#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্বঃ১৫
“কী বললি?মেয়ের বয়স চল্লিশ?তুষারের সাথে ওই মেয়ের পরকীয়া? আরে ওটা মেয়ে না তো!ওইটা বুড়ি, তিন বাচ্চার মা সে আবার মেয়ে বা মহিলাও বলা চলে না সে আস্ত একটা বুড়ি। মেয়েরা কুড়িতেই বুড়ি হয় আর সে চল্লিশ?ঝুনা বুড়ি।
শেষ মেষে তুষার এক ঝুনা বুড়িকে?”
রঙ্গানের এমন কথায় বেশ বিরক্ত হলো তৃষ্ণা।কোথায় সে নিজের সমস্যা নিয়ে কথা বলছিল আর কই সে তুষারকে ক্ষেপানোর জন্য এসব বলছে।সামনেই একটু দূরে তুষার দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে, তাকে বিরক্ত করার উদ্দেশ্যে সে এসব বলছে।
“তুমি থাকো তো! আমি যাচ্ছি।”
এবার রঙ্গান বসে থাকা অবস্থায় তৃষ্ণার বেনুনী তার হাতে প্যাঁচিয়ে নিয়ে একদম তার পাশে বসালো তৃষ্ণাকে।
তৃষ্ণা রঙ্গানের গা ঘেঁষে বসে পড়েছে। তখন তৃষ্ণাকে আরেক দফা বিরক্ত করার উদ্দেশ্য রঙ্গান বলল,
“কী ব্যাপার? তুই কী আমার কোলে বসবি না কী?’
” চুল ছাড়ো। ব্যথা লাগছে।”
“লাগুক। এতে যদি তোর বিরিং কিছুটা কমে।”
“লোকে দেখলে কী বলবে?বাড়িতে এত মানুষ! আমি তোমার সাথে পরকীয়া করছি।”
“নাউজুবিল্লাহ্। মেয়ের অভাব পড়ছে কী?যে তোর মতো বুড়িকে বিয়ে করবো?”
“আমি বুড়ি?”
“চল্লিশ বছরের দামড়ি বুড়ি যদি নিজেকে তোর সমান বলে তোর সাথে নিজের কম্পেয়ার করে তবে তুই বুড়ি।”
“আমার কী দোষ? আমি বুঝি না সে নিজেও একজন প্রফেশনাল আমিও তাই। তাকে মানুষ কম চিনে, স্টুডেন্ট বলো কিংবা অন্যকেউ।তার পরিচিতি কম বলে কী সে আমাকে সব সময় এমন বলতে পারে?
হ্যাঁ বুঝলাম তার কাজের অভিজ্ঞতা বেশি কিন্তু আমার কাজের চাহিদা বেশি।
সে সবসময় আমার নামে এর কাছে ওর কাছে বদনাম করবে আবার আমি কিছু বললে সবাই আমাকে কথা শোনাবে, আমি কেন সহ্য করি না, এদিকে সেই অভব্য মহিলা যে নিজ থেকে আগে লাগতে আসে সেটা সবাই ভুলে যায় তখন।”
রঙ্গান তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে একটু উচ্চস্বরে হেসে দিয়েছে। এদিকে অন্যমনস্ক তৃষ্ণা হঠাৎ হাসির শব্দ শুনে কিছুটা ভড়কে গিয়ে তার হেঁচকি উঠে গেছে।
তার দিকে পানি এগিয়ে দিয়ে রঙ্গান বলল,
“সে তোর কলিগ মাত্র। পাত্তা দিস না।৩০ বছরের পর থেকে শরীরের হাড় ক্ষয় হতে শুরু করে মহিলার ব্রেণ ক্ষয় হওয়া শুরু করেছে।
আমি যাচ্ছি, প্রিন্সিপালের থেকে তোর ছুটি মঞ্জুর করে নিয়ে আসবো।কেমন?এবার বল কী খাওয়াবি?”
“আগে ছুটি।ছুটি মঞ্জুর করে দিয়েছিল তবে এই অভব্য মহিলা গিয়ে বলেছে আমি আগেও ছুটি নিয়েছি এখন ছুটি নেই কী করে?
না কোনো মেডিকেল ইস্যু না অন্য কোনো জরুরী কারণ।ভাইয়ের বিয়ের জন্য ছুটি?
হাফ ডে করেও তো বিয়ে এটেন্ড করা যায়৷”
“বলেছি তো,উনার ব্রেণ ক্ষয় হওয়া শুরু করেছে। চিন্তা করিস না।”
এবার তুষার এগিয়ে এসে বলল,
“কথা হয়েছে,ছুটি মঞ্জুর করে দিবে। একটা আবেদন করতে বলল এই আরকি।অফিশিয়াল ব্যাপার স্যাপার।”
“ব্যস হয়ে গেল।আর কী?”
“তবে বলো কী খাবে?”
তুষার এবং রঙ্গান একে অপরের দিকে তাকিয়ে দু জনেই এক সঙ্গে বলল,
“কড়া করে দুধ চা। সাথে চানাচুর মাখা।”
আরশাদ অফিসের কাজে ইদানীং খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। মাঝের দুদিনের বিরতিতে অনেক কাজ জমেছে।
দ্রুত হাতে কাজ শেষ করছে সে। কিছুক্ষণ পর মিটিং শুরু হবে তার।
প্রথমে মা কে কল দিয়ে তার বাবার সাথে কথা বলে নিলো সে।
তৃষ্ণাকে কল দিতেই তৃষ্ণা রিসিভ করে বলল,।
“আমি গোসলে।”
“আসবো?”
“কোনো প্রয়োজন?”
“আপনাকে আমার সবসময় প্রয়োজন।”
“আমি গোসলে।”
“ফোন সাথে কেন?”
“মাত্র ভাই কল দিয়েছিল।তাই।”
“কী খাবে বলো!”
“কিছুই না।”
“বাজারে কিছুই না পাওয়া যায় না।”
“বিরক্তির একটা সীমা থাকে।”
“প্রিয়তমা, ভালোবাসা এবং বিরক্তির কোনো সীমা থাকে না।”
“আপনার মিটিং শুরু হবে। দশ মিনিটে। পানি খেয়ে নিবেন।চশমা পরে প্রেজেন্টেশন দিবেন।আর হ্যাঁ সব ভালোয় ভালোয় হবে।”
“দ্যাটস্ মাই লেডি। আচ্ছা রাখছি।”
“হুম।”
ফোন রেখে আরশাদ মিনিট দুই জিরিয়ে নিলো।চোখ বন্ধ করে।প্রতিবার যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিজেকে জড়ানোর আগে সে তৃষ্ণার সাতে ফোনে কথা বলে নেয়৷ কারণ তৃষ্ণা তার জন্য সৌভাগ্য নিয়ে আসে সব সময়।মনটা ভালো থাকে, এদিকে কাজেও শান্তি। তবে মাঝের করা ভুলগুলো সে কী করে শুধরাবে?
সে চেষ্টা করছে তার ভুলগুলো শুধরে নিতে কিন্তু কোনো অনুতপ্ততা তার মনকে শান্তি দিচ্ছে না।
যাইহোক না কেন সে তৃষ্ণাকে ছাড়তে রাজি নয়। তার করা ভুলের শাস্তি সে যেকোনো কিছু মাথা পেতে নিবে শর্ত একটাই
তৃষ্ণা তাকে ছেড়ে যেতে পারবে না।”
রঙ্গান এবং তুষার কলেজ থেকে তৃষ্ণার ছুটি মঞ্জুর করে নিয়ে এসেছে। তুষার মনে হচ্ছে তার বিয়ে নিয়ে একটু বেশিই খুশি ।
নিজের বিয়ের কাজ সে নিজ হাতে করছে।
আর তার দাদী তাকে বার বার ধমকে বলতেছে,
“ও লো ছেরা শরম নাই?নিজের বিয়ার কাম নিজেই করতাছো?”
তুষার হেসে বলল,।
“দাদী আমার বুইড়া বেটি কাম করবো তাইলে কোনো ছেমড়ি?দাদী তুমি আরেকটু জোয়ান হইলা না কেন?তাহলে বিয়াটা আমি তোমারেই করতাম।”
“ও লো মুখ পোড়া। সাহস দেখছোনি?হাত পা বাইন্ধা বাইড়ামু কিন্তু।”
ছাদে হলুদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে উচ্চস্বরে গান বাজছে।
এমন গান কে বাজাচ্ছে তাকে দেখার খুব শখ হচ্ছে তৃষ্ণার। আপাতত সে পারছে না কারণ তার হাতে মেহেদী পরানো হয়েছে। তার শ্বশুরের কথায় সে দুহাত ভর্তি মেহেদী লাগিয়েছে। কারণ উনি বলেছে যে তৃষ্ণার মেহেদী রঙা হাতে না কী তৃষ্ণাকে পুতুল পুতুল লাগে।
আরশাদ ঘরে এসেছে। ক্লোজেট থেকে নিজের কাপড় বের করার সময় সে গুনগুনিয়ে গান গাইছে,
“পাশের বাড়ির চ্যাংরা পোলা প্রেম করিতে চায়
হিন্দি গানের তালে আমায় ডাকে ইশারায়।”
এই গানটাই বাজছে উপরে।আর তৃষ্ণার মেজাজ গরম হচ্ছে তার।
তৃষ্ণা আরশাদকে ধমকে বলল,
“এমন গান কে বাজাচ্ছে?”
“কে আবার তোমার ভাই।”
“বিয়ের খুশীতে ওর মাথাটা একদম গেছে।”
“বউ যে কী জিনিস! জানলে খুশী হতো না।দেখি হা করো।”
“কী এটা।”
“কিছুই না।”
“এটা খিচুড়ি।”
“হুম তোমার প্রিয়টা। নাও হা করো খাইয়ে দিচ্ছি।”
‘খাবো না।”
“তৃষ! খাবারের সাথে রাগ আমার পছন্দ না তুমি জানো।আমিও দুপুরে খাইনি।একসাথে খাবো বলে।”
তৃষ্ণা আরশাদের এই কণ্ঠস্বর খুব ভালো করে চিনে।আরশাদ যখন গুরুত্ব দিয়ে কোনো কথা বলে তখন তার কন্ঠস্বর এমন হয়।
খাওয়া শেষ করে আরশাদ তাকে পানি খাইয়ে মুখ মুছিয়ে দিলো। তৃষ্ণা উঠে দাঁড়িয়েছে, তার পরণে হলুদ শাড়ি। এর মানে হচ্ছে সে অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য একদম তৈরী।
আরশাদ কিছু না বলে তৈরী হতে চলে যায়। ফিরে এসে তৃষ্ণার সামনাসামনি দাঁড়িয়ে বলল,
“আমি জানি না আমি কী করলে তুমি আমাকে মাফ করবে। তবে আমি চাই তুমি আমাকে মন থেকে মাফ করো।তবে এটা মনে রেখো তুমি যা শাস্তি দিবে আমি মেনে নিবো কিন্তু আমাদের ডিভোর্স হচ্ছে না।”
তৃষ্ণা আরশাদের কথায় দাম্ভিকতার হাসি হেসে বলল,
“আগামী বুধ বার আমাদের ডিভোর্স নিয়ে কোর্টে যাচ্ছি। আশা করি সেদিন আপনার ভুল ভেঙে যাবে।”
চলবে।