#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্বঃ১৪
রঙ্গান দাঁড়িয়ে আছে ভিজে চুপসে দরজার সামনে। তার দিকে ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে আছে তৃষ্ণা।
“মহারাজ্ঞী?আমার কি ভিতরে প্রবেশের অনুমতি আছে?”
“এই কাঁদা পায়ে?”
“আমি আপনার সামান্য বেতনভুক্ত কর্মকর্তা। আমাকে এই মার্জনা করুন।”
“না, মোটেও তুমি আমার বেতনভুক্ত নও।”
“তবে আজন্ম আপনার দাস হয়ে থাকবো।এবার অনুমতি দিন।”
“দাস নয়, পুরুষ মানুষ এর জন্য দাস শব্দটা আমার কাছে বড্ড দৃষ্টি কটু।তুমি বরং এক সাম্রাজ্যের সম্রাট হও বৎস৷”
“তবে আপনি হন সেই সাম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী।আপনি কি রাজি?”
“বেটার লাক নেক্সট জন্ম।এজন্মের জন্য আপাতত বুকড।”
তৃষ্ণার জবাবে রঙ্গান দেয়ালে হেলান দিয়ে বুকের বা পাশে হাত দিয়ে এমন ভঙ্গি করলো যেন কেউ বিষাক্ত তীর দিয়ে তার হৃৎপিন্ডকে এফোড় ওফোড় করে দিয়েছে।
আর তৃষ্ণা খিলখিল করে হাসছিল যেন ভরা যৌবনা নদীতে মাঝি তার বৈঠা দিয়ে ছপাৎ ছপাৎ শব্দে এগিয়ে চলেছে।
তৃষ্ণার দাদী পানের জন্য সুপুরি কাটার সময় সব’টা খেয়াল করে মনে মনে বললেন,
“ও ছুড়ি তুই সোনা থুইয়া কাচের পিছনে ছুটলি।কিন্তু কাঁচ তো তোরে সামলাবো না,আরো ভাইঙ্গা গিয়া তোর মন ক্ষতবিক্ষত করে দিলো।”
তুষারের বিয়েতে এক উল্টো কাজ হয়ে গেলো।আশেপাশের মানুষ নয় তার দাদী ছি ছি করছিলেন। কারণ বিয়ের আগে মেয়ে তার পরিবারের সাথে এসেছে বিয়ের পাকা কথা দিতে। একে তো তাদের প্রেমের বিয়ে আবার এর মাঝে মেয়ে নিজে এসেছে বিয়ে কথা বলার জন্য আসা পরিবারের সাথে।
এই বিষয় কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি।
পুরো বিষয়টি সামাল দিলো আরশাদ। সে সম্পূর্ণ দোষ নিজের ঘাড়ে নিয়ে বলল,
“দাদীজান, আমিই নিয়ে আসতে বলেছি কারণ দেশের যা অবস্থা এর মধ্যে বাসার সব মানুষ আসবে এখানে। এই মেয়েটাকে কোথায় রেখে আসবে?
আর তাছাড়া যে দিন কয়েক পর এই বাড়ির বউ হয়েই আসবে সে যদি দিন কয়েক আগে আসে এতে সমস্যা নেই।
তৃষ্ণাকে নিয়েও তো বিয়ের আগে আমাদের বাসায় কত অনুষ্ঠানে গিয়েছি। ধরে নিন এটাও একটা অনুষ্ঠান। ইনফ্যাক্ট, সব কথা পাকা হলে আমরা আংটি বদল করে রাখতে পারি।”
তৃষ্ণার দাদী আরশাদকে পছন্দ করেন না এমন নয় তবে যখন জানতে পেরেছে আরশাদ তার বন্ধুর পাতা ফাঁদে পা দিয়ে হলেও তৃষ্ণার সাথে খারাপ আচরণ করেছে
তখন থেকে কেন যেন তাকে খুব একটা ভালো চোখে দেখতে পারছেন না তিনি।
তবুও এক ঘর ভর্তি মানুষের সামনে আরশাদকে কিছুই বললেন না,
কারণ আজ সকালেই সবার সাথে কথা হয়েছে আপাতত তৃষ্ণা এবং আরশাদের বিয়ে ভাঙ্গনের কথা কনে পক্ষকে জানানোর প্রয়োজন নেই।
এতে করে তুষারের সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে।
তাছাড়াও আরশাদ এখনো এই বাড়ির মেয়ের জামাই।আর এই বাড়ির মেয়ের জামাইদের সাথে কখনো কেউ খারাপ ব্যবহার করার দুঃসাহসিক বেয়াদবির কাজ এ অবধি কেউ করেনি।
আরশাদ এভাবে পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার জন্য তৃষ্ণার বাবা তার দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতার হাসি হাসলেন।
কনে পক্ষের সাথে মোটামুটি কথা ঠিক হলেও কিছু কথা নিয়ে বেশ ঝামেলা হলো।এর মধ্যে অন্যতম হলো তারা চাইছেন বিয়ের কাবিন হিসেবে দশ লক্ষ টাকা। কিন্তু তুষারের বাবা নারাজ। কারণ তার ছেলের সামর্থ্য নেই সে নগদ এতগুলো টাকা দিতে পারবে। কিন্তু কনেপক্ষের কথা এটা তাদের মেয়ের লাইফ সিকিউরিটি।
কথা-কাটাকাটির এক সময় বিয়ে না হওয়া অবধি চলে যায়। তখন কনে এসে সরাসরি তুষারকে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি কতটা দিতে পারবেন?”
“পাঁচ জমানো আছে আমার।”
“লাখ?”
“জি।”
“তবে আমার বিয়ের কাবিন করুন পঞ্চাশ হাজার টাকা।”
কনের কথা শুনে সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে রইল।ধমকে উঠেছে তার মামা।এসব কী বলছে?মাথা ঠিক আছে?
“দশ লাখ টাকায় আমার জীবন যাবে না।তাছাড়া আমি তো আর ডিভোর্সের চিন্তা করে বিয়ে করছি না। আমার পুরো জীবনের সব দায় দায়িত্ব শরীয়ত মতে আমার স্বামীর উপর থাকবে। শুধু লোক দেখানো বড় অংকের টাকা দিয়ে লাভ নেই।সে আমার সারা জীবনের দায়িত্ব নিচ্ছে। এটাই অনেক।”
যেখানে কনে এই কথা বলেছে সেখানে আর কারোর কিছুই বলার থাকে না তবে তুষার বলল,
“আপনারা অনুমতি দিলে কাবিনে পাঁচ লাখ লিখুন।এবং আমি বিয়ের রাতেই উশুল করবো কারণ যে মেয়ে আমাকে এতটা বিশ্বাস করতে পারে
তার পরিবারের খুশীর জন্য আমি এটুক করতেই পারি।”
কিছুক্ষণের মাঝে তাদের কাবিন হয়ে গেল।নবনীতাকে তৃষ্ণা লাল শাড়ি পরিয়ে হালকা সাজে সাজিয়েছে। আজ তার খুব করে নিজের বিয়ের কথাগুলো মনে পড়ছে।
এইতো মাস আর কয়টা হবে?তাদের বিয়ের এক বছর এখনো পূর্ণ হয়নি।সেদিন তার চোখেমুখেও ছিল উপচে পড়া খুশি অথচ আজ?
ভালোবাসা রঙ বদলায় না,
ধীরেধীরে ভালোবাসা ক্ষয় যায়।
পুরো দিন ব্যস্ততায় কাটিয়ে রাতে বিছানায় ধপাশ করে শুয়ে পড়লো তৃষ্ণা। আরশাদ একপাশে বসে ল্যাপটপে কি যেন করছিল।
তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে প্রায় ঘুমিয়ে যাচ্ছে৷
তার মনে হঠাৎ কুবুদ্ধি উদয় হলে সে তৃষ্ণাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“মনে হলো খাটে এক আস্ত কাঁঠাল পড়েছে।”
তৃষ্ণা একবার মুখ তুলে চেয়ে আবার বালিশে নাক গুজলো।কোনো জবাব না পেয়ে হতাশ আরশাদ পুনরায় বলল,
“শোনো যেখানে সেখানে এই কাঁঠালের মতোন ধড়াস করে বসবে না।মানুষ কী ভাববে বলো তো?
অবশ্য দিন দিন একটু মোটা হচ্ছো। ঠিক আছে সমস্যা নেই বিয়ের পানি পড়লে মেয়েরা একটু মোটা হয়৷”
আরশাদের কথায় তেড়েমেরে উঠে বসলো তৃষ্ণা। হিসহিসিয়ে বলল,
“বাড়ি আমার, ঘর আমার, বিছানা আমার, বালিশ আমার। যা ইচ্ছে করবো আপনি বলার কে?
আর আপনি এখানে কেন?নিজ বাড়িতে যান। ওখানে গিয়ে থাকুন।”
আরশাদ ল্যাপটপ বন্ধ করে তৃষ্ণার কাছাকাছি এসে বলল,
“শ্বশুর বাড়ি আমার, বউ আমার, আমার যা ইচ্ছে বলবো। তুমি বলার কে?”
“শ্বশুরের মায়েরে বাপ।”
তৃষ্ণার মুখের কথা শুনে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আরশাদ।
“এই তুমি এই কথার মানে জানো?কত বার বলেছি হুটহাট এসব কথা বলতে নেই।এগুলোর মানে বড্ড বাজে।”
“হলে হবে। আমার কী?”
“তুমি পাগল।”
“যান তো যান।ঘুমাতে দেন।”
তৃষ্ণা যখন গভীর ঘুমে, আরশাদ তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ভালোবাসা ক্ষয় হয় তৃষ্ণা। আমি এই ক্ষয়টা পুষিয়ে দিবো।আমি জানি আমার এতটা ধৈর্যশীল নই তবে এটাও ঠিক সম্পর্কে ভাঙ্গন ধরলে তা রোধ করা খুব কঠিন।
আমি আবার একবার প্রেমিক হবো তোমার।
ঠিক ভালোবাসায় ভুলিয়ে দিবো তোমার মনকে।
কারণ আমি তোমার প্রেমিক হবো, তোমার প্রেমিক স্বামী।কারণ তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী।”
চলবে।