রৌদ্র মেঘের জুড়ি পর্ব-১৫

0
464

#রৌদ্র_মেঘের_জুড়ি(১৫)

মৈএী আর অনলের সংসারের তিন মাস হয় । সেদিন যখন প্রথম হাসপাতালে মৈএীকে অনল নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় তখনই অনল বলে

আমার না ভালোবাসা তুমি মৈএী। আমি তোমাকে ভালোবাসবো এই চিন্তা কখনোই মনে আনিনি। তুমি বার বার আমার কাছে এলে ভালোবাসতে বললে আমি চুপ ছিলাম মৈএী আমি চাইনি তোমার বাবার আদরের মেয়েকে আমার জীবনে নিয়ে এসে আমার মতো সাধারণ জীবন ধারণের
সহিত মিলিয়ে দিতে। তুমি তো বিলাসবহুল জীবন পাড় করে এসেছো।
আমার কাছে এসে তুমি সেভাবে থাকতে পারবেনা। আমার সবটার সাথে তুমি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেনা। আমি চাইনা আমাকে ভালো বেসে আমার বউ হয়ে তুমি রাজকন্যা থেকে……..যাই হোক ভালো থেকে মৈএী। বাবা যেখানে চাইছে সেখানেই বিয়ে করে নাও…. আমারা এক সাথে কখনোই ভালো থাকবো না মৈএী। তোমার বাবা চায়না আমি তোমায় বিয়ে করি তুমি আমার বউ হও।
আমার তো বাবা নেই মৈএী তোমার বাবা তোমায় অনেক ভালোবাসে সে তে রাজকুমার এর সাথে বিয়ে দিবে তুমি সেখানে রানী হয়ে থাকবে মৈএী….তুমি….

আর তুমি অনল?তুমি কিভাবে থাকবে……
অনল হাসেঁ মৈএীর কপালে ছোটো করে চুমু আকেঁ ও বলে….

আমি সব সময় তোমার মনে থাকবো মৈএী এখন যাও….. পরে না ভাইদের চোখে পরে যাও আমি চাইনা তা…….. সাবধানে যাও মৈএী……..

মৈএী অনলকে শক্ত করে ঝাপটে ধরে কান্নাঁ করতে করতে নাক টেনে বলে,
আমি যাবো না অনল! আমি তোমার বউ হতে চাই শুধু তোমার বউ,আমি অন্য কাউকে কিভাবে এখন বিয়ে করবো অনল যখন আমি জানি তুমিও আমাকে অনেক ভালোবাসো আমাকে চলে যেতে বলো না অনল আমায় তোমার সাথে নিয়ে যাও অনেক দূরে নিয়ে যাও যেখানে…….

মৈএী কিছু বুঝে উঠার আগেই ওকে কেউ হেচকাঁ টান দিয়ে অনলের থেকে সরিয়ে নেয় পর পর দুটো শক্ত হাতের থা প্প ড় পরে ডান গালে। স্তব্ধ হয়ে যায় মৈএী সামনের মানুষ কে দেখে আর ও অবাক হয় যখন দেখে ওর পরিবার সহ হবু স্বামীর পরিবারের ও সকলেই রয়েছে।
মোহন মৈএীর হাত ধরে অনলের সামনে থেকে নিয়ে এসে বাবার পাশে দাঁড়িয়ে পরে। মৈএীর হবু স্বামী বলে ,

আংকেল আজ রাতেই আমার আর আপনার মেয়ের বিয়ের ব্যাবস্থা করুন। আপনার মেউএর সাহস কি করে হয়?আমার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা চলাকালীন সময়ে একটা ছেলের সাথে ফস্টি নস্টি করতে চলে আসার?বিয়ে টা হোক হাত পা ভেংগে রেখে দেব! এমন অবস্থা করবো যে ভুলেও বাইরে বের হতে চাইবে না…..
না জানি এই ছেলের সাথে কত কিছু করে ফেলেছে! এই ওই ছেলের হাত পা গুড়ো করে দে তোরা….

মৈএী মোহন কে ছেড়ে মিজানুর সাহেব এর পায়ের কাছে বসলো,
পায়ে হাত দিয়ে বলল,

না বাবা ওকে আর মে*রোনা আমি কথা দিচ্ছি আমি বিয়ে করে নেবো ওওই ছেলেকে আমি ওনার সব কথা শুনে যাবো বাবা উনি যদি আমায় মে*রেও ফেলতে চায় তবু ও আমি ওনার কথার বাইরে যাবো না তুমি শুধু অনলকে আর আঘা*ত দিও না বাবা আমার এই কথাটা শুধু রাখো…. কথা দিলাম আমি আর তোমার কাছে কখনোই কিছুই চাইবো না বাবা…….
প্লিজ…..

