রৌদ্র মেঘের জুড়ি পর্ব-০১

0
831

#রৌদ্র_মেঘের_জুড়ি(১)
#মিশকাতুল

কতটা বেয়া*দব মেয়ে হলে প্রথম দিন কলেজে এ এসেই একজন টিচারের গালে পর পর দুটো থা প্প ড় দিতে পারে?বুঝতে পারেনা সুমনা পাশেই বসে সেই বেয়াদ*ব রমনী তারই প্রান প্রিয় বান্ধবী মৈএী। ভয়ে ভয়ে সুমনা জিজ্ঞেস করে,

প্রথম দিন কলেজ এ পা রাখতে না রাখতেই মৈএী তুই একজন স্যারের গালে চ*ড় দিয়েছিস ?

মৈএীর বুকে জ্বলা দাবানল এ কেউ যেনো এবার এক বালতি কেরোসিন দিয়েছে এবার । ফুঁসে ওঠে মৈএী ওই স্যারের সাহস কি করে হয় তাকে প্রথম দিন ক্লাসেই দাঁড়িয়ে রাখার? কি করেছে সে?শুধু নতুন ফ্রেন্ড দের সাথে পরিচয় হয়ে নিচ্ছিলো।এ তে কি এমন হয়েছে?আজ কি কোনো ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস ছিলো? যে ক্লাস রুমে অমনোযোগী হয়েছিলো মৈএী?সেরকম কিছুই হয়নি শুধু শুধু কেন স্যার তাকে দাঁড়িয়ে রাখবে ক্লাস রুমে দাঁড়িয়ে থাকা কাজ টা মৈএীর একদম পছন্দ নয় আর যে তাকে দিয়ে অপছন্দের কাজ করাতে চায় তাকে একদম সহ্য করতে পারেনা মৈএী। তাহলে ওই স্যারকে কেন সে সন্মান দিবে?পুরো ক্লাসের সামানে মৈএী অপমা**ন হবে এ মেনে নেবে কি করে?তাই তো স্যার আদেশ করার সাথে সাথেই মৈএী দাঁড়িয়ে পরে এগিয়ে যায় সামনের দিকে কোন কথা না বলেই দুটো থা প্প ড় বসিয়ে দিয়েছে ওই স্যার এর ডান গালে। সেই সময় স্যারের মুখটা ছিলো দেখার মতো। এত বড় একটা অনৈতিক কাজ করেও মৈএী স্বাভাবিক আছে প্রিন্সিপাল স্যার তাকে অবশ্য এ নিয়ে ডেকেছিলো যেই ক্লাস টিচার কে সে মে*রেছে সে হয়তো অপমানে প্রিন্সিপাল কে জানিয়েছে কিন্তু লাভের লাভ কিছুই করতে পারেনি সেই স্যার। প্রিন্সিপাল মৈএীকে কিছুই বলে নি শুধু বলেছে,

এই রকম কাজ আর দুবার করো না মা! উনি একজন শিক্ষক শুধু তাই নয় এখানে যারা আছে সবাই তোমাকে শেখাবে তাদের সন্মান দেওয়া দরকার।

মৈএী এতেও কিছুই বলেনি অযথা কথা বার্তা তার পছন্দ নয়। সুমনাকে কিছুই বললো না মৈএী কলেজ এর মেইন গেইট এর দিকে তাকিয়ে দেখে কালো রঙ এর মাইক্রো হাজির হয়েছে সেখানে ভেতর থেকে দুজন সাদা রঙ এর শার্ট পরা বছর ত্রিশ এর মতো ছেলে বের হয়ে আসে সোজা মৈএীর দিকে মৈত্রী ওদের দেখেই সুমনার থেকে বিদায় নিয়ে এগিয়ে আসে সেদিকে। ওদেরকে বলে,

আজ ভাইয়ারা কেউ আসলো না?

একজন ছেলে মাথা নিচু রেখেই বলে,
স্যারের অনেক কাজ রয়েছে আজ আপনার চার ভাই সবাই একটা প্রজেক্ট নিয়ে বসেছে তাই আসতে পারেনি।
মৈএী ছোট করে ওহ্ বলে ওদের সাথে গাড়ি তে গিয়ে বসে। দুজনছেলের একজন সামনে ড্রাইভারের সাথে বসে আর অন্যজন পেছনে মৈএী বসে মাঝের সিট এ।বাবা আর ভায়ারা তাকে নিয়ে অনেক পজেসিভ তাই গার্ড দেওয়া হয়েছে মৈএীকে শহরে শত্রুর সংখ্যা অনেক রয়েছে তার বাবা ভাইয়াদের। আদরের এক মাত্র মেয়ে ও বোন ওদের কোন রিস্ক নিতে চায় না মৈত্রীকে নিয়ে।

মৈএী ওদের সাথে গাড়ি করে বাসায় আসে । গেট পেরিয়ে গাড়ি ভেতরে এসে থামতেই নেমে আসে মৈএী। ওর বড় ভাইয়ের বৌ দাঁড়িয়ে রয়েছে দরজার কাছে নিশ্চয়ই ভাইয়ার আসার অপেক্ষা করছে। মৈএী গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে তারপর দুষ্টু গলায় বলে,

ভাইয়াকে অনেক মিস্ করা হচ্ছে বুঝি??চলো আমি তোমায় অফিসের দিকে নিয়ে যাই যাবে??

ময়নুল এর স্ত্রী রাবেয়া মৈএীকে মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিয়ে বলে,
আমি এখন তোমার ভাইয়ের জন্য নয় তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। চলো রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো আমি খাবার সাজিয়ে দিচ্ছি ততক্ষনে তারপর প্রথম দিন কলেজ এ কি কি করলে কয়েকটি ছেলেকে ঘোল খাইয়ে এলে সব বলবে আমাকে!
কেমন?

মৈএী রাবেয়ার কথা মতো হুঁ বলেই দোতলার সিড়ি বেঁয়ে উপরে নিজের রুমে আসে। রাবেয়া আর মৈএীই এখন এই বাড়ির মেয়েদের মাঝে রয়েছে। বছর দুয়েক আগে মৈএীর মা গাড়ি এক্সিডেন্ট এ মা*রা গেছে বাবা ভাইয়েরা বলেছে কেউ ষড়যন্ত্র করে তাদের পুরো পরিবারকে শেষ করতে চেয়েছিলো কিন্তু পারে নি। মাঝ খান থেকে চার ভাই ও এক বোনের প্রিয় মা চলে গেলো। মিজানুর সাহেব আজ ও স্ত্রী কে ভুলতে পারেনা । মেয়েটা হয়েছে একদম মায়ের মতো সুন্দরী তাই তো এখন সব দিক দিয়ে চেষ্টা করে মেয়েকে সমিয় দেয়ার মেয়েকে সেফ রাখার।
মিজানুর সাহেব এর ক্ষমতা সম্পর্কে এই এলাকার সবাই অবগত যেখানেই যাক না কেন!তাকে সবাই সন্মান ও ভয় পায় সে বলা যায় একটু মাফিয়া টাইপের লোক দের মতো যখন তখন অনয়াসে খু*ন করতো তবে স্ত্রী চলে যাওয়ার পর কথা দিয়েছে এখন থেকে আর কোন অনৈতিক কাজে সে জড়াবেনা মোন দিয়ে নিজেদের বিজনেস সামলাবে । তবুও তার ভয়ে থাকে সাধারণ মানুষ গুলো না জানি কখন কি হয়ে যায়??
—–/———-

অনল কলেজ থেকে এসেই শার্ট এর বোতাম খুলে রুমে থাকা আলনার সাথে তা মেলে দেয়। বুকের মাঝে চিকন এক ব্যাথা অনুভুত হচ্ছে। রা*গ ও লাগছে কার উপর?অনল বুঝতে পারছেনা প্রিন্সিপাল স্যারের উপর না কি ওই বেয়াদব মহিলাটার উপর?মেয়েটা সকালে ক্লাসে অনল কথা বলার সময় পেছন ফিরে বসে অনেক্ষন যাবৎ কথা বলছিলো বলে সাবধান করে তবুও মেয়েটার হেলদোল দেখা যায় না। তাই তো অনল মেয়েটাকে দাঁড়িয়ে রাখতে চেয়েছিলো। অথচ মেয়েটা?কি করেছে!উঠে এসে সোজা তার গালে হাত দিয়েছে??নিজেকে কি ভাবে ওওই মেয়েটা?প্রিন্সেস?
অবশ্যই তাই হবে বলে মনে হয় না হলে ক্লাস টিচার কম্পলেইন করার পর ও প্রিন্সিপাল স্যার মেয়েটাকে কিছুই বললো না কেন?একবার সরি ও বলতে বলেনি! কে ওই মেয়েট? এই কলেজ এ অনল দুই বছর ধরে রয়েছে গ্রামের এক সাধারণ পরবারের বেড়ে ওঠা অনলের ভদ্র,শিক্ষিত একটা ছেলে গ্রামের সবাই তাকে কতটা ভালোবাসে ছোট বড় সবাই অনলেক সন্মান দেয় আর সেখানে আজ??

শহরের নামী দামী মানুষ এর মাঝে এই শিক্ষিত অনল কিছুই না। একটা মেয়ের হাতের থা প্প ড় তার গালে নয় বুকে লেগেছে যার দাগঁ হয়তো ইহজন্মেও মুছেঁ যাবেনা।
অনল শক্ত বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয় বালিশে মাথা রাখারও প্রয়োজন পরেনা মুহুর্তের মাঝেই ঘুমিয়ে যায় অনল। ঠিক কতটা সময় অনল ঘুমিয়েছে?দেখার প্রয়োজন পরেনা আযানের শব্দে উঠে বসে বিছানায়। ক্ষিদে পাচ্ছে ওর এই শহরে তার আপন বলতে কেউ নেই ওর অবশ্য বেশি কেউ নেই ও এক মা ছাড়া। সে তো গ্রামেই রয়েছে । একটা বেডরুম আর ওয়াশরুম সেই সাথে ছোট একটা কিচেন রুম নিয়েই তার ছোট একটা ফ্ল্যাট নেওয়া এর ভাড়া দিতে গিয়েই তো অনল হিমশিম খেয়ে যায় প্রতি মাসে মায়ের চেক আপ ঔষধ পত্র,ঋণের ভাড় শোধ করতে গিয়েই সব মাইনে শেষ হয়ে যাওয়ার পথে।

অনল বিছানা থেকে উঠে কিচেনের দিকে যায় সবজি দেখে নেয় চলা জ্বালিয়ে রান্নার কাজে হাত লাগায় । রান্না শেষ করে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে বিকেল পাচঁটা বেজে গেছে। মায়ের নাম্বারে কল করে অনল।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে