#লুকানো_অনুভূতি
#পর্বঃ১৬
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
গাড়ি এসে থামলো বাসার সামনে। আমাকে নিয়ে রুমে চলে গেলো কোনো কথা না বলে। রুমে যেয়ে শান্ত কন্ঠে বললো কবে থেকে ডিস্টার্ব করে ও তোমাকে?
তার কন্ঠ শুয়ে ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসলো। গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না আমার।
আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি, চুপ থাকতে বলি নি ধমকে বলে উঠলো তিনি।
কেঁপে উঠলাম আমি তার ধমকে। অনেক কষ্টে গলা দিয়ে কথা বের করে তুতলিয়ে বললাম এ..এক সপ্তাহ থ…থে..কে।
এক সপ্তাহ থেকে ডিস্টার্ব করছে আমাকে জানাও নি কেনো?
ভ..ভয়ে যানা..ই নি।
এবার তিনি আরো জোরে ধমকে বললো আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক যে ভয়ে এই কথাটা জানাতে পারো নি?
এবার ভয়ে আমার মাথা ঘুরছে কি বলবো কি করবো কিছুই খুজে পাচ্ছি না।
হুর আমার কথার এন্সার দাও চুপ থেকো না এমনি মাথা গরম আছে।
আ..আমার ভুল হয়ে গেছে আ..র এরকম ক..করবো না।
নেক্সট টাইম যেনো না দেখি আমার থেকে কিছু লুকাতে তাহলে খুব খারাপ হবে এই বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো তিনি।
তিনি যেতে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমার একটা ভুলের জন্য লোকটা কতোটা রেগে গেলো এমন ভুল আর করা যাবে না। আবার খারাপ ও লাগছে একটা ভুলের জন্য এতো বকা লাগে।
কলেজ আর আজকে করা হলো না। নিচে চলে গেলাম যেয়ে দেখি ফুপি রান্না করছে।
আমাকে দেখে বললো হ্যারে কি হয়েছে? রোয়েন রাগারাগি করলো কেনো?
ফুপিকে সব খুলে বললাম, ফুপি সব শুনে বললো থাক মা মন খারাপ করিস না। আমার ছেলেটা এমনি অল্পতে ক্ষেপে যায়।
থাক বাদ দেও, চলো আজকে তোমাকে রান্না করতে সাহায্য করি আমি।
তোর সাহায্য করা লাগবে না। আমার কাজ প্রায় শেষের দিকে, তুই যেয়ে রেস্ট কর।
আমি জোর করে ফুপিকে কাজে সাহায্য করলাম। সব রান্না কমপ্লিট হয়ে গেলে আমরা চলে গেলাম রুমে। রুমে যেয়ে সাওয়ার নিয়ে বের হলাম। রিহু নেই আজকে ভালো লাগছে না, কি করবো খুজে পাচ্ছি না তাই ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘুম ভাঙলো দুপুরের দিকে রিহুর ডাকে।
আমি উঠে চোখমুখে পানি দিয়ে আসলাম। রিহু বললো ভাইয়া কি করেছিলো তোকে নিয়ে এসে?
তোর ভাই রাগ ছাড়া কি আর করতে পারে। ধমক দিতে দিতে আমার কান বয়রা করে দিয়েছে।
আমার কথা শুনে রিহু হেসে ফেললো। আমি ওর দিকে চোখ গরম করে তাকালাম। তুই হাসছিস ওইদিকে আমার ভয়ে কি অবস্থা হয়েছে তুই জানিস।
আচ্ছা বাবা সরি আর হাসবো না এবার নিচে চল আম্মু খেতে ডাকছে।
———————-
কেটে গেলো কয়েকটা দিন মনটা বিষাদে ভোরে গেছে। রাতের আকাশে দিকে তাকিয়ে চুপচাপ বসে আছি, কিছু ভালো লাগছে না।
সেই দিনের পরে রোয়েন আর আমার সাথে ঠিক মতো কথা বলে নি। তার নিশ্চুপ থাকাটা আমি মেনে নিতে পারছি না। তার এই নিশ্চুপ থাকায় আমি বুঝতে পেরেছি লোকটাকে কতো ভালোবেসে ফেলেছি আমি। ভালোবাসার মানুষ নিশ্চুপ থাকলে বুঝি এতো কষ্ট লাগে? আমার কিছু ভালো লাগছে না, চোখ থেকে গড়িয়ে দু ফোটা পানি পড়লো। চোখের পানি মুছে রুমে গেলাম। রুমে যেয়ে দেখি রোয়েন ল্যাপটপে কাজ করছে। আমি যেয়ে তার পাশে বসলাম।
শুনছেন?
নির্লিপ্ত ভাবে বললো হুম।
আমার সাথে কাথা বলবেন না?
কি বলবো?
এরকম কেন করছেন? আমি মানছি আমি ভুল করেছি তার জন্য তো ক্ষমা চাচ্ছি আমি।
আমি তোমার কেউ হই নাকি যে আমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছো? আমি যদি কেউ হতাম এই তাহলে কিছু হলে সাথে সাথে আমাকে জানাতে।
তার কথার পৃষ্ঠে কি বলবো খুজে পেলাম না। তার কথায় স্পষ্ট অভিমান বুঝা যাচ্ছে। আমার ওতো খারাপ লাগছে তার এমন বিহেভিয়ারে। আর কোনো কথা বললাম না নিরবে যেয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম না খেয়ে।
একটু পরে রিহু এসে দরজায় নক করলো।
রোয়েন যেয়ে দরজা খুলে দিলো।
হুর কোথায় ভাইয়া?
ঘুমাচ্ছে।
রিহু অবাক কন্ঠে বললো এতো তারাতাড়ি?
হুম।
খাবে না তোমরা? আম্মু ডাকছে তো।
না। আম্মুকে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তে বল।
রিহু আর কথা বাড়ালো না, বুঝেছে হুর আর তার ভাইয়ের ভিতরে কিছু একটা হয়েছে তাই চুপচাপ চলে গেলো।
হুর যেতেই রোয়েন দরজা আটকে কিছু একটা করতে লাগলো।
————-
রাত বাজে ১১:৫৫ মিনিট। রোয়েন এবার হুরের কাছে এগিয়ে গেলো। কপালে একটা চুমু খেয়ে আলতো করে হুরকে ডাকলো।
হুর ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো কি হয়েছে ডাকছেন কেনো?
রোয়েন কিছু বললো না হুরকে আস্তে করে ধরে বসালো।
চারে দিকে অন্ধকার শুধু চদের আলোতে রুমটা হালকা আলোকিত, হুর বললো কি হলো কথা বলছেন না কেনো? উঠে বসালেন কেনো আমাকে?
রোয়েন কোনো কথা বললো না। ঘড়ির কাটা ১২ টায় যেয়ে ঠকতেই রোয়ে হুরের দুগালে হাত রেখে বলে উঠলো হ্যাপি বার্থডে হুর পরী।
হুরের ঘুম ছুটে পালালো আজকে ও বার্থডে? কত তারিখ আজকে? তারিখ মনে করতেই খেয়াল আসলো আজকে ওর জন্মদিন। অবাক চোখে রোয়েনের দিকে তাকিয়ে রইলো। ও নিজের জন্মদিন নিজে ভুলে গেছে আর এই মানুষটা তা মনে রেখেছে।
রোয়েন বললো কি হলো চুপ কেনো এতো।
আপনার মনে ছিলো আজকের আমার জন্মদিন? অবাক কন্ঠে বললাম।
তোমার কি মনে হয় আমি ভুলে যাবো? আমার হুর পরীর জন্মদিন আর তা আমি মনে রাখবো না এটা কি হয়?
তার কথা শুনে অবাকের উপরে অবাক হচ্ছি। তখন মনে পরলো সেতো আমার সাথে রাগ করে আছে তাহলে এতো সুন্দর করে কথা বলছে কি মনে করে?
আপনি তো আমার উপরে রাগ করে আছেন তাহলে এখন কথা বলছেন কেনো? আমি নাকি আপনার কেউ না। অভিমান নিয়ে বললাম।
কে বলেছে তুমি আমার কেউ না, তুমি আমার সব। তখন রাগ করাটা ছিলো তো অভিনয় যাতে তোমাকে রাতে সারপ্রাইজ দিতে পারি। তবে প্রথমে তোমার উপরে খুব রাগ হয়েছিল কেনো আমাকে প্রথমে সব ঘটনা খুলে বললে না কিন্তু পরে তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছিলে এই জন্য কোনো রাগ ছিলো না।
তারমানে আপনি অভিনয় করেছিলন? কপাট রাগ দেখিয়ে বললাম।
দুষ্ট হাসি দিয়ে রোয়েন বললো তা নয়তো কি? আমার হুর পরীর উপর আমি রাগ করে থাকতে পারি নাকি বলেই জড়িয়ে ধরলো।
আমার সাথে কথা বলবেন না আপনি ছাড়ুন আমাকে। আপনি জানেন আপনার বিহেভিয়ারে আমার কতটা খারাপ লেগেছিলো।
সরি আমার মিহি পরী, আর এরকম করবো না প্রমিজ। রাগ করে না বউ।
তার মুখে মিহি ডাক আর বউ ডাক শুমে থমকে গেলাম আমি। এই প্রথম বউ বলে ডাকলো তিনি। তার উপর মিহি বলে আমাকে তেমন কেউ ডাকে না। তার মুখে মিহি ডাক শুনে অন্য রকম লাগলো।
কি ভাবছো মিহি পরী?
এই নামেতো কেউ আমাকে ডাকে না। আপনার মুখে এই নাম শুনে অন্য রকম লাগলো।
এই নামটা শুধু আমার জন্য বুঝেলে তাই কেউ ডাকে না। এবার উঠতো কাজ আছে।
আমি অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে বললাম এই মাঝ রাতে কি কাজ আছে?
রোয়েন আমার গালে টুক করে একটা চুমু খেয়ে আমাকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। তারপরে হাতে একটা শপিং ব্যাগ বাড়িয়ে দিয়ে বললো যাও এটা পরে আসো।
কি আছে এটায়?
কোনো কথা না যা বলছি করো এই বলে হুরকে ধরে নিয়ে ওয়াশরুমের ঢুকিয়ে দিলো।
হুর ওয়াশরুমের ঢুকে ব্যাগ খুলে দেখে হোয়াইট কালারের উপরে ব্লাক স্টোনের কাজ করা খুব সুন্দর একটা জরজেট শাড়ি। শাড়ির সাথে প্রয়োজনীয় সব কিছু ছিলো।
আমি আগে থেকেই শাড়ি পরতে জানি তাই আজকে শাড়ি পরতে বেশি কষ্ট লাগলো না। শাড়ি পরে সব ঠিকঠাক করে ওয়াশরুমের দরজা খুলে বাহিরে আসতেই আমার চোখ ছানাবড়া, এ কি দেখছি আমি? ভুল দেখছি নাকি এ ভেবে চোখ হাত দিয়ে কচলে আবার সামনে তাকালাম। নাহ আবারো একি জিনিস দেখছি তার মানে ভুল দেখছি না সব সত্যি?
চলবে?
#লুকানো_অনুভূতি
#পর্বঃ১৭
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি পুরো রুম বেলুন আর গোলাপ ফুল দিয়ে সাজানো। ক্যান্ডেল লাইটের আলোতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো পুরো রুম। একদম নিখুঁত ভাবে রুমটা সাজানো হয়েছে। আমার চোখ আটকে গেলো পুরো রুমে। রোয়েন এতো সুন্দর সারপ্রাইজ দিবে কল্পনাও করি নি। তখন ঘুম থেকে উঠে এগুলো কিছু খেয়াল করি নি। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুরো রুমে চোখ বুলাচ্ছিলাম তখন রোয়েন এসে আমার হাত ধরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দিলো।
পছন্দ হয়েছে?
খুব পছন্দ হয়েছে। আপনি কখন করলেন এইসব?
তুমি যখন ঘুমাচ্ছিলে তখন।
আপনি এতো কিছু করলেন আমি টেরও পরেলাম না।
তিনি আমার নাক টেনে দিয়ে বললো তুমি ঘুমিয়ে পড়লে আর কোনো হুস থাকে নাকি তোমার?
তার কথায় চুপ হয়ে গেলাম, আসলেই ঘুমালে আমার কোনো হুস থাকে না।
আচ্ছা একটা কথা বলি?
হুম একটা কেনো হাজার টা বলো।
আপনার কি ব্লাক কালার বেশি পছন্দ? কারণ দেখেছি আপনি বেশিরভাগ সময় ব্লাক কালার পোশাক পরেন আমাকেও যা দিন বেশিটাই ব্লাক থাকে।
ব্লাক আমার আসলেই অনেক পছন্দ কারন তোমার প্রতি আমার প্রথম অনুভূতি টাই তৈরি হয়েছিলো তোমাকে ব্লাক ড্রেস পরা দেখে।
মানে?
একটু পরে বলছি আগে পুরোপুরি রেডি হও। এই বলে ড্রেসিং টেবিলের সামনে তাকাতে বললে। সামনে তাকাতে দেখি শাড়ির সাথে ম্যাচিং করা ব্লাক জুয়েলারি।
আজকে আমি সাজিয়ে দেই তোমাকে?
তার কথা শুনে মুচকি হেসে সম্মতি দিলাম।
তিনিও মুচকি হেসে আমাকে জুয়েলারি পরিয়ে দিলো। দু হাত ভরে ব্লাক চুরি পরিয়ে দিলো। আয়নার দিকে তাকিয়ে খেয়াল করলাম রোয়েনও আমার শাড়ির সাথে মিল করে ব্লাক হোয়াইট পাঞ্জাবি পরেছে। খুব সুন্দর লাগছে আজকে তাকে।
আমার ভাবনার মাঝে রোয়েন বলে উঠলো হয়ে গেছে এবার বাকি গুলো তুমি কমপ্লিট করো ওগিলো আমি পারি না।
বাকি সাজটা আমি করলাম। বেশি সাজলাম না ঠোঁটে লাল কালার লিপস্টিক পরলাম আর চুল গুলো একটু আচরে ছেড়ে দিলাম।
রোয়েন রিহুর দিকে তাকিয়ে ঢোক গিললো। নিজেকে কন্ট্রোল করা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে। হুরকে কোনো অংশে পরীর থেকে কম লাগছে না একদম পুতুলের মত লাগছে।
রোয়েন হুরকে দাঁড় করিয়ে ওর সামনে কেক নিয়ে আসলো। কেকটা ছোট টেবিলের উপরে রেখে দিলো। কেকের ভিতরে লেখা ছিলো হ্যাপি বার্থডে মিহি পরী। মুচকি হাসলো হুর।
ক্যান্ডেল লাইটের আলোতে পুরো রুম উজ্জ্বল হয়ে আছে খুব মনোরম একটা পরিবেশ।
রোয়েন পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা ডায়মন্ডে ফিঙ্গার রিং বের করে হুরের সামনে হাটু গেঁড়ে বসলো। রিং টা হুরের সামনে ধরে বলা শুরু করলো..
আজ আমার মনের কথা তোমাকে জানাতে চাই হুর পরী। ঠিক আজ থেকে ৪ বছর আগে এই দিনটি তুমি আমার মনে যায়গা করে নিয়েছো। ঠিক এই দিনটায় তোমার বার্থডে সেলিব্রেট করা হয়েছিলো। তুমি ব্লাক কালার ড্রেস পরে উপর থেকে নিচে নামছিলে আস্তে করে ছোট ছোট পায়ে হেটে। সেদিন তোমাকে দেখে আমি থমকে যাই পরক্ষণে ভাবলাম বোন হও তুমি আমার অন্য নজরে দেখা ঠিক হবে না। কিন্তু সেই দিনের পরে আমি নিজেকে অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু আমার মন পরে রইলো তোমার কাছে। আমি তোমাকে বোনের নজরে দেখতে পারি নি।বুকের ভিতরে তোমাকে জায়গা দিয়ে ফেললাম কিন্তু তোমার বয়স ছিলো কম, সবে ক্লাস নাইনে উঠেছো তাই কখনো তোমার সামনে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করি নি। অপেক্ষা করছিলাম তোমার বড় হওয়ার। শুধু ভাবতাম কবে তুমি বড় হবে, কবে আমার #লুকানো_অনুভূতি বুঝবে। আমি আর নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রাখতে পারছি না হুর বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। দিন দিন তুমি আমাকে তোমার প্রতি অনেক বেশি দূর্বল করে দিচ্ছ। আমি নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারছি না রিহু পরী, ভালোবাসবে আমায়?
হুরের চোখে পানি চলে আসলো সেটা আনন্দে অশ্রু। লোকটা আমাকে এতো ভালোবাসে আমি টের ও পেলাম না। অশ্রু টলটল চোখে তার দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে সম্মতি দিলাম। রোয়েন খুশি হয়ে হুরের হাতে রিং টা পরিয়ে দিলো। হুর রোয়েনকে দাঁড় করিয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো। রোয়েন ও পরম স্নেহে হুরকে আগলে নিলো।
আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি রোয়েন। এতো দিন আমি বুঝতে না পারলেও এই কয়দিনে আপনার নিশ্চুপতা আমাকে জানিয়ে দিয়েছে আমি আপনাকে ঠিক কতটা ভালোবেসে ফেলেছি।
রোয়েন হুরের মাথাটা উঠিয়ে চোখে পানি মুছে দিলো। আজকের এ দিনে কোনো কান্না না, চলো কেক টা কাটা যাক। এ বলে হুরের হাতে কেকের ছুরি দিয়ে ওর হাতের উপরে রোয়েন নিজের হাত রাখলো। দুজন মিলে কেক কাটলো। হুর কেক কেটে রোয়েনকে খাইয়ে দিলো, রোয়েন ও হুরকে খাইয়ে দিলো।
একটু কেক হুরের ঠোঁটের কোনে লেগে ছিলো, রোয়েন নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো হুরের ঠোঁটে। হারিয়ে গেলো আজ হুরের মাঝে। কেটে গেলো আজ ওদের একটি ভালোবাসাময় রাত।
——————–
ফজরের আজানের সময় হুরের ঘুম ভেঙে গেলো। রোয়েন ওকে ঝাপটে ধরে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে। লজ্জায় গাল লাল হয়ে গেলো হুরের, রাতের কথা মনে হতেই। পরক্ষণে হুর রোয়েন কে আস্তে করে সরিয়ে ওয়াশরুমের চলে গেলো।গোসল করে এসে রোয়েনের কাছে গেলো ডাকবে কি ডাকবে না দ্বিধায় ভুগতে লাগলো। ডাকতে লজ্জা লাগছে খুব, লোকটার সামনে যাবে কিভাবে ও। আস্তে ধিরে ডেকে ফেললো, রোয়েন চোখ খুলতে হুর বললো আজান দিয়েছে নামাজ পড়ার জন্য ডাকলাম এই বলে এসে পরতে নিলাম লজ্জায় তার সামনে থাকতে পারলাম না।
রোয়েন হুরে হাত ধরে টান দিয়ে ওর উপরে ফলে দিলো হুর লজ্জায় চোখমুখ খিচে বন্ধ করে ফললো। রোয়েন হুরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছু সময়, পরে হুরকে সহজ করার জন্য বললো রিলাক্স এতো সরম পাওয়ার কি হলো আমিতো তোমার হাসবেন্ড অন্য কেউ না।
রোয়েনের কথা শুনে হুর আস্তে করে চোখ খুললো। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো উঠেন নামাজের সময় চলে যাচ্ছে।
হুরের কান্ড দেখে মুচকি হাসলো রোয়েন। হুরের ঠোঁটে আলতে করে ঠোঁট ছুয়ে বললো একটু ওয়েট করো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি এক সাথে নামাজ পড়বো।
হুর মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।
রোয়েন চলে গেলো ওয়াশরুমে। এসে এক সাথে নামাজ পড়লো দুজনে। তারপর আবার যেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো দুজন।
ঘুম ভাঙলো ৯ টার দিকে। পাশে তাকিয়ে দেখি রোয়েন নেই হয়তো উঠে গেছে।
আস্তে ধীরে নিচে নেমে আসালাম। নিচে এসে অবাকের থেকেও অবাক হলাম কারন নিচে আব্বু আম্মু মানে আমাদের বাসার সবাই আছে। সবাই এক সাথে গল্প করছে। আমি নিচে যেতেই সবাই আমাকে এক সাথে বলে উঠলো শুভ জন্মদিন হুর পরী। এতখনে বুঝলাম সবার এখানে আসার কারণ। আমি যেয়ে আম্মুর পাশে বসে আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম। সবার সাথে টুকিটাকি কথা বললাম। খুশিতে মনটা ভরে উঠলো সবাইকে এক সাথে পেয়ে।
সবাই মিলে কিছুখন আড্ডা দিলাম তারপর ফুপি,আম্মুরা চলে গেলো কিচেনে আমার পছন্দের খাবার রান্না করতে।
আমি আর রিহু চলে গেলাম রুমে। আব্বুরা বসে গল্প করতে লাগলো।
রুমে যেয়ে রিহু রুমটা ভালো করে দেখে বললো ভাইয়া কালকে তোকে সারপ্রাইজ দিয়েছে?
আমি লজ্জামাখা মুখে ছোট করে বললাম হুম।
রিহু মুখটিপে হাসলো, আমার রগচটা গম্ভীর ভাই অবশেষে রোমান্টিক হলো।
রিহুর কথায় লজ্জা আরো কয়েক গুন বেড়ে গেলো। হুরের অবস্থা দেখে রিহু হেসে ফেললো। হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না আমিতো আর অন্য কেউ না তোর বেস্টু এই।
এভাবেই আজকে দিনটা অনেক ভালো কাটলো সবাই গল্পগুজব হাসি আনন্দে খুব ভালো কাটলো। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করার পর সবাই একটু রেস্ট নিতে যে যার রুমে গেলো।
এইদিকে ইয়াদ রুমে না যেয়ে রিহুকে নিয়ে ছাঁদে চলে গেলো।
ইয়াদ আমাদের এখন আলাদা কথা বলা ঠিক হবে না বাসায় সবাই আছে। কেউ দেখে ফেলবে তো।
ইয়াদ মজা করে বললো দেখুক তাতে ভালোই হবে তারাতাড়ি তোমাকে পেয়ে যাবো।
সরো মজা করো না আমি সিরিয়াস।
আরে বাবা কেউ দেখবে না সবাই এখন রেস্ট করছে এই বলে রিহুর হাত ধরে দোলনায় যেয়ে বসলো।
কিন্তু ভাগ্য খারাপ থাকলে যা হয় আরকি তখনেই ছাদে আসলো হিরা বেগম আর ইয়াসমিন বেগাম। তারা একটা কাজে ছাঁদে এসেছিলো কিন্তু ভাবতে পরে নি ছাঁদে এসে এমন কিছু দেখবে। দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে গেলো তারা দু’জনে। ইয়াদ হুরের হাত ধরা আর রিহুর মাথাটা ইয়াদের কাধে এসব দেখে থমকে গেলো তারা। তখন হিরা বেগম রেগে বলে উঠলো রিহু এখানে কি হচ্ছে?
রিহুর কলিজা কেঁপে উঠল মায়ের কন্ঠ শুনে। ছিটকে ইয়াদের থেকে সরে যেয়ে পিছে তাকিয়ে দেখলো ওর মা আর মামি দাঁড়িয়ে আছে ওদের দিকে গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে থেকে।
রিহু কি কেরবে খুজে পেলো না ভয়ে কাঁপতে লাগলো এখন কি হবে।
আম্মু আ…আসলে আর কিছু বলতে পারলো না কি বলবে খুজে পলো না।
গম্ভীর কন্ঠে বললো হুম বলো কি আসলে?
ইয়াসমিন বেগম এসে ইয়াদকে বললো তোমাদের ভিতর কোনো সম্পর্ক আছে?
ইয়াদ মাথা নিচু করে বললো আম্মু আমি ওকে ভালোবাসি।
ইয়াসমিন বেগম রেগে ইয়াদের গালে থাপ্পর মেরে বসলো।
লজ্জা করে না তোমার এই কথা বলতে? রিহু তোমার বোন হয়।
হিরা বেগম বললো ভাবি গায় হাত দিও না, যা করার ওদের বাবারা ডিসিশন নিবে। নিচে চলো তোমরা এ বলে ওদের নিচে নিয়ে গেলো।
চলবে?