#রৌদ্র_মেঘের_জুড়ি(৮)
বিকেল হতেই মৈএী সাদা রঙ এর থ্রি পিস সাদা পাথরের চুড়ি, সাদা পাথর বসানো ছোট একটা
মালা কানের দুল সব পরে নিয়ে চেয়ারে বসে অপেক্ষা করছে অনলের আসার। অনল আজকে এত লেট করছে কেন?
গত চার মাস ধরেই অনল তাকে পড়াতে আসছে। এর মাঝে হাজার বার মৈএী অনলকে প্রেমের বাক্য শুনিয়েছে। অনল মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে আসেনা কিন্তু মৈএী বাবাকে বলায় মিজানুর কল করে অনলকে জিজ্ঞেস করেন,
কি হলো বাবা? আসছো না যে?
অনল কিছু একটা বলে পরের দিন ঠিক চলে আসে। মৈএীকে কয়েক বার ধমকিয়েছেও তবুও মৈএী বাদ রাখেনা অনলকে বিরক্তি করার তাই গতকালই অনল মৈএীর উপর চরম বিরক্ত আর রা*গে ফর্সা হাতের তালুতে কয়েক বার স্টিলের
স্কেল দিয়ে আঘা ত করেছে মুহুর্তেই মৈএীর ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছিলো। কথা বলতেও ভুলে গেছিলো এভাবে কেউ তাকে আঘা ত করেছে?তাও আবার পছন্দের মানুষ টা? অনলের কি মায়া হয় না মৈএীর উপর? একটা মেয়ে প্রতিদিন ব্যার্থ হয়েও আবার প্রেম নিবেদন জানাচ্ছে আর অনল বার বার তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে?মৈএী ব্যাথা পাওয়া হাত সোজা রেখেই ছলছল নয়নে অনলের দিকে তাকিয়ে দেখে অনল চোখ বন্ধ করে রেখেছে।
মৈএী চুপ করেই থাকে হাতের ব্যাথায় কান দিয়ে ধুয়াঁ বের হচ্ছে যেনো গলায় নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার যোগাড়! সেই মুহুর্তে অনল চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বাইরে চলে গেছে। হাতের ব্যাথায় আজ আর মৈএী কলেজ এ যায়নি। অনল আজকেও আসতো না তাই মৈত্রী আগেই বাবাকে বলে দিয়েছে আগামীকাল ক্লাস এক্সামের অনেক পড়া জমে আছে স্যারকে কল করে এই বিকেলেই আসতে বলো। অনলকে বলা মাত্র অনল জানিয়েছে সে আসবে,…
অনল আসে ঘন্টাখানেক পর। মৈএী বই নিয়েই বসে ছিলো অনল এসে পাশে চেয়ারে বসে।মেয়েটা আজকাল ওকে ইম্প্রেস করতে সাজুগুজুর দিকেও নজর দিয়েছে!মুখে হালকা প্রসাধনীর ছোয়াঁ দেখা যায় আজকাল। শুধু তাই নয় অনলের মতো সাদা কালো মিশেলের জামা কাপড় চুজ করে। অনল বুঝতে পারে মৈএী তাকে সত্যই ভালোবেসে ফেলেছে বার বার যে মেয়েকে ফিরে দিয়েছে অনল সেই মেয়ে বার বার ওকে চাইছে ওকে পাওয়ার চেষ্টা করছে অবশ্যই সে খাঁটি প্রেম। কিন্তু অনলের করার কিছুই নেই মৈএীর মতো একটা মেয়ে কখনোই অনলের হতে পারবেনা। মৈএীর বাবার কি নেই?সব আছে মেয়েকে নিশ্চয়ই সেরকম ঘরেই বিয়ে দিবেন তার মতো এতিম সন্তানের হাতে কখনোই মেয়েকে তুলে দিবেন না। অনলের মতো করে কে বুঝাবে মৈএীকে সেই কথাট? শুধু মন দিয়ে প্রেম হলেও বিয়ে হয় না।পয়সা ছাড়া কোনো ভালোবাসাই বেশি দূর অবধি যেতে পারবেনা। মৈএী যে পরিবারে বিলং করেছে সে পরিবারের সাথে অনলের পরিবারের মিল নেই। মৈএীর একদিনের হাত খরচই অনলের সারা মাসের যোগাড়। কি করে পুর্নতা পাবে এই ভালোবাসা? অনল নিজেকে শক্ত রাখতে চায় কোনভাবেই মৈএীর সাথে সাথে নিজেকেও দুর্বল করলে হবে না মৈএী এখনো বাচ্চা একটা মেয়ে তার মতো করব অনলকে ভাবলে তো আর চলবে না।
অনল পাশে আসতেই মৈএী বই এগিয়ে দেয় অনলের দিকে। অনল বই নিয়ে তা খুলে দেখে বলে,
কোন চ্যাপ্টার?
কোনোটাই না।
তাহলে?
আমার সব চ্যাপ্টার বোঝা শেষ এখন তোমায় বুঝতে চাই অনল!
আমি তোমার টিচার মৈএী সন্মান দিতে চেষ্টা করো।
তুমি আমার প্রেমিক পুরুষ!!
অনল হকচকিয়ে যায় এরকম কেন মেয়েটা যা মুখে আসে বলে দেয়!গত চার মাস ধরেই মৈএী অনলকে হুট হাট তুমি তুমি করে বলে আর উদ্ভট যা তা বলে ফেলে অনল বিব্রত হয় ।
এখন আবার কেমন প্রেমিক পুরুষ বলছে!!
অনল রে*গে যায় ভেতর ভেতর মেয়েটা এরকম কেন?তাকে বার বার দুর্বল করে দিতে চায় । অনল নিজেকে আবার ও শক্ত করার চেষ্টা করে আজকাল কেন যেনো মৈএীর ডাকে সাড়া
দিতে ইচ্ছে করে। মানুষের মন তো…….. একটু ভালোবাসা পেলেই গলে যেগে ইচ্ছে করে……
এসব কেমন কথা.তোমার সব বই বুঝে নেওয়া শেষ?
নাহ!
কোন টা বুঝোনি?আমায় দেখাও……
তোমাকে বুঝিনি অনল……..তোমাকে আমি কোন ভাবেই বুঝতে পারছিনা……একটু বুঝিয়ে দাও না অনল……আমি একা একা আর পারছিনা……..
বাদ দাও…….
বাদ দিতে চেয়েও তো পারছিনা……বুঝতে তো আমাকে হবেই….. অনল……. আমায় বিয়ে করবে?
আমি আর কাল থেকে আসবো না মৈএী তোমার বাবাকে প্লিজ তুমি বলে দিও যে তোমার সব বই বুঝে নেওয়া হয়েছে আমার থেকে। প্লিজ………
তুমি আমায় ভালো কেন বাসছো না অনল?আমার কোন দিক দিয়ে অপুর্নতা রয়েছে অনল?তুমি আমাকে বলো……
মৈএী প্লিজ স্টপ! ভালো লাগেনা আমার এসব কথা শুনতে….. আরেএ আমি বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি মৈএী….. কলেজ এ তো তাও যেটুকু চুপ থাকে তোমার প্রেম প্রস্তাব দেওয়া কিন্তু বাসায় তুমি অনেক বিরক্ত করছো আমাকে আমি আর পারছিনা……..
প্লিজ অনল আমাকে একবার ভালোবাসো তুমি…….
শুধু একবার…….
আমি যাচ্ছি….
তুমি যাবেনা…..
কি তুমি তুমি করছো মৈএী স্যার হই আমি তোমার বুঝতে পারো না?
অনলকে এই প্রথম বার মৈএী উত্তেজিত হতে দেখলো…. তবুও মুখ বন্ধ করলো না সে আবার ও অনলকে বুঝাতে লাগলো,
কোন ভাবেই তুমি ছাড়া আমি ভাবতে পারছিনা অনল….আমি কেন প্রেমে পরলাম? তাও আবার তোমার? আমাকে একবার….
প্লিজ বন্ধ করো তোমার মুখটা। আমি আসছি……..
অনল রাস্তায় এসেছে রিক্সা পেতেই সেখানে বসে নিজের বাসার দিকে যেতে লাগলো আর ভাবলো,
তুমি কেন আমাকে কেন দুর্বল করছো মৈএী কেন বাস্তবতা মেনে নিচ্ছো না?তুমি তো স্বর্ণের চামচ মুখে নিয়ে বেড়ে উঠেছো আর আমি??কিভাবে তোমায় বলি! ভালোবাসি………
চলবে
#মিশকাতুল