রৌদ্র মেঘের জুড়ি পর্ব-০৩

0
465

#রৌদ্র_মেঘের_জুড়ি(৩)

অনল ক্লাস শেষ করে বের হয়ে দেখে মৈএী কলেজ এ নেই ওদের ক্লাসে চেক করে এসেছে অনল। নেই মেয়েটা হয়তো চলে গেছে অনল আর মাথা ঘামায় না। আওব গুলো ক্লাস করিয়ে বাসায় চলে আসে।
মৈএীর বাবা আর ভাইয়েরা দুপুরের আগেই বাসায় এসেছে। নিজানুর সাহেব গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন মৈএীকে কলেজ থেকে বাসায় এনে রেখে যেতে কিন্তু গাড়ি গিয়ে তাকে পায় নি। পরে কল করে জেনে নেয় আজকে মৈএী একা আগেই ফিরেছে কিন্তু কেন?তিনি দুপুরে দ্রুত বাসায় ফিরে আসে। মৈএীর তিন ভাই ও সাথেই আসে তবে ছোটো ভাই মোহন সেই সময় আসেনা ও একটু চার ভাইয়ের মাঝে মৈএীকে কম ভালোবাসে তবে খেয়াল ও রাখে। মৈএীর বড় ভাই ময়নুল,মেজো ভাই মজনু,সেজো ভাই মুহিব আর ছোটো ভাই মোহন। সবার আদরের ছোট বোন মৈএী। মা চলে যাওয়ার পর মৈএীর আদর যেনো আর ও বেড়েছে।

পরের দিন কলেজ ক্যাম্পাসে মিজানুর সাহেব নিজেই মেয়ের সাথে আসে। ওনাকে দেখেই প্রিন্সিপাল স্যার কাচুমাচু করতে থাকে এই লোক সুবিধার নয় এখন কি হবে উনি বুঝতে পারছেন না। গত কাল নুসরাত ম্যাম যে কাজটা করেছে তাতে সে নিশ্চিত এই কারণেই মেয়েকে সাথে করে নিয়ে এসেছে।
স্যার উঠে মিজানুর সাহেব কে বসতে বলে,

বসুন না ভাই। আপনি আজ মৈএী মায়ের সাথে এলেন যে? আমি কিন্তু অনেক খুশি হয়েছি আপনার আসায় এখানে।

জ্বি, আসলে মেয়ে আমাকে নিয়ে আসতে বাধ্য করেছে। আমার আপনার সাথে কিছু একান্ত কথা ছিলো। যদি আপনার সময় হতো।

স্যার আমতা আমতা করে বলে,
বলুন না ভাই আমি এখন ফ্রি আছি।

মিজানুর সাহেব মৈএীর দিকে তাকিয়ে বলে,
মা তুমি একটু বাইরে ক্লাসে যাও ওনার সাথে আমি কথা বলে দেখা করতে আসছি তোমার সাথে।

জ্বি আব্বু , বলেই মৈএী ক্লাসের দিকে যায় সে জানে বাবা এখন ওই ম্যাম কে নিয়েই কথা বলবে। সাহস কি করে হয় তাকে আঘা**ত করে??

—–

আমার পরিবারে এক মাত্র আদরে লালন পালন হওয়া মেয়ে মৈএী। বছর দুয়েক আগে গাড়ি এক্সিডেন্ট এ ওর মা গত হন সেখানে সেদিন আমার মেয়েও মাথায় আঘা*ত পায় এতে করে ও একটু নয় অনেকটাই অসুস্থ হয়ে যায়। এখন সুস্থ হলেও ওর মাথায় আঘা*ত পাওয়ার জন্য নানা রকম ব্যাবহার চেঞ্জ করে ফেলেছে তার মাঝে একটা ও হুট করেই অস্বাভাবিক আচরণ করে ফেলে যখন তখন যার তার উপর রে**গে যায়। আমার আপনার সাথে এ নিয়ে আগেই কথা বলা দরকার ছিলো সে যাই হোক এটা বাচ্চাদের স্কুল নয় কলেজ আর সকল প্রতিষ্ঠান কেই বলা আছে বাচ্চাদের আঘা*ত করে নয় বুঝিয়ে ও যত্ন সহকারে শিক্ষা দান করতে হবে।
সেখানে আমি আমার মেয়ের সাথে গতকালের ওই ব্যাবহার আশা করিনি। আপনার কলেজ এ আমার মেয়ে থাকবে। সে অবশ্যই একজন ট্যালেন্টেড ছাত্রী। ও ভালো রেজাল্ট করবে আমি জানি তাই ওকে অযথা আঘা*,ত করতে বাধা দিবেন। আর হ্যাঁ এই প্রথম একটা ভুল তাই আমি চাই ওই ম্যাম যেনো আমার মেয়েকে সরি বলে আসে।

নিজের কথা শেষ করেই মিজানুর সাহেব উঠে আসেন প্রিন্সিপালের রুমের চেয়ার থেকে বাইরে এসে মেয়ের সাথে দেখা করে গাড়ি নিয়ে বের হয় সে। অনল প্রিন্সিপালের রুমের বাইরে ছিলো সে সব শুনেছে। নুসরাত আসলেই ভুল করেছে মেয়েটার হাতে সাদা ব্যান্ডেজ রয়েছে।

অনল আর প্রিন্সিপাল স্যার বলাতে নুসরাত বাধ্য হয়েই মৈএীকে সরি বলে। এতে তার ইগো হার্ট হয় সামান্য একটা ছাত্রী কে তার সরি বলা লেগেছে??ক্ষমতাই কি সব??

দিন কয়েক পরে সকাল বেলাতে মৈএী কে দুজন গার্ড এর সাথে কলেজ এ পাঠিয়ে দেয় ময়নুল। বোনের সাথে আজ আর সে আসতে পারেনা অফিসে কাজ রয়েছে। ওরা মৈএীকে বাসা থেকে নিয়ে আসে কলেজের রাস্তায় না নিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে নিয়ে যেতেই মৈএী অবাক হয় সে বার বার বলে,
এদিকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ আমাকে?

ওরা দুজনে কথা বলে না। ড্রাইভার কে ভয় দেখিয়ে আগেই নামিয়ে দেয়। মৈএী ভয় পেলেও সাহস রাখে ব্যাগ থেকে ফোন করতে নিবে খেয়াল করে ব্যাগ সামনে একজন গার্ড এর কাছে রয়েছে মৈএী ব্যাগ ফিরে দিতে বল্লেও ওরা দেয় না।
মৈএী রে*গে যায় এবার শক্ত গলায় বলে,

কি হচ্ছে কি এসব?ব্যাগ কেন দিচ্ছিস না আমাকে তোরা?

দুজনের মাঝের একজ ন ধমক দিয়ে বলে,

চুপ কর তুই শা**লি! অনেক হয়েছে আর না!! বাবা ভাইয়াদের খুব আদরের না তুই.?দেখ আজ কি হয় তোর অবস্থা??

মৈএী এবার দ্বিগুণ তেতেঁ ওঠে মুখে বলে,
ওহ আছা!!আমাকে মে**রে ফেলার চান্স নিয়েছিস তবে?বুঝতে পারছিস কি তোরা? বাবা ভাইয়ারা জানলে তোদের কি করবে??

ওদের মাঝে আবার একজন বলে,
আরেএ চুপ করনা তুই! তোর খ বর জানবে তো আমরাই জানাবো আগে তোকে শেষ করে দেই!!

দে দে দেখ আমার সাথে ভুলেও খারাপ কিছু করার চেষ্টা করবিনা বলে দিলাম।

মৈএীর কথাকে ওরা দুজনে একদম পাত্তা দেয় না উল্টো বলে,
এই মেয়ে মেইনরোডে পায়েঁ চলতে ভয় পায় রে বিপ্লব আমি বলি কি!ওকে আমাদের হাত দিয়ে খু**ন করে হাত অপরিস্কার করার মানে হয়না বরং রাস্তার মাঝে নামিয়ে রেখে দিলেও কেল্লাফতে#!

বলা শেষ করেই ওরা মৈএীকে টেনে হিঁচড়ে রাস্তার মাঝে নামিয়ে দেয় ওদিকে সত্যই মৈএী অতিরিক্ত গাড়ির শব্দে ভয় পায় চোখে ভাসে মায়ের শেষ বেলা চলে যাওয়া কত শত র**ক্ত…
মৈএী দুই হাতে নিজের মাথা চেপে ধরে রাখে কান্নাঁ আসছে মুহুর্তেই চোখ বুঝে ফেলে কি অসহ্য ব্যাথা লাগছে তার!!
গাড়ি নিয়ে দুজনে সরে গেছে মৈএী দুই চোখ খুলে দেখে ওর আশে পাশের গাড়ি গুলো দ্রুত বেগে চলে যাচ্ছে কেউ কেউ ওকে পাগল বলে গালি গালাজ ও করছে অথচ কেউ ওকে সাহায্য করছে না। মৈএীর মনে হয় সামনে থেকে আসা গাড়ি ওকে এখন পি**ষে দিয়ে যাবে একটা গাড়ি ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে যায় তবুও গাড়ি থেকে নেমে এসে কেউ ওকে রাস্তার কিনারায় নিয়ে যায় না। মৈএীর বুক কেপেঁ ওঠে এই বুঝি ওর শেষ সময় চলে এসেছে!! মৈএী রাস্তায় পরে থেকেই চোখ বন্ধ করতে নেয় ওর শরীরে আঘা*ত লেগেছে র**ক্ত
দেখেছে ও এতে করে ওর ভয় আরও বেড়েছে আর হবেনা, হবেনা বাবা ভাইয়াদের দেখা!!

কিন্তু মৈএীকে অবাক করে দিয়ে কেউ একজন আসে দ্রুত পাঁয়ে ছুটে ওর দিকে মৈএীর দিকে হাত এগিয়ে দেয় যেনো এই হাত ধরে উঠে আসতে বলছে তাকে…………

চলবে
#মিশকাতুল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে