#লাভ_ফাইট
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট১০
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)
আজ অনেক দিন পর দোয়েল বাবার বাসায় বেড়াতে এসেছে।দোয়েলের রুমটা এতদিনে পায়েল বেশ ভালোভাবেই দখল করে নিয়েছে।দোয়েলের সাজানো গোছানো রুমটা অনেকটাই বদলে গেছে।মিসেস সুমি মেয়ের পেছন পেছন আসেন।এসে দেখেন মেয়ে বুক সেলফে থাকা বই গুলোয় আলতো করে হাত বুলাচ্ছে।
” তোর পছন্দের জিনিস এটা।অন্য সব কিছু পায়েল দখল করলেও তোর বাবা এটায় ফুলের টোকা পর্যন্ত লাগতে দেয় নি।”
মিসেস সুমির কথা শুনে দোয়েল বুক সেল্ফের ডান পাশের পাল্লাটা খুলে বইয়ের পেছন থেকে একটা কাপড়ের ব্যাগ করে।ব্যাগের ভেতর একটা টি শার্ট ছিলো।বুক সেল্ফ কেউ ধরে না বলে এখানে টি শার্টটা রেখেছিলো দোয়েল।এতদিনে টি শার্টটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা করেছিলো দোয়েল।কিন্তু না।টি-শার্টটা এখনো ভালোই আছে।টি-শার্টটা দেখে মিসেস সুমি মেয়েকে প্রশ্ন ছুঁড়ে মারেন।
” এটা কার টি শার্ট?”
” ফালাকের।”
লাজুক কন্ঠে কথাটা বলে চোখ নামিয়ে ফেলে দোয়েল।মিসেস সুমি মুচকী হাসে,,
“চোখে ফাঁকি দিয়ে এত কিছু করে ফেলেছিস?”
দোয়েল লাজুক হাসে।ফালাক ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে ছিলো।দোয়েল টি শার্টটা পেছনে লুকিয়ে ফালাকের পাশে গিয়ে বসে।মিষ্টি করে একটা ডাক দেয়।ফালাক অবাক কন্ঠে বলে,,,
” কিছু বলবে?”
” ছাদে যাবে?না করো না প্লিজ।”
” এত রাতে?”
” চাঁদ দেখতে তো রাতেই যেতে হবে।নাকি ভোর সকালে যাবো চাঁদ দেখতে।”
” বেলকনি দিয়ে দেখো চাঁদ।”
” তুই বেশি বুঝিস সব সময়।”
কথাটা বলে হ্যাঁচকা টান দিয়ে দোয়েল ফালাককে ছাদে নিয়ে যায়।চাঁদের দিকে ঘুরে ছাদের রেলিংয়ে হেলান দিয়ে বসে দোয়েল।আনমনে এসে বলে,,,
” প্রেম করার সময় কত কাহিনিই না করতাম আমি তাই না?”
” হঠাৎ এই কথা?”
” আমি ত সব হঠাৎই বলি।”
” চেতার কি আছে?”
” আমিই তো চেতি।”
ফালাক বুঝতে পারে এখন দোয়েলকে সে যা বলবে তাতেই ঝগড়া লেগে যাবে।তাই এই মুহুর্তে চুপ থাকাই শ্রেয়।
ফালাক চুপ করে চাঁদের পানে চেয়ে থাকে।হঠাৎই দোয়েল পেছন থেকে ফালাকের ব্যবহৃত পুরানো টি-শার্টটা বের করে ফালাকের হাতে দেয়।ফালাক টিশার্টটা দেখে খানিকটা অবাক হয়।দোয়েল আবার মুচকী হেসে বলে,,,
” ফালাক তোমার মনে আছে?একবার আমি তোমার একটা টি শার্ট খুলে নিয়ে এসেছিলাম!”
দোয়েলের কথা শুনে ফালাকের মুখ কালো হয়ে যায়।দোয়েলের কাছে সেটা সোনালী স্মৃতি হলেও ফালাকের কাছে তা লজ্জাজনক স্মৃতি। দোয়েল তখন ক্লাস টেনের দুরন্ত কিশোরী।সম্পর্কের শুরু।কে যেন দোয়েলকে বলেছিলো প্রেমিকের ঘামের গন্ধে নাকি মানসিক চাপ কমে।সেখান থেকেই দোয়েলের জেদ চেপেছিলো সে ফালাকের ব্যবহৃত জামা যেমন করেই হোক নিবে।সেদিন প্রাইভেট ফাঁকি দিয়ে দোয়েল ফালাককে নিয়ে শপিংয়ে গিয়েছিলো।প্রায় চার-পাঁচ মাসের হাত খরচ জমিয়ে দোয়েল একটা টি-শার্ট কেনার টাকা জমায়।খালি গায়ে ফালাক যাবে।ব্যাপারটা কেমন হেলালেলা না?তাই এই বুদ্ধি বের করে দোয়েল। ফালাকের হাতে একটা হাল্কা বেগুনি রঙের টি-শার্ট ধরিয়ে দিয়ে ট্রায়াল রুমে যেতে বলে দোয়েল।ফালাক কোনো কথা বলে না।কারণ নিয়ে আসার সময়ই দোয়েল ফালাকে শর্ত দিয়েছিলো যাতে ফালাক কোনো কথা না বলে।ট্রায়াল রুম থেকে ফালাক বেরোতেই সে ট্রায়াল রুমে ঢুকে ফালাকের ব্যবহৃত পুরোনো জামাটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নেয়।ফালাক বেকুবের মতো চেয়ে থাকে।কিছু বলতে যাবে তার আগেই দোয়েল ফালাককে ধমক দিয়ে বলে,,
” একটাও কথা বলবি না তুই।”
দাম মিটিয়ে দিয়ে দোকান থেকে বের হতেই ফালাক দোয়েলকে প্রশ্ন করে,,,
” তুমি না বললে তুমি তোমার কাজিনের জন্য টি শার্ট কিনতে আসছো।তো আমায় টি শার্ট পরিয়ে রাখলে কেন?”
” আসলে তোমার জন্যই টি শার্ট কিনতে আসছি।এটা যদি বলতাম তাহলে তুমি কখনো আসতে না আমার সাথে।তাই একটু চালাকি করতে হলো।আর তাছাড়াও তোমার ব্যবহৃত জামা আমার দরকার ছিলো।কিন্তু আমি যদি তোমার গায়ের টি শার্ট নিয়ে আসি তাহলে তো অন্য মেয়েরা আমার সম্পদের অনেক কিছুই দেখে ফেলবে তাই….”
দোয়েল লজ্জায় নিজের হাত দিয়েই মুখ চেপে ধরে।ফালাক হতবিহ্বল।
” জানো ফালাক?তুমি যখন দূরে থাকতে না?আমি তখন তোমার এই টি-শার্টটা গায়ে জড়িয়ে তোমার গায়ের ঘ্রাণ নিতাম।আর তখন মনে হতো তুমি আমার পাশেই বসে আছো।প্রেমে পড়লে, ভালোবাসলে কারও গায়ের ঘামের দুর্গন্ধও কারও কাছে সুগন্ধ হয়ে যায়।”
” অনেক কষ্ট দিয়েছি না তোমায়?”
” অস্বীকার করবো না।দিয়েছো অনেক কষ্ট দিয়েছো।আমার সামনে যখন কেউ তার প্রিয় মানুষের হাত ধরে হাঁটতো তখন আমার প্রচুর খারাপ লাগতো।এক যদি কেউ না থাকতো তাহলে এক কথা ছিলো।কিন্তু থেকেও নেই।তাই রাগ হতো।ঝাড়তাম তোমার ওপর।তুমিও আমায় না বুঝে আমার সাথে উলটো রাগারাগি করতে।আবার আমরাই একেঅপরের সাথে কথা না বলে থাকতে পারতাম না।যাই হোক এখন তো তোমায় নিজের করে পেয়ে গেছি এখন আর কোনো আফসোস, রাগ,হারানোর ভয় নেই।”
” কিন্তু আমার আফসোস আছে।আমি আগের দোয়েলকে হারিয়েছি।যে এখন কিছু হলেই পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করে না।চিৎকার চেঁচিমেচি করে না।এখন সে চুপ চাপ হয়ে গেছে।”
” কারণ সে বড় হয়ে গেছে। ”
” আমার কাছে সেই দুরন্ত চঞ্চল কিশোরী দোয়েলেই ভালো।তোমার নামের সাথে নিস্তব্ধতা যায় না দোয়েল।কখনো দেখেছো দোয়েল পাখিকে চুপচাপ থাকতে?আগের দোয়েলকে খুব মিস করি আমি।”
” আগের দিন বাঘে খেয়েছে।আগের দোয়েল থাকলে প্যারার শেষ হতো না।”
” যতো যা ই ই হোক।সোনালী দিন সেগুলো।আজীবন সেগুলোর কথা ভেবে আফসোস করতে হবে।”
” আফসোস করা লাগবে কেন?মানুষকে একটা আল্লাহ আলাদা শক্তি দিয়েছে।ওই শক্তির সাহায্যে সহজেই আমরা আমাদের সোনালী দিন গুলোই ফিরে যেতে পারি।”
” ওই শক্তিটা কি শুনি?”
” কল্পনা শক্তি।”
কথাটা বলে ফিক করে হেসে দেয় দোয়েল।ফালাকও ওর হাসি দেখে হেসে দেয়।
সমাপ্ত