রোমান্টিক কালো বউ পর্ব-১১

0
2812

#গল্পঃ রোমান্টিক কালো বউ ?
#লেখকঃ Md: Aslam Hossain Shovo
#পর্বঃ ১১…

√- আমিঃ তাই বলে আপনার বোনকে তো না।

তরীঃ তাহলে কাকে.??

আমিঃ তাহলে শুনুন আজ, আমি কেনো সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করতে চাই আর কেনো আপনাকে বউয়ের অধিকার দিতে চাই নাই…

তরীঃ কেনো..?

আমিঃ সাদিয়া নামের যেই মেয়েটা আপনাকে আজেবাজে কথা বলছে, সে আসলে আমার গার্লফ্রেন্ড ছিলো।

তরীঃ ছিলো নাকি এখনো আছে?

আমিঃ আগে ছিলো। এখন নেই..

তরীঃ এখন কি হয়েছে?

আমিঃ তার সাথে আমার সব সম্পর্ক ৬ মাস আগে শেষ হয়ে গিয়েছে।

তরীঃ কেনো?

আমিঃ সে অনেক খারাপ চরিত্রের মেয়ে। আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করছে।

তরীঃ ওহহহ। কি করছিলো সে..?

আমিঃ আমি তাকে অনেক ভালো ভালোবাসতাম। তার জন্য বলতে পারেন পাগল ছিলাম। মা-বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে বউ করার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।

তরীঃ তারপর..?

আমিঃ আমার মা-বাবা ও বন্ধুরা সব সময় বলতো সাদিয়ার চরিত্র তেমন ভালো না। এই সব মেয়েদের সাথে সম্পর্ক করা উচিত না। তাও আমি কারো কথা বিশ্বাস না করে শুধু সাদিয়াকে বিশ্বাস করতাম।

তরীঃ তারপর কি হলো..?

আমিঃ একদিন নিজের চোখে তার কেমন চরিত্র প্রমাণ পেয়ে গেলাম। তারপর থেকে তার কথা মনে পড়লে শুধু ঘৃণা আসে। এতো খারাপ মেয়ে মানুষ সে…

তরীঃ কি এমন করছিলো?

আমিঃ একদিন দুপুরে নাঈম আমায় ফোন করে পার্কে যেতে বলে, আমিও পার্কে যায়। গিয়ে দেখি সাদিয়া একটা ছেলের কোলে বসে ওই ছেলেকে খুব বাজে ভাবে পাগলের মত চুমু দিচ্ছে…

তরীঃ ছি ছি… বিয়ের আগে এমন কাজ…

আমিঃ সে আমার গার্লফ্রেন্ড ছিলো। আমি কখনো তার হাত ধরি নাই, আর সে অন্য ছেলের সাথে এমন নোংরা কাজ করছে, তাহলে বুজুন কত খারাপ চরিত্র। সে বউ হতে চাইতো আমার, আর নোংরামি করে অন্য ছেলেদের সাথে। এমন মেয়ে কোনোদিন বউ করা যায় নাকি বলুন?

তরীঃ আচ্ছা তারপর কি হলো?

আমিঃ সে আমায় দেখে আমার পা জরিয়ে ধরলো। কিন্তু আমি সব সহ্য করতে পারি, কিন্তু চরিত্রহীন মানুষ সহ্য করতে পারি না। আর তাকে সহ্য করবো কিভাবে? তার কথা মনে পড়লে তো সেই পার্কের ওই দৃশ্য মনে পড়ে। কিভাবে পাগলের মত অন্য ছেলেকে কিস করছিলো…

তরীঃ আপনার সাথে খুব খারাপ হয়েছে। আসলেই বিশ্বাস জিনিস টাই হলো আসল। কারো প্রতি বিশ্বাস না থাকলে, তাহলে আর ভালোবাসা থাকলো কিভাবে..

আমিঃ হুমম ঠিক বলেছেন।

~ তারপর আমি খাওয়া দাওয়া শেষ করে খাটে বসে টিভি দেখতে শুরু করলাম। তরী সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে আয়নার সামনে বসে চুলে কি যেনো করছে। কিছুক্ষণ পর তরী আমার দিকে তাকিয়ে বললো ~

তরীঃ আচ্ছা ভাইয়া, সাদিয়া নাহয় আপনার বিশ্বাস নষ্ট করছে, কিন্তু আমিতো আপনাকে আমার স্বামী হিসাবে মানি ও অনেক ভালোবাসি। তাও আমায় একটু ভালোবাসা বা বউয়ের অধিকার দেন না কেনো?

আমিঃ সত্যি টা শুনলে কষ্ট পাবেন না তো?

তরীঃ না পাবো না বলুন..?

আমিঃ সেই দিন পার্কে সাদিয়াকে আমি বলে আসছিলাম, যদি কখনো বিয়ে করি তার থেকে সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করবো। কারন, সে সব সময় তার রূপের বড়ায় করে তাই। কিন্তু বাবা আপনার সাথে আমায় জোর করে বিয়ে দিয়ে দেন, এই জন্য সাদিয়ার কাছে আমি হেরে যায়। সাদিয়া তো এই জন্য কয়েকদিন আমায় কথা শুনিয়ে দিয়েছে..

~ তরী কিছুক্ষণ চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ~

তরীঃ আচ্ছা ভাইয়া আমি আপনার জীবনে এসে আপনার বড় একটা ক্ষতি করে ফেলছি তাই না?… (চোখের পানি মুছতে মুছতে)

আমিঃ এই আপনি কান্না করছেন কেনো?

তরীঃ বলুন না প্লিজ, আমি আপনার জীবনে এসে তার কাছে আপনাকে ছোট করে ফেলছি তাই না.?

আমিঃ তেমন কিছু না। বাদ দেন ওই সব কথা।

তরীঃ দেখছেন আমি কত স্বার্থপর মানুষ। নিজের স্বার্থের জন্য আপনার জীবন নষ্ট করতে একবারো ভাবি নাই.. (কান্না করে)

আমিঃ এই না। আপনি সব দোষ নিজের উপর নিচ্ছেন কেন?

তরীঃ নিজের উপর নিচ্ছি না। যেটা সত্যি সেটায় বলছি। আমি অনেক স্বার্থপর মানুষ…

আমিঃ বললাম তো আগে যা হয়েছে তো হয়েছে। ওগুলো বাদ দেন…

তরীঃ এখন আমার কি করা উচিত বলুন ভাইয়া? আপনাকে কারো কাছে ছোট হওয়া আমি দেখতে পারবো না।

আমিঃ এই ভাবে কান্না করলে কিন্তু আমার খুব রাগ উঠবে এখন বলে দিলাম। কান্না বন্ধ করুন…

~ তরী কান্না করেই যাচ্ছে। এই জন্য নরম মনের মেয়েদের সাথে কিছু শেয়ার করাও যায় না। কিভাবে যে এখন কান্না থামাবো বুঝতে পারছি না। এর মধ্যে আমার ছোট বোন আমাদের রুমে আসলো। বোন এসে দেখলো তরী কান্না করছে। তরী মায়াকে দেখে চোখের পানি মুছতে লাগলো ~

মায়াঃ ভাবি তুমি কান্না করছো কেনো?

তরীঃ না তো। কান্না করছি না।

মায়াঃ ওই তো তুমি কান্না করছো?

তরীঃ না আপু। আমি কান্না করছি না।

মায়াঃ নিশ্চয়ই ভাইয়া তোমায় আবার বকা দিয়েছে।

তরীঃ না না, শুভ ভাইয়া আমায় কিছু বলে নাই। এমনি মন খারাপ লাগছিলো।

মায়াঃ আমি এখুনি আম্মুকে গিয়ে বলছি যে ভাইয়া তোমায় আবার কান্না করিয়েছে।

~ তরী কিছু বলার আগেই মায়া রুম থেকে বের হয়ে গেলো। এখন তো মায়া গিয়ে বললে আমায় আরো আব্বু আম্মু ভুল বুঝবে। তরী তো আরো আমায় বিপদে ফেলে দিলো। মেয়েদের কান্না সব সময় শুধু ঝামেলা টেনে আনে। তরীর উপর রাগ লাগতে শুরু করলো ~

আমিঃ দেখলেন আপনার কান্নার জন্য মায়া ভুল বুঝে এখন গেলো নালিশ করতে। আমায় তো বিপদে ফেলে দিলেন আপনি।

তরীঃ সরি ভাইয়া।

আমিঃ সরি বলে আর লাভ কি? সব সময় কান্না করতে হয় বুঝি? আগে জানলে আপনাকে কিছু বলতাম না।

~ তরী চুপ হয়ে গেলো। আমি মাথার নিচে হাত দিয়ে শুয়ে রইলাম। তরী কিছুক্ষণ সেখানে বসে থেকে উঠে গিয়ে তার ব্যাগ থেকে একটা ডাইরি বের করে টেবিলে গিয়ে বসলো। মাঝে মাঝেই দেখি ওই ডাইরি টা নিয়ে কি যেনো লিখালিখি করে। মাঝে মাঝে মন চাই দেখি এমন কি লিখে, কিন্তু কারো ব্যাক্তিগত জিনিসে হাত দেওয়া ঠিক না বলে, কখনো ধরি নাই।

ডাইরি টা নিয়ে কি যেনো লিখতে শুরু করলো। এক হাত দিয়ে চোখের পানি মুছতেছে, আর আরেক হাত দিয়ে লিখছে। এমন কি লিখছে যে চোখের পানি ওই ভাবে পড়ছে। প্রায় আধাঘন্টা লিখালিখি শেষ হলে, চোখ মুছতে মুছতে খাটে এসে আমার থেকে অনেক দূরে শুইয়ে পড়লো। প্রতিদিন কাছে থাকতে চাই, আর আজ এতো দূরে শুইলো কেনো বুঝতে পারলাম না ~

আমিঃ আপনি ওতো দূরে কেনো কাছে আসুন। পড়ে যাবেন তো…

তরীঃ সমস্যা নেই পড়বো না। আমায় নিয়ে ভাববেন না।

আমিঃ রাগ উঠাবেন না, আরো এই দিকে আসুন বলছি।

তরীঃ প্লিজ ভাইয়া, আমায় জোর করবেন না। আমার খুব মাথা ব্যাথা হচ্ছে, আমি এখন ঘুমাবো।

আমিঃ এই জন্য আপনাকে কিছু বলতে চাই না।

তরীঃ আমার সত্যি খুব খারাপ লাগছে, সকালে কথা হবে। শুভ রাত্রি..

~ বলে চোখ বুঝে নিলো। তার ওমন কান্না দেখে মন খারাপ ও হচ্ছে, আবার রাগও হচ্ছে। আর যদি কোনো কথা এভাবে না মানে, তাহলে তো আরো রাগ লাগে তখন।

১ ঘন্টা হয়ে গিয়েছে ঘুমানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু ঘুম আসছে না। ঘুম আসবেই বা কিভাবে, এই ভাবে চোখের সামনে একটা মেয়ে কান্না করলে নিজের কাছে কেমন লাগে, সে কি আর বুঝে। তার চোখের পানি ও কান্নার শব্দের কথা যখন মনে পড়ছে, বুক ফেটে যাচ্ছে আমার। হয়তো খুব ভালোবেসে ফেলছি তাকে। কিন্তু এখন কিভাবে তাকে বুঝাবো এখন সাদিয়া নয়, এখন আমার ভালোবাসা শুধু তরী। হ্যা, আমার এই কালো বউ তরীই আমার ভালোবাসা। যার জন্য এখন আমার বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে।

গভীর রাত হয়ে গিয়েছে তাও যেনো ঘুমের কোনো নামই নেই। তরী ঘুমিয়ে গিয়েছে অনেক আগে। হঠাৎ মনে পড়লো তার ডাইরির কথা। এমন কি লিখে ডাইরিতে, জানার খুব আগ্রহ শুরু হলো। অনেকক্ষন ধরে ভেবে শেষে চিন্তা করলাম দেখবো আজ কি এমন লিখে বিয়ের পরের দিন থেকে। এই ভেবে তার ব্যাগ থেকে ডাইরি বের করে টেবিলে গিয়ে বসলাম। ডাইরিটা একদম নতুন। হয়তো নতুন লিখা শুরু করছে এটায়….

ডাইরির খুলতেই প্রথম পাতার লেখা দেখে চমকে উঠলাম।
প্রথম পাতায় বড় বড় করে লেখা –

“অভাগীর কথা”

এমন নাম দেখে কিছুটা অবাক হলাম। কেউ ডাইরির প্রথমেই এমন কথা লিখে কিনা আমার জানা নেই। মেয়েটা কেমন, নিজেকে নিজে অভাগী ভেবে বসে আছে। এমন বোকা মেয়ে হয় এই যুগে।

দ্বিতীয় পৃষ্ঠা খুলে পড়তে শুরু করলাম। যত লিখা পড়ি, তত বুক ফেটে যাচ্ছে। চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে, শেষে আমার ঠোঁটও কাঁপতে শুরু করলো, আর পড়তে পারছি না। হাত দিয়ে চোখের পানি মুছতে লাগলাম। লিখা গুলো যেনো চোখের সামনে ভাসছে আমার। একটা মেয়ের মনের মধ্যে এতটা কষ্ট কিভাবে লুকাতে পারে, আমার তো ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে।

লিখা গুলো ছিলো এমন–

“আজ আমার বাসর রাত…
আজ বলতে আজ রাতে আমার বাসর রাত ছিলো। কিন্তু এখন রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে গিয়েছে। একটা মেয়ের এই বাসর রাত নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে। আমারও তেমনি স্বপ্ন ছিলো। আমার স্বামীর বুকে মাথা রেখে তার সাথে সারারাত গল্প করে কাটাবো। এমন আরো অনেক অনেক স্বপ্ন ছিলো আমার।
কিন্তু সব স্বপ্ন শেষ করে দিলো শুধু আমার গায়ের রং। এই কালো রংয়ের জন্য জীবনে দেখা সব স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই রয়ে গেলো। আমি যদি পারতাম এই রং টা উঠিয়ে ফেলতে, ঠিক এতোদিনে এই কালো রং টা তুলে ফেলতাম, সেটাও পারলাম না।

পরের পৃষ্ঠা-
বাসর রাতে আমার স্বামী আমার পাশেই আসে, কিন্তু পাশে থেকেও যেনো পাশে নেই। সে শুয়ে আছে মেঝেতে আর আমি বিছানার উপর। খুব কষ্ট হচ্ছে, আমার জন্য একজনকে মেঝেতে ঘুমাতে হচ্ছে এই ঠান্ডার মধ্যে। এখন ফজরের নামাজ পড়তে উঠে দেখলাম সে ঠান্ডায় কাঁপছে, তাই তার শরীর কম্বল দিয়ে দিলাম।
মন চাইছিলো তাকে ডেকে বলি, আপনি উপরে উঠে ঘুমান, আমি নিচে বিছানা করে ঘুমাই। কিন্তু সেটাও আমার বলার অধিকার নেই। সে আমায় সরাসরি বলে দিয়েছে আমায় সে কখনো স্ত্রীর অধিকার দিতে পারবে না।

তারপরের পৃষ্ঠা-
অবশ্যই আমি নিজেও বিয়ের আগে জানতাম যে সে আমায় পছন্দ করে না। যখনই আমি এই বাড়িতে বউ হয়ে আসি, তখন তার প্রমাণ ও পায় সাথে সাথে। প্রতিটা মেয়ে হয়তো বাসর ঘরে বসে টেনশন করতে থাকে তার স্বামীর সামনে কিভাবে লজ্জা কাটিয়ে কথা বলবে। কিন্তু আমার সময় হলো তার উল্টো। আমি বাসর ঘরে বসে শুনতে পাচ্ছিলাম বাইরে আমাকে নিয়ে খুব ঝগড়া ঝামেলা করছে। আমি তার জীবন নষ্ট করে ফেলছি এমন কথা বলছে আমার স্বামী। আমার শুধু তখন একটায় টেনশন, সে এসে আমায় মারবে না তো আবার। এগুলো ভেবে আমার হাত-পা ভয়ে কাঁপতে শুরু করছে। আমার শুধু এখন একটায় টেনশন, এখন যদি সে রুমে এসে আমায় মারতে শুরু করে, তাহলে আমি কি করবো! আমি তো কাউকে চিনি না। কেউ কি আমায় তার মার থেকে বাঁচাতে আসবে কিনা, এই গুলো ভেবে আমার খুব ভয় হতে লাগলো।

তারপরের পৃষ্ঠা-
অনেক রাতে আমার স্বামী রুমে এলেন। আমি খুব ভয়ে ছিলাম কি হবে আজ আমার উপর। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে ভয়ে। অনেকের কাছে শুনি তাদের স্বামীরা তাদের উপর অনেক অত্যাচার করে। আর আমি তো কালো, তাহলে আমায় দেখে হয়তো রাগে আরো বেশি অত্যাচার করবে, গায়ে হাত তুলবে। কিন্তু যেমন ভয় পেয়েছি, তেমন কিছু হলো না। সে এসে আমায় একটু গরম ভাবে কথা বললেও, তেমন খারাপ মানুষ দেখে তাকে মনে হলো না। খুব ইচ্ছা ছিলো তার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে, কিন্তু কয়েকবার মনে সাহস এনেও আর সাহস করে উঠতে পারলাম না। তার একটা কথা শোনে আমার খুব হাসি পাচ্ছিলো, আমায় বললো তাকে শুভ ভাইয়া বলে ডাকতে। হয়তো সে রাগে এই কথা বলছে, কিন্তু আমার কাছে শুনতে খুব ভালো লাগছে। কিন্তু একটা জিনিস খুব খারাপ লাগছিলো নিজের কাছে, আমায় সে বিছানার উপর শুইতে দিয়ে সে গিয়ে মেঝেতে শুয়েছে। আমায় কড়া ভাবে বলে দিয়েছে, তার উপর দরত মায়া না দেখাতে, এই কারনে বলতেও পারছি না তাকে উপরে শুইতে।
আমার স্বামী মানে শুভ ভাইয়া আমার সামনেই এখনো মেঝেতে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে, খুব সুন্দর লাগছে তার ঘুমন্ত অবস্থায়। আমিতো কবুল বলার সাথে সাথে তার প্রেমে পড়ে গিয়েছি, হয়তো এটায় স্বামী স্ত্রীর মধ্যের টান। কিন্তু এখন তাকে দেখে আমি আরো বেশি প্রেমে গেলাম। মন চাচ্ছে নিচে নেমে তার বুকের মধ্যে গিয়ে আমি শুয়ে থাকি। কিন্তু সেই ভাগ্য তো আর আমার নেই…

তারপরের পৃষ্ঠা-
হয়তো আমার এই লেখা গুলো শুভ ভাইয়া আপনি কখনো পড়বেন না, আর পড়লেও আমি তখন বেঁচে থাকবো কিনা জানি না। জানেন ভাইয়া, আমারও খুব ইচ্ছা হয়, আমার স্বামীর সাথে ঘুরতে যাবো, গভীর রাতে তার বুকে মাথা রেখে আকাশ দেখবো, প্রতিদিন তার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবো, তার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবো, খুনসুটি ঝগড়া করবো, সে আমায় জোর করে পাপ্পি দিবে কিন্তু আমি বাঁধা দিবো, আবার পাপ্পি গুলো উপভোগ করবো, হঠাৎ করে জরিয়ে ধরে রাগীয়ে দিবে, আমিও রাগ দেখাবো, মাঝে মাঝে একটা দুইটা কামড় ও দিবো,আমার কামড় দিতে অনেক ভালো লাগে, সে যখন চাইবে আমায় আদর করবে আমি কিছু বলবো না, অবশ্য প্রথমে বাঁধা দিবো, তখন সে জোর করে আমায় আদর করবে….
কিন্তু আমার আর পোড়া কপালে এই সুখ হলো কিভাবে! পিতার বাড়ি প্রতিদিনের বকাবকি, কত রকমের গালি, একদিন তো আমায় লাঠি দিয়ে খুব মারছিলো, আমি খুব ব্যাথা পায়ছি, মনে হচ্ছিল চিৎকার করে কান্না করি, কিন্তু তাও পারি নাই, এমন কপাল আর কয়টা অভাগির হয় বলুন!
আমি আপনার থেকে আর যাবো না বলে দিলাম শুভ ভাইয়া। আপনি আমায় যত বকা দেন, তাও আমি এখানে থাকবো। আমি আর বাপের বাড়ি গিয়ে ওই কপাল পোড়া জীবনে আর যাবো না। আমি এখানেই থাকবো, যদি কাজের মেয়ে হয়ে থাকতে হয় তাও এখানেই থাকবো”

~ এর মধ্যে তরী নড়াচড়া করে উঠলো। আমি ডাইরি বন্ধ করে আমার ড্রয়ারে রেখে দিয়ে তরীর পাশে এসে শুইয়ে পড়লাম।
মনে মনে চিন্তা করছি, তরী তো ঠিক বলছে, একটা কালো মেয়ের কি থাকতে পারে না এমন স্বপ্ন যে তার স্বামীর সাথে ঘুরতে, খেতে, দুষ্টুমি করতে, স্বামীর ভালোবাসা পেতে ইচ্ছা তো হতেই পারে। কারন সেও একজন মানুষ।

আর আমি এতোদিন আরো তরীকে কত কষ্ট দিয়েছি, নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছে।

চিন্তা করলাম, আগামী কাল থেকে তরীর সব স্বপ্ন পূরণ আমি নিজে করবো। লাগবে না আমার সুন্দরী বউ, এই কালো বউকে ভালোবেসে শুধু এই জীবনে না ইনশাআল্লাহ বেহেশতেও এক সাথে থাকবো।
তাই এখন থেকে আমার সব টুকু ভালোবাসা শুধু তরীকে দিবো। সাদিয়ার সাথে বাজি জিততে না পারলেও, তরীকে খুশি করতে পারলোও আমার জিতাই হবে। একজন সেরা স্বামী কিভাবে হতে হয় আগামী কাল থেকে দেখিয়ে দিবো ইনশাআল্লাহ।

তরীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তার কপালে চুমু দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখলাম তরী পাশে নেই। কিছুটা অবাক হলাম আজ ভোরে তরী আমায় নামাজের জন্য ডাক না দেওয়াতে। এমনি তো প্রতিদিন ভোরে আমায় ডাক দেয় নামাজের জন্য। অনেকক্ষণ বিছানার উপর বসে রইলাম, কিন্তু তরীর কোনো খোঁজ নেই। আর এমনি দিন এতোক্ষণ কয়েকবার রুমে এসে খোঁজ নেয় আমি জেগেছি কিনা দেখতে।
আমি ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে গিয়ে দেখলাম তরী নেই। কোথাও তরীকে না পেয়ে আম্মুকে ডাক দিলাম ~

আমিঃ তরী কোথায় আম্মু?

আম্মুঃ তরী চলে গিয়েছে।

আমিঃ চলে গিয়েছে মানে?

আম্মুঃ চলে গিয়েছে মানে এই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে।

আমিঃ মানে কি? তোমরা আটকালে না কেনো? যেতে দিলে কেনো?

আম্মুঃ কেনো এবার তো তুই খুব খুশি হয়েছিস তাই না?

আমিঃ মানে?

আম্মুঃ সব সময় শুধু বউটার সাথে ঝগড়া করতি, কিভাবে বাড়ি থেকে তাড়ানো যায় বুদ্ধি করতি, এখন তো ভালো হয়েছে, চলে গিয়েছে.. (চোখ দিয়ে পানি পড়ছে)

আমিঃ তোমরা আমায় ভুল বুঝছো। এমন কিছু গতকাল হয় নাই যে তাকে চলে যেতে হবে।

আম্মুঃ মায়া আমার কাছে সব বলছে, গতকাল তোদের রুমে গিয়ে দেখছে তরী কান্না করছে। তুই কিছু না বললে তরী কান্না করতো নাকি?

আমিঃ সত্যি আম্মু, আমি তরীকে কিছু বলি নাই। এখনি ফোন করে চলে আসতে বলো তাকে…

আম্মুঃ মেয়েটা যখন বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়, আমায় জরিয়ে ধরে কত কান্না করছে তুই জানিস..? আমি পারবো না ফোন করতে, আবার তরী আসলে তুই আবার ওকে কাদাবি আমি জানি।

আমিঃ আচ্ছা তোমার ফোন করতে হবে না, আমি ফোন করছি…

~ বলে রুমে টেবিলের উপর থেকে মোবাইল নিতেই দেখি মোবাইলের নিচে একটা পৃষ্ঠা। দেখে বুঝতে পারলাম ওটা তরী লিখে গিয়েছে।
পৃষ্ঠায় লেখা –

“শুভ ভাইয়া, আমি আপনার জীবন থেকে চলে যাচ্ছি, আর কোনোদিন ফিরে আসবো না। আমায় আপনি মাফ করে দিন, আমি নিজের স্বার্থের জন্য আপনাকে অন্যের কাছে ছোট করে ফেলছি, এই জন্য আমায় মাফ করে দিন। আমি আসলেই একটা স্বার্থপর, নিজের টাই সব সময় চিন্তা করছি, আপনার ভালো একবারো ভাবি নাই। নিজের উপর এখন ঘৃণা হচ্ছে খুব। আর হ্যা, আপনার পায়ে ধরি, আপনি আর আমায় ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। আর আমিও আর কখনো ফিরবো না। আমি আপনাকে অনেক অনেক ভালোবাসি, নিজের চেয়েও বেশি। ভালো থাকবেন, আর হয়তো কোনোদিন দেখা হবে না।
আর আপনার গতকালের আনা গোলাপ ফুলটা আমি নিয়ে যাচ্ছি, খুব যত্নে রাখবো এই ফুলটা।
ভালো থাকবেন…
একজন অভাগী মেয়ে তুরী…”

লিখা গুলো পড়ে মাথায় হাত দিয়ে খাটের উপর বসে পড়লাম।
কি হলো এটা আমার সাথে!……………….. (..#চলবে..)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে