লাভ উইথ মাই বেটারহাফ পর্ব-১৬ এবং শেষ পর্ব

0
3009

#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-১৬

রাকিবের সামনে হাত পা বাধা অবস্থায় পড়ে আছে তৃষ্ণা।
হাতের মেহেদী লেপ্টে গেছে অনেক আগেই। কপালের দিকটায় জখম হয়ে নীলচে কালো বর্ণ।
হাত- পা বাধা অবস্থায় পড়ে থাকা তৃষ্ণার মুখে গোঙানির শব্দ।
নিজ বাসায় বন্দী তৃষ্ণার মুখে এক গ্লাস পানি ছুড়ে মারলো রাকিব।
তাকে টেনে হিচড়ে উঠিয়ে চেয়ারে বসিয়ে কল দিলো আরশাদকে।

এত কোলাহলের কারণে আরশাদ ফোন রিসিভ করেনি।রঙ্গান এবং সে ব্যস্ত মেয়ের বাড়ির লোককে আপ্যায়ন করায়।
কোথাও তৃষ্ণাকে না দেখে তুষার এগিয়ে গিয়ে তৃষ্ণাকে খুঁজতে লাগলো।
আশেপাশে কিংবা পুরো বাসা খুঁজেও যখন তৃষ্ণাকে খুঁজে পেলো না তুষার তখন ছাদে ফিরে এসে বাবার হাত ধরে বলল,

“বাবা আমার বুকের মাঝে এমন ফাকা ফাকা লাগছে কেন?আমার কলিজা কই?”

“কী হয়েছে?”

“বাবা তৃষ্ণা কোথায়?”

মুহূর্তের মধ্যে বিয়ে বাড়ির পরিবেশ হটাৎ করেই নিশ্চুপ হয়ে গেল।আরশাদ ফোনে বার বার কল দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে।
ঘরে ফিরে এসে দেখলো বিছানার নিচে ফোন বন্ধ হয়ে পরে আছে। ফোনের ডিসপ্লে ভেঙেছে, মনে হচ্ছে কেউ খুব জোরে পা দিয়ে আঘাত করেছে।
আরশাদের এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো তৃষ্ণা বুঝি তার থেকে দূরে চলে যাবে বলে কোথাও চলে গিয়েছে।পর মুহূর্তে মনে হলো তৃষ্ণা এতটা দায়িত্ব জ্ঞানহীন মেয়ে নয়। নিজের ভাইয়ের বিয়ের দিন এমন কিছু করবে বা এমন সিদ্ধান্ত নিবে।

যেহেতু তৃষ্ণার ফোন এ বাড়িতেই বন্ধ হয়েছে তাই ট্রেস করেও লাভ হবে না।রঙ্গান আশেপাশের রাস্তার সিসি টিভি ফুটেজ দেখতে বেরিয়েছে। যখন সে বেরিয়ে যাচ্ছিলো তুষার তার হাত ধরে বলল,

“আমার মনে হচ্ছে কেউ আমার কলিজা আমার থেকে আলাদা করে নিয়েছে। আমি শ্বাস নিতে পারছি না।দেশের অবস্থা ভালো না। না জানি কেমন আছে রে আমার বোন। খুঁজে এনে দে। বিনিময়ে যা চাইবি দিবো।”

“তোর কলিজায় হাত দিয়েছে বলছিস?আমার তো সম্মানে। আরশাদের অস্তিত্বে। চিন্তা করিস না খুব দ্রুত ঘরের সম্মান ঘরে ফিরিয়ে আনবো।”

সিসিটিভি ফুটেজে তেমন কিছুই পাওয়া গেল না।তবে এটা নিশ্চিত তৃষ্ণা বাড়ির বাহিরে যায়নি।আরশাদ নিজের ফোন হাতে ব্যস্ত ছিল।হুট করেই তার ফোনে আবার কল এলো। ব্যস্ত থাকায় আরশাদ কেটে দিলে তার ফোনে আসে একটি এম এম এস।
যেখানে তৃষ্ণা চেয়ারে বাধা অবস্থায় এবং রাকিব অভব্য ভাষা ব্যবহার করে নানান ধরনের কথা বলছে।

রঙ্গান ফিরে এসে কিছু বলার পূর্বেই আরশাদ বলল,

“রাকিব আমার থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য… ”
“তোমার থেকে না।ওকে জেলে পাঠিয়েছিল তৃষ্ণা। তাই তৃষ্ণাকে অপহরণ করেছে। আমার উচিৎ ছিল যেদিন ও তৃষ কে এসিড মারার হুমকি দিয়েছিল সেদিন ওকে শাস্তি দেওয়ার। আবার বুঝতে পারলাম” আগুন এবং শত্রুর শেষ রাখতে নেই।তবে তৃষ্ণা এবাড়িতেই আছে। ওকে বাহিরে নিয়ে যায়নি।”

“কোথায়?”

“জানি না।তবে আমরা পুরো বাসা তল্লাশী করবো।বিশেষ করে বদ্ধ ঘরগুলো।”

সেই মুহূর্তে রাকিবের কল এলো।সে নিজ থেকে জানালো কোথায় আছে। সবাই যখন বাড়ির পিছনে পৌঁছেছে রাকিব পালানোর চেষ্টা করলো না।
সে শুধু হেসে বলল,

“আমি পালালেও আমাকে ঠিক ধরে নিবি তোরা।কিন্তু আমার কাজ আমি করে ফেলেছি।আরশাদ দেখ! দুই ঘন্টা তোর বউয়ের সাথে আমি একা।ভাবতে পারছিস?আমি কী কী করতে পারি?এখন।হয়তো পুলিশের অত্যাচারে আমি স্বীকারোক্তি দিবো আমি কিছুই করিনি শুধু মাথায় আঘাত লাগায় তোর বউ মরার মতোন পড়ে আছে কিন্তু তুই তো জানিস সত্যিটা কী?এমন মেয়ের সাথে সংসার করবি?”

রাকিব এরপর আর কোনো কথা বলতে পারেনি।রঙ্গানের থাপ্পড়ে সে কানে হাত দিয়ে বসে পড়লো।তুষার এগিয়ে গিয়ে ততক্ষণে তৃষ্ণার বাধন খুলে ফেলেছে।
কোনো ভাবেই বোনকে কোলে তুলে নিয়ে ছুটলো ঘরের দিকে।আরশাদ ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল শূন্য ঘরটায়।

মানসিক ভাবে যে ধাক্কাটা লেগেছিল তৃষ্ণার কিংবা শারিরীক! সব’টা কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় লেগেছে তৃষ্ণার। এই সময়টায় সবাই তাকে সাপোর্ট করেছে। সব’চে করেছে আরশাদ।
সেরাতে কী হয়েছিল কেউ জিজ্ঞেস করেনি।অভিশপ্ত সন্ধ্যের কথা কেউ তৃষ্ণাকে মনে করাতে চায় না।তবে তৃষ্ণা নিজ থেকে সবটা বলেছিল।আরশাদ বেরিয়ে যাওয়ার পর রাকিব ঘরে প্রবেশ করে। তার পরণেও কনে পক্ষের পোশাক ছিল।ওয়াশরুমে যাবে বলে তৃষ্ণার সাহায্য চায়।তাই তৃষ্ণা তার ঘরেরটা ব্যবহার করতে বলে।পিছন ফিরে ফোন হাতে নিচ্ছিলো তখন ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় দেখে লোকটা তার দিকে ফুলদানি তুলেছে।পিছন ফিরে তাকাতেই বাড়িটা তার কপাল বরাবর আঘাত করে। এরপর তার আর কিছুই মনে নেই।

আরশাদ তার কৃতকর্মের জন্য তৃষ্ণার কাছে শেষ একটা বার সুযোগ চেয়েছে।
রাকিবের কাজে সে সন্দেহ তো দূর তৃষ্ণাকে জিজ্ঞেস অবধি করেনি।কারণ তার বিশ্বাস রাকিবের মতোন কাপুরষ এর কোথায় বার বার ভাঙার নয়। সে ভুল করেছিল তবে পাপ করবে না।

প্রতিটি মানুষ তৃষ্ণার কাছে অনুরোধ করেছে আরশাদকে একটা বার সুযোগ দেওয়ার। কারণ প্রতিটা সম্পর্ক একটা দ্বিতীয় সুযোগ প্রাপ্য।
তৃষ্ণা কিছু বলেনি। গত কয়েকদিনে তার সব কিছু কেমন ঝাপসা হয়ে উঠেছে।
সকল স্মৃতি আরশাদের চেষ্টায় পুনরায় উজ্জ্বল। মাঝেমধ্যে তৃষ্ণা নিজেকে জিজ্ঞেস করে,
“আরশাদকে মাফ করে দেওয়ার কারণ কী এটাই যে সে রাকিবকে বিশ্বাস করেনি?”
এমন হলে কী সে আরশাদের উপর অন্যায় করছে না?
রঙ্গানকে সব’টা বলার পর রঙ্গান বলেছিল
“না। একটি সম্পর্কে বিশ্বাস আয়নার মতোন।তুই তার প্রতি বিশ্বাস দেখিয়েছিস তাই আয়নাও তোকে বিশ্বাস করছে।একটা সুযোগ সবার প্রাপ্য।”

আরশাদ প্রেমিক স্বামী হওয়ার জন্য মাঝেমধ্যে এমন সব পাগলামো করে ফেলে তৃষ্ণা তাকে ভালো না বেসে পারে না।
দুঃস্বপ্নের মতোন ভুলে যেতে চায় সেই কয়েকটা দিন।
প্রতিদিন সকালে আরশাদ ঘুম থেকে উঠে তৃষ্ণার কপালে ঠোঁট স্পর্শ করিয়ে যখন বলে,

“আমার ভালোবাসা একঝাক বোলতার মতোন।আমি চাই এই এক ঝাক বোলতা তোমায় পুরোদিন আমার কথা ক্ষণে ক্ষণে মনে করিয়ে দিক।”

“বোলতা?আর কিছু পেলে না?এখন বুঝি আমার হাত দিয়ে মাছের আঁশটে গন্ধ আসে না?কম দামী জিনিস পরলে মানে লাগে না?”

“না। কারণ ক্ষয় যাওয়া ভালোবাসায় প্রেমের প্রলেপ দিচ্ছি।ভালোবাসতে বাসতে প্রেমটা উবে গিয়েছিল। ভুলে গিয়েছিলাম প্রেমিকের অনুভূতি।”

অনেকদিন পর আজ তৃষ্ণা কলেজে এসেছে।পুরো ব্যস্ততম দিন পার করে ফিরছিল আরশাদের সাথে।
বাহিরে তখন ঝুম বৃষ্টি। তাই সি এনজি নিয়ে ফিরছিল তারা।তৃষ্ণা পাশে বসতেই আরশাদ সেই চিরচেনা গন্ধ পেল।যে গন্ধটা কেবল তৃষ্ণার থেকেই পায় সে। তৃষ্ণার হাত নিজ হাতে আবদ্ধ করে মনে মনে বলল,

“ভাগ্যিস! সময় থাকতে ভুল বুঝতে পেরেছিল।নিয়তি তাকে আরেকবার সুযোগ দিয়েছে। না হলে কী হতো?আজকের এই মুহূর্ত কী কখনো স্মৃতির পাতায় জমা হতো?”

তৃষ্ণা তার দিকে তাকিয়ে চোখ ইশারায় জিজ্ঞেস করে কী ভাবছে?
আরশাদ তৃষ্ণার ডান হাতের উল্টো পাতায় আলতো চুমু দিয়ে বলল,
” নাউ আই ফিল ইন লাভ উইথ মাই বেটারহাফ।”

(সমাপ্ত)

কিছু কথাঃ ডিভোর্স কোনো সমস্যার সমাধান নয়। একটি সম্পর্কে উভয়কেই কিছু না কিছু ত্যাগ করতে হয়। ডিভোর্স এর পর যাকে বেছে নিবেন সে আপনাকে সুখী রাখবে এমন নাও হতে পারে। সম্পর্ককে একটা শেষ সুযোগ দিয়ে দেখুন।যদি সুযোগের পর মানুষটা না বদলায় তবে সিদ্ধান্ত নিন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে