রৌদ্র মেঘের জুড়ি পর্ব-০৬

0
443

#রৌদ্র_মেঘের_জুড়ি(৬)

অনল তোমার সাথে মিজানুর সাহেব দেখা করতে এসেছেন। উনি অনেক্ষন আগেই এসেছেন। প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে রয়েছেন ক্লাস শেষ করে চলে এসো স্যারের কেবিনে।

ওকে স্যার।

অনল একটু ভাবে মিজানুর সাহেব কেন তার সাথে দেখা করতে এসেছে।মৈএী কি বাসায় বলে দিয়েছে নাকি যে অনল মানা করে দিয়েছে ওর প্রস্তাব?ক্লাস শেষ করেই অনল প্রিন্সিপাল স্যারের রুমের দিকে এগিয়ে আসে। মিজানুর সাহেব আর প্রিন্সিপাল স্যার এখনো গল্প করেই চলেছেন ।
অনল কে দেখেই তিনি বলেন,
মিজানুর ভাই এ হলো অনল। যার সাথে আপনি দেখা করতে এসেছেন।

অনলকে দেখে মিজানুর সাহেব হাসলেন তারপর পাশের চেয়ারে ইশারায় বসতে বলেন। অনল সেখানে বসতেই তিনি বললেন,

আসলে আমি তোমার ছাত্রী মৈএীর বাবা।
ওকে তো তুমি চেনো! শুনেছিলাম তুমিই একদিন রাস্তার মাঝখানে থেকে আমার মেয়েকে বাচিঁয়ে এনেছিলে।
আমার মেয়েটার আমার জন্যই কিছু শত্রুর সৃষ্টি হয়েছে। কলেজ এ নেওয়া আসা করাও ঝামেলা হয়ে যাচ্ছে এখন তুমি তো জানো আমার মেয়েটা খুবই মেধাবী ছাত্রী এই সময় ক্লাস মিস দিলে অনেক ক্ষতি হবে ওর তা ও নিজেই চায় না। আসলে আমি চাইছিলাম তুমি কি প্রতি দিন বিকেলে আমার মেয়েকে দুটো ঘন্টা সময় দেবে?তাহলে আমার খুবই উপকার হয় বাবা । অনেক আশা নিয়ে আমি তোমার কাছে এসেছি।
অনল কি বলবে বুঝতে পারছেনা। সে যতটা জানে মিজানুর সাহেব অত্যান্ত ক্ষমতাবান মানুষ সে কাউকে রিকুয়েষ্ট করতেও জানে?ক্ষমতা দেখিয়ে হুমকু দিয়েও তো অনলকে প্রস্তাব দিতে পারতো। অনল কিছুটা ভাবলো এরপর জানালো,

আমি চেষ্টা করবো আংকেল।

মিজানুর সাহেব খুশি হলেন অনলের উওর শুনে এরপর মুখে হাসির রেখা আর ও টেনে বললো,
আচ্ছা বাবা তাহলে তুমি আজ বিকেলেই চলে আসার চেষ্টা করো আমি অপেক্ষায় থাকবো তুমি তো আমার বাসার ঠিকানা জানো তাই না?মৈএীকে রেখে এসেছিলে সেদিন।

জ্বি আংকেল আমি যাবো।

আচ্ছা তাহলে আমি এখন আসছি তুমি একটু জলদি আসার চেষ্টা করো আমার মেয়েটা বই নিয়ে বসেই থাকবে।

জ্বি আংকেল।

কলেজ শেষ করে অনল নিজের বাসায় চলে গেলো। প্রতিদিন সকালেই অনল গোসল করে কলেজ এ চলে যায় তাই ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসেছে। রান্না করে রেখে রেডি হয়ে মৈএীর বাসার দিকে চলে গেলো।
বাসার সামনে গিয়ে রিক্সা থেকে নামতেই দেখে মৈএী গেট এর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। অনলকে দেখেই গেইট খুলে দিতে বলে এরপর অনলকে সালাম দেয়। অনল উত্তর দিয়ে মৈএীর দিকে তাকিয়ে বলে,

চলো।

জ্বি স্যার। আমি ভেবেছিলাম আপনি আমার মতো বাবাকেও ফিরিয়ে দিবেন।

সেরকম নয়।

মৈএী অনলের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রসন্ন হয়। এরপর অনলকে সাথে করে নিয়ে বাসার ভেতরে যায়। দোতলা বিশাল বাড়ির নিচ তলায় অনেকটাই ফাকাঁ সেখানে অনেক গুলি সোফা সহ সামনে কাচের টেবিল রাখা ও সামনে মনিটর স্যেট করে রাখা সেখানেই দুইজন ছেলে বসে বসে ক্রিকেট খেলা দেখছে। ওদের দেখিয়ে দিয়ে মৈএী
জানায় ওরা ওর বড় ভাই মুহিব আর মোহন। অনল ওদেরকেও সালাম দেয় মোহন কে সে চেনে গত বছরই কলেজ এ থেকে বিদায় নিয়েছে মোহন। সে উঠে অনলকে সালাম দেয় কথা বার্তা বলে তারপর রাবেয়া নাস্তা সাজিয়ে আনে। এরপর মৈএীর রুমে নিয়ে যায় দোতলাতে। বিশাল রুমের এক পাশে রয়েছে বিছানা ও চেয়ার টেবিল। আলমারি ও ওয়ারড্রব আর ও রয়েছে বিভিন্ন সামগ্রী। অনল একটা চেয়ারে বসে সামনের চেয়ারে মৈএী বসে সন্ধ্যা হয়ে আসছে বলে শুধু পড়া দেখিয়ে দিয়েই অনল চলে যায় আজ তো প্রথম দিন তাই সবার সাথে পরিচয় করতে গিয়েই সময় বেশিটা চলে গেছে।

—-
পরের দিন সকালে মৈএী মুহিবের সাথে কলেজ এ আসবে ব্যাগ নিয়ে নেমে আসতেই মোহন বললো,

চল আমি নিয়ে যাই আজকে।

তুমি কেন?মুহিব ভাইয়া না যাবে বলেছিলো।

এত কথা বলিস কেন সব সময়?আমার সাথে যেতে কি সমস্যা তোর? যদি সমস্যা হয় তাহলে তুই একাই চলে যা। আদিক্ষ্যতা দেখানোর কি আছে!তুই একাই শত্রুদের নজরে আর আমরা নেই??রোজ রোজ হাজার হাজার মেয়ে রাস্তায় একাই চলাফেরা করছে কই তাদের তো কাউকে দরকার হচ্ছেনা! তোর বেলায় কেন এত হচ্ছে?তুই কি আহামরি সুন্দরী??

মৈএী ছোটো ভাইয়ের কথা শুনে ব্যাথা অনুভব করলো মনের মাঝে। সে জানে এই ভাইটা সব সময় তাকে খোঁচা দিয়্ব কথা বললেও অসংখ্য ভালোবাসে সে অনেক কেয়ার করে জ্বর হলে সারা রাত রুমের মাঝেই পাশে রবে। তবুও যেনো এভাবে কথা বলে কি শান্তি পায় বুঝেনা।
মোহন মৈএীর চোখে জল দেখে বলে,
এভাবে কান্নাঁ করার কি মানে?আমি তোকে অপ**মান করে কথা বলেছি?প্রেত্নিকে প্রেতাত্মা বললেই ক্ষ্যেপে য্যায় কেন??যত্তসব!!

মৈএী কিছুই বললোনা হন হন করে গাড়ির ভেতরে গিয়ে বসে। মোহন এসে পাশের সিট এ বসে।

খাবার না খেয়েই এলি কেন?

তোর খাবার তুই খা না আমাকে বলতে আসছিস কেন?কে হই আমি তোর?

মোহন বুঝে ফেলে বোন তার রে*গে বোম হয়ে আছে তবে। কি করবে এই ছোটে বোন নামক এটম বোমাদের রা গাতে এত ভালো লাগে!!

ওহ আচ্ছা আচ্ছা! ধন্যবাদ আপনাকে আফা!আমাদের খাবার বাচাঁনোর চেষ্টা করেছেন আপনি। খুব ভালো মহৎ কাজ করলেন আপনি সকাল সকাল আপনার এই কাজে খুব আনন্দিত আমি আফা!!

তোমার সাথে কথা বলাই বেকার!!
মৈএী আর সত্য কিছুই বলেনা মোহন নানা রকম খোঁচা মার্কা কথা বলেই যাচ্ছে। তবে মৈএী একদম চুপ করে আছে।

——
মৈএী সব ক্লাসে মনযোগী হতে পারলেও অনলের ক্লাসে মনযোগী হতে পারেনা। কি করে দিবে মন?মনটাতো অনলকে নিয়স ভাবতেই ব্যাস্ত থাকে। অনল কি খেয়াল করে ক্লাসে এত সবার মাঝে মৈএী কে?নিশ্চয় না কেননা মৈএীর দিকে অনল এক মুহুর্তের জন্য ও তাকিয়ে দেখেনা। যেমন আসে বই খুলে সব বুঝিয়ে দেয় যাদের সমস্যা হয় তারা কুয়েশ্চন করলে উত্তর করে অনল ব্যাস এই তার দিন কালের সূচি।
অনল মৈএীকে ভুল প্রমান করে মৈএীর একদম নিকটে এসে দাঁড়িয়ে পরে। মৈএী এতটাই বেখেয়ালি ছিলো যে পাশে থেকে সুমনা সেই কখন থেকে মৈএীকে ঠিক করে বসতে বলছে খেয়াল করেনি অনল যখন মৈএীকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে তখন হুশ ফিরে।

কি হলো এখনো বসে আছো কেন?

মৈএী আমতা আমতা করে ক্লাসের সবার দিকে তাকিয়ে একবার দেখে অন্যদিকে সবাই ভাবে এখন মৈএী কি করতে পারে?প্রথম দিন এই স্যারের সাথে যে কাজ করেছে তা আবার করবে নাকি ভেবে পায় না সকলেই।

চলবে
#মিশকাতুল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে