শর্ত পর্ব-১৭

0
569

#শর্ত
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১৭

ভোর হচ্ছে! চারিদিক থেকে আজানের শব্দ ভেসে আসছে।ভোরের আলো ফুটছে। রাত আস্তে আস্তে চোখ খুলে নিজেকে শিশিরের বুকে আবিষ্কার করলো!হাই তুলতে তুলতে চারিদিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো যে গতকাল রাতে তারা এখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিল।রাত শিশিরকে ডাকতে আরম্ভ করলো,

-“স্যার?শিশির স্যার?উঠুন!”

-“রাত ঘুমাতে দেও তো।”

বলেই শিশির আবার ওপাশে ফিরলো। কিন্তু নিচে বালিশ না থাকায় মৃদু গলায় বললো,

-“আউ”

-“ও স্যার!উঠুনননন।”

-“রাত চেঁচিয়ো না তো। এমনিই সারারাত ঘুমাতে পারি নি।”

বলেই শিশির রাতের হাতটা টেনে নিজের মাথার নিচে দিয়ে শুয়ে পড়লো। রাত দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

-“শিশির চৌধুরী!এটা আপনার বিছানা না। এটা বাড়ির ছাদ!”

শিশির এবার পিটপিট করে চোখ খুললো।আঁড় মোড়া ভেঙে উঠে বসলো। রাত দাঁড়িয়ে বললো,

-“আপনি আসতে থাকুন,আমি গিয়ে নামাজ পড়ি।”

শিশির হাই তুলতে তুলতে বললো,

-“আসছি।”

-“না আসলেও সমস্যা নাই। এখানেই ঘুমিয়ে যান, ভূতে এসে ধাক্কা মেরে ফেলে দিক।”

-“সারারাত চলে গেলো কোনো ভূত এলো না আর তুমি আসছো এখন ভূত দেখাতে!”(হেসে)

রাত আর কিছু না বলে মুখ ভেংচি কেটে চলে গেলো।শিশিরও কিছুক্ষণ ছাদে হেঁটে নিচে নেমে এলো। ফ্ল্যাটে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো।মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।তারও আল্লাহ তায়ালাকে শুকরিয়া জানাতে হবে কারণ তিনিই তো রাতকে শিশিরের কাছে এনে দিলেন।মিতালির মত এত বড় ঝামেলাটাকে সরিয়ে দিলেন।
নামাজ শেষ করে রাত বারান্দার জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর ভাবছে,

-“আচ্ছা,মিতালি তো চলে গেছিলো। তার আবার ফেরার প্রয়োজন হলো কেন?এর কি কোনো কারণ হতে পারে?মিতালিকে ছেড়ে দিয়ে ভুল করলাম না তো?”

রাত ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ফুলের টবগুলোতে পানি দিতে দিতে আবারো ভাবলো,

-“মিতালির ফিরে আসার নিশ্চয়ই কোনো কারণ রয়েছে। নয়ত এমন পাগলামি সে কেন করবে?সাতদিনে কি করতে চাইছিল?আন্টি কি কিছু বলতে পারেন?”

ভাবতে ভাবতে রাত অনুভব করলো তার কাঁধে কারোর গরম নিঃশ্বাস। রাত চোখ বন্ধ করে মুচকি হেসে বললো,

-“স্যার!”

-“কিভাবে বুঝলে?”

বলেই শিশির রাতের সামনে এসে দাঁড়ায়। রাত গাছে পানি দিতে দিতে বলে,

-“বাহ রে! আপনার নিঃশ্বাস পড়ছিলো!”

-“কিন্তু এটা তো মা ও হতে পারত!”

-“হতে পারত কিন্তু মা সায়ানকে রেখে কখনোই আসবেন না। আর আসলেও তো সায়ানের মুখের ইংলিশ শব্দেও বুঝে যেতাম।”

বলেই রাত হো হো করে হাসতে লাগলো।শিশিরও হাসতে হাসতে বললো,

-“আসলেই। বাচ্চারা এভাবেই কথা বলে।”

রাত কিছু বলতে যাবে এমন সময় দরজায় নক করার শব্দ হলো। রাত মুচকি হেসে বললো,

-“আমি দেখছি..”

শিশির সায় দিলো। রাত দরজা খুলতেই সায়ানকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা চৈতী বেগমকে দেখতে পেলো।সায়ানকে কাঁদতে দেখে রাত কোলে নিতে নিতে বললো,

-“কাঁদছিল?”

-“আর বলিস না,সারারাত ঘুমিয়েছে কোনো বিরক্ত করেনি। সকালে উঠতেই কান্না আরম্ভ। হয়ত খিদে পেয়েছে।”

-“হ্যা। আমি ফিডার বানিয়ে দিচ্ছি।তুমি ভিতরে আসো।”

বলেই রাত সায়ানকে শুইয়ে দিলো।চৈতী বেগম সায়ানের পাশে বসে বললো,

-“আর কত কাঁদবি? তুই একটা ছিঁচকাদুনে হবি।”

শিশির বারান্দা থেকে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো,

-“একদম ঠিক বলেছো মা। রাতের মত ছিঁচকাদুনে হবে।”

রাত ফিডারটা সায়ানের মুখে দিয়ে বললো,

-” একদম না!আর আমি ছিঁচকাদুনে না।”

শিশির হেসে উঠলো। চৈতী বেগম বললেন,

-“আচ্ছা আমি তোদের জন্যে নাস্তা রেডি করি। আজকে আবার কেয়া আসবে।”

রাত হেসে সায় জানায়।সায়ানকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়।এদিকে শিশির লেপটপ নিয়ে বসে পড়লো।

____
কলেজে পা রাখতেই রিসাব দৌড়ে এলো রাতের কাছে।যেন সে গেটের কাছে রাতের জন্যেই অপেক্ষা করছিলো। রাত রিসাব কে দেখে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে আনার এগুতে যাবে এমন সময় রিসাব পিছন থেকে বলে উঠলো,

-“রাত শোন!”

রাত পিছনে ফিরে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,

-“জ্বী!”

-“রাত আ’ম রিয়ালি সরি।”

রাত ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।রিসাব মাথা নিচু করে বলতে লাগে,

-“আমি আসলে জানতাম না যে তুই বিবাহিত। হ্যা তুই অনেকবার বলতে গেছিস কিন্তু আমিই শুনিনি। আসলে আমি বুঝতে পারিনি। কি বলবো তোকে এখনোও বুঝতে পারছি না। কিভাবে যে মাফ চাইবো..নির্লজ্জের মত কি করলাম গতকাল!”

-“সত্যি বলতে গতকাল নিজের রাগটা কন্ট্রোল না করলে তুই চড় খেতি।”(মুচকি হেসে)

রিসাব মুখ তুলে রাতের দিকে তাকায়। রাত হালকা হেসে বললো,

-“একজনের প্রতি আরেকজনের অনুভূতি আসতে পারে,এটা স্বাভাবিক।একজনকে তোর ভালো লাগতেই পারে।কিন্তু আমি শিশির স্যারকেই ভালোবাসি।”

বলেই থামলো রাত। কত সহজে বলে দিলো। সে আসলেই ভালোবাসে শিশিরকে?রাতের বুকটা কাঁপছে।রিসাব বলতে লাগে,

-“আর শিশির স্যার?”

-“আমি এটা নিয়ে আর কথা বাড়াতে চাই না।”

বলেই রাত ক্লাসরুমের দিকে পা বাড়ায়। রিসাবও রাতের পিছনে পিছনে পা বাড়ায়। কারণ সে রাতের বন্ধু হয়ে থাকতে চায়। সে এই বন্ধুত্বটাকে অন্তত নষ্ট হতে দিতে চায় না। তাই রাতের কাছ থেকে তাকে মাফ চাইতেই হবে। যে করেই হোক।
কলেজ শেষ করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বসায় ফেরে রাত। পাশে কেয়া।কেয়া রাতকে আনতে গেছিলো। এটার প্রয়োজন না হলেও সে চেয়েছিল রাতকে একটু সারপ্রাইজ করতে। রাত ধপ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই কেয়া বলতে লাগে,

-“ভাবী?”

-“কি!”

-“ও ভাবী!”

বলেই কেয়া মিটমিট করে হাসতে লাগে। রাত একটা ভ্রু উঁচু করে বললো,

-“কি? ”

-“তোমার পাশের ওই ছেলেটা কে ছিল গো?”

রাত এতক্ষণে ঘাড়টা একটু উঁচু করেছিল। সেটা আবারো এলিয়ে দিয়ে বললো,

-“ওর নাম শিহাব। পাশের যে মেয়েটা?ওটা নিপা, ওরা দুজন কাজিন।”

-“ওহ আচ্ছা।”

কেয়ার মুখের কোনো সেড এক্সপ্রেশন না দেখে রাত অবাক হয়ে বললো,

-“কি ব্যাপার?তোমার মন খারাপ হলো না?”

-“মন খারাপ কেন হবে ভাবী?”

-“আমি তো ভাবলাম তুমি শিহাবের উপর ক্রাশ।”(আড়চোখে তাকিয়ে)

-“ওটা না। আরেকটা যে ছিল আরেক পাশে। শিহাবকে তো চিনছিই। নিপার পাশে যেটা ছিল।ওটা না?”

-“হ্যা।আরেক পাশে যেটা ছিলো ওটা রিসাব।”

-“হ্যা হ্যা ওটাই।”

বলেই কেয়া লাজুক লাজিক হাসতে লাগলো। রাত মুখ টিপে হেসে বললো,

-“পছন্দ হয়েছে নাকি?”

কেয়া বারকয়েক মাথা নাড়ায়।কিন্তু মুখ খুলে না। নিচের দিকে তাকিয়ে রয়। রাত দাঁত কেলিয়ে বললো,

-“নাম্বার আছে আমার কাছে।”

কেয়ার চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে গেলো।রাতের পাশে বসে হাত নিয়ে বললো,

-” ভাবী গো ভাবী,ও আমার ভাবী!”

-“বলো গো ননদিনী!”

বলেই রাত হো হো করে হাসতে লাগে। কেয়া রাতের হাত দেখতে দেখতে বললো,

-“নাম্বারটা দাও না গো!এই প্রথম একজনরে দেখে ক্রাশ খাইছি।”

-“দিতে পারি। বাট এক শর্তে।”

-“কি শর্ত। তোমার কাছ থেকে নাম্বার নিতেও শর্ত?”

-“ইয়াহ কেয়া বেবি। লাগলে বলো নয়ত ফুটো।”

-” না না রাজি আমি।”

-” শিশির স্যার ভয় পান এমন একটা জিনিসের নাম বলতে হবে।”

-“ওরে বাপরে।”

বলেই কেয়া লাফিয়ে উঠে যেতে লাগলো।রাত পিছন থেকে বললো,

-“কি হলো? বলবে না?”

-” না বাবা। ভাইয়া জানলে আমাকে মেরেই ফেলবে।”

রাত নিজের ফোনটা উঁচু করে বললো,

-“নাম্বার?”

কেয়ার চেহারাটা দেখার মত হয়েছে। শেষমেষ সে কাঁদো কাঁদো গলায় আঙুল উঁচিয়ে বললো,

-“তাহলে ভাইয়াকে কিন্তু বলবা না যে আমি বলে দিছি।”

-“সেটা পরেরটা পরে বুঝা যাবে!”

-“না না না।তাহলে বলব না।”

বলেই কেয়া যেতে লাগলো।রাত হেসে বললো,

-“আচ্ছা যাও বলব না৷ এবার তো বলো।”

-“ভাইয়া আড়শোলা ভীষণ ভয় পায়।”

এটা শুনেই রাতের হাসি আর দেখে কে!রাত হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাওয়ার মত অবস্থা। কেয়া মুখ বাঁকিয়ে বললো,

-“এভাবে হেসো না।এর কারণও আছে।”

-“হোহহ!কি কারণ?”(হাঁপাতে হাঁপাতে)

-” এক জাতীয় আড়শোলা আছে না যেগুলো চুল খেয়ে ফেলে?তো ওমন একটা আড়শোলা ভাইয়ার অর্ধেক চুল খেয়ে ফেলেছিল রাতে ঘুমানোর পর। তারপর থেকে ভয় পায়।এটা তো ছোটবেলার কাহিনী। মানে ছোটবেলায় ভয় পেত।বাট এখনো ভয়টা আছে কিনা জানি না। এখন নিজেই যে রাগী। অবশ্য হঠাৎ সামনে পড়লে যেকোনো নির্ভীকও ভয় পাবে।”

রাত শয়তানী হাসলো। তারপর দাঁত কেলিয়ে বললো,

-“দেখাচ্ছি মজা!প্রেমে নাকি পড়তি না?”

চলবে…

(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। একটা সুন্দর মন্তব্য উপহার দিয়েন☺️💌)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে