#শিমুল_ফুল
#৫১–সমাপ্ত পর্ব
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
এখন আপনাদের মাঝে উনার মূল্যবান মন্তব্য রাখবেন আমাদের জেলার বর্তমান প্রশাসন ক্যাডার আর সবচেয়ে বড়ো কথা উনি আমাদের অনন্তপুর গ্রামের কৃতি সন্তান ম্যাম পুষ্প শেখ।আশেপাশের সবার করতালিতে বিশাল সামিয়ানা মুখরিত হয়ে উঠে।সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে পুষ্পকে দেখছে।সে এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের পাশে বেশ শালীনতার সাথে পরিপাটি হয়ে বসে আছে।তার মুখে আলতো হাসি বিরাজমান।মাথা ঘুরিয়ে সে এমপির দিকে তাকায় উনি স্নেহভরা দৃষ্টিতে পুষ্পকেই দেখছে।পুষ্পর মনে পড়ে যায় তার শশুড় শওকত হাওলাদার ক্ষমতার লো/ভে এই এমপির ভাগনীর সাথে শিমুলের বিয়ে দিতে কতোই’না কাহীনি করেছিলো।আল্লাহর ইচ্ছায় আজকে সেই এমপির পাশের আসনে স্বয়ং পুষ্প বসে আছে।পুষ্প মাথা সোজা করে সামনের সারিতে বসা তার স্বামীর দিকে তাকায়।শিমুলের চেহারায় আলোর ঝলকানিতে ঝিকমিক করছে।মুখে গর্বিত হাসি।
শিমুলের বুকে কেমনতর ব্যা/থা হচ্ছে।এই ব্যা/থা নিশ্চয়ই সুখের ব্যা/থা!প্রিয় অর্ধাঙ্গিনীকে এমন জয়ী বেশে দেখতে কার না ভালো লাগে?
সে তো তার পুষ্পকে এমনভাবেই দেখতে চেয়েছিলো।দুজনের কঠো/র পরিশ্রম আর নিষ্ঠাই যেনো তাদের এই সুখের নদীতে এনে ফেলেছে।হ্যাঁ তাদের দু’জনের খুব ক/ষ্ট হয়েছে কিন্তু এই জয়ের কাছে ক/ষ্টটা নেহাৎ তুচ্ছ।পুষ্প তার কথা রেখেছে ঠিক অফিসার হয়ে শিমুলের মাথার মুকুট হয়ে সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছে একটা মেয়ের বিয়ে হলেই সব শেষ না।নিজের চেষ্টা থাকলে বিয়ের পরেও সব বাধা জয় করা সম্ভব।যা কিনা পুষ্প করে দেখিয়েছে।শিমুল আনমনেই তার বুকে হাত রাখে।বুকটা কাঁ/পছে।হৃদয়টা যেনো তাকে বলতে চাইছে তার ফুল কথা রেখেছে।পুষ্প তাকানোতে ইশারায় বক্তব্য দিতে বললো।পুষ্প তার আট বছরের সন্তান শুভ্রবের দিকে তাকায়।শুভ্রবের মুখেও হাসি।তার মা এতো সম্মানিত মানুষ মুখে হাসি না এসে পারে?উনাদের পাশেই শওকত হাওলাদার,মজিব হাওলাদার,পেশকারা,রাবেয়া পলাশ,নিধি,মিজান শেখ ,রোকসানা,মুন্নী মুন্নীর বর সাজ্জাদ বসে আছে।সবার মুখেই হাসি।পুষ্প একনজরে সবাইকে দেখে,এই মানুষগুলোর দিকে তাকালে তার বি/ষাক্ত অতীতের কথা মনে পড়ে যায়।সে একসময় অবহেলার পাত্রী হলেও আজকে সে সবার মাথার তাজ।এখন চারদিকে পুষ্পর গুনগানের হইহই রইরই।কি সম্মান!