মিজানুর সাহবে মোহন কে থামালেন অনলের দিকে একবার পুর্ন চোখে দেখলেন ছেলেটা এখনো সুস্থ হয়নি এর মাঝে মৈএীর এখনের অবস্থা দেখে আর ও ভেংগে পরছে চোখ মুখ শুকনো শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ব্যান্ডেজ করা।
তিনি খেয়াল করলেন অনল মৈএীর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে চোখে পানি চিকচিক করছে নিশ্চয়ই মৈএীর জন্য??
মিজানির সাহেব মেয়েকে তুলে কাধেঁ হাত রেখে কাছে আনলেন তারপর বললেন ,
সবাই বাসায় যাও। আর আপনারাও নিজেদের বাসায় চলে যান আগামীকাল সকালেও আমি কল দিয়ে জানিয়ে দেব সব।

ওনারাও চলে গেলেন,মৈএীকে নিয়েও মিজানির সাহেব চলে গেলো অনল বেড এর পাশেই ফ্লোরে বসে পরলো কিছুই করতে পারলো না নিজের ভালোবাসার জন্য??এভাইবেই মৈএীকে পাওয়া হলো না?

পরের দিন সকালেও মিজানুর সাহে ছেলের বাসায় কল দিয়ে জানালেন,
মৈএী পালিয়ে গেছে। বাসায় নেই মৈএী।
তারপর থেকেই ওদের পরিবার মৈএীকে খুঁজে চলেছে। এদিকে মিজানুর সাহেব নিজেই মেয়ের কথা চিন্তা করে ও ছেলের মানসিক চিন্তা ভাবনা আর হাসপাতালে মৈএীকে নিয়ে বলা কথা গুলো ভেবে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে অনলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিলেন সেই রাতেই নিজেই অনলকে হাসপাতাল থেকে মোহনকে দিয়ে নিয়ে এলেন ছেলেদের ও সব বুঝালেন ওই খানে বিয়ে দিলে তাদের মেয়ে কখনোই ভালো থাকতে পারবনা হয়তো বিয়েটা দিলে ওদের পুর্ব শত্রুতা শেষ হবে কিন্তু মেয়ের ভালো থাকা ভালো লাগা নিয়ে কেউ ভাববেনা না মৈএী নিজেই ভালো থাকবে। ওরা চায় মৈএী ভালো থাকুক। অনলের সাথেই থাকুক।
————-

মৈএী অনলকে বকা বকি করতে করতেই খাবার সাজিয়ে দিচ্ছে টেবিলে। এই নতুন বাসা থেকে অনলের কলেজ বেশ কিছুটা দূরে হয়ে যায়। মৈএীর ভয় হয় কখন না ওরা অনলের খোজঁ পেয়ে যায় ওরা তো জানেনা অনল কোন কলেজ বা কিসের চাকরি করে!যদি জেনে যায়?কি হবে?

অনল ফ্রেয়াহ হয়ে এসে টেবিলে বসে মৈএী এই বাসাটা নিজের হাতে সাজিয়েছে। অনল এখন কিছুই সচ্ছল জীবন পার করছে গ্রামের সবাটr ঋণ শেষ করে ফেলেছে মিষ্টিকেও বিয়ে দিয়েছে ওর বাবা। অনলের মা এখানে আসতে চায় না। গ্রামেই নাকি ভালো থাকবেন তিনি অনল আর জোড় করে না।
প্রতি সপ্তাহেই সম্ভব হলে গিয়ে দেখা করে আসে।

মৈএী অনলের সামনে প্লেট সাজিয়ে নিজেও পাশের চেয়ারে বসে।
খাইয়ে দাও।

মৈএী অনলের চোখে চোখ রাখে….. অনল কাউকে এত রকম ভাবে জ্বালাতে অয়ারে?জানাই হতো না অনলের বউ না হলে…. বিয়ের পর থেকেই অনল মৈএীকে বিরক্ত করা শুরু করে দিয়েছে অবশ্য মৈএী বিরক্ত হয় না ভালো লাগে অনলের এরকম করাতে।

তোমার হাত কই অনল?

নেই।

নেই মানে?

নেই মানে নেই….

তাহলে কি আছে তোমার?

একটা সুন্দরী বউ আছে……

ওহ আচ্ছা তাই না?

হ্যাঁ। সুন্দরী বউ আমাকে রোজ সকালে খাবার খাইয়ে দেয় ……..

হ্যাঁ পেয়েছো তো আমার মতো ভালো একটা বউ!

আহা মৈএী খাইয়ে দাও না প্লিজ সময় নেই আমার আবার ক্লাস শুরু হবে। তোমার না সামনে ফাইনাল……, পড়াশোনার খবর নেই না?সব সময় আমাকে জ্বালাতন করার ফন্দি আঁটতে ব্যাস্ত থাকেন তাই না?

কি?

হ্যাঁ! রোজ সকালে তোমার জন্য কলেজ যেতে লেট হয় আমার । কাউকে তো আর বলতে ও পারিনা বাসায় বউ রয়েছে সে আমাকে একদম আসতে দিতে চায় না।

মৈএী অনলের শার্ট খামচে ধরে বলে,

আমি যেতে দেই না?

হ্যাঁ তুমি কিন্তু বিয়ের পর খুব দুষ্ট হয়েছো মৈএী………

এই আমি না তুমি?

তুমি।

না তুমি।

না তুমিইই!

আচ্ছা আচ্ছা তুমিই?

এখন খাইয়ে দাও….

মৈএী আর কথা বাড়ায় না…. প্লেটের খাবার খাইয়ে দেওয়া শুরু করে মৈএী।
অনল এরপর কলেজ যায়। অনল বের হয়ে যেতেই কেউ আবার আসে দরজা নক করে….. মৈএী এগিয়ে যায় সেদিকে কে এসেছে এই সময়?

চলবে
#মিশকাতুল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে