শিরোনামহীন পর্বঃ৫

0
1199

শিরোনামহীন
সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
পর্বঃ৫

কলতলায় শ্যাওলা জমেছে। কালচে সবুজ রঙের মাঝে উঁকি দিচ্ছে পাকা করা কলতলা। যেখানে শ্যাওলার স্তর কম সেখানে পানিতে রোদের আলোয় সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র আলোর ঝলকানি। কলতলার একপাশে মাথায় হাত রেখে বসে আছে আনতারা।বমির ভাব তো হচ্ছে তবে
বমি হচ্ছে না,এটা প্রচন্ড অস্বস্তিকর অবস্থা।কেনোনা বমি হলেও যতটা কষ্ট না হয়, বমি বমি ভাবে যন্ত্রণা হয় দ্বিগুণ।

চোখেমুখে পানির ঝাপ্টা দিয়ে শাড়ির আঁচলে মুখ মুছে আনতারা।খোপার চুল অনেকটা আগলা হয়ে গিয়েছে। হাত খোপা করতে করতে পা বাড়ায় নিজের ঘরের দিকে।
উঠোন পেরিয়ে পেয়ারা গাছ তলায় একটু দাঁড়ায় সে।
আবার বমি পাচ্ছে,তবে সেদিকে পাত্তা না দিয়ে দ্রুত ঘরে ফিরে এলো ।
মাথার উপর ফ্যান চলছে ভনভনিয়ে।কিছু সময় ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে-ধীরে বিছানার ডান পাশে গা এলিয়ে দিলো আনতারা।
ফোন হাতে ডায়েল করলো সাবেতের ইমো নাম্বারে।
কয়েকবার কল দেওয়ার পরেও কল যাচ্ছে না।এমন না যে সাবেত তাকে ব্লক দিয়েছে তাহলে কি নেটওয়ার্ক সমস্যা?
অস্থির আনতারা এবার আরো অস্থিরতা অনুভব করছে,
বাধ্য হয়ে সরাসরি কল দেয় সাবেতের নাম্বারে।
কারণ তাদের প্রথম সন্তান আসতেছে এ কথা আনতারা কাউকে জানায় নি।
প্রথম জানার অধিকার কেবল এবং কেবলমাত্র সাবেতের। তারপর বাকী সবার।কিন্তু এদিকে কল দিলেই কোন একটা কারণে কল যাচ্ছে না।

মারিয়া মেয়েটার কথা ফেলে দেওয়ার মতন নয়। কথা বলে মনে হয়েছে বেশ বুদ্ধিমতি।তাছাড়া সাবেত যদি আনতারাকে নিয়ে সুখেই থাকতো তাহলে কি আর বিদেশে বিয়ে করতো?
আনতারার ভাইয়েরা ভালো না,আজ যা হুমকি-ধমকি দিয়ে গেলো এতে আর যাই হোক সাবেতের কিংবা সাব্বিরের ভালো হবে না।এজন্য ভদ্রমহিলা বিনাবাক্যে মারিয়ার কথা মতন আনতারার ফোন থেকে সাবেতের নাম্বার ব্লক করে দিলো।
কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। মাথার কসম দিতে হয়েছে সাব্বিরকে। তারপর সাব্বির একাজ করেছে।
খুব দ্রুত পাড়ি জমাবে তারা অস্ট্রেলিয়ার পথে। এদেশে থেকে কি লাভ? যদি দুই ছেলের ভবিষ্যত না থাকে?

-মারিয়া আমার ফোন দেখেছো?
-নো ডিয়ার।
-এখানেই তো ছিল।একটু দেখো তো তোমার আশেপাশে…
-রিলাক্স। হাইপার হচ্ছো কেনো?
-আরুর সাথে কথা বলবো অথচ ফোন হাওয়া, হাইপার হবো না তো কি নাঁচবো?

সাবেতের এমন কথায় মন খারাপ হলেও পর মূহুর্তে খুশির বর্ষা নেমে এলো মারিয়ার মুখে। সাবেতের হাত ধরে তাকে পাশে বসিয়ে বলল,

“সাব্বির,এন্ড তোমার নামে কেস করতে চেয়েছে আনতারা।”

দাঁত মুখ খিচিয়ে সাবেত জবাব দিলো,

“ওর ভাইয়েরা বলেছে, ও না।হাত ছাড়ো ফোন খুঁজে পাচ্ছি না।”

“তোমার মম এদেশে আসতে চাচ্ছে। ওখানে সিকিউরিটি নেই,ইউ নো হোয়াট আই মিন?”

মারিয়ার কথায় সাবেত চমকে উঠেছে। আনতারা আসবে এখানে? মা কি সত্যি ওকে নিয়ে আসতে পারবে? যদি এসে মারিয়ার সাত মাসের প্রেগ্ন্যাসিরর কথা জানে কিভাবে রিয়্যাক্ট করবে? এসব
হাজারো কথা ভাবতে ভাবতে কয়েকটা ফাকা ঢোক গিললো সাবেত। হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

“আনতারা আসবে না।আমি ওকে চিনি।”

“ও আসা না আসা মেটার করে না।মম এন্ড সাব্বির আসবে। তাদের আসার ব্যবস্থা আমি করছি।”

সাবেত কোন কথা বাড়ায় না।তবে কি আনতারার সাথে আইননুসারে বিচ্ছেদ হওয়ার সময় চলেই এলো?

রাত এগারোটা হবে হয়তো।ইতিমধ্যে গ্রামের মানুষের ঘুম অর্ধেক হয়েছে। আজ আকাশে চাঁদ থাকলেও আলো খুব একটা নেই।মে মাসের ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী।
ঠিক তেমন একজন চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলে
মাহির আবসার।
দিন দুয়েক হলো বিদেশ থেকে ফিরেছে। গ্রামের মানুষের কাছে সে মস্ত ডাক্তার। বিদেশে পড়েছে কি না!
হাতে জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে মাঠের এক কোনায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মাহির।জীবনটা বড়ই আহ্লাদি। না হলে কি সময় সময় চাওয়ার থেকে পাওয়ার পাল্লা বেশি করে দিয়ে মানুষের সাথে আহ্লাদ করে? আবার কেড়ে নিতেও দুবার ভাবে না।

সামনের বাগানে কিছু একটা শব্দ শুনেই সেদিকে তাকায় মাহির।আম কাঠালের বাগান। হয়তো চোর এসেছে। সেদিকে খেয়াল করতেই চোখে পড়ে বিশ-বাইশ বছর বয়সী এক রমনী গাছ থেকে ধীরে সুস্থে নেমে আসছে।
ভূতে মাহিরের কোন কালেই ভয় নেই না আছে বিশ্বাস।
তবে জ্বীন জাতি? আজ কি তাহলে মাহির তাদের সাক্ষাৎ পেতে চলেছে?

চলবে(পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠিনি। তাই একটু কম করেই না হয় পড়ুন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে