#লাভ_টর্চার❤
#Part-10
#Nusrat_Jahan_Abida
.
.
ঘুম থেকে উঠেই বড়সড় ধাক্কা খেলাম। শুভ্র ভাইয়া দরজার কাছে গলা উঁচু করে বলছে, আমার নাকি বিয়ে, তাও ফুচকাওয়ালার সাথে। জীবনে এতো কথা বললাম কেউ সিরিয়াসলি নিলো না, আর এবার একবার রেগে বললাম না বললাম সবাই মেনেও নিলো। নিশ্চয়ই শুভ্র ভাইয়ার কারসাজি! এখন দেখেন আরোহীর কারনামা! আহারে! ফুচকাওয়ালার জন্য কষ্ট লাগছে। তার কপালে আজকে শুভ্র ভাইয়ার হাতের মার খাওয়া লেখা আছে।
.
.
কথাটা ভাবতেই লাফিয়ে লাফিয়ে আম্মুর কাছে গেলাম। আম্মু মামিমণির সাথে কি নিয়ে জানি আলাপ করেছে, দূরে শুভ্রভাইয়াও আছে। গলার আওয়াজ একটু উঁচু করে বললাম,
– আম্মুউউউউ!
.
.
আম্মু ভ্রু কুঁচকে বলল,
– কি সমস্যা!
.
.
আম্মুর কথায় আমি মুখে লাজুক হাসি এনে বললাম,
– মেহেদি লাগাবো।
.
.
আমার কথায় আম্মুর কুঁচকানো ভ্রু আরো কুঁচকে গেলো। শুভ্র ভাইয়াও আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আম্মুর দিকে তাকালাম। আম্মু তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
– তুই তো ঈদেও মেহেদি দিস না। এখন কি হলো!
.
.
আমি শুভ্র ভাইয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললাম,
– শুভ্র ভাইয়া তখন বলছিলো আমার নাকি বিয়ে! তাই ভাবলাম একটু লাগাই।
.
.
আমার কথা শেষ না হতেই শুভ্র ভাইয়া কাশতে লাগলো। মনে হচ্ছে যেন এখনই দম বন্ধ হয়ে যাবে। তার অবস্থা দেখে আম্মু বলল,
– ছেলেটার হঠাৎ কি হলো! আরোহী, জলদি পানি দে।
.
.
আমি পানি আনার জন্য পা বাড়াতেই শুভ্র ভাইয়া আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
– চল, আমিও যাই।
.
.
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই শুভ্র ভাইয়া আমাকে টেনে আমার রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা লক করে দিলো। আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
– হচ্ছেটা কি!
.
.
শুভ্র ভাইয়া আমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
– তুই বল, তোর কি হয়েছে!
.
.
আমি এবার মুখে হাসি এঁকে বললাম,
– আমার আবার কি হবে!
.
.
শুভ্র ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
– আগে তো আমার পিছনে ঘুরতি এখন এমন করছিস কেন!
.
.
সবসময় আমি ঘুরবো আর নিজে মজা নিবে! ভালোই! চোয়াল শক্ত করে বললাম,
– ভুল করতে করতে শিখে গেছি! তাই ভুল করা বন্ধ করে দিয়েছি!
.
.
শুভ্র ভাইয়া অবাক হয়ে বলল,
– আমাকে ভালবাসা তোর ভুল ছিলো!
.
.
আমি না বুঝার ভান করে বললাম,
– হয়তো! ভুল না করলে ওভাবে অপমান করতে নাকি! আর আপনিই তো বলতে যে, বাচ্চা মেয়ের সাথে প্রেম করে মজা নেই! এখন আমি বলি, বুইড়া ব্যটার সাথে প্রেম করে মজা নেই!
.
.
শুভ্র ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
– আমি বুইড়া!
.
.
আমি অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম,
– নয়তো কি!
.
.
শুভ্র ভাইয়া চোখমুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে। তাকে কিছু বলতে না দিয়ে বললাম,
– এখন এসব কথা বাদ দেন তো! সামনেই কাশেমের সাথে আমার বিয়ে!
.
.
শুভ্র ভাইয়া অবাক চোখে বলল,
– কাশেম কে!
.
.
আমি মুখে লাজুক হাসি নিয়ে বললাম,
– আমার ফুচকাওয়ালা জামাইয়ের নাম আমি কাশেম রাখবো!
.
.
শুভ্র ভাইয়া বিরক্তি নিয়ে বলল,
– আবার ফুচকাওয়ালা!
.
.
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
– কেন! তাসিন ভাইয়াও ফুচকাওয়ালা নাকি!
.
.
শুভ্র ভাইয়া অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
– যাকে জোস ছেলে, জোস ছেলে বলছিলি সে ফুচকাওয়ালাই ছিলো।
.
.
এবার ঐ হ্যাবলাকান্তের কথা মনে পড়লো। তাহলে সে ফুচকাওয়ালা ছিলো! তাই বুঝি মহাশয় ফুচকাওয়ালা হতে চেয়েছে! আহারে! বেচারা!
.
.
আমি মুখে হাসি এঁকে বললাম,
– ছেলেটা কিন্তু আসলেই জোস ছিলো।
.
.
শুভ্র ভাইয়া রাগী ফেস নিয়ে বলল,
– দুনিয়ার সব ছেলেই জোস লাগে, আমি ছাড়া।
.
.
আহারে! শুভ্র বিলাই জেলাস! তাহলে তো আগুন ঘি ঢালতে হয়! যেই ভাবা সেই কাজ! হাসি হাসি মুখে বললাম,
– তাসিনও কিন্তু জোস ছিলো।
.
.
শুভ্র ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বললাম,
– তাসিন!
.
.
আমি লাজুক হেসে ফললাম,
– হবু জামাইকে কি আর ভাইয়া বলে সম্বোধন করা যায়!
.
.
শুভ্র ভাইয়া আমার হাত শক্ত করে ধরে বলল,
– তোর ভাইয়াকে দেখাচ্ছি! চল!
.
.
শুভ্র ভাইয়া আমাকে টেনে সবার সামনে নিয়ে দাঁড় করালো। কোন প্রকার ভণিতা ছাড়াই বলল,
– মম, কাজি ডাকেন, আমি এখনই বিয়ে করব!
.
.
শুভ্র ভাইয়ার কথায় আকাশ থেকে পড়লাম। বিয়ে! এখন! কিভাবে কি! আর আমাকে একবার জিজ্ঞেসও করলো না! করবো না বিয়ে! হুহ!
.
.
শুভ্র ভাইয়া কথা শুনে মামিমণি অবাক চোখে বলল,
– বিয়ে করবি! এখন! কেমনে কি!
.
.
শুভ্র ভাইয়া কঠিন গলায় বলল,
– আমি আর কিছু শুনতে চাই না। আমি কাজিকে কল করেছি, এখনই চলে আসবে।
.
.
কল করেও ফেলছে! কিন্তু কখন! আল্লাহ! এখন কি এগুলো ভাবার সময়! কিভাবে বিয়ে আটকাবো তা ভাব!
.
.
মামিমণি ভ্রু কুঁচকে বলল,
– পুতুল বিয়ে পেয়েছিস নাকি! আর কনে কে!
.
.
আর কিছু বলার আগেই কাজি এসে হাজির। শুভ্র ভাইয়া আমার কাজিকে বসিয়ে আম্মু আর মামিমণিকে আমরা বিয়ে করছি!
.
.
আম্মু অবাক হয়ে বলল,
– আমরা মানে!
.
.
শুভ্র ভাইয়া সোজাসুজি বলল,
– আমি আর আরোহী!
.
.
মামিমণি বিস্ময় নিয়ে বলল,
– তোরা তো দেখছি সুপার ফাস্ট। আমি তো এই নিয়েই ভাবছিলাম আর তোরা কর্মও করে ফেলছিস! বাহ!
.
.
শুভ্র ভাইয়া মুচকি হেসে বলল,
– এটা আরোহীর প্লান!
.
.
এবার আকাশ কি মহাবিশ্বের সবচেয়ে উঁচু যে জায়গা আছে সেখান থেকে পড়লাম। বিয়ে করবি ভালো কথা! আমাকে ফাসাচ্ছিস কেন! আম্মুর দিকে তাকাতেই একটা ঢোক গিললাম। আম্মু আমার দিকে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে আছে। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আম্মু বলল,
– আগে বিয়েটা হোক, তারপর তোকে দেখছি!
.
.
কথাটা বলেই বিয়ের পিড়িতে বসিয়ে দিলো। কবুল বলবো না বলবো না করে শেষে আম্মুর ধমক আর শুভ্র ভাইয়ার চোখ রাঙানি দেখে বলেই দিলাম।
.
.
Continue………………