রৌদ্র মেঘের জুড়ি পর্ব-১৪

0
458

#রৌদ্র_মেঘের_জুড়ি(১৪)

মৈএী দাঁড়িয়ে আছে হাসপাতালে অনলের কেবিনের সামনে। কেউ তাকে ভেতরে যেতে দিচ্ছেনা। অনলের মা আর মিষ্টি এসেছে অনলের এরকম খবর শুনে তিন দিন হয়। এই তিন দিন কি মৈএী ভালো ছিলো? ওর কথা কেউ ভাবললোনা । এই যে অনলকে দেখতে এসেছে সে কি বাবা ভাইদের বলে এসেছে?না। ওদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসেছে। শুধু একবার অনলকে দেখবে বলে। বাবা আর ভাইয়েরা না জানুক সে তো জানে! অনল তাকে ভালো বাসে না।তাহলে কেন মৈএীর ভুলে অনলকে আঘা*ত করলো এভাবে?অনল কি ওকে ক্ষমা করবে এর জন্য?

বাসায় কি হচ্ছে না হচ্ছে এখন মৈএীকে না পেয়ে?তিন দিন হয় চেষ্টা করে মৈএী বাসা থেকে বের হওয়ার কিন্তু পারছিলো নায়াজ সুযোগ পেতেই চলে এসেছে ভাইয়দের কড়া পাহারায় ছিলো এ কয়েকদিন ।

অনল দেখেছে সকাল ১০ টা হতে মৈএী এই বিকেল পর্যন্ত বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অনল ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে ,।
মৈএীকে ভেতরে আসতে বলো মা….

মিষ্টি বাধাঁ দেয়…. সে বলে,
না অনল আমি জানি তুমি আমায় বিয়ে করবেনা। আমি এরপরেও চাইনা ওই মেয়ে এখানে আসুক। আমরা তোমার ভালো চাই তুমি ওই মেয়ের জন্যই আজ এখানে এভাবে…….ও দুরেই থাক না।

এসব নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।ওকে নিয়ে আয়।

মৈএীকে নিয়ে ভেতরে আসে গিয়ে। মৈএী অনলের শুকনো মুখ দেখেই কান্নাঁর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
তবে মুখে কিছুই বলেনা।

অনল বলে,

দেখা শেষ?

মৈএী অনলের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।।

এখন চলে যাও মৈএী। তুমি বুঝলে তো! তোমার আমার মাঝের ব্যাবধান কোথায়? চলে যাও মৈএী……আমার সাথে যা হয়েছে আমি চাই না আমার মায়ের সাথেও সেরকম হোক আমি চাইনা আমার পরিবারের ক্ষতি হোক তোমার ভালোবাসার জন্য।

মৈএী অনলের কথায় মনে আঘা*ত পায়। অনলের সাথে দেখা হলো এই তো অনেক

চলে যাচ্ছি স্যার। আর আসবো না।আজকের পর আর কখনো আপনার সামনে ভালোবাসার কথা নিয়ে হাজির হবো না কথা দিলাম । আমি শুধু ক্ষমা চাইতেই এসেছি। আজ আপনি আমার জন্যই এত কিছু সহ্য করেছেন। আপনি তো আমাকে ভালো না বেসেই আমার ভাইদের কাছে প্রহার পেলেন। আমায় ক্ষমা করে দিবেন স্যার।

অনল মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলো। মৈএী তা খেয়াল করে আবার বলে ,
আমার দিকে চোখ রেখেই থাকুন না স্যার প্লিজ একটু সময়…. চলেই তো যাবো আমি একটু পর। আর আসবো না স্যার! ভুলেও না। এটুকু সময় আমি আপনাকে দেখতে চাই নয়ন ভড়ে প্লিজ স্যার মুখ ফিরিয়ে নিবেন না।

মিষ্টি বাইরে চলে যায়। অনলকে সে ভালোবাসে এখন মৈএীর এসব কথা শুনতে ইচ্ছেও করছেনা।অনলের মা ও উঠে ওর সাথে যায়।

অনল তবুও মুখ সামনে ফিরিয়ে দেখেনা। অনলের পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে আছে মৈএী। অনল আধঁশোয়া হয়ে রয়েছে বিছানায়।

বিরক্ত হচ্ছেন স্যার?
এও শেষ বার বিরক্ত করতে চলে এসেছি। আগামীকাল আমার বিয়ে।

অনলের বুকে ধাঁক্কা লাগে এই কথাটা। মৈএীর বিয়ে?তার না বলা ভালোবাসার মানুষ টাকে ভালোবাসার কথা বলাও হলো না।তার আগেই সব শেষ হবে?
মৈএী অন্য কারো হয়ে যাবে?তখন আর মৈএী যখন তখন ওকে ভালোবাসার কথা বলে পাগোল বানাবেনা। উতলা মৈএী আর আসবেনা ওর কাছে?

অনল……

অনল এবার চোখ বন্ধ করে নেয়। অনলের মুখের এক পাশ দেখছে মৈএী। সেভাবেই বলে আবার,
অনল একবার আমি তোমায় ছুঁয়ে দিতে চাই ছুঁতে দিবে?প্লিজ!
না করো না……..

অনল কিছুই বলতে পারেনা কি বলবে?খুঁজেও পাচ্ছেনা এই মুহুর্তে।
মৈএী উত্তর পাওয়ার জন্য দাঁড়িয়েই থাকে। একসময় বুঝতে পারে অনল ওর সাথে কথাও বলতে ইচ্ছুক না যেখানে সেখানে ছুঁয়ে দেখার অনুমতি ও দিবেনা। তাই আর কোনো কথাই বলে না মৈএী। ঘন্টা চলে যায়। নার্স আসে। মৈএী পেছন ফিরে চলে আসতে নেয়। পা এগুচ্ছে না দরজা পর্যন্ত আসতেই বুঝতে পারে পেছনে অনল ওড়না টেনে রেখেছে। চকিতে পেছন ফিরে দেখে অনল ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
অনলের মুখের দিকে মাথা তুলে দেখে মৈএী।
অনল ওড়না ছেড়ে মৈএীকে দুই হাতে বুকের সাথে মিশিয়ে জাপটে ধরে রাখে। মৈএী ও হাত বাড়িয়ে অনলের বুকের সাথে মিশে যায়।

——————–
তিন মাস পর,

মৈএী কই তুমি?হলো তোমার? বিয়ের পর তুমি এতো অলস হয়েছো না!ইচ্ছে করে নিয়ে বাবার বাড়ি রেখে আসি গিয়ে।

মৈএী কিচেন থেকে দ্রুত পায়ে বেডরুমে চলে আসে। মহারাজ এখনো বিছানাতেই শুয়ে রয়েছেন ব্রাশ টাও করেনি আর উল্টো ওকেই অলস বলা হচ্ছে? রে*গে অস্থির হয়ে বলে,

আমি অলস?আর তুমি?এখনো নির্লজ্জের মতো সাওয়ার না নিয়ে বিছানাতেই পরে রয়েছো! ব্রাশটাও করোনি। আমি এক্ষুনি শাশুড়ী মায়ের কাছে কল করে তার অতি ভালো ছেলের গোপন তথ্য ফাসঁ করে দেবো বলে দিলাম।
সব সময় আমাকে বাবার কাছে রেখে আসার ভয় কেন দেখাও অনল??আমার তোমাকে নিয়ে কত ভয় হয় তুমি জানো??

অনল কম্বলের ভেতরে থেকে মুখ বের করে মৈএীকে দেখে। বেগুনী সুঁতির শাড়ি পরে হাতে সেম রঙ এর কাচের চুড়ি পরে গলায় সিম্পল চেই কানে দু ল পরে সকালের পাখি দাঁড়িয়ে রয়েছে এই পাখি একান্তই অনলের। পাখি এখন রে*গে আছে চুল হতে তোয়ালেও ছাড়িয়ে নেয়নি এখনো ওভাবেই কিচেনে চলে গিয়েছে।
মৈএীর দিকে এগিয়ে এসে ওর নরম কোমল কোমড়ে দুই হাত দিয়ে কাছে নিয়ে আসে। টেনে কম্বলের মাঝে নিয়ে আসে।
মৈএীর রা*গ এবার সপ্তম আকাশে উঠে যায়।

হচ্ছে কি এসব?সব সময় তাকে জ্বা*লা*নো হয়!আর এই মহান কাজটা করে কে?অনল! একদম শান্তি দেয় না তাকে। অনলের থেকে নিজেকে ছুটিঁয়ে নিতে চেষ্টা করে বলে ,

আমি কিন্তু এই শীতের সকালে একবার সাওয়ার নিয়েছি অনল আমাকে একদম বিরক্ত করবেনা তুমি! চুলায় রান্না বসিয়ে এসেছি আমাকে যেতে দাও….

অনল মৈএীর গলা থেকে ঠোঁট সরিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
তোমার রান্না চুলোয় যাক!! এই শীতের সকালে আমি একা সাওয়ার নেব না। তুমিও আমার সাথে নেবে।

আমি আগেই নিয়েছি।
সেজন্যই আবার যেনো নাও সেই ব্যাবস্থা করছি।

মিজানুর সাহেব আজকাল খুবই ব্যাস্ত সময় পার করছেন । মজনু ওনার রুমে এসেই পাশে বসলেন। মিজানুর সাহেব মুখ তুলে বলেন ,

অনলের কি অবস্থা?আমার মেয়েকে কি সুখ দিতে পেরেছে?

হ্যাঁ বাবা। আমাদের বোন ওর সাথেই ভালো আছে কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গা ওরা মৈএীর খোজঁ এখনো করছে!

খুব শিঘ্রই আমাকে এর একটা ফয়সালা করতে হবে..!!

চলবে
#মিশকাতুল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে