#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-৭
আরশাদ যখন হাসপাতালে পৌঁছেছে তখন তাকে জানানো হয় রোগীর অবস্থা আশংকাজনক।
রক্তের প্রয়োজন হতে পারে।
যখন সে ধীরে ধীরে কেবিনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো তখন জানতে পারে গতকাল রাতে আনা বাইক এক্সিডেন্টে ভর্তি রোগী মারা গেছেন।
অন্য জনের অবস্থা আশংকাজনক। আরশাদ এই রক্ত জিনিসটা নিতে পারে না। তার প্রচন্ড গা গুলিয়ে উঠে এসবে।
এইতো বছর দুয়েক আগের কথা।তৃষ্ণাকে সে নিয়ে গিয়েছিল ভ্যাক্সিন দিতে। পালিত বিড়াল কামড়ে দিয়েছিল তৃষ্ণাকে। খুব একটা রক্ত না পড়লেও কেউ রিস্ক নিতে চায়নি। ভ্যাক্সিন দিতে গিয়ে তৃষ্ণা নড়ে চড়ে বসতেই হালকা রক্ত বেরিয়ে আসে সুঁচের আঘাতে।
ব্যস সেই রক্ত দেখেই আরশাদের পৃথিবী উল্টো পাল্টা লাগছিল।আজ চোখের সামনে রক্তাক্ত মানুষ দেখেও নিজেকে সামলে নিতে পারলো না।
গতকালকের নেশা এখনো কাটলেও মাথায় একটা ভারী ভাব রয়েই গেছে। এর মাঝে এত মানসিক চাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আরশাদ যখন তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যাচ্ছিলো তখন কোথা থেকে তৃষ্ণা এসে তাকে দু হাতে আগলে নিলো।
তৃষ্ণাকে দেখে আরশাদ কিছুটা স্বস্তি পেয়ে তার হাত আঁকড়ে ধরে পাশের ওয়েটিং সিটে বসে।
“তোমার কী শরীর খারাপ লাগছে।”
তৃষ্ণার প্রশ্নে আরশাদ কিছুক্ষণ চুপ থাকে। এরপর তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে দেখে তার পরণে বাসার পোশাক।
সালোয়ার কামিজ পরে আছে। তৃষ্ণার ওড়নায় সে নিজের মুখ মুছে, চশমাটা মুছে নিয়ে বলল,
“উহুম।পানি হবে তোমার কাছে? ”
“হুম।”
“এখানে কেন?কার কী হয়েছে?”
“তুমি রাতে কোথায় ছিলে?”
“ওয়েস্টার্ন রিসোর্টে।”
“ওহ্।”
“বললে না তো!”
“কি?”
“আশ্চর্য! কার কী হয়েছে?বাবা- মা কোথায়?”
“মা আছে সামনে। বাবার কার্ডিয়াক এট্যাক হয়েছে।”
“মানে?বাবার এট্যাক হয়েছে আর তুমি আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করোনি?”
“তোমার ফোন বের করে দেখো। জবাব পেয়ে যাবে। কিছুক্ষণ পর বাবাকে একটা পরীক্ষা করাতে নিবে। হার্টে ব্লক আছে কী না দেখার জন্য।”
“বাবার সাথে দেখা করবো।”
“এখন প্রয়োজন নেই।”
ভারী পুরুষালী কন্ঠে কেউ আরশাদকে নিষেধ করে।
সামনে তাকিয়ে দেখে রঙ্গান দাঁড়িয়ে আছে। আরশাদের সাথে কুশলাদি বিনিময়ের দিকেও যায়নি রঙ্গান। তৃষ্ণা কে বলল,
“তৃষ, আপাতত প্রয়োজন নেই দেখা করার। চাচা হাইপার হলে সমস্যা হবে। তুই চল ও এখানেই অপেক্ষা করুক।চল আমার সাথে।”
আরশাদের জবাবের অপেক্ষা না করে রঙ্গান চলে যায় কেবিনের দিকে।
গতকাল বিকেল থেকে রাত আটটা অবধি রঙ্গান অপেক্ষা করছিল আরশাদদের বাসায়। আরশাদ আসবে তার সাথে কথা বলবে এবং কী সমস্যা জানার চেষ্টা করবে। কিন্তু আরশাদের ফিরেনি। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পরেও যখন আরশাদ ফিরেনি তখন রঙ্গান ডিউটিতে চলে যায়।
আরশাদের বাবা গতকাল সন্ধ্যে থেকেই কিছুটা অসুস্থ ছিল।তবে তৃষ্ণার অবস্থা দেখে কিছু বলেনি। রঙ্গান, বা আরশাদের বাবা চেষ্টা করেছে গতকালের সন্ধ্যে যেন অনেকটা আনন্দের মাঝে কাটে।
রাত যত গভীর হতে থাকে ব্যথাটা বাড়তে থাকে। ছেলের প্রতি জমা অভিমানের কারণেই সে অসুস্থতার কথা জানায় নি।
তিন পাওয়ারের টেনিল খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু রাত দুটোর দিকে তার বুকে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়। ধীরে ধীরে ঘামতে থাকে সে।
উঠে বসে, দাঁড়িয়ে কোনো ভাবেই যখন শান্তি পাচ্ছিলো না তখন গোসল করার সিদ্ধান্ত নেয়।
ঠিক সে সময় আরশাদের মা জেগে উঠে। বুঝতে পেরে তৃষ্ণাকে এক ডাক দিতেই তৃষ্ণা দ্রুত চলে আসে। দুজন মেয়ে মানুষ মাঝ রাতে অসুস্থ মানুষকে নিয়ে কোথায় যাবে বুঝতে পারছিল না।কারণ তাদের একমাত্র ছেলের ফোন তখন বন্ধ।
বাধ্য হয়েই তৃষ্ণা তার ভাই এবং রঙ্গান কে কল দেয়।তৃষ্ণার ভাই আগে পৌঁছে গেলেই তাকে নিয়ে হাসপাতালে চলে আসে তৃষ্ণা।
কিছুক্ষণ পর রঙ্গান আরশাদের মা কে নিয়ে পৌঁছায়৷
গতকাল অবধি যা হয়েছে তা নিয়ে কোনো আক্ষেপ ছিল না তৃষ্ণার আরশাদের প্রতি তবে আজ চাপা কষ্ট অনুভব হচ্ছে।
জন্ম নিচ্ছে তীব্র অভিমানের।
ডক্টর জানালেন হার্টে ৯৮% এর দুটো ব্লক রয়েছে। দ্রুত সার্জারী করাটাই উত্তম। এটি অবশ্যই ব্যয়বহুল হবে।
পেশেন্টের যা অবস্থা তাতে যত দ্রুত হয় তত ভালো।
রঙ্গান তখন ছিল না।জরুরী কাজে বেরিয়েছে। তৃষ্ণা এবং আরশাদ যখন জানতে পারলো তখন দুজন চুপচাপ ছিল।
আরশাদ নিজে জানে তার কাছে এত টাকা নেই। বাবা পেনশনের টাকায় নিজ ইচ্ছেয় বাড়ি করেছে। এই মুহূর্তে এত টাকার জোগাড় করা আদৌও কী সম্ভব?
অফিস থেকে এক দিনের ছুটি নিয়েছিল আরশাদ৷ আগামীকাল তাকে অফিসে যেতে হবে। চেষ্টা করবে লোন নেওয়ার। তাছাড়া আর উপায় তো নেই। পুরোদিন আরশাদ চিন্তা করেছে সে সময়ে অসময়ে কতই না টাকা নষ্ট করেছে৷ এইতো গত পরশু সে হাজার বিশেক টাকা নষ্ট করেছে মাত্র বন্ধুদের কে বিয়ার খরচ দিয়ে।অথচ আজ বিশ হাজার টাকা থাকলেও অনেকটা এগিয়ে যেত।
অফিস শেষে যখন আরশাদ বাবার কাছে হাসপাতালে গেল তখন রিসিপশন থেকে তাকে জানানো হলো তার বাবাকে কিছু প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করতে নেওয়া হয়েছে। কারণ কাল দিন পর তার অপারেশন।
এবং তার হাতে একটি রিসিট দিয়ে বলল সই দিতে।
“টাকা কখন পেমেন্ট হলো?”
“উনার ছেলের স্ত্রী মিসেস তৃষ্ণা ওয়াহেদ কিছুক্ষণ পূর্বে আপাতত দুই লক্ষ টাকা পে করেছে। বাকীটা অপারেশন এর দিন করবে বলেছে।”
আরশাদ রিসিট হাতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।তৃষ্ণার কী আদৌও কোনো প্রয়োজন ছিল তার বাবার জন্য এসব করার?যেখানে তাদের ডিভোর্স ফাইল হয়েছে।
চলবে
#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#পর্ব-৮
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
ওয়েটিং সিটে বসে প্রায় ঘুমিয়ে গিয়েছিল তৃষ্ণা। শাশুড়ি মায়ের কাঁধে মাথা রেখে।ক্লান্তিতে তার দুচোখ আর সঙ্গ দিচ্ছে। আরশাদের মা কিছুটা চেপে বসে তৃষ্ণাকে একটু ভালো ভাবে বসে থাকতে দিলো। তার সামনের সিটে বসে থাকা ভদ্র মহিলা জিজ্ঞেস করলেন,
“আপনার মেয়ে?”
“জি।”
“বিয়ে দিয়েছেন?কিছু না মনে করলে একটা কথা বলি? ”
“বলুন।”
“আমার কাছে ভালো একটা সম্বন্ধ আছে। ছেলে ভালো, চাকরি করে, বাবা মায়ের এক ছেলে।”
“আচ্ছা।”
“যদি রাজি থাকেন তো….. ”
“ছেলে বিয়ে করিয়ে এনেছি এই মেয়ে।”
“ঠিক বুঝলাম না।”
“আমার ছেলের বউ।”
আরশাদের মায়ের জবাবে ভদ্র মহিলা বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন।
বোকা বোকা হাসি দিয়ে বললেন,
“ছেলের বউকে কেউ মেয়ে বলে পরিচয় দেয় না।”
“দেয় না, তবে আমি এবং আমার স্বামী দেই।কারণ এই মেয়েটা তো আমাদের মা-বাবা বলে ডাকে। তবে কেন সে আমার সন্তান নয়?”
“আপনার মতো সবাই চিন্তা করলে!”
কথোপকথনের মাঝে রঙ্গান এসে আরশাদের মায়ের হাতে কফি দিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর আরশাদের বাবাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যেতে হবে। আজ তাই রঙ্গান ছুটি নিয়েছে। আরশাদ তখন রক্ত দিতে এসেছে তাদের সাথে ব্যস্ত।
প্রথমে চিন্তা করেছিল রক্ত কিনে আনবে। কিন্তু এর বিরোধিতা শুরু করে তৃষ্ণার বাবা।
কারণ রক্ত কেনা-বিক্রি করা উভয় হারাম।
তৃষ্ণার ভাই ডোনার নিয়ে এসেছে।
রঙ্গান চলে যাওয়ার পর ভদ্রমহিলা আবার বললেন,
“এটা আপনার ছেলে? মা-শাহ্-আল্লাহ্ , ছেলে তো বেশ সুন্দর।”
“জি, এটাও আমার ছেলের মতোন।”
সোনালী এইবার দিয়ে সতেরো বার কল দিয়েছে। আরশাদ প্রতিবার কেটে দিচ্ছে। আজ রাকিবের বাসায় তাদের ছোট্ট একটা গেট টুগেদার রয়েছে। সেখানে যাবে কী না এর জন্য। কিন্তু আরশাদ আগেই মানা করে দিয়েছিল।সে যতই খারাপ ছেলে বা সন্তান হয়ে থাকুক না কেন? এতটাও না যে তার বাবাকে অপারেশন থিয়েটারে রেখে সে আড্ডা দিতে পারবে।
পৃথিবীর সব থেকে বাজে সন্তানের পক্ষেও এটা সম্ভব নয়।
বিগত কয়েকদিন যাবত একটা অপরাধবোধ তাকে ঘুমোতে দেয় না। সে জানে না সে রাতে নেশা করে এসে কী কী করেছিল বাসায় তবে এটা নিশ্চিত তার বাবার অসুস্থতা এই কারণেই অনেকটা বেড়েছে।
যদি রাতে রিসোর্টে না থাকতো তবে হয়তো বাবাকে আরো আগে হাসপাতালে নিতে পারতো।
ডোনারকে ভিতরে রেখে এসে বাহিরে দাঁড়িয়ে কল রিসিভ করে আরশাদ।
ফোনের অপরপাশে তখন হাই ভলিউমে হিন্দি গাল চলছে।
“কী মশাই আজ আসবেন না?”
“না।”
“কেন?”
“রাকিব বলেনি?আমার বাবার আজ সার্জারী আছে।”
“অহ আচ্ছা, জানতাম না। আংকেল এখন কেমন আছে?”
“অপারেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।”
“আপনি কী আমার প্রতি রেগে আছেন?”
“জি না।”
“সেদিন দুপুরে কোথায় হাওয়া হয়েছিলেন?দুপুরের পর আপনাকে পেলাম না।”
“রিসোর্টেই ছিলাম।কিছুটা ক্লান্তি ছিল তাই ঘুমিয়েছিলাম।”
“আমি আপনার খোঁজ করেছিলাম কিন্তু আপনি নিরুদ্দেশ ছিলেন।”
“জি। মাঝেমধ্যে নিরুদ্দেশ হতে হয়।”
“একটা কথা বলবো?”
“বলুন।”
“আমাদের মাঝে সম্পর্ক কী?”
“আমরা দুজনেই রাকিবের বন্ধু। রাকিব আমার বন্ধু ঠিক তেমনি আপনি রাকিবের। তাই বলতে পারেন বন্ধু।”
“যদি বলি এর থেকে…… ”
“কিছু মনে করবেন না সোনালী আমি ব্যস্ত। রাখছি।”
আরশাদ কল কেটে দিয়ে পা বাড়ায় বাহিরের দিকে। ভুল একবার করাই শ্রেয়। বার বার নয়। কারণ এবার সময় এসেছে ভুল শুধরে নেওয়ার।
The fog is now dead.
The last point of which is the deficit in the universe.
The first rays of the sun came to the earth and disappeared.
But why so many evenings around?
Love! Why aren’t you and I together?
“সামিয়ার লেখা এখনো পড়িস?”
রঙ্গানকে পাশে বসতে দিয়ে তৃষ্ণা বলল,
“পড়া হয় মাঝেমধ্যে। বেশ ভালো লিখে কিন্তু মেয়েটা।”
“হুম।”
“ভাই জানো অনেকেই এখানে মনে করছে শাশুড়ি মায়ের মেয়ে আমি আর তুমি আমার প্রেমিক।”
বলেই মুখে হাত দিয়ে হাসতে থাকে সে। তার হাসির দিকে ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে রঙ্গান বলল,
“কোন ভাইরাস এই চিন্তা ভাবনা করে?”
“রিসিপশনের মেয়েটা আরো অনেকে।”
তৃষ্ণার হাসি ততক্ষণে থেমেছে কারণ রঙ্গান তার ডান হাত নিজের দু হাতে আবদ্ধ করে বলছিল,
“তুই আমার বোন নয়। তোকে আমি বোন বলে পরিচয় দেই না কারণ তুই বোনের থেকে অনেক বেশি তবে তুই আমার প্রেয়সীও না।প্রেয়সীর থেকে অনেক নিচে। আমার দিক থেকে যদি প্রেমিকের এক ইঞ্চি এক তরফা ভালোবাসা তোর প্রতি থাকতো
তবে আজ তুই আমার স্ত্রী হতে বাধ্য থাকতি।এবং আরশাদ কখনোই আমাদের মাঝে আসতে পারতো না।”
তৃষ্ণা মুচকি হেসে বলল,
“সত্যি কী তাই?”
চলবে।