রৌদ্র মেঘের জুড়ি পর্ব-০৯

0
471

#রৌদ্র_মেঘের_জুড়ি(৯)

মৈএীর রুমের দরজা বন্ধ করে রেখেছে সময়টা
রাত ১০ টা বাজবে বোধ হয়। মৈএী ভেতরে উচ্চশব্দে কান্নাঁ করছে অথচ দরজা খুলছে না। রাবেয়া আর মজনু দুজনে রয়েছে বাসায়। দুজনেই দরজাতে ধাক্কাধাক্কি করছে আর খুলে দিতে বলছে অথচ মৈএী সেসব শুনছে না।রাবেয়া ব্যাস্ত হয়ে ময়নুলকে বার বার কল করেই যাচ্ছে। মুহিব আর মোহনকেও মজনু কল করেছে তাদের বোন কেন এভাবে কান্নাঁ করবে?মিজানুর সাহেব কে এখনো কল করেনি কেউ উনি শুনলে এই রাতের বেলাতেই ঢাকা থেকে ব্যাস্ত হয়ে চলে আসবেন। মুহিব আর মোহন আসতেই ওরা ধাক্কাধাক্কি করে দরজা ভেংগে ফেলেছে। মৈএী বিছানার পাশে ফ্লোরে বসে কান্নাঁ করছে বাম হাতে লালা র*ক্ত ভেসে যাচ্ছে। মৈএী কি ইচ্ছা করেই এমন করেছে নাকি?হ্যাঁ ওই তো পাশেই ব্লে**ড পরে রয়েছে। মৈএী আঘা*ত সহ্য করতে পারেনা… তাহলে নিজেই নিজেকে কেন এভাবে আঘা*ত করেছে?ওরা দ্রুত ভেতরে আসে ময়নুলকে কল করে সাথে ডক্টর নিয়ে আসতে বলে। ওরা আসতেই মৈএীর হাতে সেলাই করে দেয় ও ব্যান্ডেজ করে দেয় রাবেয়ার বুকের সাথে মিশে রয়েছে মৈএী।মোহন মৈএীর সামনে এসে বলে,

সমস্যা কি তোর? এভাবে নাটক করলি কেন?

মুহিব বলে,
থাম মোহন ও হয়তো কিছু নিয়ে ডিপ্রেশনে রয়েছে তাই না বনু আমার?
আমায় বল কি হয়েছে?

মৈএী তবুও কিছুই বলেনা।
মজনু আর ময়নুল ওদের দুজনকে থামতে বলে।

রাবেয়া মৈএীকে খাবার খাইয়ে দেয় আজ সে মৈএীর সাথেই থাকবে।

পরের দিন অনল এসে দেখে মৈএীর এরকম অবস্থা। তবুও সে বই সামনে নিয়ে বসেছে। অনল আসতেই মৈএী বলে,
আজ দুপুরে বাবা এসেছে। নিশ্চয়ই আজ তাকে বলবেন আপনি আর আসবেন না তাইনা?

অনল একবার মৈএীর মুখের দিকে চোখ রাখে ওর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে মেয়েটা।
হ্যাঁ। আমি আর আসবো না।কাল থেকে।

ওহ তাই?তাতেই কি আমি আপনাকে ভুলে যাবো? দেখা হবে না আমাদের?

অনল চুপ করে থাকে কিছুই বলেনা। মৈএী আবার বলে, কলেজে কি করবেন?বদলি নিবেন?

সে নিয়ে তোমায় চিন্তা করতে হবে না।আমার আর ও অনেক ছাত্র ছাত্রী রয়েছে মৈএী তুমি তো ব্রিলিয়ান্ট সব শিখেছ এবাফ ওদের কে সময় দিতে চাই আমি।

আচ্ছা? দেখুন চেষ্টা করে।

অনল মৈএীকে পড়িয়ে নিচে আসতেই মিজানুর কে দেখতে পায় সামনে গিয়ে বলে,
আংকেল আমি আর কাল থেকে আসবো না। আপনার মেয়ের সিলেবাস শেষ হয়ে গেছে এখন সে নিজেই সব পারবে।

মিজানুর সাহেব বলেন,
হ্যাঁ ও বলেছিলো কিন্তু ও বলে না যদি তুমি আসো তাহলে সব ভুলে যেতে পারে। দুই ঘন্টা সময় না দাও এক ঘন্টা করে দাও। তবুও প্রতিদিন এসে মেয়েটাকে একটু সময় দিও।

অনলের সাতবে আর ও অনেক কথাই তিনি বলেন। অগত্যা অনলকে আসতেই হবে। তবুও বলে,
আসলে আংকেল আমি গ্রামে যেতে চাই আগামীকাল।

সে যাবে।

এক সপ্তাহ তাহলে আমি আসছিনা এখন যাচ্ছি আংকেল।

সেই সময় মৈএী আসে। সে গ্রামে যাবে অনল শুনেছে। তাই বাবার কাছে বলে,
বাবা আমি কখনো গ্রামে যাইনি। আমিও যেতে চাই।

সে কি কথা?অনলের গ্রামে কেন যাবে তুমি?

প্লিজ বাবা আমি যেতে চাই তুমি স্যারকে বলো প্লিজ।

মেয়ের জেদের কাছে মিজানুর অনলকে রিকুয়েষ্ট করে কল করে যেনো আগামীকাল যাওয়ার সময় মৈএীকে সাথে করে নিয়ে যায়।

পরের দিন মৈএী ব্যাগ প্যাক করে নিয়ে বের হয় অনলের সাথে যেতে খুব হাসি খুশি মুডে দেখে মোহন বলে,

আজকাল তোর মতিগতি বুঝতে পারছিনা কি চলছে তোর মনে?

মোহনের প্রশ্নে মৈএীর আত্নার পানি যেনো শুকিয়ে যায়। মোহন এর মনে দয়া মায়ার ছিটে ফোটা খুবই অল্প নেই বললেও চলে। সে যদি একবার জানে তার বোন প্রেমে পরেছে তাহলে বোন আর বোনের প্রেমিক কে এক কো**পে শেষ করে দেবে।
আমতা আমতা করে মৈএী বলে,

কি চলবে?আমি গ্রাম দেখতে যাব তুই বলার কে?বাবা পারমিশন দিয়ে দিয়েছে আমাকে।

মোহন বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,

আব্বু তুমি এখন নিজের হাতে মেয়েকে খারাপ বানিও না!ওর বিয়ের বয়স হয়েছে এই ঝামেলা নিয়ে আর কত দিন? ওরা বলেছে এই শত্রুতা শেষ করতে দুই পরিবারে এই বিয়েটা খুবই দরকার। তুমি ওদের সাথে কথা বলে নাও!

মৈএী রে*গে যায় শত্রুতা শেষ করতে তাকে শত্ররুর ছেলেকে বিয়ে করতে হবে কেন?ভাইয়ের উপর রে*গে যায় সে। মিজানুরকে বলে,

আব্বু আম কোন ভাবেই ওই পরিবারের ছেলেকে বিয়ে করতে পারবো না।আর হ্যাঁ আমি যাকে বিয়ে করবো তাকে আমি নিজেই পছন্দ করবো!

মোহন ধমকে ওঠে মৈএীকে আজকাল বোনটা অতিরিক্ত কথা শুনছেই না তাদের। ইচ্ছে করে বোনকে ঠাটিয়ে এক চ*ড় দিতে। কিন্তু বাবার ভয়ে সেও পারেনা।মোহন হন হন করে নিজের রুমে চলে যায় মৈএী সোফায় বসে অনলের আসার অপেক্ষা করে। এই কয়েকদিনে সে অনলকে রাজি করেই নেবে তাকে বাধ্য করবে ভালোবাসতে……..

——-
বাসে দুই সিট নিয়েছে অনল। মৈএীর বাবা নিজেদের গাড়ি দিতে চেয়েছিলো কিন্তু অনল বলেছে সে ম্যানেজ করে নেবে। মৈএীও তাই জানিয়েছে সে বাস জার্নি করতে চায় অনলের সাথে। মৈএী কাধেঁ ব্যাগ নিয়ে ল্যাগেজ ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, ল্যাগেজটা খুব একটা বড় নয় তবুও অনল ওর অসুবিধা বুঝতে পেরে নিজের হাতে নেয়।
যতই মুখে না বলুক না কেন বেহায়া মোন মৈএীকে নিয়ে কতটা ভাবে সে জানে চোখ বন্ধ করলেই মৈএীর করা পাগলামী মনে পরে যায়। মৈএী নিজের হাতের ওই অবস্থা শুধু এ জন্যই করেছে যেনো অনল ওকে সময় দেয়। বলে কয়ে অনলকে রাজি তো করাতে পেরেছে এই অনেক…….

অনল দের গ্রামের বাস স্টপএ বাস থামতেই রিক্সা নেয় অনল। মৈএীকে নিয়ে চেপে বসে বাড়ির দিকে যায়। গ্রামের রাস্তা খুব সুন্দর কেমন নিরবতা কাজ করে। মৈএী অনুভব করে নতুন কিছু। তার পাশে অনল আছে এত ভাল লাগছে কেন এই সময়???

অনলদের বাড়ির সামনে রিক্সা থামতেই নেমে পরে দুজনে। অনলের মা আর আরও একটা মেয়ে এগিয়ে আসে। ওদের থেকে ব্যাগ গুলি নিয়ে ভেতরে নিয়ে যায়। মেয়েটার নাম মিষ্টি। মিষ্টি অনলের সামনে মাথা নুয়ে জিজ্ঞেস করে , কেমন আছো তুমি?অনেক দেরি করে এলে যে এবার?

ব্যস্ত ছিলাম তাই আসতে পারিনি।

ওহ। আর ওই মেয়েটা?

অনল মৈএীকে দেখিয়ে বলে, আমার কলেজের স্টুডেন্ট!কখনো গ্রাম দেখেনি তাই সাথে করে নিয়ে এসেছি। তোর রুমে নিয়ে যা……

চলবে
#মিশকাতুল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে