#রৌদ্র_মেঘের_জুড়ি(৪)
অনলকে শক্ত করে জ*ড়িয়ে ধরে রেখেছে মৈএী মাথা কেমন ভাড়ি লাগছে নিজের কাছে ওর চোখ বন্ধ হয়ে আসছে শক্তি পাচ্ছে না দাঁড়িয়ে থাকার বিভ্রান্ত হয়ে অনলের পিঠের শার্ট আকঁড়ে ধরে বুকের সাথে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে। যদি অনল না আসতো? তাহলে নিশ্চয়ই মৈএী এতক্ষন বেচেঁ থাকতো না।ভয়ে জ্ঞান হারা*তে বসেছে ও এখনো র*ক্তে ভিঁজে রয়েছে মৈএী চার পাশের ছুটে আসা গাড়ির সাথে কম তো ধাঁক্কা খায় নি! ব্যাথা করছে পুরো শরীরে। অনল ওকে নিয়ে রাস্তার এক পাশে আসে দোকান থেকে পানির বোতল নিয়ে মুখে দিয়ে দেয় কিছুটা পান করে মৈএী যেনো ছোট একটা বাচ্চাদের মতো হয়ে গেছে এই মুহুর্তে ভয়ে। অনল মৈএীর মুখের র*ক্ত নিজের রুমাল বের করে হালকা করে মুছে দিয়ে পানি দিয়ে ধুঁয়ে দেয় হালকা করে এরপর রিক্সা নিয়ে ফার্মেসিতে যায় ওকে ট্রিটমেন্ট করিয়ে বের হয়ে আসে। এখনো মৈএী ভয়ে অনলের হাত শক্ত করে ধরে আছে।
তোমার বাসা কোথায়? আমি কি রিক্সা দেখিয়ে দেব??
মৈএী অনলের হাতে হাত রেখে মুখের দিকে খেয়াল করে। অনল রাস্তার দিকে তাকিয়ে রিক্সা দেখছে। মুখ জুড়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে মৈএী নিশ্চুপ হয়ে রইলেও ভেবে যাচ্ছে একটু আগের কথা কি হচ্ছিলো তার সাথে?সে এখন রিক্সা নিয়ে কিভাবে একা বাসায় যাবে যদি রাস্তায় কিছু হয়ে যায়? না না এভাবে সে একা যাবেনা। এখন কি করবে?
অনল একটা রিক্সা থামিয়ে মৈএীকে উঠে বসতে বলে,
যাও ওখানে গিয়ে বসো।
মৈএী অনলের হাত ছেড়ে দেয় না। আরও শক্ত করে বন্ধন ভয়ে অনলের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
কি হয়েছে?
অনলের প্রশ্নে উত্তর দেয় না মৈএী উল্টো কান্নাঁ শুরু করে দেয়। অনল হকচকিয়ে যায়। এই মেয়ে এভাবে কান্নাঁ করতেও পারে?সেদিন না কিভাবে সবার সামনে অনলের গালে চ*ড় বসিয়েছিল? কই গেছে সেই সাহস?
অনল সে নিয়ে আর চিন্তা করেনা উল্টো মৈএীকে শান্তনা দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
এভাবে কান্নাঁ করব কি হবে?বাসায় যাবা না?
কোথায় যাচ্ছিলে? কলেজের সময় ছিলো তো তখন কিন্ত্ তোমার সাথে তো বই ব্যাগ কিছুই ছিলো না নাকি নিজ ইচ্ছায় রাস্তায় নেমেছিলে?বড় লোক বাবার আদরের মেয়ে এভাবে রাস্তায় ম*র*তে এসেছে??
মৈএী অপমান হচ্ছে বুঝতে পারে তবুও অনল কে কিছুই বলেনা কি বলবে ও?আজ যদি অনল ওকে ওখান থেকে না তুলে নিতো? কি হতো? মৈএী তো অনলের সাথে যে ব্যবহার করেছিলো তা মনে করতেই আজ নিজেকে ছোটো মনের মানুষ মনে হচ্ছে। বাবা আর ভাই ছাড়া মৈএী এই মুহুর্তে কাউকে নিজের জন্য বিশ্বাস করতে পারবেনা কিন্তু একটা কিছু রয়েছে যার জন্য অনলের কাছে নিজেকে নিরাপদ মনে হচ্ছে হয়তো অনল ওকে সাহায্য করেছে বলেই এমন মনে হচ্ছে।
আমি, আমি বাসায় যেতে চাই ।
আচ্ছা তাহলে রিক্সায় গিয়ে বসো উনি তোমায় নামিয়ে দিবে।
মৈএী কিভাবে বলবে?সে একা যেতে চাচ্ছেনা ভয় লাগছে কখন আবার কে এসে ওকে মা*র*তে চাইবে কে জানে?
আমি মানে আমি….. একাঁ যাবো না।
অনল বিব্রত হয় বলে,
কার সাথে যাবে তবে?
আপনি আমাকে একটু বাসায় রেখে আসবেন স্যার?একাঁ আমি বাসা পর্যন্ত যেতে পারবো না ওরা আমাকে মে*রে ফেলে দিবে তা হলে!
অনল চিন্তিত হয়….কেউ কি মৈএীর ক্ষতি করতে চায়??হবে হয়তো….
আমি তোমার বাসা পর্যন্ত তোমায় রেখে আসবো?
হু।
আমাকে আঘা*ত করার সময় আমার অবস্থান নিয়ে ভেবেছিলে?
সোজা কথায় মৈএী লজ্জা পায় অপেক্ষা রাখেনা অনল তাকে কিসের কথা বলতে বুঝাচ্ছে তা বুঝতে।
মৈএী কান্নাঁ ভেজাঁ চোখে অনলের দিকে তাকিয়ে বলে,
স্যরি স্যার।
অনল কাউকে কল করে বলে দেয়,ক্লাস গুলো সে সময় পরিবর্তন করে নেবে আজ।
অনল প্রথমে রিক্সায় বসে এরপর মৈএী ফাঁকা স্থানে গিয়ে বসে পরে। অনল খেয়াল করে মৈএীর জামা কাপড় লেগে থাকা র**ক্ত শুকিয়ে শুকিয়ে গেছে। ব্যাথায় ফর্সা মুখ ফ্যাকাসে হয়ে রয়েছে। এখনো নীরবে কান্নাঁ করেই যাচ্ছে। রিক্সা ওয়ালা মামাকে মৈএী বাসার ঠিকানা বলে।
—–
ঝকঝকে সাদা রঙের বিশাল একটা দোতলা বাড়ির সামনে রিক্সা থামিয়েছে অনল মৈএীর হাত ধরে নামিয়ে নেয় রিক্সা থেকে এরপর ওর সাথে কথা বার্তা বলে রেখে আসে গেইট এর সামনেই। মৈএী যদিও অনলকে বার বার রিকুয়েষ্ট করে ভেতরে গিয়ে একটু বসার জন্য কিন্তু অনল শুনেনা। একই রিক্সা নিয়ে কলেজের দিকে চলে যায় মৈএী দুর্বল শরীরে গেইটম্যানকে ডাক দিয়ে ভেতরে যেতেই রাবেয়া সহ বাসার কাজের মেয়েটা ছুটে আসে ওর দিকে মৈএীকে দ্বখেই সকলে আতঁকে ওঠে সকাল বেলা যে মেয়ে কলেজ এর জন্য হাসিমুখে বের হয়েছে সেই মেয়ে দুপুর না হতেই হাতে, পায়েঁ,মুখে, মাথায় ব্যান্ডেজ সহ র**ক্তে লাল হয়ে বাসায় ফিরছে?
কি হয়েছে মৈএী?এসব কি করে হলো?
রাবেয়া বলতে বলতেই কান্নাঁ শুরু করে দেয়…মৈএী একদম ব্যাথা সহ্য করত্ব পারেনা। এতক্ষন বাইরে অনলের সামনে চিৎকার করে না কান্নাঁ করলেও পরিবারের মানুষ দের পেয়ে চাপাঁ রাখা কান্নাঁ বাইরে আসে। রাবেয়াকে সব খুলে বলে শুরু থেকে। রাবেয়ার বুকটা কেঁপে ওঠে মৈএীর সাথে এরকম হয়েছে?ওদের বাসাতেই এতদিন গার্ড হিসেবে থেকে আজ মৈএীর সাথে এরকম করেছে?ময়নুল বা অন্য তিন ভাই শুনলে কি করবে কে জানে?আর মিজানুর সাহেব এর কথা তো ভাবতেই পারছেনা রাবেয়া। রাবেয়া অনলের জন্য দোয়া করে দেয় ওভাবে সাহায্য করেছে বলে।
খবর পেয়েছে বাবা আর ভাইয়েরা মৈএীর পাগলের মতো সব কাজ ফেলে রেখে বোনের কাছে চলে এসেছে ডাক্টারকে কল করে বাসায় এনেছে। মিজানুর সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তার আদরের মেয়ে এটা যদি আজ কিছু হতো? যদি অনল নামের ছেলেটা না এগিয়ে আসতো??
ভাবতেও পারছেন না তিনি! যে শত্রু ওর মেয়ের ক্ষতি করার চেষ্টা চালিয়েছে তাদের কাউকে ছাড়বেন না তিনি কাউকে না!!
চলবে
#মিশকাতুল