#লুকানো_অনুভূতি
#পর্বঃ১
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর
আজ আমার কলেজের প্রথম দিন। আমি কলেজের গেটের সামনে দারিয়ে আমার বেস্টুর জন্য অপেক্ষা করছি। আজ কলেজের প্রথম দিন, নতুন যায়গা তাই অনেক ভয় লাগছে। এতো সময় ধরে আমার বেস্টুর জন্য অপেক্ষা করছি ঐদিকে তার আসার নামগন্ধও নেই। ওর আসার আগে পযন্ত চলেন আমার পরিচয় দেওয়া যাক……
আমি মিহি ইসলাম হুর, সবাই আমাকে হুর বলেই ডাকে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান আমি। আমার বাবা হামিদ সিকদার এবং মা মিনা বেগম। এছাড়াও আছে আমার দাদি হালিমা বেগম। আমার বাবারা ২ ভাই ও এক বোন। আমার বড় আব্বু হানিফ সিকদার এবং বড় আম্মু ইয়াসমিন বেগম। তাদের ছেলে ইয়াদ অনার্স ৪র্থ বর্ষে পড়ছে এবং মেয়ে ইমা এবার অনার্স ১ম বর্ষে পড়ছে। আমার বাবা এবং চাচা এক সাথে বিজনেস সামলাচ্ছে। আমার একমাত্র ফুপি হিরা বেগম এবং তার হাসবেন্ড রিফাজ চৌধুরী।ফুপির এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাদের ছেলে রোয়েন চৌধুরী এবার অনার্স ৪র্থ বর্ষে ইয়াদ ভাইার সাথে পড়ে। ইয়াদ ভাইয়া আর রোয়েন ভাই বেস্ট ফ্রেন্ড এবং ফুপির মেয়ে রিহু যে আমার জানের বেস্টু। যার জন্য এতো সময় অপেক্ষায় ছিলাম।
কেউ একজন পিছন থেকে আমার চোখ আটকে ধরে, হঠাৎ করে এমন চোখ আটকে ধরাতে ভয়ে আমার বুক কেপে ওঠে। এতো সময় ভাবনার মাঝে থাকার জন্য হঠাৎ এমন আক্রমণে চমকে যাই। কিছু সময় নিয়ে নিজেকে সাভাবিক করার পর আসতে আসতে আমার হাতটা চেখের ওপর রাখতেই একটা হাত স্পর্শ লাগতেই আমার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো, কারণ আমার যানা আছে এই হাতের মালিক কে। এটা আার কেউই না আামার একমাত্র বেস্টু রিহু। আবার রাগ ও লাগলো আমাকে এতো সময় অপেক্ষা করিয়ে আবার এখন ভয় দেখানো। কপাট রাগ দেখিয়ে বললাম মিহুর বাচ্চা…..
এর পর শুরু হয়ে গেল আমাদের দুইজনের ছোটাছুটি। ছোটাছুটির এক পর্যায়ে হঠাৎ করে একজনের বুকের সাথে যেয়ে ধাক্কা খেয়ে নিচ এ পড়ে গেলাম। পুরো কলেজ আর ভার্সিটির সবার সামনে এভাবে পরে যাওয়াতে লজ্জায় আমার মাঠা কাটা গেল। আজ কলেজের প্রথম দিন আর আজকেই এভাবে পরা লাগলো। পায়ে ও আনেক ব্যথা পেয়েছি, ব্যথা আর লজ্জা মিলিয়ে এখন আমার কান্না পাচ্ছে।
কার সাথে ধাক্কা খেয়ে পারে গিয়েছি দেখার জন্য উপরে তাকাতেই আমার অবস্থা আরো খারাপ।
কারণ আমার সামনে আর কেউই না রোয়েন ভাই চোখনাকমুখ লাল করে দাঁড়িয়ে আছে। এই একটা লোক যাকে আমি সবচেয়ে বেশি ভয় পাই। ভয় পাবোই না বা কেনো, এনার মতো রাগচটা গম্ভীর মানুষকে কেই না ভয় পায়। সব সময় রাগ তার নাকের ডগায় থাকে। এইযে এখনই তার সব রাগ আমার উপরে ঝারবে। ভয়ে আমার অবস্থা খারাপ।
এই তার ঝারি দেওয়া শুরু..
চোখে দেখোস না, সারা দিন ছোটাছুটি করা লাগবে তোর, থাপ্পর দিয়ে একদম সব কয়টা দাত ফেলে দিবো বেয়াদব কথাকার। কলেজে আসতে না আসতেই ছোটাছুটি শুরু।
এভাবে আরো কতোখন বকাঝকা করলো। আমার চোখে এবার পানি টলমলে করতে লাগলো, আরেকটু হলেই পরে যাবে। টলমলে চোখে পাসে তাকাতে দেখি রিহু ও মাথা নিচু করে দারিয়ে আছে। কারণ যানে তার ভাই কেমন রাগচটা, এখন কিছু বলতে গেলে ঝড় ওর উপর দিয়েও যাবে তাই চুপচাপ মাথা নিচু করে ভয়ে দারিয়ে আছে।
একটু পরে সেখানে উপস্থিত হলো ইয়াদ। সবার আগোচরে রিহু ইয়াদকে এসএমএস করে এখানে আসতে বললো কারণ ইয়াদ ছারা এই বকা থেকে এখন কেউই বাচাতে পারবে না। ইয়াদ এসে রোয়েনকে থামালো।
ইয়াদ রোয়েনকে বললো কি হয়েছে রোয়েন, হুরকে এভাবে বকা দিচ্ছিস কেনো?
আমি কেনো বকা দিচ্ছি তা তোর গুনধরা বোনকেই জিগ্যেস কর।
ইয়াদ এবার হুরের দিকে তাকিয়ে দেখলো ও নিচে পরে আছে তা দেখে বললো…কিরে হুর নিচ এ পড়ে আাছিস কেন?
হুর কিছু বললো না, মাথা নিচু করে চোখের পানি ফলতে লাগলো।
রোয়েন হুরের অবস্থা দেখে চোখটা বন্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে লাগলো। একটু পর রিহুকে ধমোক দিয়ে বললো তুই দারিয়ে দারিয়ে কি দেখছিস, যেয়ে দেখ কোথায় লেগেছে ওর।
রিহু এতোখন এই কথাটার এই অপেক্ষায় ছিলো, রোয়েন বলতেই সাথে সাথে হুর এর কাছে চলে গেলো। যেয়ে সাবধানে হুরকে দার করালো কিন্তু ব্যথার কারণে হাটতে পারছে না।
হুট করেই রোয়েন এসে হুরকে কোলে তুলে হাটা ধরলো। হুর চোখ বড় বড় করে রোয়েনের দিকে তাকিয়ে রোইলো। বুকের ভিতর ধুকপুক ধুকপুক করতে লাগলো। অসস্তি লাগছে আনেক। হুর নিজেকে একটু সাভাবিক করে আস্তে করে বললো আমি যেতে পারবো আমাকে নামিয়ে দিন।
বেশি পকপক করলে কিন্তু কোল থেকে একদম ফেলে দিবো। এমনি মেজাজ খারাপ আছে। কোমর ভাঙতে না চাইলে চুপ থাক। হুর ভয় পেয়ে আর কিছু বললো না।
রোয়েন হুরকে নিয়ে কেন্টিন এ নিয়ে গেলো, ওদের পিছু পিছু ইয়াদ আর রিহু ও গেলো।
হুরকে নিয়ে একটা চেয়ার এ বসিয়ে দিয়ে ইয়াদকে বরফ নিয়ে আসতে বললো। ইয়াদ বরফ আনার পর রোয়েন বরফ নিয়ে হুরের পায়ের কাছে বসলো। পায়ে হাত দিতে গেলেই হুর পা সরিয়ে ফললো।
কি করছেন পায়ে হাত দিচ্ছেন কেনো, আমি নিজে দিতে পরবো।
বেশি কথা বলবি একদম পা ভেঙে দিবো, চুপচাপ বোসে থাক, এই বলে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পায়ে বরফ লাগানো শুরু করলো।হুর চোখ বুঁজে ব্যথা সহ্য করতে লাগলো।
বরফ লাগানো শেষ হলে রোয়েন উঠে রিহুকে ওর খেয়াল রাখতে বলে হনহনিয়ে চলে গেল। ইয়াদ ও রিহুকে হুরের খেয়াল রাখতে বলে রোয়েনের পিছু পিছু গেলো।
রোয়েন যেতেই রিহু হুরকে জরিয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো সরি দোস আমার জন্য এতো কিছু হয়ে গেলো।
হুর অভিমান করে রিহুকে নিজের থেকে ছারিয়ে বললো সর আমার সাথে তুই কথা বলবি না, তোর জন্য তোর খাটাইস ভাইয়ের কাছে এতো গুলো বকা খেলাম।
রিহু কাঁদো কাঁদো ফেইস করে কানে ধরে বলে এবারের মতো ক্ষমা করে দে দোস, এই দেখ কানে ধরলাম।
রিহুর আবস্থা দেখে হুর হেসে ফললো। হয়েছে আর ডঙ করা লাগবে না এই বলে জরিয়ে ধরলো রিহুকে।
হুর এর পা ব্যথা এখন অনেকটা কুমে গেছে। তারপর ওরা এক সাথে ক্লাস এ চলে গেছে। আজ প্রথম দিন তাই ক্লাস তেমন হয় নাই। আজ শুধু পরিচয় পর্ব গেলো ক্লাস এ। কোলেজ শেষ এ হুর আর রিহু গেটের কাছে গেলো বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। রিহুর গাড়ি চলে আসছে তাই হুরকে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। আর হুর দারিয়ে থাকে ইয়াদের জন্য। ইয়াদ বলেছিলো হুর কে নিয়ে যাবে তাই বাসা থেকে গাড়ি আসবে না আজকে। এমন সময় হুট করে ওর পাসে একটি বাইক এসে থমলো……
চলবে?