে রেখে আসলাম
” 🤣🤣🤣🤣
এই না হলো আমার জামাই। বেবি আসো আদর করি
তুলি সায়ানকে জড়িয়ে ধরতে যায় তখন শাশুড়ী কাশি দেয়। তুলি ছেড়ে দুরে দাঁড়ায়
“শাশুড়ী রুমে যাচ্ছি।
তুলি শাশুড়ীকে বাই বলে সায়ানকে টেনে রুমে নিয়ে যায়।
” হইছে কি
“আমাকে কেমন লাগছে
” মানে
“আমি যে শাড়ি পড়ছি সাজুগুজু করছি আপনি তো কইলেন না আমাকে কেমন লাগতেছে।
সায়ান তুলির দিকে তাকিয়ে বলে
” ভালোই
“নাহহহহহহ
” তাহলে
“হিরো রা হিরোইন দের যা বলে তাই বলেন
” কি বলে
“জানেন না
তুলি সায়ানের খুব কাছে গিয়ে বলে
” না মানে
“বলেন
” হহ
“তারপর
” ট
“এবার এক সাথে
” হট
“আমার বেবিটা
তুলি দুরে গিয়ে বসে। সায়ান হাত দিয়ে ঘাম মুছছে
” এখন তো শীত কাল তাও আপনি ঘামছেন
“এরকমভাবে এটাক করলে কে না ঘামবে
সায়ান বিরবির করে বলে
” কিছু বললেন
“ফ্রেশ হবো
” তো আমি কি তোমাকে চেঞ্জ করতে সাহায্য করবো
“না না আমি একাই পারবো
” তাহলে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো?
সায়ান দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। তুলি তো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। জুঁইকে ফোন দেয়
“আমি তোমার জন্য বরণডালা সাজালাম আর তুমি আসলা না। কেনো গো?
” মজা নিচ্ছো
“এভাবে নিজেকে মিরাক্কেলের মঞ্চে দাঁড় করালে কে না মজা নিবে। সময় আছে ভালো হয়ে যাও। নিজেকে হাসির পাত্র বানিয়ো না।
” রাখছি
“আপু আর একটা কথা পৃথিবীর সব থেকে শ্রেষ্ঠ জিনিসটা তোমার আছে তোমার জুজু। সন্তানকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করো। সুখী হবে। আমাকে আর সায়ানকে সারাজীবন পাশে পাবে।
জুঁই ফোন কেটে দেয়। তুলি পেছনে তাকিয়ে দেখে সায়ান।
” এতো ভালো কেনো তুমি? সবাই কে কি করে এতো সহজে হ্মমা করে দাও বলো তো।
“হ্মমা করা মহৎগুন
আপনি
” খাবো
“আমাকে😁
” খাবার🙄
“নিরামিষ
তুলি ভেংচি কেটে চলে যায়।
” আমার পাগলি
একটু পরে তুলি আসে
“ও গো শুনছো
” বলো
“সবার সাথে বসে খেতে হবে
” চলো
সবাই এক সাথে খাচ্ছে। তুলি সায়ানের সামনে বসেছে।
“বাবা
” বলো তুলি
“আমি আর ও তো হানিমুনে গেলাম না
” পিচ্চিরা হানিমুনে যায় না (জিসান)
“আমারে তোর পিচ্চি মনে হয়? দুদিন পরে আমিই তো পিচ্চির মা হবো
তুলির কথায় সায়ান বেষম খায়। সায়ানের মা পানি এগিয়ে দেয়
” আমি যখনই বাচ্চার কথা বলি আপনি বেষম খান কেনো বলেন তো? ভয় পান না কি?
“কা কে ভয় পাবো? সায়ান মাহবুব কাউকে ভয় পায় না😎
” তাইতো আমি ধরলে বলেন ছেড়ে দাও প্লিজ
সবাই হো হো করে হেসে ওঠে। সায়ান তো রেগে আগুন হয়ে গেছে।
“জিসানের বিয়েটা হোক তারপর তোমরা চারজন হানিমুনে যাবে ওকে (বাবা)
” আমার সোনা বাবা(তুলি)
“হানুমুন থেকে ফিরে খুশির খবর দিবি (মা)
” তোমার ছেলে রাজী থাকলে আমি এখনই খুশির খবর দিয়ে দেবো
সায়ান ঠাস করে তুলির পায়ে লাথি দেয়।
“মা
” কি হলো
“তোমার ছেলে তো লাজুক মুখে বলতে পারছে না তাি ইশারায় বুঝিয়ে দিলো
সবাই এক সাথে কিহহহহহ
” তোমার ছেলে রাজী
সায়ান চলে যায়
“এরে বেশি বেশি করে ফেললাম মনে হয়।
” তোর কপালে দুঃখ আছে (জিসান)
“ও মা (তুলি)
“কি
” আজ আমারে বাঁচাও
“কিচ্ছু হবে না
রাত দশটা। তুলি রুমে উঁকি ঝুঁকি মারছে। লাইট অফ।
” করলাটা কোথায় গেলো?
তুলি পা টিপে ভেতরে ঢুকে আর সায়ান দরজা বন্ধ করে দেয়। তুলি চমকে পেছনে তাকায়
“দদরজা বন্ধ করলেন কেনো?
” আমিষ কাকে বলে এটা দেখাতে
তুলি পিছতে পিছতে বিছানায় পরে যায়। সায়ান তুলির ওরনা ধরে টান দেয়
“ওড়না নেবেন বললেই তো দিয়ে দেই টানাটানি করার কি আছে?
তুলি ওড়না খুলে সায়ানকে দিয়ে দেয়। সায়ান তুলির ওপর ঝুঁকতে যায় তুলি বলে
” আপনি অনেক ভারি। আমি হালুয়া হয়ে যাবো
সায়ানের এবার নিজের চুল নিজের ছিঁড়তে ইচ্ছে হচ্ছে। সায়ান বিছানায় সুয়ে তুলিকে টান দিয়ে ওপরে ওঠায়
“এবার ঠিক আছে?
” হুম
“শুরু করি
” এক মিনিট
“আবার কি
” ভিডিও করবো
“কিহহহহহ
” তারপর ফেসবুকে পোষ্ট দিমু। ইস কতো লাইক কমেন্ট শেয়ার হইবো
“থাপড়াইয়া কান ফাটাই দিমু
” কেনো?
“এতো সয়তান কেন তুমি
” আপনার বউ
“সাইনবোর্ড টাঙায় দিয়ো
” আইডিয়াটা খারাপ না
সায়ান এবার ভালোবাসা দিয়ে তুলির বকবক বন্ধ করে দেয় 😝
সকাল বেলা
“এই উঠুন তো
সায়ান ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে
” কি হয়েছে?
“ওড়নাটা খুঁজে পাচ্ছি না। খুঁজে দিন
” পাঁচ মিনিট ঘুমতে দিন
“কেনো ঘুমতে দিবো। আপনার জন্যই তো আমি ওড়না খুঁজে পাচ্ছি না। আপনার দোষ খুঁজে দিন না হলে বাড়ির সবাইকে বলে দিবো। কাল আপনি আমারে
” দিচ্ছি 📢📢📢
“জানটা😘
সায়ান খুঁজে দেখে খাটের নিচে পড়ে আসে।
” ধরো
“লাভ ইউ জান। এবার ঘুমাও
” ঘুমের বারোটা বাজিয়ে এবার ঘুমাও
সায়ান বিরবির করে বলে।
“কিছু বললেন?
” গোছল করে বেরিয়ো
“কেনো?
” গা থেকে মরা ইদুরের গন্ধ আসছে
“😡😡😡
” যাও গোছল করো
তুলি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে যায়। সায়ান আরাম করে সুয়ে পড়ে। তুলি গোছল করে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে বেরিয়ে দেখে সায়ান আরাম করে ঘুমচ্ছে।
“আহারে কতো আরাম করে ঘুমচ্ছে। দেখাচ্ছি তোমাকে
তুলি সায়ানের গা থেকে কম্বলটা সরিয়ে সায়ানের গায়ে পানি ঢেলে দিয়ে এক দৌড়ে বেরিয়ে যায়।
” সয়তান মাইয়া
তুলি কিচেনে যায়। মনা আর শাশুড়ী রান্না করছে। কাকিশাশুড়ী বাপের বাড়ি গেছে।
“এতো সকালে গোছল করছোস কেনো?
” আমার গা থেকে না কি ইঁদুর মরা গন্ধ আসছিলো তাই
“কে বলছে
” তোমার ছেলে
মনা আর শাশুড়ী হাসতে হাসতে শেষ
চলবে