#লাভ_ফাইট
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট৬
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পরে আমাদের ম্যারেজ রেজিস্ট্রি হয়।ফালাকের পরিবারের মোটামুটি সবাইকেই আমার ভালো লেগেছে।কিন্তু ওর দাদি আর বোনকে আমার একটু বেশিই ভাল্লাগে আমার।যদিও আমি দাদির কথা সঠিকভাবে বুঝি না।গ্রামের সহজ সরল মানুষ হওয়ায় কথা বার্তায় উনার খুলনার খাঁটি আঞ্চলিক ভাষার টান আছে।ফাইজা ফালাকের ছোট বোন।সেভেনে পড়ে।পায়েলের থেকে এক ইয়ার জুনিয়র।প্রায় সমবয়সী হওয়ায় অল্পসময়ের মধ্যেই ওদের মধ্যে একটা ভালো সম্পর্ক হয়ে যায়।
আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন রাতেই রওনা দেন খুলনার উদ্দেশ্যে। তারা থাকার কারণে আমি অস্বস্তি সহ্য করেই শাড়ি পরে ছিলাম।তারা চলে যাওয়ার সাথে সাথে আমি আমার কমফোর্ট ড্রেস ঢিলেঢালা টি-শার্ট আর পালাজ্জো পরে নিই।
সাদ ভাইয়া,ফালাক বাহিরে গেছে।ড্রেস চ্যাঞ্জ করে মুখ ধুয়ে আমি চায়ের পানি গরম দিই।আমার কাছে এই চা টা এক ধরণের মাদক।যা ছাড়া আমি প্রায় পাগলের মতো হয়ে যাই।এই জিনিসটা না থাকলে কবেই যে আমি মাথাব্যথায় মারা যেতাম!তাছাড়াও আমার সকল মানসিক রোগের ওষুধ এই চা কেই লাগে।বিয়ের আগ দিয়ে প্রায়ই ফালাকের সাথে ঝামেলা হতো।আপসেট থাকতাম অনেক।তখন চা খাওয়ার মাত্রাটা বেরে যেত। আমি সাধারণত দিনে দুইবার চা খাই।সকাল আর বিকাল বা সন্ধ্যা।এটা শুনে অনেকেই বলে মেয়েটা মাত্র দু কাপ চা খেয়ে নিজেকে চাখোর দাবি করে।নাহ ভাই,আমার কাপে চা খাইতে মুখে সুড়সুড়ি লাগে।ইয়ায়া বড় একটা মগ কিনেছি।সেই মগ ভর্তি করে দু’বেলা চা খাই।কিন্তু কোনো বিষয় নিয়ে আপসেট থাকলে চা খাওয়ার মাথা অনেক বেড়ে যায়।তখন দিনে ১০-১২ মগ চা খাওয়ারও রেকর্ড আছে আমার।এতটাই আমি এই জিনিসটার প্রতি আসক্ত।আম্মুর মতে আমার এই ক্ষুধামন্দার মুলে নাকি রয়েছে আমার চা খাওয়া।মাঝে মাঝে চা পাতি আম্মু লুকিয়ে রাখে।কিন্তু আম্মু ভুলে যায় যে আমি আম্মুরই মেয়ে।রুমে সব সময় আমি ইমার্জেন্সি চা পাতি রাখি।তখন সেখান থেকে নিয়েই খাই।
সাদ ভাইয়া, ফালাক রাত সাড়ে দশটার দিকে ফেরে।ওরা বাসায় আসতে না আসতেই শুরু হয় আম্মুর রাতের খাওয়ার জন্য তাগাদা।দুপুরে আমার খাওয়া হয় নি।খিদেতে পেটে ছুঁচো ডাকছে।যার কারণে এইবার আর পরে খাবো,পরে খাবো বলে ঘ্যান ঘ্যান করি না।সবার আগে টেবলে ব,সে যাই।আমার খাওয়ার তোরজোর দেখে আপুনি টিটকারি মেরে বলে,,,
” দেখেছো?আজ আর খাওয়াতে তার আলসেমি নেই।খুব বলতো আমার বিয়েতে আমি আগে আগে খাবো।অতচ একটু আগে চা খেতে খেতে বললো জানিস আপুনি আজকে আমার দুপুরে খাওয়া হয় নি!”
আপুনির কথায় সবাই হেসে দেয়।আমি লজ্জায় পরি সবার সামনে।আম্মু আপুনি খাবার পরিবেশন করে।আব্বু খেতে খেতে ফালাককে বলে,,,
” রিলেশন করেছো।জানো কি না জানি না।তারপরও বলছি,দোয়েলের চা ছাড়া সব খেতে রাজ্যের আলসেমি।না খেয়ে থেকে মরে যাবে তাও নিজে থেকে খাবে না।ওকে খাইয়ে দিতে হয়।তোমার হাতে তুলে দিয়েছি। তুমি দেখে রেখো ওকে।দেখো,মেয়েটা যেন কষ্ট না পায়।মুখ ফুটে সব বলে না।তাই তো তোমাদের ঘটনার কথা আমরা কেউ জানতে পারিনি।”
” আপনি চিন্তা করবেন না।দায়িত্ব যখন দিয়েছেন আমি সর্বস্ব দিয়ে তা পালনের চেষ্টা করবো।”
ফালাক বলে।খাওয়া শেষ হলে আব্বু-আম্মু নিজেদের রুমে ঘুমাতে যাই।আমরা সবাই ড্রয়িংরুমে বসি।আড্ডা দিতে।বাইরে থেকে আসার আগে ওরা কোকাকোলা এনেছে।আমি কোকাকোলা, গ্লাস নিয়ে আসি।ওত আদিখ্যেতা করে ঢেলে দিতে পারবো না।যার লাগবে নিয়ে নিয়ে খাবে।
আমি আপুনি একে অপরের লাভ স্টোরি বলি।পায়েল বিষন্ন মুখ নিয়ে গালে হাত দিয়ে সেগুলো শুনে।
” আজ যদি একটা প্রেম করতাম আমারও জামাই থাকতো।”
” এইটে পড়ে।মেয়ে নাকি প্রেম করবে!”
ভেঙচি কেটে বলি আমি।সবাই মৃদুস্বরে হেসে দেয়।দেড়টা পর্যন্ত আমাদের আড্ডা হয়।সাদ ভাইয়ার অফিস ধরতে হবে গিয়ে। তাই আপুনি, ভাইয়া ঘুমাতে যায়।আমি আর ফালাকও নিজেদের ঘরে যাই।পায়েল সাধারণত আমার সাথে থাকে।আজ ফালাক থাকায় তাকে গেস্ট রুমে ঘুমাতে দেওয়া হয়েছে।
ফালাক ঘরে ঢুকতেই আমি দরজা লাগিয়ে দেই।মুচকী হাসি দিয়ে বলি,,,
” আজ আমরা প্রথম এক সাথে রাত কাটাবো।”
আমার কথা শুনে ফালাক লাজুক হাসি দেয়।আমি দাঁতে দাঁত কামড়ে বলি,,,
” আর আজ তুই তোর সব কাজের কৈফিয়ত দিবি।”
ফালাক বেকুবের মতো আমার দিকে তাকায়।চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে ও ভেতর ভেতর আওড়াচ্ছে শা*লা কি ভাবলাম।আর কি হলো!আমি আবার বলি,,,
” যা যা জিজ্ঞাসা করবো ঠিক ঠিক উত্তর দিবি।”
ফালাক শুকনো ঢোক গিলে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়।আমি ওকে সাইড দিতে বলি।আমি বসবো।ও সরে বসে।আমি বলা শুরু করি,,,
” নাম্বার ওয়ান,তুই সিগারেট খাওয়া ধরলি কবে থেকে?”
ও করুণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,,,
” একটা কথা বলি?”
” হুঁ,বল।”
” বুঝলা কিভাবে সিগারেট খাই আমি?”
” রাত্রে যখন খাইতে বসছিলাম তখন আপনার গা থেকে আমি সিগারেটের গন্ধ পেয়েছি ষ্যাড়।”
” আমি বা মিন্টের চুইংগাম খেয়েছি!সাদ ভাইয়া বললো মিন্ট জাতীয় কিছু খেলে নাকি সিগারেটের গন্ধ চলে যায়।”
” সাদ ভাইয়া জানলো কিভাবে?”
” উনিও তো খান।তোমার যেমন চা ছাড়া অস্থির লাগে আমাদের তেমন সিগারেট ছাড়া অস্থির লাগে।”
” আপুনিকে বলতেছি।”
” জানেন উনি।উনি ঘরে সিগারেট খাওয়ার পার্মিট দেন নাই শুধু।তাই ভাইয়া বাইরে খায়।”
ফালাকের সাথে আমি কথায় পাই না।বেশিই ফটরফটর করে ছেলেটা মনে হয়।আমায় চুপ থাকতে দেখে হাসতে লাগে ও।আমি ধমক দিয়ে বলি,,,
” এত হাসি কিসের?”
” হাসলে মানুষ বেশিদিন বাঁচে।বাঁচার জন্য হাসি।”
আমি একটু ওর দিকে এগিয়ে যাই।ও লজ্জায় কিছুটা সরে যায়।আমি শান্ত কন্ঠে বলি,,,,
” সত্যি করে বলো তো ফালাক!তুমি কি ভালো ছেলে?”
ও শার্টের কলারটা হাল্কা ঝাঁকিয়ে বলে,,
” হ্যাঁ,অবশ্যই।লাখে একটা।”
” ভালো ছেলেরা কখনো সিগারেট খায় না।কারণ ওরা জানে ঠোঁটজোড়া তাদের বউয়ের হক।”
কথাটা বলেই মুহুর্তে ওর অক্ষিজোড়া দুটো আমার হাত দিয়ে আড়াল করে ওর ঠোঁটে আমার ঠোঁটের আলতো ছোঁয়া দিয়ে দিই।
ও তাজ্জব।চোখের পলক পরছে না ওর।বড় বড় চোখ নিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমি লজ্জায় বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়ি। মস্তিষ্ক কাজ করছে না আমার।কি করে ফেললাম আমি?হায় হায়!দোয়েল এতটা অসভ্য হয়ে গেছে?কিভাবে ঠাস করে….ছি ছি।আমার তো মনে হচ্ছে এখনই জমিন দু ভাগ করে তার ভেতরে ঢুকে যাই।নিজের কাছে নিজেরই লজ্জা লাগছে।
” দোয়েল! এই দোয়েল!”
ফালাক আমায় ডাকছে।কিন্তু আমার প্রচন্ড লজ্জা লাগছে।ঝোকের বশে কি না কি করে ফেলেছি।আমি কোনো সাড়া দিই না ওর ডাকে।
” দোয়েল ওঠে না!”
” উহু,আমার ঘুম পেয়েছে।ডোন্ট ডিস্টার্ব।”
” ঘুম পেয়েছে না লজ্জা?”
” যেটা ধরে নাও।”
” লজ্জাই ধরলাম।কিন্তু তুমি তো বলেছিলে আমার সব কাজের কৈফিয়ত নেবে।”
” আজ আর না।বেঁচে থাকলে কৈফিয়ত নেওয়ার অনেক সময় পাবো।”
ফালাক কোনো কথা বলে না।চুপ করে বসে মুচকী মুচকী হাসতে থাকে।আমি চুলের আড়াল দিয়ে সেগুলো দেখি।ওর চোখে মুখেও লজ্জা ফুটে ওঠেছে। ও উঠে গিয়ে লাইট অফ করে ড্রিম লাইট দিয়ে আবার বিছানায় আসে।আলতো ছোঁয়ায় আমার মুখের ওপর থেকে চুলগুলো সরায়।আমার অক্ষি যুগল তখন তার দিকে।
” ড্রিম লাইটের আলোয় তোমার চোখ জোড়া জলজল করছে দোয়েল।ভীষণ মায়াবী লাগছে।গ্রিক মিথোলজিতে যেভাবে মৎকন্যার চোখের মায়ার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে ঠিক সেরকম লাগছে।”
আমি লজ্জায় চোখজোড়া নামিয়ে দিই।ফালাক হেসে দিয়ে আমায় জড়িয়ে ধরে।আমি লজ্জায় আরও চুপসে যাই।কিজানি বাবা!আমার এত লজ্জা আজ হঠাৎ কোথা থেকে আসলো!আমি তো অত লাজুক মেয়ে না।ক্ষানিকবাদে আবার ও বলে,,,
” ট্রাস্ট মি দোয়েল।আমার কল্পনার বাইরে ছিলো যে তুমি এমনটা করতে পারো।আমার কাছে নেহাতই তুমি একটা নিরামিষ মেয়ে ছিলে।”
” হু,বুঝলাম।তাই ইগ্নোর করতা?”
” তা না।ব্যস্ততার জন্য সময় দিতে পাই নাই।জানোই তো আমার অবস্থান কেমন!তুমি বলেই আছো আমার সাথে।অন্য কেউ হলে কবেই ছেড়ে দিতো।”
কথাটা বলেই ও আমার কপালে আলতো করে চুমু দেয়।ভাই!আজ আমি লজ্জায় শেষই হয়ে যাবো।ওর জড়িয়ে ধরার মাত্রাটা আরও বাড়ে।আমায় নিজের বাহুডোরে শক্ত করে আবদ্ধ করে বলে,,,
” এই ধরলাম।আর ছাড়তেছি না।”
চলবে,,,ইনশাআল্লাহ,