#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-৯
রঙ্গান তৃষ্ণার মাথায় হাত রেখে বলল,
“নিজের খেয়াল রাখিতে শিখ এবার। ঠিক মতোন খাবার খেয়ে নে। তুই অসুস্থ হলে আন্টি আরো ঘাবড়ে যাবে।”
“ভাই খুব ভয় লাগছে। অপারেশন এখনো শেষ হলো না যে।”
“সময় লাগবে কিছুটা। শোন আমি বাহিরে যাচ্ছি। দেখি আরশাদ কোথায়।”
“একটা উপকার করবে?”
তৃষ্ণার হাতে ছোট্ট একটা দই ধরিয়ে দিয়ে রঙ্গান বলল,
“ওকে খাওয়াতেই নিয়ে যাচ্ছিরে। তোর বলতে হবে না। কিছু না খেলে ও নিজেও পড়ে যাবে।যাইহোক তুই খেয়ে নে।”
ততক্ষণে তৃষ্ণার মা খাবার নিয়ে এসেছে। রঙ্গান চলে যাওয়ার আগে তৃষ্ণার মাথায় পুনরায় হাত রাখে। পরম স্নেহ তৃষ্ণা অনুভব করে এই স্পর্শে।
খুব কী ক্ষতি হতো রঙ্গান তার আপন ভাই হলে?
“রঙ্গান এখন কই যাচ্ছো?”
তৃষ্ণার মায়ের প্রশ্নে রঙ্গান জবাব দিলো,
“এই তো সামনে।”
“একটা মার দিবো। এখন খাওয়ার সময় আর তুমি পালাচ্ছো?এসো খাবে এসো। আরশাদ কই?”
“আমি তাকেই ডাকতে যাচ্ছিলাম কাকী।”
“যেতে হবে না। কল দাও। আসো খেয়ে নিবে আসো।আমি আরশাদের মা কে নিয়ে আসছি।তৃষ্ণা যেতে দিস না কিন্তু ওকে। ও একবার গেলে আর খেতে আসবে না।”
তৃষ্ণার পরিবার এখনো জানে না আরশাদ এবং তৃষ্ণার ঝামেলা সম্পর্কে।
তারা জানে আট দশটা স্বাভাবিক সম্পর্কের মতোন এখনো ঠিক সম্পর্কটা।
আরশাদ ফিরে এলে রঙ্গান ইচ্ছে করেই সরে বসে। তৃষ্ণার পাশে আজ অনেকদিন পর বসেছে আরশাদ৷
এখন তো সময় হয় না, একদিকে বাবার অপারেশন এর জন্য টাকার ব্যবস্থা অন্য দিকে মায়ের খেয়াল রাখা আবার বাবাকে সাহস জুগানো সব যেন তৃষ্ণা একাই করে চলেছে।
আজ।আরশাদ বুঝতে পারছে অপচয় না করে যদি কিছু টাকা জমাতো!
কথায় কথায় বন্ধুদের ট্রিট না দিয়ে যদি একটু সামলে চলতো!
তবে হয়তো আজ তৃষ্ণার পাশে বসতে এতটা খারাপ লাগতো না।
তৃষ্ণার দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয় আরশাদ।
এই কদিনেই তৃষ্ণা কেমন শুকিয়েছে।
হিজাব পরেনি আজ। হয়তো গরমে খুলে ফেলেছে।
বোরখা পরে বসে আছে সে৷। তার সামনে বসে তার মা খাবার বেড়ে দিচ্ছে এবং আরশাদের মা কে সাহস জুগিয়ে যাচ্ছে।
ভাতের প্লেটে ভাত হাতে নিয়ে আনমনে বসে থাকা তৃষ্ণার থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো আরশাদ।
দু লোকমা ভাত মুখে দিতে হু হু করে কেঁদে উঠেছে সে।
আকস্মিক ঘটনায় বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে সবাই।
মুখে সামনে ভাত তুলেছিল তৃষ্ণা। হাতের ভাত প্লেটে রেখে আরশাদের পিঠে হাত রেখে জিজ্ঞেস করল,
“কি হয়েছে? কি হলো?খারাপ লাগছে।”
আরশাদ কে স্বান্তনা দিতে রঙ্গান উঠে এসে বলল,
“কিছু কিছু সময় পরিস্থিতি আমাদের হাতের মুঠোয় থাকে না। যেমন এখন তোমার নেই।
বিশ্বাস রাখো, স্থির হও যা তোমার ছিল আজন্ম কাল থাকবেই। শুধু একটু যযত্নশীল হতে হবে।”
তৃষ্ণা তখনো বেকুল কন্ঠে জিজ্ঞেস করছিল।
রঙ্গান বেশ বুঝতে পারে আরশাদ অনুতপ্ত এবং যেহেতু তৃষ্ণার পরিবার কিছু জানে না তাই সে কথা কাটিয়ে নেয় এই বলে যে,
“আংকেল অপারেশন থিয়েটারে। এখন ওর মনের অবস্থা তো তুই বুঝিস। আমরা জানি যে কোনো সময় যে কোনো কিছুর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।”
তৃষ্ণা হাত সরিয়ে নেয় নিজের ভাতের প্লেট থেকে। আরশাদের ভাতের প্লেট কাছে টেনে নিয়ে লোকমা ভাত তার মুখের সামনে তুলে ধরে বলল,
“উই উইল ম্যানেজ। না?”
আরশাদ শক্ত হাতে তৃষ্ণার হাত ধরে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।
আরশাদের বাবার অপারেশন ভালোয় ভালোয় শেষ হয়েছে। আরশাদ তার মা কে তৃষ্ণাদের বাসায় পৌঁছে দিতে গেছে।
তৃষ্ণার ভাই, রঙ্গান,তৃষ্ণার বাবা এবং তৃষ্ণা রয়েছে হাসপাতালে।
আজ রাতে আরশাদ এবং তৃষ্ণার ভাই থাকবে। যদিও কিছুর প্রয়োজন হবে না তবুও কারণ নিজেদের মনের শান্তির জন্য৷
আরশাদ ফিরে এলে তৃষ্ণা তার বাবার সাথে চলে যাবে।ওয়েটিং সিটে ভাইয়ের কাধে মাথা দিয়ে কথা বলছিল তৃষ্ণা।
আগামী দিন সাতেকের জন্য তার ছুটি প্রয়োজন।
কিন্তু দরখাস্ত করতেই হবে তাই আগামীকাল যেতে হবে।
কথা শেষ করে তৃষ্ণা ভাইকে বলল,
“ঘাড় ব্যথা করছে ভাইয়া। চোখ জ্বালা করছে৷”
“আজ পানি খেয়েছিস?একটু অনিয়ম হলেই কষ্ট হয় তোর। একটু সামলে থাকবি না। বোস এখানে আমি পানি নিয়ে আসি। সাথে কিছু খাবার।”
“না, যেও না।থাকো আমি একটু চোখ বন্ধ করে থাকি। ও ফিরলেই তো বাসায় চলে যাবো।”
কথার মাঝে রঙ্গান এবং তৃষ্ণার বাবা চলে আসে। রঙ্গানের ডিউটি আটটা থেকে৷ কিছুক্ষণ পর তাকে চলে যেতে হবে। তারা গিয়েছিল পাশের কফি শপে।
তৃষ্ণার বাবা তৃষ্ণা কে জিজ্ঞেস করলে তার ভাই সব বলে।
রঙ্গান অনুমতি চায় তৃষ্ণাকে পাশের কফিশপে নিয়ে যেতে। ভদ্রলোক বলেন তোমরা তিনজন যাও আমি আছি।
ভালবাসার সময় তো নেই
ব্যস্ত ভীষন কাজে,
হাত রেখো না বুকের গাড় ভাজে।
ঘামের জলে ভিজে সাবাড়
করাল রৌদ্দুরে,
কাছএ পাই না, হৃদয়- রোদ দূরে।
কাজের মাঝে দিন কেটে যায়
কাজের কোলাহল
তৃষ্নাকে ছোয় ঘড়ায় তোলা জল।
নদী আমার বয় না পাশে
স্রোতের দেখা নেই,
আটকে রাখে গেরস্থালির লেই।
কফিতে চুমুক দিয়ে তৃষ্ণা জিজ্ঞেস করলো,
“রুদ্র বাবুর কবিতা, এখনো মনে আছে তোমার?”
রঙ্গান মৃদু হাসে। চোখের ইশারায় দেখায় পাশের এক টেবিলে বসে থাকা দুজন কে।
তাদের দিকে তাকিয়েই সে বলল,
“প্রথম প্রেমের অনুভূতি কিংবা প্রথম প্রেমের বেঈমানী। সব সময় মনেই থাকে।”
চলবে।