#গল্পঃ রোমান্টিক কালো বউ ?
#লেখকঃ Md: Aslam Hossain Shovo
#পর্বঃ ১০…
√- তরীর দিকে তাকিয়ে দেখি তরী মাথা নিচু করে আছে ~
আমিঃ তরী চলুন তো আমার সাথে সাদিয়াদের বাড়ি। আজ তার বাবার সামনে তার ওই বেয়াদবি কথা গুলো বলবো…
আম্মুঃ তুই কি পাগল হলি শুভ.? বাড়ির বউ নিয়ে ঝামেলা করতে যাচ্ছিস…
আমিঃ এই ভাবে তরীকে কথা শুনিয়েছে, তার পরেও ছেড়ে দিবো নাকি?
আম্মুঃ ছেড়ে দিবি কেনো? গিয়ে তার বাবা-মায়ের সামনে তার কাছে গিয়ে জিগ্যেস করবি, এমন বেয়াদবি করার কারন কি।
আমিঃ তরীকে নিয়ে গেলে তো ভালোই হতো।
আম্মুঃ না, একদম না। বাড়ির বউ আমি কোথাও ঝামেলা করতে যেতে দিবো না। তুই একা যা…
আমিঃ আচ্ছা যাচ্ছি…
~ বলে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হয়ে গেলাম সাদিয়াদের বাড়ির উদ্দেশ্য। তাদের বাড়ির মধ্যে ঢুকতেই দেখি সাদিয়ার বাবা বাইরে বসে আছে ~
আমিঃ আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল। সাদিয়া কোথায়.?
আঙ্কেলঃ ওলাইকুম আসসালাম। সাদিয়া তো বাসায় নেই।
আমিঃ কোথায় গিয়েছে সাদিয়া..?
আঙ্কেলঃ কি আর বলবো বাবা। সে কোথায় গেলে আর আমাদের বলে যায় নাকি। সকাল বেলা বললো একটা কাজ আছে, তারপর বের হয়ে গেলো।
আমিঃ আমি বিয়ে করছি এটা শুনছেন আপনি আঙ্কেল?
আঙ্কেলঃ হ্যা শুনলাম তুমি বিয়ে করছো। তাই তোমার বউকে নিয়ে আসতে…
আমিঃ সে একটু কাজে ব্যস্ত। দেখুন আঙ্কেল, আজ সকালে আমার বউ তরী গিয়েছিল মায়ার সঙ্গে দোকানে, সেখানে তরীর রাস্তা আটকিয়ে সাদিয়া বাজে বাজে কথা বলছে।
আঙ্কেলঃ কি বলছে সাদিয়া?
আমিঃ আমার বউকে বলছে, সে হলো পেত্নী, কালো, বিশ্রী দেখতে, আরো আজেবাজে কথা বলছে। আবার হুমকি দিয়েছে আমাদের বাড়ি থেকে তরী না চলে গেলে সাদিয়া তার ব্যবস্থা নিবে।
আঙ্কেলঃ ওই মেয়েকে নিয়ে আমি যে কি করবো,…
আমিঃ বাড়ি হলো আমাদের, বউ হলো আমার। তাহলে আমার বউকে বাড়ি ছাড়ার হুমকি দেওয়ার সে কে বলুন…
আঙ্কেলঃ আর বলো না বাবা। কিছু মেয়ের কারনে তাদের বাপের সম্মান বাড়ে, আর কিছু মেয়ের কারনে তাদের বাপের সম্মান মাটির সাথে মিশে। আমার হলো পোড়া কপাল, মেয়েটার জন্য আমাদের ইজ্জত থাকলো না।
আমিঃ দেখুন আঙ্কেল, এমন করলে কেমন লাগে? এই ভাবে তরীকে রাস্তার মধ্যে অপমান করা কি উচিত হয়েছে?
আঙ্কেলঃ আজ আসুক সাদিয়া, তারপর কড়া ভাবে বলে দিবো যেনো তোমাদের সংসারের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি না করে। বাবা তুমি রাগ হও না..
আমিঃ আচ্ছা আঙ্কেল, তাহলে বলে দিবেন কিন্তু আমার ও আমার স্ত্রীর মধ্যে তৃতীয় ব্যাক্তি হওয়ার চেষ্টা না করে সাদিয়া।
আঙ্কেলঃ আচ্ছা বাবা বলবো। তাহলে এখন নাস্তা করে যাও।
আমিঃ ধন্যবাদ আঙ্কেল। আমি এখন কিছু খাবো না। তাই এখন আসি…
~ বলে সাদিয়াদের বাসা থেকে চলে এলাম সরাসরি আমার রেস্তোরাঁয়। এখানে এসে নাস্তা করে নিলাম। বেলা ১১ টার দিকে তরী ফোন করলো ~
তরীঃ হ্যালো, আপনি কোথায়?
আমিঃ কেনো?
তরীঃ সেই সকালে রাগ হয়ে বের হলেন, আর খবর নেই আপনার।
আমিঃ কি আর খবর, সাদিয়ার বাবা আমার মাথায় লাঠি দিয়ে বারি দিয়েছে, এতে আমার মাথা ফেটে গিয়েছে। আমি এখন হসপিটালে…
~ তরী সাথে সাথে চুপ। অনেকক্ষণ হয়ে যায়, তরীর আর রিপ্লাই আসে না। কিছুক্ষণ পর ফোনে কান্নার শব্দ পেলাম ~
আমিঃ এই আপনি কি কান্না করছেন নাকি?
তরীঃ শুভ ভাইয়া আপনি কোন হসপিটালে আছেন বলুন, আমি এখুনি আসছি..(কান্না করে)
~ কোন বিপদে পড়লাম, মেয়ে মানুষের সাথে একটু সয়তানিও করা যায় না ~
আমিঃ আরে পেত্নী, আমি রেস্তোরাঁয় আছি। আমি তো মজা করলাম।
তরীঃ আপনি এখন মিথ্যা বলছেন আমি জানি…
আমিঃ মিথ্যা তখন বলছি, এখনি সত্যি বলছি আমি রেস্তোরাঁয়।
তরীঃ তাহলে আপনার মাথায় বারি দিয়েছে বললেন?
আমিঃ ওটা তো মজা করলাম। সাদিয়ার বাবা অনেক ভালো একজন মানুষ। সে আমায় মারবে কেনো, হা হা…
তরীঃ এই ভাবে কোনো মজা করতে হয় বুঝি? আম্মা শুনলে কত কষ্ট পেতো জানেন…
আমিঃ হুমম ভুল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আপনার কান্না কি সব সময় এসেই থাকে নাকি? কিছু বলার আগে কান্না করতে হয়..?
তরীঃ কান্নার কথা বাদ দেন, আগে বলেন আমায় পেত্নী বললেন কেনো?
আমিঃ পেত্নী কে পেত্নী বলবো না কি বলবো?
তরীঃ শুভ ভাইয়া.. (ঝারি দিয়ে)
আমিঃ হ্যা ভাইয়া…(হাসি দিয়ে)
তরীঃ আপনি আজ বাসায় আসেন, আপনার খবর আছে..
আমিঃ কেমন খবর হবে? সেই গত পরশুদিন রাতের মত মিষ্টি কিছু ঠোঁটে লাগানোর মত খবর.??
তরীঃ সেটা দেখা যাবে…(লজ্জা পেয়ে)
আমিঃ আপনি আর কি দেখবেন শুনি? রান্না পারেন না, পঁচা রাধুনি..
~ সাথে সাথে ফোন কেটে দিলো। খুব মজা লাগে তরীকে রাগাতে। তরীও ভালো রাগতে পারে, কিছু বলার আগেই রেগে মুখ লাল টমেটো করে ফেলে। আর সেই টমেটো দেখতে আমার ভিশন মজা লাগে। তাই বেশি বেশি রাগাতে মন চাই।
সেই দিন রাতেও এসে তরীকে রাগিয়ে নিলাম। তারপর শুরু করে দিলাম দুষ্টুমি ঝগড়া। তরী যেনো দিনে দিনে আরো রাগী হতে লাগলো। আমিও তার রাগ কে আরো বাড়িয়ে দিয়ে মজা নিতে লাগলাম।
এই ভাবে প্রতিদিন খুনসুটি ঝগড়া, তরীর মুখের লাল টমেটো ধরে টান দিয়ে দৌড় দেওয়া, মাঝে মাঝে ঝগড়ার সময় জোর করে জরিয়ে ধরে সব দোষ তার উপর চাপিয়ে দেওয়া, তারপর আবার ঝগড়া করা, তারপর তার স্বাদের রান্নার খুঁত ধরা নিয়ে ঝগড়া করা,, এই ভাবে খুব সুন্দর ভাবে দিন এগিয়ে চলতে লাগলো ।
এই ভাবে ৪-৫ দিন চলে গেলো মজা দুষ্টুমি করে। এর মধ্যেও দুষ্টুমি করতে করতে তাকে রাগিয়ে তখন জোর করে জরিয়ে ধরতে গিয়ে দুই বার কামড় খেয়েছি।
আজ বৃহস্পতিবার। তাই ভাবলাম কাল যেহেতু বাসায় থাকবো, তরীর সাথে একটু দুষ্টু রোমান্স করা যাবে। তাই আর আজ রাগাবো না।
রাতে বাসায় এসে দেখি আজও তরী রেগে ফুলে আছে। আর রাগার তো কথায়, সকালে তো আমিই রাগিয়ে গিয়েছি। বাসার আসার সময় চকলেট বক্স ও একটা গোলাপ ফুল নিয়ে আসলাম, ভাবলাম ফুলটা দিয়ে আজ তার রান্নার বদনাম না, আরো অনেক অনেক প্রশংসা করবো।
আমি রুমে ঢুকতেই তরী রাগী মুখ নিয়ে খাট থেকে উঠে গেলো। আমি গিয়ে খাটে বসলাম, আর তার মুখের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলাম। আমার হাসি দেখে তার আরো রাগ উঠলো, হয়তো প্রচুর রাগ। আমিতো মনে মনে বলি, কন্যা তোমার রাগ কমাতে অনেক বুদ্ধি করে এসেছি, সাথে এনেছি গোলাপ, দেখবো কন্যা কোথায় থাকে তোমার রাগ… ~
আমিঃ এই যে তরী ম্যাডাম, এই দিকে আসুন তো…
~ কপাল কুঁচকে আমার দিকে তাকালো তরী ~
তরীঃ কি হয়েছে বলুন?
