রৌদ্র মেঘের জুড়ি পর্ব-০২

0
528

#রৌদ্র_মেঘের_জুড়ি(২)

সন্ধ্যার দিকে অনল তার এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে বের হয়েছে। কলেজ জীবন সে এই রাজশাহী শহরেই পার করেছে।গ্রামে তার মা খুব কষ্টে পয়সা অর্জন করে ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছে তখনই প্রায় অনলের মা চার লাখ টাকা ঋণ করেছে প্রতি বছরে চল্লিশ হাজার টাকা লাভ দিবে বলেছে সেই ব্যাক্তি। অনল এখানে আসার পর ক্লাসের কয়েকজনের সাথেই বন্ধুত্ব স্থাপন করে এখন সবাই এখানে না থাকলেও তিনজন রয়েছে ওরা। অনল আজকে যাবে রাব্বির সাথে দেখা করতে। বাসা থেকে বের হয় খাবার না খেয়েই। এখন রাত আটটা বাজবে বোধ হয় । অনল রিক্সা নিয়ে কফিশপের দিকে যায়। সামনেই ফজলে রাব্বির সাথে দেখা হয় দুজনে এক সাথে ভেতরে গিয়ে বসে । নানা রকম কথা বার্তা হয় দুজনের মাঝে। অনল প্রায় দশটার দিকে নিজের বাসায় চলে আসে যাওয়ার আগে রান্না করে যাওয়া খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরে।

পরের দিন সকালে আবার ও রান্না করে খাবার খেয়ে কলেজ এ যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নেয়।অনল প্রায় সময় সাদা আর কালো রঙ এ শার্ট পরে থাকে এই দুই রঙ ছাড়া তার আর কোন রঙ এর জামা কাপড় সেরকম নেই বললেই চলে। এতে ওর বন্ধুমহল ও আগে অনেক টি প্প নী কে*টেছে। অনল সে কথা গাঁয়ে মাখেনি।
অনল বাসা থেকে বের হয়ে রিক্সা নেয়। আজকে জ্যাম থাকার কারণে রিক্সা একটু পর পর থেমে থেমে চলছে অনল বিরক্ত হয়। কলেজ এর প্রথম ক্লাস আছে তার একটা। লেট করে যাওয়া হয়না অনলের।আজ মনে হয় নিজের রুলস তার ব্রেক হবে এই জ্যামের জন্য। অনল বিরক্ত হয়ে আশে পাশে দেখে। হাতের কালো চামড়ার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় অনুমান করে।

সেই সময়ে অনলের রিক্সার পাশেই মৈএীর মাইক্রো থামে। এসি গাড়ি বলে কাচঁ তোলা রয়েছে বাইরে থেকে ভেতরে কে কে আছে দেখা না গেলেও মৈএী বাইরের টা দেখতে পারে । বাম দিকে তাকিয়েই অনলের রিক্সা দেখে ফেলে কালকের সেই স্যারটা! অনলের মুখ দেখেই বিরক্ত হয় মৈএী। বছর হবে ৩০-৩১আর ফর্সা পেটানো সাস্থবান শরীর মাথার চুল গুলো সিল্কি নয় একটু ছোট করে ছেটে নেওয়া হলেও উপরের দিকে কেমন যেনো কোকড়া টাইপ। সাদা আর কালো মিশ্রনে শার্ট প্যান্ট। ডান হাতে রয়েছে কালো চামড়ার কাটা ঘড়ি। একটু পর পর সেদ্দিকে দেখছে। মুখটা কেমন মলিন দেখাচ্ছে যেনো কত রকমের চিন্তায় ব্যাস্ত স্যার!! মৈএী বিরক্ত হয়ে অন্যদিকে চাইলো।
বিশ মিনিট পর জ্যাম ছাড়তেই গাড়ি এগিয়ে গেলো। প্রথম ক্লাস এ যেতেই অনল সময় পেয়েছে মাত্র ১০মিনিট তাও ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের এরপর আবার সেউ ফার্স্ট ইয়ারদের ক্লাস নিতে যেতে হবে ভেবেই অনল বিরক্ত হয় আবার ও সেই মেয়েটা তার সামনে আসবে কেমন একটা অদ্ভুদ দৃশ্য আসছে চোখের ভাজে।
তবুও অনল নিজেকে কঠিন করে ক্লাস নিতে যায় নিজের মতো ক্লাস করিয়েই বের হয়ে আসে সে খেয়াল করেছে ক্লাসের ছেলে মেয়েরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করছিলো কেন করেছে?নিশ্চয়ই গতকালের জন্য!!
অনলের ইচ্ছে করছিলো সবাইকে ধমক দিতে তবুও সে সব কিছুই করেনি শুধু শান্ত ভাবে দেখেছে, ছেলে মেয়েদের ফিস ফিস শুনেছে আর একবার সাহস যুগিয়ে মৈএীকে দেখেছে। দুই দিনে অনল জেনেগেছে এই শহরের নাম করা বিজনেসম্যান ও ক্ষমতা ওয়ালা মানুষ এর মেয়ে এই কন্যা যে কারনে এই কলেজ এও মেয়ের বাবাকে সন্মান দেয়া হয় ও বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করে বলে তার মেয়েকে গত কাল কোনো পানিশমেন্ট দেওয়া হয়নি আর হবেও না কখনো।
অনল চুপ চাপ ক্লাস নিয়ে অন্য ক্লাস নিতে যায়।
মৈএী ও ক্লাস শেষ করে দুপুরের দিকে সুমনা সহ আরও তিন জন নতুন বন্ধু নিয়ে বের হয় কফি শপের দিকে। আজকে মৈএী বাবা আর ভাইয়াদের সাফ সাফ বলে দিয়েছে একা কিছুটা টাইম স্পেন্যড করতে চায় সে। যখন বাসায় ফিরবে সে কল করে জানাবে ভাইয়াদের এসে নিয়ে যেতে।

কফিশপে কিছুটা সময় ওরা আড্ডা দিয়ে বের হয় রাস্তার পাশ দিয়ে হাটঁতে পাচঁ জন মিলে নানা রকম ভাবে পিক তুলে নেয়। এরপর খেয়াল করে একটা মেয়ের সাথে অনল আসছে। সুমনা অনলকে দেখেই বলে,

এই তোরা দেখেছিস!কে ওদিকে?

হবে হয়তো স্যারের সাথে এই ম্যামের চক্কর চলে সেদিকে আমাদের ভেবে কি চল ওদিকে যাই।

বলেই মৈএী সবাইকে নিয়ে অন্যদিকে যায় স্যারের সাথে তাদের কলেজ এরই একটা ম্যাম রয়েছে একটা রিক্সাতে দুজনে এক সাথেই বসে রয়েছে।

মৈএী সময় দেখে নিয়ে সেজো ভাইয়ের কাছে কল করে কিছুক্ষন পরেই ওর ভাই
মুকিদ আসে বাইক নিয়ে ভাইকে পেয়েই চলে যায় মৈএী, সুমনা মুকিদকে ভালো করে খেয়াল করে এই ছেলেকে এত সুদর্শন কেন লাগে তার কাছে?আচ্ছা সে কি কোন ভাবে মুকিদকে ভালোবেসে ফেলেছে?
তাহলে তো বিরাট সর্বনাশ!!

দিন কয়েক পর মৈএীদের ক্লাস নিতে আসে সে ম্যাম ইনিও নাকি আই সি টি ক্লাস করায় সেই সাথে পদার্থ বিজ্ঞান ও নেবেন একদম অনলের মতোই। মৈএী হুট করেই একটা অংক ভুল করে ফেলে সবে ভর্তি হওয়া এখনই কি বাইনারী অংক থেকে হেক্সা বানাতে পারদর্শী হয়ে উঠবে কেউ?দিন কয়েক যাক না!
কিন্তু ম্যাম যেনো তা বুঝতেও চায় না। স্টিলের স্কেল নিয়ে সবাইকে আঘা*ত করা শুরু করে দেয় হাতে মৈএী অবাক হয় কলেজ লাইফে কেউ স্কেল দিয়ে আ*ঘাত করে??মৈএী ভাবে হয়তো তাকে ম্যাম কিছুই বলবেনা। কিন্তু ওর চিন্তা ভাবনা ভুল লরে দিয়ে ম্যাম ওকে ক্লাসের সবার থেকে বেশি শক্ত করে আঘা*ত করে ।
মৈএী ছোট থেকে বড় হওয়ার পর যা মনে আছে এভাবে কেউ তাকে আঘা*ত করেনি । করবে কে?সাহস আছে কার??অথচ আজ? এই ম্যামের সাহস কি করে হয়??মৈএী ভাবতে পারে না পারবে কি করে ডান হাত যেনো জ্বলে যাচ্ছে। মৈএীর মাথা চক্কর দেয় এই আঘা*তে কোন ভাবে ব্যাগ ধরে বাম হাতে সেখান থেকে মোবাইল বের করে এখন সবে বাজেঁ দশটা এই সময়ে বাবা বা ভাইয়ারা অফসে থাকে মৈএী কল করলে সাথে সাথেই তবুও চলে আসবে কিন্তু মৈএী কল করেনা । সোজা প্রিন্সিপাল এর রুমে চলে যায় ম্যামের নামে কম্পলেইন করে আসে । এরপর গেট পেরুতেই দেখে তার ভাবী গাড়ি নিয়ে হাজির হয়েছে। মাত্র বিশ মিনিট এর মাঝেই তাহলে বাসায় খবর পৌছেঁ গেছে??রাবেয়া মৈএীর লাল হওয়া হাত আর মুখ দেখে আতঁকে উঠে যে মেয়েকে ফুলের টোকা পর্যন্ত বাবা ভাইয়েরা লাগাতে দেয়নি সেই মেয়ের শরীর এ আজ আঘা*তের চিহ্ন??যদি ওর স্বামী, দেবর আর শশুড় রা এই খবর শুনতে পারে তাহলে ওই ম্যামের যে কি হাল করবে ভেবে পায় না রাবেয়া। মৈএীর খবর তাকে সুমনা দিয়েছে। তাই তো প্রিন্সিপাল কে কল করে বলেছে আগেই যেনো তিনি মৈএীর বাবা বা ভাইয়েদের না জানায় সে আসছে।
মৈএীকে নিয়ে রাবেয়া গাড়িতে গিয়ে বসে ওকে নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসে।

—–
অনল আর তার সহকর্মী মেয়ে নুসরাত দাঁড়িয়ে আছে। এই নুসরাতই তখন মৈএীকে আঘা*ত করেছে করবে নাই বা কেন?অনল কে সে বিগত একটা বছর ধরে ভালোবেসে আসছে কেউ না বুঝলেও সে বুঝে অনল সেই দিনের পর থেকে প্রায় ডিপ্রেশনে থাকে ওই ক্লাস নিতে যেতে। তাই তো নুসরাত অনলের হয়ে প্রতিশোধ তুলেছে। সে জানে অনল কখনোই এ নিয়ে কিছুই বলবেনা শুধু তাই নয় যদি কেউ তার ক্ষতিও করে ফেলে অনল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলবেনা। হয়তো তাকে ঘৃণা করবে তবে লক্ষ সম্মুক্ষে কিছুই বলবেনা বা প্রতিবাদ করবেনা।
কেন করেছ এরকম?
আমি বলেছিলাম?

আমি আপনার জন্য ওই মেয়েকে আঘা*ত করিনি স্যার। আসলেই মেয়েটা খাতায় ভুল অংক করেছিলো।

ছাত্র ছাত্রী দের বুঝানো কাজ আমাদের আঘা*ত করা নয়।

সরি স্যার। আর হবে না।

অনল কিছুই বলেনা বিরক্ত হয় সে নুসরাতের কাজে। সে জানে নুসরাত না বলুক তবে তাকে পছন্দ করে আর তার কারণ ধরেই আজ এরকম করেছে।

অনল বের হয় ক্লাস শেষ করে কিন্তু…………

চলবে
#মিশকাতুল

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে