#রৌদ্র_মেঘের_জুড়ি(৫)
গুনে গুনে দুই সপ্তাহ পর মৈএী ভাইয়ের সাথে কলেজ এসেছে এই কয়েকদিন বাসাতেই ছিলো অসুস্থ শরীর নিয়ে কোন ভাবেই কলেজ এ ক্লাস করতে আসতে পারছিলো না। আজকেও বাসার বাইরে বের হতে ভয় লাগছিলো কিন্তু কি করবে? বাইরে তো আসতে হবেই তাই না?মৈএী সুমনাদের সাথে গিয়ে বেঞ্চ এ বসে কিছু কিছু জায়গায় এখনো ক্ষ*তের দাগ বসে রয়েছে। সুমনা মৈএীকপ সাবধানে বসতে বলে মৈএী এতদিন না আসাতে সুমনা ওর জন্য নোট করে রাখে সেগুলো দিয়ে দেয় এত গুলি দিন পর মৈএী আসাতে বন্ধু মহলে হৈ চৈ শুরু হয়েছে মৈএী সবার সাথেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেছে তাই তো ওর অসুস্থতার খবর শুনে ক্লাসের অনেকেই ওর বাসায় গিয়ে দেখে এসেছে। সব গুলি ক্লাস মৈএী ভালো ভাবেই করে। ছুটির আগে অফিস রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে ওকে দেখে একজন টিচার এগিয়ে আসে।
কি হয়েছে মা মৈএী?
আসলে…..
কোন প্রয়োজন তোমার?
জ্বি।
কাকে ডেকে দেব?
অনল স্যার কে…
অনল?তিনি শুকনো ঢোক গিলে নেয় এই মেয়ে অনল স্যার কে কেন খুজঁতে এসেছে?প্রথম দিন অনলের সাথে মৈএী যা করেছে এরপর আর কেউ অনলের সাথে মৈএীকে ঝ গ ড়া বা ঝামেলা করতে দেখেনি। রাগী স্যার হয়েও অনল মৈএীকে কিছুই বলেনি তাহলে কেন ওকে ডাকছে?
অনলের সাথে দেখা করতে এসেছো তুমি?
জ্বি।
ওর সাথে কি কোন ঝামেলা হয়েছে তোমার আর মা মৈএী?
কথায় কথায় ঝামেলা করছেন কেন?ওনার সাথে আমার দেখা করা দরকার তাই এসেছি আপনি ওনাকে ডেকে দিবেন কি না তাই বলুন অযথা কেন কথা বলছেন?
মৈএীর উত্তর শুনে রাজ্জাক স্যার আর কিছুই বলেনা অনলকে দেখে ডেকে এগিয়ে আনে। অনল চেয়ার থেকে উঠে বাইরে বারান্দায় আসে মৈএীকে দেখে সেদিকেই এগিয়ে আসে। অনল আসতেই।মৈএী সালাম জানায় অনল একটু হকচকিয়ে যায় এরপর উত্তর দেয়।
আপনিকি বিরক্ত হয়েছেন স্যার এখানে আসতে?
না। তুমি কি বলতে চাও বলে ফেলো …
sory স্যার… সেদিন আপনার সাথে চরম বেয়া*দবী করে ফেলেছিলাম। আসলে আমার ওই আচরণ করা উচিৎ ছিলো না। আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি স্যার। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। আর হ্যাঁ ধন্যবাদ সেদিন যদি আপনি না এগিয়ে আসতেন আমার বিপদে তাহলে আমি হয়তো আজ আর এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারতাম না। আমাকে নতুন একটা জীবন দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে স্যার।
তোমার জীবন আমি নই প্রভু বাঁচিয়েছেন। আর হ্যাঁ সব কিছুই বুঝতে পারার জন্য ধন্যবাদ এখন কি আমি আসতে পারি?
মৈএী স্বাভাবিক চোখেই অনলকে দেখে নেয় সম্পুর্ন এক বার এরপর বলে,
হ্যাঁ আসুন।
—–
মৈএী এখন নিয়মিত ক্লাস করে ভাইয়া অথবা বাবা এসে নিয়ে যায় আবার রেখে যায়। মৈএী খেয়াল করে প্রতিদিন অনলকে। কেন জানেনা অনলকে খেয়াল করতে করতে এখন অনলের ভেতরটা বুঝতেও চেষ্টা করে মৈএী আর ও একটা জিনিস খেয়াল করেছে মৈএী ক্লাসে যখন কোন মেয়ে উঠে অনলের কাছে পড়া বুঝে নিতে যায় আর অনল খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয় মৈএীর রাগ হয় কেন মেয়ে গুলোর সাথে অনল কথা বলবে?অনল সব সময় সাদা আর কালো মিশেলে সব ড্রেস ইউস করে। আজকাল নুসরাত কেও মৈএী সহ্য করতে পারেনা। বিশেষ করে যখন খেয়াল করে অনল আর নুসরাত পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কথা বলছে। মৈএী বিরক্ত হয় এত এত সব এর মাঝে।
অনলের কথা মৈএী বাসায় বলে রেখেছে বাবার কাছে সে প্রায়ভেট নিতে চায় তাও আবার সেই টিচার যে একদিন মৈএীকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে এনেছে। মিজানুর সাহেব বলেছেন তিনি ওই স্যারের সাথে কথা বলবেন এ ব্যাপার নিয়ে।
মৈএী ক্লাস শেষ করে অনলের সাথে দেখা করতে যায় আর বলে,
স্যার স্যার থামুন…..
অনল পেছন ফিরে মৈএীকে দেখে নেয় এরপর থেমে দাঁড়িয়ে পরে।
জ্বি ….
আসলে স্যার আমি সেই ক্লাস শেষ এর পর থেকেই আপনাকে একটা কথা বলার জন্য ছুটো ছুটি করে আসছি।
কি? কেন?
আসলে স্যার আমার মনে হয় আমি আপনাকে প………..
মৈএী কাচুঁমুচু করে ফেলে নিজের মুখটা কি বলতে কি বলে ফেলছিলো সে এখন…….কথা পাল্টে নিয়ে বলে,
আসলে…. আসলে….,স্যার আমার মনে হয় আপনি যদি আমাকে একটু সময় করে বাসায় গিয়ে ক্লাসের পড়া গুলো বুঝিয়ে দিয়ে আসতেন আমার খুবই উপকার হতো……
আপনি তো জানেন আমি কি অবস্থায় রয়েছি…. স্যার আপনার কি সময় হবে…..
অনল চুপ করে মৈএীর দিকে তাকিয়ে রয়েছে শুধু মৈএীর কথা শেষ হতেই অনল বলে,
আমি সময় বের করতে পারবো না মৈএী। আমার কলেজ শেষ এ দুটো টিউশন রয়েছে এরপর বাসায় ফিরে রান্না করতে হয় আবার আমাকে। কিভাবে সময় দেব আমি তোমায়? তোমার বাবাকে বলে অন্য একটা টিচার ঠিক করে নিলেই পারো……
মৈএী নিভে যায় সে জানে অনল তার ব্যাবহারের জন্যই সময় দেবে না তা না হলে মৈএী যতটা জানে অনল একটা অতিরিক্ত টিউশন খুজঁছে ক্লাসের সবাই মিলে ব্যাস ওঠিক করতে চাইছে কিন্ত মৈএী সবার সাথে নয় একটু একা অনলের সাথে সময় চাইছে কেম চাইছে নিজেও সেভাবে বুঝতে পারছে না। সে চায় অনল তাকে পড়াক অন্য সবাইকে নয় সেখানে কত ঢং করা মেয়েরাও রয়েছে। যেভাবেই হোক অনলকে সময় দিতেই হবে মানে হবে।
চলছেই তো…………
#মিশকাতুল