#শর্ত
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১৮
শিশির প্রায় অনেকক্ষণ যাবত খাবার টেবিলে বসে আছে।কেয়া এসেছে তাই বাসায় আজ ভালো-মন্দ রান্না হয়েছে।শিশিরের খাওয়া শেষ অনেক আগেই কিন্তু সে এখনো বসে। কারণ তার দৃষ্টি একটু দূরে বসে থাকা রাতের দিকে। যে আপাতত সায়ানকে সামলাতে ব্যস্ত।
তা দেখে চৈতী বেগম বলছেন,
-“রাত!আমার কাছে সায়ানকে দিয়ে তুমি খেতে যাও।”
রাত না বোধক মাথা নাড়িয়ে বললো,
-“আমি পরে খেয়ে নিবো। আগে ও ঘুমাক।”
শিশির বেশ বিরক্ত হচ্ছে! কি হবে যদি ও চৈতী বেগমের কাছে সায়ানকে কিছুক্ষণের জন্য দেয় তো?শিশির উঠে দাড়ালো। সায়ানকে নিতে নিতে বললো,
-“খালি বাচ্চার খেয়াল রাখলেই হয় না রাত। নিজের খেয়ালটাও রাখতে হয়।”
রাত অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।কেয়া টেবিল থেকে বলতে লাগে,
-“ভাবী এসে খেয়ে যাও।”
রাত আড়চোখে শিশিরের দিকে তাকালো। সে সায়ানকে সামলে নিচ্ছে।টিভির সামনে বসে গেছে আপাতত৷চৈতী বেগম মুখ টিপে হেসে বললেন,
-“এবার বললি না?”
-“কি?”
-“পরে খাবি।”
রাত কিছু না বলে তাড়াতাড়ি গিয়ে টেবিলে বসে পড়লো।চৈতী বেগমও বসলেন রাতের পাশে।রাত বেশ তাড়াহুড়ো করছে। তা দেখে চৈতী বেগম বললেন,
-“ধীরে খা রাত।”
রাত তবুও তাড়াহুড়ো করে খাচ্ছে। হঠাৎ করে রাতের বিষম উঠে গেলো। রাত দাঁড়িয়ে কাশতে লাগলো।চৈতী বেগম দাঁড়িয়ে রাতের দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো।
আর ব্যস্ত গলায় বলতে লাগলো,
-“বলেছিলাম ধীরে খেতে।কি হত আস্তে আস্তে খেলে?”
রাত তখনো কাশছে। শিশির গেছিলো সায়ানকে বিছানায় শুইয়ে দিতে।রাতকে এ অবস্থায় দেখে সে এগিয়ে এসে রাতের মাথায় হাত দিয়ে বললো,
-“তাড়াহুড়ো করে খাচ্ছিলে কেন?”
রাতের কাশি আস্তে আস্তে কমে গেলো।নিম্ন স্বরে বললো,
-“আরে এমনি। কাশি উঠে গেলো।”
শিশির দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“আমি সায়ানকে শুইয়ে এসেছি।তুমি ধীরে ধীরে খাও।”
বলেই শিশির চলে গেলো। চৈতী বেগম আবারো মিটিমিটি হেসে বললেন,
-“নাও ধীরেসুস্থে খাও।”
রাত সম্মতি দিলো।মনে মনে ভাবলো,
-“আমি সায়ানের জন্য জলদি খাচ্ছি না। আমি তো জানি যে শিশির স্যার ঠিকই সায়ানকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছেন। আমি তাড়াতাড়ি খাচ্ছি ওনার জন্য করা আমার খাস প্ল্যানটা সাকসেসফুল করার জন্য।”
বলেই রাত শয়তানি হাসলো।এদিকে শিশির টিভি দেখার ফাঁকে ফাঁকে রাতের হাসিমাখা মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে। রাত কি সুন্দর করে সবার সাথে কথা বলছে আর খাচ্ছে।শিশির সেদিকে তাকিয়ে হালকা হেসে ভাবলো,
-“রাতকে দেখলেই আমার অদ্ভুত এক অনুভূতি হয়।মনে হয় রাতকে ছাড়া আমি বাঁচবো না৷ ওকে না দেখলে একটা মুহূর্তও থাকতে পারবো না।রাত আমাকে সত্যিই আবার বাঁচতে শিখিয়েছে৷ও আমার লাইফে না আসলে হয়ত আমি নিজেকেই শেষ করে দিতাম।গুমড়ে গুমড়ে মরতাম।”
ভেবলই শিশির মাথা চুলকায়। আবারো রাতের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ পর বিরবির করে বললো,
-“তবে কি রাত নিজের তৃতীয় #শর্ত টাও পূরণ করে ফেললো?”
এদিকে শিশির অনেকক্ষণ যাবত তাকিয়ে থাকায় রাতও সেদিকে তাকায়। দেখতে পায় শিশির তাকেই দেখছে।রাত চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করে,
-“কি?”
শিশির না বোধক মাথা নাড়িয়ে হাসলো।রাত বুঝতে পারছে না যে শিশিরের হয়েছে টা কি।এমন অদ্ভুত বিহেভিয়ার কেন করছে!রাত নিজের মত খেয়ে উঠে গেলো। শিশির তার মাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“মা?তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
-“আচ্ছা আসছি।কেয়া?তোর কিছু লাগবে?”
শিশির কেয়ার মাথায় চাটি মেরে বললো,
-“এখন থেকে খেতে বসছিস?”
কেয়ার মুখ ভেংচি কেটে বললো,
-“হোস্টেলের খাবার খেতে খেতে আ’ম বোরড। কতদিন নিজের পছন্দমত খাই না৷ আজকে সব খেয়েই উঠব।”
শিশির বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
-“আচ্ছা খা।”
কেয়া মুচকি হাসলো।চৈতী বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“না আমার আর কিছু লাগবে না আম্মু।”
-“আচ্ছা।”
চৈতী বেগম নিজ রুমের দিকে পা বাড়ায়।শিশিরও পিছন পিছন তার মায়ের রুমে যায়। চৈতী বেগমকে বিছানায় বসিয়ে নিজে পাশে বসে বলতে লাগে,
-“মা!তোমাকে আমার একটা কথা বলার আছে।”
চৈতী বেগম মুখ টিপে হেসে বললেন,
-“আমি হয়তো কিছু টা আন্দাজ করতে পারছি।”
শিশির অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“বুঝতে পেরেছো?”
-“হ্যা বুঝতে পেরেছি।”(গালে হাত দিয়ে)
-“কি বুঝলে?”
-“রাতকে ভালোবাসিস!”
শিশিরের শরীরে শিরশির অনুভূতি হলো। সে রাতকে ভালোবাসে। সেটা তার মা বুঝতে পারছে।সে কেন পারছে না?তার কেন এত সময় লাগলো?শিশিরকে চুপ করে থাকতে দেখে চৈতী বেগম বলে উঠলেন,
-“শোন, রাতকে আমি তোর জন্য এনেছি।ওর বাবাকে #শর্ত দিয়ে এনেছি।”
-“কিসের #শর্ত?”(অবাক হয়ে)
-“সেসব বাদ দে। যেটা বলছিলাম।”
চৈতী বেগম কথাটা এড়িয়ে গেলেও শিশিরের মনে কথাটা দাগ কেটে রইলো। চৈতী বেগম আবারো বললেন,
-“রাতকে আমার তোর জন্য পারফেক্ট মনে হয়েছে বলেই এনেছি। সায়ানকে কিভাবে সামলাবে সেটা আমি ভাবিনি,ভেবেছি তোর কথা।কিন্তু ওকে দেখ!সায়ানকেও সামলাচ্ছে আর তোকেও। ওর মত মেয়ে হয়?তুই যে ওকে ভালোবেসে ফেলেছিস সেটা আমি বুঝতে পারছি। তুইও নিজের মনকে জিজ্ঞেস কর। উত্তর পাবি।”
শিশির নিজের মায়ের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনলো। তারপর মনে মনে ভাবলো,
-“রাতকে কি তবে বলে দেয়া উচিত আমার মনের কথা?”
-“রাতকে বলে দে নিজের মনের কথা শিশির। ভালো থাকবি ওর সাথে।”
শিশির মাথা নাড়ায়।চৈতী বেগম সেখান থেকে চলে গেলেন।শিশিরও মায়ের রুম থেকে বের হতে হতে ভাবলো,
-“আচ্ছা রাত কি আমাকে ভালোবাসে? ও যদি আমায় ভালো না বাসে তো?ওকে প্রপোজাল দেয়াটা কি উচিত হবে? যদি রিজেক্ট হই?বাট রাত তো আমার সাথেই থাকতে চায়। ও কেন আমায় রিজেক্ট করবে?”
ভাবতে ভাবতে শিশির নিজের সাথেই তর্ক করতে লাগে।দরজায় এসে কেয়াকে দেখতে পেয়ে কেয়ার মাথায় হাত দিয়ে বললো,
-“যা ঘুমিয়ে যা।”
-“অল দা বেস্ট ভাইয়া!”
-“কেন?”
-“রুমে গেলেই বুঝবি। “(চোখ টিপে)
শিশির কেয়ার কথাটা বুঝলো না।তাই নিজের মতই ঘরে এসে বেড রুমের দরজা খুললো।চারিদিকে অন্ধকার!শিশিরের ভ্রু কুঁচকে গেল। গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
-” রাত?”
কোনো সাড়াশব্দ নেই।শিশির আবারো ডাকলো,
-“রাত?তুমি কই?”
এবার লাইট টা জ্বলে উঠলো আর রাত সামনে থেকে শিশিরের দিকে একটা খেলনা বন্ধুক তাক করলো।আর সেখান থেকে প্রায় বিশ-ত্রিশটার মত তেলাপোকা শিশিরের শরীরে পড়লো। রাত তো হো হো করে হাসছে।এদিকে শিশির কোমড়ে হাত দিয়ে রাতের দিকে ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে আছে।রাতের হাসি বন্ধ হয়ে গেলো। বন্ধুক টা ফেলে বললো,
-“আপনি ভয় পাননি?”
-“এসব কি ছিল?”
শিশিরের ঠান্ডা গলায় রাত কিছুটা কেঁপে উঠলো। তবুও নিজেকে সামলে মুখ ঘুরিয়ে বললো,
-“লজ্জা করে না? তেলাপোকা দেখে ভয় পান?”
অমনি শিশির রাতের সামনে একটা তেলাপোকা ধরে বললো,
-“এসব জিনিসে আমি ভয় পেতাম। এখন পাই না।”
আচমকা এভাবে ধরায় রাত একটু ভয় পেলো। তবুও শিশিরের হাতটা সরিয়ে বললো,
-“আগে তো পেতেন!”
-“আমাকে এভাবে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে লাভ নাই রাত চৌধুরী। এসব ছোটখটো জিনিসে শিশির ভয় পায় না।”(হেসে)
রাত এদিকে রাগে দুঃখে কেয়াকে বকছে।তারমানে কেয়া তাকে মিথ্যা বলেছে।শিশির রাতের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো,
-“বায় দা ওয়ে রাত!আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা টাও এক প্রকার অপরাধ।”
-“অপরাধ!ক..কিসের অ..অপরাধ!”
শিশির রাতের দিকে এগুচ্ছে আর রাত আস্তে আস্তে পিছাচ্ছে। শিশির বাঁকা হেসে বললো,
-“বুঝতে পারছো না?”
-” ক..কি ব..বুঝবো?”
-“শাস্তি দেয়ার জন্যই এগুচ্ছি রাত। কাম অন!এটাও বুঝতে পারছো না?”
রাত চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,
-“কিসের শাস্তি!কোনো শাস্তি ফাস্তি নাই।”
-“কে বললো নাই? তোমার অপরাধ হয়েছে। আর এর শাস্তিও পাবে।”
বলেই শিশির রাতকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।রাত ঢোক গিলে শিশিরের দিকে তাকালো। শিশিরের চোখ আবারো রাতকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো।পলক পড়ছে না।রাত কি বলবে বুঝতেই পারছে না। কি হবে এখন তার সাথে? শিশিরকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেল!শিশির আস্তে আস্তে রাতের কাছে চলে এলো।কানের কাছে এসে নিম্ন স্বরে বললো,
-“আই লাভ ইউ রাত।”
রাতের সর্বাঙ্গে ভালো লাগার ঢেউ খেলে গেলো।খুশির জল আর মুখে হাসি নিয়ে তাকালো শিশিরের দিকে। শিশির রাতের কপালের চুলগুলো কানে গুঁজে দিলো মিষ্টি হেসে।
চলবে…
(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। একটা সুন্দর মন্তব্য উপহার দিয়েন🙂)