#রৌদ্র_মেঘের_জুড়ি(১২)
অনল বলছিলাম যে বিকেলে তোর চাচার সাথে দেখা করতে যাবি?সব দেনা পাওনা তো পরিশোধ করা হয়েছে এবার তোর চাচার সাথে কথা বলে দুজনের বিয়ের কাজটা শেষ করলে কেমন হয়?তোর বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে তো।
আমার বিয়ে?
হ্যাঁ। আমি মিষ্টি মাকে তোর জন্য এত দিন বিয়ে দেই নি। আমার ছেলের বউ করতে চাই ওকে। ও নিজেও তাই চায়। আর আমি জানি তুই আমার পছন্দ কখনো অপছন্দ করতেই পারিস না।
কিন্তু মা আমি ওকে বিয়ে করতে পারবো না।
কেন?
ওকে আমি ছোটো থেকে নিজের বোনের নজরে দেখেছি। ও কে কিভাবে বিয়ে করতে পারি?
সেসব আমি জানিনা। এখন নিজেদের মাঝে এরকম হাজার হাজার বিয়ে হচ্ছে। এ আর এমন কি?
কিন্তু মা আমি মিষ্টি কে বিয়ে কখনোই করতে পারবো না।তুমি এ রকম চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে দাও প্লিজ।
না না। অনল আমি কি তোর মা হয়ে নিজের ছেলের বউ কাকে করবো না করবো পছন্দ করতে পারি না?এই দিন দেখার জন্য আমি আমার ছেলেকে নিয়ে বেঁচে আছি?
মা দয়া করে এসব বলা বন্ধ করো। আমি…… আমি….(মৈএীকে ভালোবাসি)
তুই কি বাবা?তুই কি কাউকে পছন্দ করিস?
অনল ওর মায়ের চোখের দিকে চোখ রাখে। বলতে চায় না অনল যে ও মৈএীকে ভালোবাসে…… তবুও মায়ের মোন ছেলের চোখ মুখ দেখে নিয়েই বলে,
তুই কি ওই মেয়েটাকে পছন্দ করিস?
অনল আর শক্ত থাকতে পারেনা । মায়ের বুকে মাথা রাখে। এই স্থান যে সব সন্তানকে শান্তি দিতে পারে।
অনলের মাথায় হাত রেখে উনি বলেন,
আমার ছেলের প্রতি আমার বিশ্বাস রয়েছে। আমি আমার ছেলেকে খুবই ভালোবাসি। তুই যদি ওই মেয়েটাকে বিয়ে করতে চাস আমি না করবো না।
****
রাবেয়া একটা ব্যাগ নিয়ে মৈএীর রুমে এসেছে। চারদিন হয় মৈএী অনলের গ্রাম থেকে ফিরে এসেছে। আসার পর থেকেই একদম চুপ চাপ রয়েছে আগের মতো আর গল্প করতেও আসেনা রাবেয়ার কাছে। ভাইদের সাথে সকালেই এক দফা ঝগড়া করেছে মৈএী । সে কিছুতেই ওই লম্পট ছেলে কে বিয়ে করবেনা। শত্রুতা শেষ করতে এখন তাকে দুশ্চরিত্র ছেলেকে বিয়ে করতে হবে?বাবাও কিছুই বলছে না।কই আগে তো বাবাও চাইতেন মৈএীর হ্যাঁ বা না বলা। আর এখন কেউ কোন কথা কেন শুনছেনা?
মৈএী তৈরি হয়ে নাও। শাড়ি আর গহনা দিয়ে গেলাম। নিচে এসো আজ শুধু দেখে যাবেন ওনারা। বিয়ে নয়। আমি যে করেই হোক এই বিয়ে আটকাবো।
মৈএী আশা খুজেঁ পায় রাবেয়াকে জড়িয়ে ধরে চোখের জল ফেলে।
কাউকে পছন্দ করো মৈএী?
হ্যাঁ।
কাকে?