পুষ্প বেশ মনোযোগ দিয়ে সবার মুখের ভঙিমা পর্যবেক্ষণ করে।সবার মুখে তাকে নিয়ে গর্বের হাসি।যেই শওকত হাওলাদার পুষ্পকে অ/বহেলায় বউ করতে চায়নি।বিয়ের পরে সারাক্ষণ তু/চ্ছতা/চ্ছিল্য করে কথা বলতো।নিজের মনমতো বিয়ে করাতে পারেনি বলে বিয়ের পরে কথায় কথায় অ/পমান করতো,তার আব্বা আম্মাকেও তো কতো কথা শুনতে হয়েছিলো সেই শওকত হাওলাদার আজকে পুষ্পকে কিছু বলতে দশবার ভাবে।চেয়ারম্যান পদ থেকে বাদ পড়েছে সেই কবেই এখন তার অ/হংকার হলো পুষ্প।সোনামুখ করে সবাইকে পুষ্পর গুনগান গেয়ে শোনায়।পুষ্পর মা বাবারও খাতির যত্নের পরিমাণ বেড়ে গেছে।বাড়িতে সবাই তাকে এতো মান দেয় যে তার কথার উপরে কেউ কথা বলার সা/হস পায় না।
পুষ্প গলা পরিষ্কার করে সবাইকে সালাম দেয়।উৎসুক জনতা বিনা আদেশে পিনপতন নিরবতা পালন করে হয়ত এতো বড়ো অফিসার কথা বলছে বলেই এতো সম্মান।পুষ্পর মাঝে নেই কোনো ছেলেমানুষী নেই কোন চঞ্চলতা।পরিপূর্ণ নারীতে পরিনত হয়ে একজন বিচক্ষণ অফিসারের ভূমিকা পালন করতে সে সদা প্রস্তুত।এই এতো এতো মানুষের সামনে কথা বলতে তার বিন্দুমাত্র সংকোচ হচ্ছে না বেশ সাবলীল ভাবেই সে তার কথা শুরু করে।
“আপনারা অনেকেই হয়তো আমাকে চিনেন।আর চিনারই কথা আমিতো এই এলাকারই মেয়ে।সবাই আমার সফলতার গল্প শুনতে চায় আমিও আমার সফলতার গল্প বলতেই বেশী সাচ্ছন্দ্যবোধ করি।আসলে আমার ক/ষ্টের চেয়ে সুখের কথা বলতেই বেশী ভালোবাসি।সফল শব্দটা যেমন আকার ইকার ছাড়াই খুব সহযে উচ্চারণ করা যায় কিন্তু এই সফল শব্দটা নিজের করে নিতে করতে হয় অ/ক্লান্ত পরিশ্রম।এর পিছনে থেকে যায় হাজারো তি/ক্ত অভিজ্ঞতা,সাধনা,ক/ষ্ট।আমার সফলতার পেছনেও একটা গল্প আছে।তবে আমি আপনাদের সেই গল্পটা বলবো না কারণ আমি আমার জীবনে তাদের উপর খুব বেশী কৃতজ্ঞ যারা আমাকে হো/চট খাইয়েছে,আমাকে আ/ঘাত দিয়েছে,আমাকে কাগজের মতো মু/চরে ফেলেছে।উনারা যদি এগুলো না করতো আমি হয়তো সেই সাধারণ মেয়ে পুষ্পই থেকে যেতাম।উনারাই তো আমাকে অফিসার বানাতে অগ্রসর করে দিয়েছে।মস্তিষ্কের সুপ্ত ভাবনা জাগিয়ে দিয়েছে।আমি তাদের কাছে ভিষণভাবে কৃতজ্ঞ যারা আমাকে ভে/ঙে চুড়ে ছাইয়ের মতো উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলো।কিন্তু আল্লাহর পরিকল্পনা বোধহয় অন্যরকম ছিলো।তাইতো তিনি নিজের পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করেছেন।আমার হাজবেন্ড।সে আমার হাজবেন্ড না সে আমার হিরো,আমার আইডল।আমার সফলতার পিছনে যার অবদান অপরিসীম।উনার কথা যদি বলা শুরু করি তাহলে কম হয়ে যাবে।সে যদি আমার দিকে তার হাত বাড়িয়ে না রাখতো তাহলে আজকে পুষ্প এই আসনে বসে কথা বলার যোগ্যতা’ই অর্জন করতে পারতো না।এই সফলতা যেমন আমার সৌভাগ্য তেমনি শিমুলের মতো কাউকে পাওয়াও আমার পরম সৌভাগ্য।”
আরো নানান কথার মধ্যে দিয়ে পুষ্প তার মন্তব্য শেষ করে।অনুষ্ঠান শেষে এসপি অন্তরা পুষ্পকে বারবার ম্যাম ম্যাম বলছে আর স্ব-সম্মানে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।শিমুলের বুকটা গর্বে ভরে উঠে।এই সেই অন্তরা! এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের ভাগনি যার সাথে তার আব্বা বিয়ে দেয়ার জন্য জোড় করেছিলো।মেয়ে এসিপি হয়েছে এই নিয়েও তাকে বা পুষ্প কাউকেই কম কথা শুনতে হয়নি।আর আজকে এই মেয়েই পুষ্পকে সম্মানের চোখে দেখছে।শিমুলের চি/ৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে,শুনছো পৃথিবী আমার পুষ্প পেরেছে।আমার পুষ্প অফিসার হয়ে তার কথা রেখেছে,আমার মাথা উঁচু করে দিয়েছে,সবাইকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমার পুষ্প ফালানো না,আমার পুষ্প দামী।পুষ্প গাড়িতে বসার পরে একে একে পরিবারের সবাই উঠে বসে।পুষ্প সবাইকে লক্ষ করে,তার বলা কথাগুলো এই মানুষগুলোকে উদ্যেশ্য করেই বলা উনারা সবাই বুঝতেও পেরেছে কিন্তু চেহারায় নেই কোনো রা/গ,নেই ক্ষো/ভ।সবাই পুষ্পর দিকে তাকিয়ে কি দারুন ভঙ্গিমায় হাসে।আসলে সব হলো টাকার খেলা।আগে টাকা ছিলো না সবাই তুচ্ছ চোখে দেখেছে আর এখন টাকা আছে তাই তার বলা বি/ষাক্ত কথাগুলোও মধুর শরাবের মতো লাগে।পুষ্প আজকাল বেশ বুঝতে পারে যে জীবনে ভালো থাকতে গেলে টাকাই সব।তোমার টাকা থাকলে তুমি সবার মন জুগিয়ে চলতে পারবে যেইনা কাউকে আর কিছু দিতে পারবেনা তখনি তুমি খা/রাপ দুনিয়ার বি/শ্রী কথাগুলো তোমার প্রাপ্য।মাঝেমধ্যে পুষ্পর ইচ্ছা করে সবাইকে ক/টু কথা শোনাতে কিন্তু মন বলে কু/কুড়ের পায়ে কামড় দিয়ে মুখে নোং/রা লাগানো ভালো কাজ না।সে আমার সাথে খা/রাপ আচরণ করেছে বিধায় আমারও যে এমন আচরণই করতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই।পুষ্প না হয় চুপ থাকুক।তবে সবাই এই আদ্যিক্ষেতা তার অ/সহ্য লাগে।বি/ষাক্ত সাপের চোখে মধুর আনাগোনা যে বড্ড বেমানান।তবে আমরা বাঙালি আমরা সব পারি।যাকে লেখাপড়া বন্ধ করার জন্য ঝ/গড়া করে স্বামী সমেত বের করে দেয়া হয়েছিলো তাকেই আজকাল রানীর মর্যাদা দেয়া হয়।পুষ্পর প্রতি সবার কি স্নেহপূর্ন চাহনি।আহা কি স্নেহ!
বাড়িতে আসার পরে পেশকারা গদগদ গলায় পুষ্পর গুনগান করছে।পুষ্প সোফায় বসে শুভ্রবকে কিছু বলছে।পেশকারা আজকাল লাঠি ছাড়া চলাচল করতে পারে না শুধু লাঠি কেনো যাকে ছাড়া তার একটা মুহূর্তও চলে না সে হচ্ছে রাবেয়া।রাবেয়াকে ছাড়া পেশকারা কিছুই করতে পারে না।সারাজীবন আসমা আসমা করে পেশকারা রাবেয়াকে ভিষণ ক/ষ্ট দিয়েছে।সবকিছুতে’ই মেয়েকে আগে প্রাধান্য দিয়েছে রাবেয়াকে একটুও সম্মান দেয়নি না কোনো কথার গুরুত্ব দিয়েছে।পেশকারা নিজের মেয়েকে না ভেবে অন্য বাড়ির মেয়েকে ভাবতেই পারতো না।সব ভালোমন্দ মেয়ের জন্য বরাদ্দ রেখে রাবেয়ার জন্য উ/চ্ছিষ্ট রেখেই অভস্ত্য ছিলেন।পেশকারা ভেবেছিলেন শেষ বয়সে তার মেয়েই তাকে দেখবে এতো আদর যত্ন করে মেয়ে বড়ো করেছেন এতোটুকু আশা তো করাই যায়।কিন্তু উনার ধারনা পুরো ভু/ল প্রমানিত হলো যখন উনি অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়েছিলেন উঠার শক্তিও ছিলো না,বিছানায় ম/ল/মূ/ত্র ত্যাগ করতে হতো তখনও উনার তেজ সামান্য কমেনি।আসমাকে আসতে বললে সে আসে কিন্তু এই অবস্থায় মায়ের সেবা করতে নারাজ।মায়ের মুখের উপরে সোজাসাপটা বলে দিলো,
“আম্মা আমার তো নিজের সংসার আছে আমি সব ফেলে তোমার গু মুত সাফ করলে চলবে?কাজের মেয়ে রাইখা নেও।”
পেশকারা আসমার কথা শুনে থ/ম/থ/ম খেয়ে যায়।অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে থাকে মেয়ের দিকে।এই দু/র্দিনে মেয়ের মুখে এমন কথা আশা করেনি।সারা জীবন মেয়েকে ভালোবেসে সব করেছেন আর এখন মেয়ে এসব কি বলে?পেশকারা হয়তো ভু/লে গিয়েছিলো যে বৃদ্ধ বয়সে মেয়ে না সাধারনত ছেলের বউরা’ই হাতের খুটি হয় সুতরাং সবার উচিত নিজের মেয়ের মতো পরের মেয়েরও যত্ন নেয়া।পরের মেয়ের মনে একবার জায়গা করে নিলে তারা নিজের মায়ের থেকেও শাশুড়িকে বেশী আদর,সম্মান, ভালোবাসা দেয়।পেশকারা অস/হায় অবস্থা রাবেয়ার চোখে পরে উনি মানুষ কোনো জা/নোয়ার না যে মুখ ফিরিয়ে নিবেন উনি ঠিকি সেবা করলেন পেশকারা অ/নুতপ্ত হয়ে রাবেয়ার পা ধরে ক্ষমা চাইলেন।এমন কাজে রাবেয়া হতভম্ব কিন্তু পেশকারা কেঁদে কেঁদে ঘরভর্তি মানুষের সামনে নিজের সমস্ত দো/ষ স্বীকার করে নিলেন আর বারবার করজোড়ে ক্ষ/মা চাইলেন।রাবেয়া উনার কাজে কেঁদে দেয়।সব দো/ষ ভু;লে শাশুড়িকে সেবা যত্ন করে সারিয়ে তুলে।তারপর থেকে পেশকারা তারের মতো সোজা হয়ে গেছে আজকাল রাবেয়ার কথা ছাড়া যেনো নিঃশ্বাসও ছাড়ে না।রাবেয়া মনে মনে ভাবে এই ভালোটা যদি বয়সকালে হতো তাহলে কতোইনা ভালো হতো।পেশকারা বললো,
“অ পুষ্প বইন।”
পুষ্প মাথা ঘুরিয়ে তাকায়।ইদানীং পেশকারা তাকে বইন ছাড়া ডাকে না।এই মহিলা তাকে যা ক/ষ্ট দিয়েছে তা ভুলবার মতো না।উনাকে দেখলে এমনি মনে পড়ে যায়।কথায় আছেনা সময় চলে যায় কিন্তু সেই সময়ে পাওয়া আ/ঘাতগুলো মন থেকে চলে যায় না।পুষ্প তাকানোতে পেশকারা বললো,
“এমপি কি কইলো বইন?”
“তেমন কিছুনা।রা/জনৈতিক আলাপ।”
পেশকারা মাথা নেড়ে বুঝবার ভঙ্গিমা করে।পুষ্প বললো,
“সুইটির কি খবর?”
পেশকারা উদাস চোখে তাকায়।সুইটির এই নিয়ে পাঁচটা বিয়ে হয়েছে কিন্তু কোনো ঘরেই বেশীদিন থাকতে পারেনা।
“আবার বিয়া দেখতাছে।”
পুষ্প হাসে।
“আপনার গুনবতী নাতনী ছিলোনা বুবু?তার এই হাল মানা যায়?”
পুষ্পর সাথে ঘরের বাকি সবাই হাসে।আসলে সুইটির মুখ চলে বেশী তাইতো মুখের উপরে তালাকও পায় বেশী।পুষ্পর কথায় পেশকারা বলে,
“যাক গা।আমি আর ওরারে নিয়া মাথা ঘামাই না।যার যার কপাল।”
দুপুরে খাবার টেবিলে হরেক রকমের তরকারির সমাহার।সবাই পুষ্পকে খাওয়ানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে যায়।পুষ্প চুপচাপ সবার কর্মকান্ড দেখে।গুরুর মাংস,খাসির মাংস আরো হরেক রকমের তরকারী টেবিলে শোভা পাচ্ছে।এই গরুর মাংস দেখলেই পুষ্পর চোখে অনেক বছর আগের দৃশ্যটা চোখে ভেসে উঠে।আহা মানুষের ভাগ্য কতো পরিবর্তনশীল!এই পরিবর্তনের জন্য দরকার চেষ্টা,ইচ্ছা,জেদ আর কঠোর পরিশ্রম।পরিশ্রম ছাড়া জীবনে সাফল্য অর্জন করা অসম্ভব।তাইতো পরিশ্রমকে সাফল্যের চাবিকাঠি বলা হয়।পুষ্প তার অতীতের মুখোশধারী মানুষগুলোকে কটু কথা শুনাতে চায় না।আসলে উনারা তার সাথে যা করেছে সেও এমন বি/শ্রী ব্যবহার করতে চায় না।মানুষ স্বা/র্থপর।স্বার্থ যেখানে আছে সেখানে সবাইকে পাওয়া যায়।পুষ্প তার আশেপাশের মানুষের স্বার্থপরতা দেখে।অন্যায় তো সবাই করতে পারে কিন্তু এই দুনিয়ায় শা/স্তি পায় কয়জন?আল্লাহ অ/ন্যায়কারীদের অবশ্যই শা/স্তি দিবেন।আল্লাহর ফয়সালার জন্যই পুষ্প ধৈর্য ধারন করে আছে।
বিকালে পুষ্প তার বাবার বাড়ি যায়।এখানেও তার আর শিমুলের খাতির যত্ন বেড়ে গেছে।আজকাল মুন্নীর থেকে পুষ্পর কদর বেশী।মুন্নীর স্বামীর যা সম্পদ আছে তা কিনার ক্ষমতা আছে পুষ্পর।কথাটা শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি।পুষ্প আর শিমুলকে তাদের বাসায় নেয়ার কি চেষ্টা!পুষ্প যাবে না।যাদের মনমানষিকতা এতো নিচু তাদের বাসায় যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।আজকে টাকা আছে বলেই সবাই সম্মান দিচ্ছে যখন টাকা ছিলোনা তখন সবাই দূরছাই করেছে।কেনো যাদের টাকা নেই তাড়া কি মানুষ না?টাকাই কি জীবনে সব?মানুষ এমন কেনো?এই দুনিয়ায় টাকার কদর এতো বেশী কেনো?পলাশের ভার্সিটি থেকে সিলেট বনভোজনে যায়।পলাশ সিদ্ধান্ত নেয় সে আর নিধি শুভ্রব আর সোহাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে।শিমুল সিদ্ধান্ত নেয় তারাও সাজেক যাবে।সাজেকে মেঘ উড়ে যাবে সে তার পুষ্পরানীকে নিয়ে সেই মেঘের উড়াউড়ি দেখবে।যেই ভাবা সেই কাজ শুভ্রবকে পলাশ আর নিধির সাথে রেখে দুজনে চারদিনের ট্যুরে চলে যায়।শুভ্রব এতো বোঝধার একটা ছেলে বাবা মা চলে যাওয়াতে একটুও মন খারাপ করেনি।পুষ্প আর শিমুল সারা রাস্তা গল্প করে কাটায়।পৌঁছে পুষ্প বারাব্দায় যায়।খোলা আকাশের এতো কাছে দাঁড়িয়ে শুভ্রবকে খুব মিস করে।সে শুভ্রবকে ফোন দেয়।
“হ্যালো মা।”
শুভ্রবের মা ডাক শুনে পুষ্পর মনটা ঠান্ডা হয়।
“কি করো বাবা?”
“মা আমরা জাফলং থেকে হোটেলে ফিরছি।তোমরা কি করো?”
“আমরা মাত্র পৌঁছলাম।”
শুভ্রব হেসে বললো,
“আমাকে মিস করছো তাই না আম্মু?”
পুষ্প হাসে।ছেলেটা একদম শিমুলের মতো বুঝধার।কিভাবে যেনো পুষ্পকে বুঝে যায়।
“হ্যাঁ বাবা এতো সুন্দর জায়গা তোমাকে মিস না করে পারছি না।”
শুভ্রব বেশ বড়োদের মতো করে বললো,
“আচ্ছা।সিলেটও খুব সুন্দর মা।আমিও তোমাদের মিস করছি।আমাকে নিয়ে ভেবো না।বাবাকে টাইম দাও।বাবা লাভস ইউ।”
পুষ্প মুচকি হাসে।
“বাবা লাভস শুভ্রব।”
“জানি মা।”
পুষ্প মাথা ঘুরিয়েপাশে শিমুলকে পায়।তারপর শুভ্রবের সাথে আরেকটু কথা বলে ফোনটা রেখে দেয়।শিমুলের দিকে না ফিরেই বলে,
“শুভ্রবকে মিস করছি।”
“আমিও।”
পুষ্প মন খারাপ করে বললো,
“নিয়ে আসলেই ভালো হতো।”
“পুষ্প।স্বামী স্ত্রী আলাদা সময় কাটানোর দরকার আছে এতে করে দুজনের মন ভালো থাকে।সারাক্ষণ এই সংসার,বাচ্চা,চাকরি নিয়ে থাকলে মন নষ্ট হয়ে যায়।জীবনের প্রতি অনীহা আসে।প্রিয়জনের প্রতি বিরক্ত লাগে।মাত্র চারদিন আমরা দুজন পাখির মতো উড়ি?দুজনকে একটু সময় দেই?আরেকবার শুভ্রব আমাদের সাথে থাকবে কেমন?”
পুষ্প মাথা নাড়ে।সব ব্যাপার শিমুল এতো সুন্দর করে বুঝায় যে না বুঝে উপায় নেই।শিমুলের কাছে সব সময় পজিটিভ কথা থাকবে এটাই পুষ্পর শক্তি।শিমুল তাকে কখনোই ভেঙে পড়তে দেয় না।শিমুল পিছন থেকে পুষ্পকে জড়িয়ে ধরে।ঘাড়ে মুখ গুজে নেয়।আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বললো,
“কেমন লাগছে পাখি?”
পুষ্প বিগলিত হাসে।বিয়ের এতো বছরেও শিমুল বিন্দু পরিমান পাল্টায়নি।সেই প্রথমের মতো পা/গল প্রেমিকই রয়ে গেছে।আর এই পা/গলামি,অবুজপানা গুলোই পুষ্পকে অমূল্য সুখ দেয়,এই সুখটা চাইলে টাকা দিয়ে কিনে নেয়া সম্ভব না এই সুখ কেবলমাত্র শিমুলের পা/গলামি’ময় ভালোবাসায় খুঁজে পাওয়া সম্ভব।শিমুল যখন তার জন্য পা/গলামি করে তখন তার কি যে ভালো লাগে!শিমুলের সানিধ্যে এসে পুষ্প নিজের বয়স ভুলে যায়, আহ্লাদী পাখি হয়ে পাথর কঠিন বুকে নিজেকে বিলিয়ে দেয়।শিমুল পুষ্পর মাথায় চুমু দেয়।পুষ্প নিজেকে শিমুলের প্রসস্থ বুকে হেলিয়ে দিয়ে বললো,
“সুন্দর।”
“কতো সুন্দর? ”
“প্রেমে পরার মতো সুন্দর।”
শিমুল ভ্রু কুচকে বললো,
“শিমুল থাকতে সাজেকের প্রেমে পরবে কেনো?শিমুল কি পুরোনো হয়ে গেছে?”
পুষ্প ফিরে শিমুলের গলা জড়িয়ে ধরে।পায়ের পাতা উঁচু করে শিমুলের নাকের সাথে নিজের নাক আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বললো,
“আমি প্রকৃতির প্রেমে পড়েছি সাহেব।আপনার কি হিং/সা হচ্ছে?”
“হ্যাঁ।ছেলেরা তার বউয়ের মুখে শুধু তার মুগ্ধতার আনাগোনা দেখতে পছন্দ করে।”
“তাই!”
“হ্যাঁ।”
“আমিতো তোমাতেই মুগ্ধ।সারাক্ষণ।”
শিমুল পুষ্পর কোমড়ে হাত রেখে মাঝখানের কিঞ্চিৎ দূরুত্ব ঘুচিয়ে দেয়।মুখে বললো,
“আমিও তোমাতে মুগ্ধ।বারবার প্রেমে পরতে চাই।এই চোখে আমার সর্বনাশ দেখতে চাই আরো সহস্র বছর।”
পুষ্প শিমুলের সহজ সাবলীল কথা শুনে অবস্থ।শিমুল পুষ্পর কাছে নিজেকে বইয়ের মতো খুলে দিতেই বেশী সাচ্ছন্দ্য বোধ করে।পুষ্প মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে বললো,
“তুমি বর কম প্রেমিক বেশী।”
শিমুল ঠোঁট প্রসস্থ করে হাসে।
“আপনার প্রেমিক আপনার জন্য রুমে কিছু রেখে এসেছে।গিয়ে দেখুন।দেখে পা/গল প্রেমিকের তৃষ্ণার্ত মন ঠান্ডা করুন রানীসাহেবা।”
পুষ্প মাথা নাচিয়ে রুমে যায়।শিমুল রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে যায়।পুষ্প রুমে এসে বিছানায় একটা লাল শাড়ি পায় সাথে লাল চুড়ি,শর্ট হাতা কালো রঙের ব্লাউজ,কালো টিপ।সাথে একটা চিরকুট।পুষ্প উত্তেজিত হাতে চিরকুট হাতে নেয়।প্রথম প্রেমে পরার মতো শিহরণ সারা গা ছড়িয়ে যাচ্ছে।চোখের তারায় চাদেঁর ঝিকিমিকি উজ্জ্বলতা নিয়ে চিরকুটে চোখ রাখে,
“প্রনয়ীনি…..
আমার প্রণয়ের মা/তাল বাতাস কি তোমাকে ছুঁয়ে যায়?ঠিক আগের মতো!
জানি এতো বছরের সংসার এসব বলা খুবই ছেলেমানুষী।
কিন্তু আমার যে পা/গল প্রেমিক রূপে থাকতেই বেশী ভালো লাগে।
ক্ষনে ক্ষনে তোমার প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করে।
লাল নীল বি/ষ ব্যা/থায় তোমাকে বি/ষাক্ত করে দিতে ইচ্ছে করে।
তুমি কি বি/ষাক্ত হতে চাও?
লাল শাড়ি দিয়েছি সোনা।
শিমুল ফুলের মতোই আজকে লাল হয়ে যাও।ফুলের মতো রাঙানোর দায়িত্ব না হয় আমিই নিলাম।
কি শিমুল ফুল সাজবে?”
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়।চারদিকে ঝি ঝি পোকা ডাকে।শিমুল আস্তে করে দরজা ঠেলে রুমে আসে।ইচ্ছা করেই পুষ্পকে তৈরি হতে সময় দিয়েছে তাই সে একটু দেরী করে এসেছে।রুমে এসে পুষ্পর মুখোমুখি হয়।পুষ্প শিমুলের সামনে এসে লজ্জা পায়।এতো বছর পরেও লজ্জা পাওয়াটা বেমানান হলেও সে লজ্জা পাচ্ছে।শিমুল মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে।লাল শাড়িতে পুষ্পকে সুন্দর লাগবে ভেবেছিলো কিন্তু এমন মা/তাল করা সুন্দর লাগবে তা কল্পনা করেনি।পুষ্পর হাত ধরে বললো,
“এতো সুন্দর লাগছে।অ মাই গড!আমার হার্ট ফার্ট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।”
পুষ্প লজ্জা লজ্জা চোখে শিমুলের গভীর চোখে চোখ রাখে।
“শিমুল ফুলের মতোই সেজেছি।হয়েছে না?”
শিমুল মনোযোগ দিয়ে দেখে।আস্তে করে তার পুরু ঠোঁটের ভাজে পুষ্পর লাল রাঙা ঠোঁট আলতো করে ছুঁয়ে দেয়।দহনে দু’টো শরীর কেঁপে উঠে।শিমুল বলিষ্ঠ হাতে পুষ্পর কোমড়ে দু’হাত দিয়ে ধরে উপরে উঠিয়ে নেয়।
“হয়েছে।আমি আরেকটু রাঙিয়ে দেই?আরেকটু লাল আভা মেখে দেই?শিমুলের রানীরূপে আবার আবির্ভাব করে দেই?আজকে নতুন করে শিমুল ফুল ফুটাই?”
পুষ্প কথা বলেনা।বিবস চোখে শিমুলের কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে ঝড় হাওয়ার তালে শ্বাস নেয়।শিমুলের এমন আবেদনময়ী আহব্বানে নিজেকে সামলানোর ক্ষমতা তার নেই।চোখের পলকে বুঝিয়ে দেয় সে লাল আভা গায়ে মাখতে চায়।শিমুল মুচকি হাসে।এই নারীতেই তার সর্বসুখ।দেহের প্রতি ভাজে যেনো সুখের হাতছানি।এতো বছরেও যেনো পুরোনো হয় না।আসলে শিমুল পুরোনো হতে দেয় না।নিজের মন মতো পুষ্পকে নিজের সামনে উপস্থাপন করে ভালোবাসায়,দেহে,মনে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করে।সাজেকের ছোট রুমে ভালোবাসাময় টিপটাপ বৃষ্টি পড়ে।একে অপরের মাঝে ডুবে থাকতে চায়।
পুষ্প শিমুলের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে।শিমুল শক্ত করে পুষ্পকে জড়িয়ে নেয়।ফিসফিস করে বললো,
“তুমি আমার ফুল।আমার একান্ত ব্যক্তিগত শিমুল ফুল।”
পুষ্প শিমুলের লোমশ বুকে নাক ঘষে।তার জীবনের সবচেয়ে বড়ো পাওয়া শিমুল।তার জীবনে শিমুলকে বাছাই করার সিদ্ধান্ত মোটেই ভু/ল ছিলো না।শিমুলের আদরে আবেশে বিড়ালের মতো বুকে মিশে বললো,
“তুমি আমার রাজা।আমার শিমুল রাজা।আমার নেতা।”
বা/ধা,বি/পত্তি,অ/ভাব,ক/ষ্ট সব জয় করে যখন দুজন মানুষ এক হয়,ভ/য়কে জয় করে জীবন যুদ্ধে সফল হয় তখন পৃথিবী আসলেই সুন্দর।আর পাশের মানুষটা যদি সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষ হয় তাহলে পৃথিবীর কোনো বাধাই তখন পথ রুখতে পারে না।সব বাধাকে আঙুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দেয়া যায়,দেখো আমার এমন একজন আছে যে থাকলে আমি সব পারি।তেমনি পুষ্পর শিমুল আছে।সব ঝ/ড় পেরিয়েও দুজনে সুখী।আমরা সবাই এমন কাউকেই আশা করি যার দিকে তাকালে নিজেকে সুখী ভাবা যায়।যে পাশে থাকলে সব বাধা অতিক্রম করার সাহস পাওয়া যায়।আমরা সবাই এমন মানুষ খুঁজি।নিজেকে এমন কারো কাছে সপে দিতে চাই।শিমুলের মতো নিজের করে তার শিমুল ফুল জয় করে নিতে চায়।ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল শিমুল পুষ্প।পৃথিবীর সকল মানুষ তাদের মতোই জয় করে নিক ভালোবাসার মানুষকে।যাকে দেখলে শান্তি লাগে,মন ভরে।
—সমাপ্ত—