#লাভ_উইথ_মাই_বেটারহাফ
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্বঃ২
সাত বছরের এক কন্যা সন্তান রেখে প্রবাসী স্বামীর জমানো সকল টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়েছে গৃহবধূ।
ফেসবুকে এমন কিছু একটা শিরোনাম পড়ে মেজাজ গরম হয়ে গেল তৃষ্ণার৷
পুরো খবর পড়ে জানতে পারলো
বিয়ের পর স্বামী বিদেশ চলে যায় মাস খানেকের মধ্যে। এরপর বার দুয়েক ছুটিতে এসেছিল।স্ত্রীর নামে ব্যাংকে রেখেছিল অনেক টাকা।স্বামী বিদেশ থাকার কারণেই স্ত্রীর হাতে উঠেছিল স্মার্ট ফোন।কথা বলার সুবিধার্থে কখনো কখনো ইমু, কখনো ম্যাসেঞ্জারে কথা হতো দম্পতির।
সেখান থেকেই কোনো ভাবে পরিচয় হয় এক ছেলের সাথে। প্রথমে আলাপচারিতা, বন্ধুত্ব পরবর্তীতে পরকীয়া।
মেয়েকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে বার বার ছেলের সাথে মিলিত হয়েছে স্ত্রী। একসময় স্বামীর বাড়ির লোক কিছুটা সন্দেহ করলে পরদিন সকালবেলায় নিজ গহনা এবং জমানো টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় স্ত্রী।
খবরটা পড়ে বেশ মেজাজ গরম হয়ে আছে তৃষ্ণার। আরশাদ সেই কখন থেকে চেষ্টা করছে সে বলবে তৃষ্ণা কে বলবে ডিভোর্স এর কথা৷ দুজনের মিউচুয়ালে হলে ঝামেলা কম হবে কিন্তু সাহস হচ্ছে না।
কিছুক্ষণ আগে তন্দ্রাঘোরে সে দেখছিল তৃষ্ণাকে সব বলেছে কিন্তু তৃষ্ণা রাজি নয়। উল্টো তার নামে মামলা দিবে বলেছে। স্বপ্নটা দেখে ঘেমে নেয়ে অস্থির আরশাদ।
হাতে সিগারেট নিয়ে তৃষ্ণার পাশে বসে বলল,
“এত রেগে আছো কেন?”
“মেজাজ গরম হচ্ছে।”
“কেন?”
“পরকীয়া কিংবা ডিভোর্স দাম্পত্য জীবনের কোনো সমস্যার সমাধান নয়।”
“যখন দুজন মানুষ একত্রে থাকতে না পারে তখন তারা কী করবে?”
“কিছুটা আত্নত্যাগ না করলে সংসার করা সম্ভব হয় না।”
তৃষ্ণার কথায় কিছুটা নড়েচড়ে বসে আরশাদ। এখন সময় হয়েছে, সুযোগ আছে কথাটা বলার। বেড সাইড টেবিলের উপর রাখা এশট্রে সিগারেট রেখে তৃষ্ণার সামনাসামনি বসে। কিছুটা তার দিকে ঝুকে বসতেই তৃষ্ণা মুখ সরিয়ে নিয়ে বলল,
“ভুলেও চুমু খাবে না।”
তৃষ্ণার কথায় নাক ফুলিয়ে হাসে আরশাদ। তৃষ্ণাকে পিছন ফিরিয়ে বসে হালকা হাতে ম্যাসাজ করতে থাকে তার কাধের দিকটায়।
“তো ম্যাম বলুন তো! আপনার কাছে আমাদের সংসার কেমন?”
“পারফেক্ট নয়। তবে চেষ্টা করি। তোমার সাথে আমার অনেক কিছু মিলে না।আমার যা পছন্দ তুমি পছন্দ করো না কিংবা তোমার যা পছন্দ আমি করে অভ্যস্ত নই তবুও তো চেষ্টা করি।”
“যেমন?”
“যেমন আমার বৃষ্টি পছন্দ না অথচ তুমি বৃষ্টি পছন্দ করো। তোমার মন রাখতেই আমি বার বার বৃষ্টিতে ভিজি এবং আমার চা পছন্দ তোমার কফি। তুমি বৃষ্টিতে ভিজে এসে আমার জন্য হলেও এক কাপ চা নিয়ে বসো।”
“আর?”
“এই যে!এখন করতেছো?তুমি জানো আমার কাধে পিঠে হঠাৎ করেই ব্যথা হয়। ঝিম ধরে থাকে আর তুমি ঠিক এই ভাবেই আমাকে স্বস্তি দাও।”
“যদি আমাদের মাঝে কখনো ডিভোর্স শব্দটা আসে?”
আরশাদের কথায় একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তৃষ্ণা । কয়েক মুহূর্ত চুপ থেক্র বলল,
“আমি জানি আমি তোমাকে ঠিক মতো সময় দিতে পারছি না।আমার সময়টা প্রয়োজন। বাবা মা অসুস্থ তার উপর এক্সাম চলে বাচ্চাদের। কাজের মেয়েটাও এত কিছু বুঝে না কিন্তু আমি মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি।বাকীটা যা থাকে কপালে।”
আরশাদ কিছু বলে না, খুব শক্ত করে তৃষ্ণার মাথাটা চেপে ধরে বুকের বা পাশে।
এইতো ফাকা ফাকা জায়গাটা পূর্ণ লাগছে।
না সে তৃষ্ণাকে ছাড়তে পারবে না।
হঠাৎ ম্যাসেজের শব্দে ঘুম ছুটে যায় আরশাদের। ম্যাসেঞ্জারে তার বন্ধুদের সাথে থাকা চ্যাটগ্রুপ থেকে অনবরত ম্যাসেজ আসছে।
সবার এক প্রশ্ন
“বলেছিস ডিভোর্স দিয়ে দিবি?”
আরশাদ ছোটো করে জবাব দেয়,
“না।”
তখন অনেকেই এংরি রিয়্যাক্টে ভরিয়ে দিলো তার ম্যাসেজ। রাকিব তখন বলল,
“ভাই তোর বউ কি তোর স্ট্যাটাসের সাথে যায়?তুই কেন আমাদের কথা শুনছিস না?”
“ও সবার থেকে আলাদা।”
“আলাদা না ফকিন্নি স্বভাবের। দেখিস না ওর চাল চলন? আমাদের যখন হ্যাং আউট হয় তখন তোর ভাবী কী তোদের সাথে মেশে না?
অথচ তোর বউ আসবে হিজাব পরে, থাকবে দূরে দূরে। একটু রাত হলেই তাগাদা দিবে। এই কী পুরুষ মানুষের জীবন?”
“দেখ ওর চাল চলন নিয়ে কিছু বলবি না। আমার স্ত্রী। ওর সম্বন্ধে কিছু বলার আগে ভেবে চিন্তে বলিস।”
“এটাই সমস্যা ও তোর স্ত্রী। আর তুই আমাদের জিগরি দোস্ত। তাই বলতেছি ছাড় ওরে। হাজার মেয়ের লাইন লাগবে।”
আরশাদ কোনো ম্যাসেজের রিপ্লাই করে না। নিজের হাতে ঘুমিয়ে থাকা তৃষ্ণার মাথা সরিয়ে বালিশে রাখে।তার মনের চলে দু মন দু দশা।
সে কী আদৌও সুখে আছে? না সুখ নামের অভিনয় করছে?
সকাল হতে না হতেই শুরু হয়েছে তৃষ্ণার। কাজের মেয়েকে দিয়ে সকালে বাবা-মা কে চা নাস্তা বানিয়ে দিয়েছিল।মায়ের বাতের ব্যথাটা বেড়েছে না হলে শাশুড়ি মা নিজেই সকালের নাস্তায় তৃষ্ণাকে সাহায্য করে। শ্বশুর মশাই চা তো খেয়েছেন কিন্তু তার মুখের অভিব্যক্তি ভালো ছিল না।কিন্তু সে সকালের চা-নাস্তা অনেক আনন্দের সাথে খায়।
তার জন্য রাখা চায়ের কাপে চুমুক দিতেই বুঝতে পারলো যাচ্ছে তাই চা হয়েছে।
বাবা এসবে অভ্যস্ত নয়৷ তবুও তৃষ্ণার কষ্ট হবে বলে চুপচাপ খেয়ে নিলো?
কান্না দলা পাকিয়ে উঠে এলো গলা অবধি। তাই তৃষ্ণা কষ্ট হলেও দ্রুত নিজ হাতে সকালের খাবার বানিয়ে ফেলল।
গোসল সেরে যখন তৃষ্ণা স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছিল তখন আরশাদ হাত বাড়িয়ে তাকে কাছে টানতেই তৃষ্ণা বলল,
“আমার এমনিতেই দেরী হচ্ছে। বাস পাবো না।এখন এসব করো না তো।”
তৃষ্ণার কথায় বিরক্তি স্পষ্ট আরশাদের অপমানিত দু চোখে জমছে রাগ। গতকাল রাতে বলা বন্ধুদের কথাগুলো মনে হলো।
ওরা বলেছে প্রয়োজনে ওরা ডিভোর্স এর পর কাবিনের টাকা যদিও তৃষ্ণা মাফ করে দিয়েছে সেই টাকা পরিশোধ করতে সাহায্য করবে।
তবুও ওকে রাখার দরকার নেই। কারণ ও আসলেই যোগ্য নয়।
বিছানা ছেড়ে উঠে আরশাদ আইনজীবী কে ম্যাসেজ করে জানিয়ে দিলো কাজ সব করে রাখতে। আজ সে তালাক নামায় সই করে সরাসরি পাঠাবে তৃষ্ণার কাছে।
চলবে।