যাকে পছন্দ করি সে আমায় পছন্দ করে না ভাবী। যাই হোক আমি এই ছেলেকে বিয়ে করতে পারবো না।
আচ্ছা।
মৈএী তৈরি হয়ে নিচে নেমে আসে। দুইজন মহিলার সাথে একজন পুরুষ ও এসেছে মৈএীকে দেখে ওনারা চলে যায়।
পরের দিন বিকেলে অনল আসে মৈএীর বাসায়। মিজানুর সাহেব নিচেই ছিলেন অনলকে দেখে বলেন,
ফিরল্ব গ্রাম থেকে?
জ্বি আংকেল।
মিজানুর সাহেব পকেট থেকে টাকা বের করলেন অনলকে পাশে বসতে বললেন। অনল বসার পর মিজানুর কয়েকটা হাজার টাকার নোট দিয়ে বলেন,
আজ থেকে আর তোমাকে কষ্ট করে আমার মেয়েকে সময় দিতে হবে না।ওর নাকি সিলেবাস শেষ হয়েছে শেখা?
অনল অবাক হয় মৈএী ওর বাবাকে অনলকে না আসতে বলেছে?এমন কেন করছে মৈএী? ওর থেকে দূরে সরে যাওয়ার চেষ্টা!!
জ্বি আংকেল।
আচ্ছা।রাবেয়া…..
রাবেয়া আসতেই উনি নাস্তা দিতে বলেন অনলকে। অনল আনতে নিষেধ করে।
মিজানুর সাহেব বলেন,
অসংখ্য ধন্যবাদ তোমায় বাবা আমার কথায় আমার মেয়েকে সময় দেওয়াফ জন্য। গত কাল রাতে মৈএী আমায় বলেছে ওর নাকি সব শেখা শেষ এখন নিজেই পারবে। তোমার এখানে এসে সময় দিতে নাকি অসুবিধেই হয়।
জ্বি আংকেল আম তাহলে আসছি।
অনল উপরের দিকে একবার চোখ ঘুরিয়ে দেখে মৈএী ওর কথা শুনেও একবারের জন্য বাইরে এলো না?
অনল বাসার বাইরে এসে আবারও পেছন ফিরে বাড়িটা দেখে নেয়। এতদিন মৈএীকে পড়ানো শেষ করে বাইরে এলে অনল দেখতো মৈএী দাঁড়িয়ে আছে ওর দিকে চোখ রেখে আর আজ?কেউ নেই বেলকুনি শুন্য।
অনল লম্বা করে শ্বাস নেয়। এরপর রিক্সা পেতেই চলে আসে। আজ আর রান্না করতে ও ইচ্ছে করছেনা সেভাবেই শুয়ে রইলো।
মৈএী রুমে বিছানায় শুয়ে আছে। ইচ্ছে করছে ম*রে যেতে পৃথিবী এত বিষাদ কেন লাগছে? মৈএীর জীবনে প্রেম কেন এলো?ওই অনলের সাথেই কেন??অনল কে কি ভুলতে পারবে কোন দিন??
চলবে
#মিশকাতুল
#রৌদ্র_মেঘের_জুড়ি(১৩)
মৈএী ঘুমিয়েছিলো সকাল সকাল কেউ ওকে ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে নিচে ফ্লোরে ফেলে দেয়। মৈএী প্রচুর ব্যাথা পায় শরীরে। প্রবল ধাক্কা তে ঘুম ঘুম ভাব উড়ে যায়। মাথা উচিয়ে খেয়াল করে মোহন দাঁড়িয়ে আছে চোখে মুখে হিংস্রতা দেখা যাচ্ছে। ওভাবেই মৈএী উঠতে চেষ্টা করে। মোহন এগিয়ে এসে মৈএীর চুলের মাঝে দানবীয় হাত ঢুকিয়ে চুল প্যেঁচিয়ে ধরে। মৈএী এবার প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করে। মোহন ওর সাথে এমন করছে কেন?
ছাড় আমাকে ভাইয়া লাগছে আমার।
মোহন অত্যন্ত রুক্ষ্ণ গলায় বলে,
লাগুক। লাগার জন্যই চাপ দিচ্ছি……তোর সাহস কি করে হয়?আমাদের সন্মান নিয়ে খেলা করার? আজ তোর সাহস আমি বের করছি!
মৈএীকে টেনে হিচঁড়ে নামিয়ে আনে মোহন নিচ তলায়। রাবেয়া এক পাশে দাঁড়িয়ে মুখে কাপড় গুজিয়ে কান্নাঁ করছে। মিজানুর সাহেব সোফায় গম্ভীর হয়ে বসে রয়েছে। ময়নুল রাবেয়ার পাশেই চোখ মুখ লাল বানিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মজনু বাবার পাশে বসা আর মুহিব?মুহিব এক পাশে দাঁড়িয়ে মৈএীকে আহত অবস্থায় দেখছে।
মৈএী ভেজাঁ গলায় বলে,
আমাকে এভাবে ব্যাথা দিচ্ছিস কেন?ভাইয়া লাগছে আমার!!
রাবেয়া পাশে থেকে বলে,
ওকে এভাবে আঘা*ত দিওনা মোহন দোহাই লা…..
সেই মুহুর্তে রাবেয়ার গাল চে*পে ধরে ময়নুল। এই প্রথম স্ত্রীর গা*য়ে হাত তুলছে সে। রা*গা*ন্বীত স্বরে বলে,
তোর জন্যই আজ ও এই কাজ করার সাহস পাচ্ছে! এই করিস কি তুই সারা দিন?একটা মেয়েকে পর্যবেক্ষণ করতে পারিস না?কি করিস কি তুই বল…….
অনল!অনলের মতো একটা এ*তিম,অসহায় ছেলের জন্য আমার বোন পাগো*ল হয়?কি ভেবেছিলি সবাই আমি বুঝবো না?
রাবেয়া নিজেকে ছাড়িয়ে বলে,
সব মিথ্যা কথা অনলের সাথে আমাদের মৈএীর কোনো সম্পর্ক নেই।
আহ্ বউমা! কেন এসব কথা বলে আমাদের সামনে নিজেকে হাসির খোরাক বানাচ্ছ?মুহিব দেখেছে ওর ডায়েরি সেই ডায়েরি বাবা হয়ে আমি দেখবো না বলে
মোহন, মজনু আর ময়নুল ও দেখেছে এই মোহন তুই বল কি সম্পর্ক ওই ছেলের সাথে?
মোহন মৈএীকে ফ্লোরের সাথে ধাক্কাঁ দিয়ে ফেলে বলে,
হ্যাঁ ভাবী। তোমার আদরের ননদ ওই অনলের সাথে প্রেম করে তাহলে কি করে ও আমাদের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করবে? ওখানে ওই অনলকে নিয়ে হাজার হাজার প্রেম বাক্য লিখে রেখেছে। আমাদের চোখের সামনে এসে আমাদেরকেই ফাকিঁ দিয়েছে এত দিন?
এই আজ থেকে তোর কলেজ প্রায়ভেট সব বন্ধ!মেয়েদের এত পড়াশোনার দরকার নেই!বিয়ে দেব মোন দিয়ে সংসার করবি কিসের এত সাইজ বাইজ!!
বাবা তুমি কালকেই ওনাদের সাথে কথা বলবে….. যত দ্রুত সম্ভব এই বিয়ে হয়ে যায় ততই ভালো আমাদের জন্য।
মিজানুর সাহেব চুপ করে থাকলেন। মৈএী কাঁন্না করেই যাচ্ছে। গত কাল রাতে ডায়েরিটা বের করেই ঘুমিয়ে পরেছিলো কে জানতো মুহিব তখন ওর রুমে যাবে?সেখানে অনলকে ঘিরে কত অনুভূতি লেখা রয়েছে।
বাবা আমি যাচ্ছি আজ ওই অনলকে আমি দেখে নেবো…….
না…………..
মৈএী মোহনের দিকে তাকিয়ে বলে,
ওনাকে কিছুই করবি না ভাইয়া। আমার দোহাই লাগে……
এই তোর সাহস দেখে আমি অবাক না হয়ে পারছিনা!
উনি আমাকে ভালোবাসেন না আমই ওনাকে ভালোবাসি তুই ওনাকে কিছুই বলবি না ভাইয়া………..
ওর জন্য এখন চিন্তা করছিস?ওকে নির্দোষ সাজাতে চাইছিস?
না….
কি না?এই মুহিব ভাইয়া তারাতাড়ি চলো আজ ওকে এমন অবস্থা করে দেব যে ভুলেও আমার বোনের দিকে নজর দিবেনা……
মৈএী উঠে মোহনের পা ধরে জড়িয়ে বলে,
সত্যই বলছি ভাইয়া উনি আমাকে একটুও ভালোবাসেন না।ওনার ক্ষতি করিস না।
মোহন পা দিয়ে ধাক্কাঁ দেয় মৈএীকে এরপর গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায়……….
—-
মৈএী বসার রুমে সোফায় শুয়ে আছে। এখনো ওরা ফিরে আসেনি। রাবেয়া কিচেনে দুপুরের রান্না শুরু করে দিয়েছে। মিজানুর অফিসে চলে গেছেন আজ আর কেউ মৈএীর র*ক্ত দেখেও সোহানুভুতি প্রকাশ করেনি।
আজ কি ওর জন্য কারো মায়া হচ্ছেনা?বাবাও ওর মাথায় হাত রাখেনি ভালো করে দুটো কথাও বলেনি…. মৈএীর আবদার কেন অনুরোধ ও কেউ রাখেনি….. না জানি অনলের সাথে ওর তিন ভাই কি করেছে?অনল কি ঠিক আছে?মৈএীর মোবাইল ও বাবা নিগে রেখেছে। খবর নেবে কি করে ও?
সুমনা আসে সেই সময় আজ কয়েক দিন হলেই মৈএী অনলের সামনে যেতে চায়না বলে কলেজ এ যায়নি। সুমনা মৈএীর অনুভূতি শুরু থেকেই জানে আর আজ তো অনলকে কলেজের মাঠে ওর তিন ভাই মিলে যা মে*রে*ছে! এ নিয়ে নিশ্চিত কিছি হয়েছে।
সুমনাকে দেখেই মৈএী ওকে জড়িয়ে ধরে।
এ কি অবস্থা তোর মৈএী?
ভাইয়া করেছে! অনল?আমার অনল কে দেখেছিলি কলেজে?
হ্যাঁ।
উনি ঠিক আছে?
সুমনা মৈএীকে দেখেই কান্নাঁ শুরু করে দিয়েছে এরপর চোখে ভাসে অনলের রক্তা*ক্ত মুখটা।
অনল স্যার ভালো নেই মৈএী!!
ভালো নেই?কি করেছে ওর সাথে?বেচেঁ আছে তো?
সুমনার আর ও কান্নাঁ পাচ্ছে। ছোটো থেকে যে মৈএীকে ও দেখেছে সে আর এই মৈএী এক নয়। মৈএী কাউকে নিয়ে এত চিন্তা করে?মৈএী কাউকে এত ভালোবাসতে জানে?
ও শুনেছলো গত কাল মৈএীর কলে অনল নিজের চাচাতো বোনকে বিয়ে করতে চায় তাই তো মৈএী নিজেকে সরিয়ে আনতে চাইছে অনলের ভালোবাসা থেকে। আর আজ এসব কি? মৈএী ওকে সব খুলে বলে।
সুমনাও জানায়…. অনল স্যারকে কলেজের মাঠে নিয়ে খুব আঘা*ত করেছে তোর তিন ভাই মিলে! স্যারের অবস্থা খুবই খারাপ জানি না কি হবে………
চলবে
#মিশকাতুল