আমিঃ আমার শার্টের বোতাম গুলো খুলে দেন…
তরীঃ আমি পারবো না…
আমিঃ পারবেন না মানে? আমি আপনার স্বামী, এটা আমার আদেশ…
~ তরী এসে আমার শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো। মাথা নিচু করে তরী রেগে ফুলে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে ~
আমিঃ কি হচ্ছে এগুলো? এই ভাবে বোতাম খুলতে হয়?
তরীঃ তাহলে কিভাবে খুলবো?
আমিঃ হাত দিয়ে নয়, মুখ দিয়ে খুলুন…
তরীঃ ঢং…
আমিঃ এই কি বললেন? এটা ঢং..
~ তরী মুখ ভেংচি কাটলো ~
আমিঃ এবার কিন্তু রাগ হচ্ছে, আমার বলার পরেও হাত দিয়ে বোতাম খুলছেন কেনো? মুখ দিয়ে খুলুন…
তরীঃ আমি পারবো না।
আমিঃ আপনি পারবেন না?
তরীঃ না পারবো না।
আমিঃ তাহলে দেখুন…
~ বলে তার মুখ আমার বুকের সাথে চেপে ধরলাম। তরী সাথে সাথে দিলো বুকে কামড় বসিয়ে ~
আমিঃ ওমা…. এটা কি করলেন?
তরীঃ যা করছি ভালো করছি।
আমিঃ ভালো করছেন মানে? আমি অনেক ব্যাথা পেলাম তো…
তরীঃ ওমন করলে, এমনি করতে হয়…
আমিঃ এই নিয়ে এই সপ্তাহে ৩ দিন কামড় বসিয়ে দিলেন। দুই দিন হাতে দিছেন, আজ সরাসরি বুকে দিলেন…
তরীঃ এমন করলে আরো দিবো…
আমিঃ থাক আর দিতে হবে না। এখন খাবার এনে দিন।
~ তরী গিয়ে খাবার এসে দিলো আমার। আমিও ফ্রেশ হয়ে খেতে বসে গেলাম। খাবার মুখে নিচ্ছি, আর তার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছি। আজ আর তার খাবারের বদনাম করবো না ভেবে নিয়েছি। কিন্তু আমি যত মুচকি হাসি দিচ্ছি, সে তত রাগ হচ্ছে। কাহিনি কি হলো, আরো তার তো খুশি হওয়ার কথা । কারন, তার রান্না খেয়ে মুচকি হাসি দিচ্ছি।
বুঝতে পারলাম এই ভাবে মুচকি হাসি দিলে শুধু হবে না, সাথে মুখেও প্রশংসা করতে হবে ~
আমিঃ আজ তো রান্না খুব সুন্দর হয়েছে। এমন পাকা হাতের রান্না খেতে প্রতিদিন মন চাই… (হাসি দিয়ে)
~ তরীর সাথে সাথে মুখ রাগে আর ফুলে গেলো। কাহিনি কি হলো, আরো তো খুশি হওয়ার কথা ছিলো। হয়তো প্রশংসা কম করা হয়েছে ~
আমিঃ বিশ্বাস করুন তরী ম্যাডাম, এমন সুন্দর রাধুনির হাতেও একটা চুমু দিতে দিচ্ছে করে। বাহ বাহ কত সুন্দর রান্না…
~ তরীর চোখ আরো লাল হয়ে যাচ্ছে রাগে। তাহলে কি আমার প্রশংসা আরো করা উচিত ~
আমিঃ আজ খাবার খেয়ে সত্যি মন ও পেট দুইটায় ভরে যাচ্ছে। অসাধারণ হয়েছে রান্না আজ। তরকারির কালার টাও অসাধারণ…
তরীঃ সত্যি কি আজ রান্না ভালো হয়েছে? (রাগী ভাবে)
আমিঃ হুমম খুব খুব ভালো হয়েছে। এক কথায় অসাধারণ হয়েছে।
তরীঃ আর এতোদিন যত রান্না হয়েছে সেগুলো কি ছিলো? প্রতিদিন তো বলতেন রান্না খারাপ হয়েছে.?
আমিঃ হুম এই কয়েকদিন রান্না একটু একটু খারাপ হয়েছে। কিন্তু আজ রান্না অসাধারণ হয়েছে, আমি তো রাঁধুনির প্রেমে পড়ে গেলাম.. (হাসি দিয়ে)
~ তরী চুপ করে বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে। কেমন মেয়েরে বাবা, এতো প্রশংসা করলাম তাও রাগ কমে না। মেয়েদের বুঝি এতোই রাগ উঠে ~
আমিঃ আচ্ছা একটা কাজ করুন, ওই প্যাক টা খুলুন…
~ তরী ওয়ারড্রবের উপরে রাখা কিছুক্ষণ আগে আনা চকলেট বক্স ও গোলাপ ফুলটা বের করে আমার দিকে তাকালো ~
আমিঃ এতো সুন্দর রান্না হয়েছে, প্রশংসা করার পাশাপাশি আমার তরফ থেকে এই চকলেট বক্স ও গোলাপ ফুল সেই রাধুনির জন্য, যে আমার মন জয় করে নিয়েছে…
তরীঃ আমি এতো দিন যেটা মনে মনে ভাবতাম, আজ তার প্রমাণ পেলাম। আপনি এতো বড় সয়তান, ছি ছি…
আমিঃ কি বলছেন? এতে সয়তান হওয়ার কি হলো?
তরীঃ আমি এতো সুন্দর করে পুরো সপ্তাহ ধরে রান্না করলাম, সব সময় খুঁত ধরলেন। আর আজ তোরা ঘুরতে এসে বললো আপনার জন্য রান্না করবে, আর এগুলো রান্না করে দিলো। আর আজই রান্না সুন্দর হয়ে গেলো..?..(চোখের কোনে পানি)
~ হায় আল্লাহ, কার প্রশংসা করতে গিয়ে কার প্রশংসা করে ফেললাম ~
আমিঃ এগুলো তোরা রান্না করছে..?
তরীঃ আপনি এখন সব জেনেও না জানার ভাব নিচ্ছেন তাই না?
আমিঃ মানে?
তরীঃ আপনাকে আমার চেনা হয়ে গিয়েছে। ছি ছি, আপনি এমন মানুষ। শেষে গিয়ে নিজের সালির সাথে। তাও তার জন্য চকলেট বক্স সাথে গোলাপ ফুল, ছি ছি.. আমার জন্য তো কখনো এমন আনলেন না…(খুব কান্না করে)
আমিঃ দেখো তরী সত্যি আমি বুঝতে পারি নাই…
তরীঃ আমার তো ভাবতেও লজ্জা লাগছে, আমার বোনের হাতে আপনি চুমুও দিতে চান.. ছি ছি…
আমিঃ আরে বললাম তো, আমি জানতাম না এগুলো তোরা রান্না করছে।
তরীঃ এটা তো নতুন কথা না। আপনি আমার বোনের পিছনে সেই প্রথম থেকে লেগে আছেন বউ করার জন্য…
আমিঃ আপনি কথা ঠিক করে বলুন। আমি আপনার বোনকে বিয়ে করবো কেনো.??
তরীঃ কারন, আমার বোন সুন্দরী তাই।
আমিঃ সুন্দরী বলেই যে বিয়ে করবো এমন কোনো কথা আছে? এগুলো বলতে একবারো মুখে আটকায় না.?
তরীঃ কেনো আপনি চান না সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করতে.?..(কান্না করে)
আমিঃ হ্যা আমি চাই।
তরীঃ তাহলে মানা করছেন কেনো?
আমিঃ তাই বলে আপনার বোনকে তো না।
তরীঃ তাহলে কাকে.??
আমিঃ তাহলে শুনুন আজ, আমি কেনো সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করতে চাই আর কেনো আপনাকে বউয়ের অধিকার দিতে চাই নাই…
তরীঃ কেনো..?
আমিঃ………………….. (..#চলবে..)