#গল্পঃ রোমান্টিক কালো বউ ?
#লেখকঃ Md: Aslam Hossain Shovo
#পর্বঃ ১…
√- বাসর ঘরের সামনে দাড়িয়ে আছি। আমার চাসতো ভাবি, মানে নিলা ভাবি আমার হাত ধরে টানছে ফুল দিয়ে সাজানো বাসর ঘরে দিয়ে আসতে। যেখানে অপেক্ষা করছে আমার নতুন বউ। কিন্তু আমার একদম ইচ্ছা নেই বাসর ঘরে নতুন বউয়ের কাছে যেতে। কারন, আমার নতুন বউ খুব কালো, তাকে আমার একদম পছন্দ হই নাই। হয়তো আজীবনেও তাকে পছন্দ তো দূরের কথা, আরো তার প্রতি শুধু আমার ঘৃণা জমা হবে মনের মধ্যে। এতোটা রাগ লাগছে এই বিয়ে ও নতুন বউয়ের কথা মনে পড়লে। মন চাচ্ছে সব কিছু ভেঙ্গে ফেলি ~
আমিঃ দেখুন ভাবি, আমি যখন বলছি আমি ওই মেয়ের কাছে যাবো না, তো যাবো না ।
নিলা ভাবিঃ কেনো তুমি যাবে না, সে তোমার স্ত্রী। তাকে ভালোবাসা, আদর দেওয়া তোমার কর্তব।
আমিঃ কিসের স্ত্রী? আমি তাকে স্ত্রী হিসাবে মানি না ও কখনো মানবো না।
নিলা ভাবিঃ এমন করো না প্লিজ। নতুন বউ তোমার জন্য বাসর ঘরে অপেক্ষা করছে, আর তুমি এমন করছো, এটা কিন্তু খারাপ দেখায় ভাই।
আমিঃ ভাবি প্লিজ আপনি আর কখনো বলবেন না যে ওই মেয়ে আমার বউ। আপনি বলুন আমি কি নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করছি নাকি, যে আমার বউ আমার বউ বলছেন।
নিলা ভাবিঃ যেই ভাবে হক, বিয়ে তো হয়েছে…
আমিঃ বিয়ে আমায় জোর করে করিয়েছে, ভালো কথা। আমার থেকে জোর করে ভালোবাসা, আদর তো আর পাবে না (রাগ হয়ে)
নিলা ভাবিঃ এমন করো না ভাই, নাহলে খুব বড় একটা ঝামেলা শুরু হবে কাকাই জানতে পারলে।
আমিঃ জানলে জানবে। সেই তো আমার জীবনটা নষ্ট করে দিলো। পিতা হয়ে ছেলের জীবনের বারোটা বাজিয়ে দিলোই তো, এখন জানলে আর কি হবে।
নিলা ভাবিঃ তাড়াতাড়ি রুমের মধ্যে ঢুকো, ওই যে কাকীমা আসছে।
আমিঃ আসলে আসুক, তাতে আমার কি…
নিলা ভাবিঃ অনেক হয়েছে ভাই, এখন বউয়ের কাছে যাও। তোমার নতুন বউ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
আমিঃ আপনাকে না বললাম ওই মেয়েকে আমার বউ বলবেন না… (রাগ হয়ে)
নিলা ভাবিঃ তাহলে কি বলবো?
আমিঃ আপনার যা ইচ্ছা তাই বলুন। তাও আমার বউ বলবেন না ওকে। আর এতো বউ বউ করছেন তো, ভালো। ওই মেয়েকে কিভাবে এই বাড়ি ছাড়া করতে হয় শুধু দেখুন।
নিলা ভাবিঃ অনেক হয়েছে শুভ, আর আজেবাজে কথা বলো না। নতুন বউ কিন্তু সব শুনতে পাচ্ছে রুম থেকে, কি ভাববে বলো তো…
আমিঃ শুনলে তো ভালো কথা। তাহলে আরেকটু জেনে রাখুক সে, আমি সাত দিনের মধ্যে তাকে আমাদের বাড়ি ছাড়া করবো প্রমিস করলাম.. (চিৎকার করে)
~ এর মধ্যে আমার আম্মু এসে সামনে দাড়িয়ে চোখ গরম করে রইলো আমার প্রতি। নিলা ভাবি মাথা নিচু করে আছে। রাগি কন্ঠে মা বললো ~
আম্মুঃ এখানে কি হচ্ছে? আর শুভ এখনো রুমের বাইরে কেনো..??
নিলা ভাবিঃ কাকীমা, শুভকে কখন থেকে রুমের মধ্যে যেতে বলছি, কিন্তু যাচ্ছে না তো।
আম্মুঃ নিলা, তোকে না বললাম শুভকে দিয়ে আসতে রুমের ভিতরে।
নিলা ভাবিঃ আমিতো রুমের মধ্যে নেওয়ার জন্য হাত ধরে টানছি, তাও তো শুভ এক পা নরছে না।
আম্মুঃ মনে হয় শুভ লজ্জা পাচ্ছে। শুভ তোর নিলা ভাবি যা বলে তাই কর। রাত অনেক হয়েছে, এখনো বাইরে থাকা ঠিক না।
— রাগী কন্ঠে…
আমিঃ কিসের লজ্জা? আমি কেনো লজ্জা পাচ্ছি না।
আম্মুঃ তাহলে রুমে যা।
আমিঃ সব সময় তো তোমাদের কথায় আমার চলতে হবে না।
আম্মুঃ চুপ করবি শুভ.(ধমক দিয়ে)
আমিঃ কিসের জন্য চুপ থাকবো? সব সময় তো আমি আর তোমাদের কথায় চলবো না। এমনিতেও আমার জীবনের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছো তোমরা।
আম্মুঃ যা করছি, একদম ঠিক করছি। তোর ভালোর জন্য করছি।
আমিঃ ভালো তো করছো, জোর করে একটা কালো মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিয়েছো। যাকে দেখা যায় কালো ভুত…
আম্মুঃ কথা কিন্তু ঠিক মতো বলবি শুভ…
আমিঃ কিসের ঠিক মত বলবো? ওই মেয়ে কি কালো ভুত না?
আম্মুঃ সব জায়গায় গায়ের রং দিয়ে বিচার করা যায় না বুঝলি। তোর মামা নিজে বলছে এই মেয়ের অনেক গুন। এই যুগে এমন মেয়ে পাওয়া খুব কষ্ট, এতো গুনি। তোর মামাতো আরো বলছে, তার ছেলে যদি বড় থাকতো তাহলে এই মেয়েকেই ছেলের বউ করতো। এতো গুনি মেয়ে…
আমিঃ দেখতেই তো কালো। গুন থেকে আর কি লাভ।
আম্মুঃ তাহলে সাদিয়ার মত ধলা মেয়ে এনে দিলে বুঝি খুশি হইতি..(রাগ হয়ে)
আমিঃ ওই মেয়ের নাম আমার সামনে নিবে না বলে দিলাম।
আম্মুঃ আচ্ছা আর নিবো না। এবার বউমার কাছে যা। অনেকক্ষন ধরে অপেক্ষা করছে। আর অনেক রাত হয়েছে…
আমিঃ ধুর, তোমাদের কত বার বলবো এই মেয়েকে আমি বউ হিসাবে মানি না। আর তার কাছে যাওয়া, এটা অসম্ভব..(রাগ হয়ে)
আম্মুঃ তাহলে যাবি না?
আমিঃ না যাবো না (রাগী কন্ঠে)
আম্মুঃ তাহলে দাঁড়া, তোর বাবাকে নিয়ে আসছি..
≈≈ বলে রাগ হয়ে বাবাকে ডাকতে চলো গেলো আম্মু। ভাবি আমার হাত ধরে রুমের দিকে টানতে লাগলো। আমি মন খারাপ করে সাথে মাথায় রাগ নিয়ে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলাম।
আমার বিয়েটা আরো ৬ মাস পর হওয়ার কথা ছিলো। গত পরশুদিন বিকালে আমার ফ্যামিলির সবাই মিলে এই মেয়ে দেখতে যায়। এর আগেও মা-বাবা ও মামা আরো কয়েকবার মেয়ের বাড়ি গিয়েছে। গতকাল গিয়েছিল সবাই, শুধু আমি বাদে।
মা-বাবা যতবার মেয়েদের বাড়ি গিয়েছে, প্রতিবার এসে অনেক অনেক প্রশংসা করছে মেয়ের। সত্যি বলতে তখনি মেয়ের প্রতি একটু ভালোবাসা সৃষ্টি হয়ে যায়। মা-বাবা সব সময় বলতো মেয়েটাকে দেখতে খুব মায়াবী চেহারার।
কিন্তু গত পরশুদিন রাতে যখন মেয়ের বাড়ি থেকে মেয়েকে দেখে সবাই বাসায় ফেরত আসে, আমি চুপিচুপি আমার ছোট বোনকে বলি তোর হবু ভাবি কেমন দেখতে, ছোট বোনের থেকে উত্তর শুনে আমার মাথা ঘুরে গেলো।
ছোটবোন বললো, ভাবি অনেক কিউট ভাবে কথা বলে, কিন্তু অনেক কালো৷
যখন ওর মুখে শুনতে পারি মেয়ে কালো, আমি সরাসরি আম্মুকে গিয়ে বলি আমি এই বিয়ে করতে পারবো না। আমি কালো মেয়েকে নিজের বউ হিসাবে কখনো মানতে পারবো না। এই নিয়ে আম্মুর সাথে আমার অনেক কথা কাটাকাটি হয়। আম্মুর ইচ্ছা এই মেয়েকে আমার বউ করে আনবে। আর বাবাও নাকি কথা দিয়ে আসছে মেয়ের বাড়ি।
অনেক কথা কাটাকাটি করার আম্মু বলে আগামী কাল তুই নিজে গিয়ে দেখে আসবি মেয়েকে। সেই কথা মতো গতকাল আমি নিজে গিয়ে দেখি মেয়ে খুব কালো। মেয়েকে দেখে আমার একদম পছন্দ হয় নাই। তখনি ওই বাড়ি থেকে আমি চলে আসি।
এবং বাসায় এসে আম্মুকে বলি, আমায় মেরে ফেললেও ওই মেয়ে বিয়ে করবো না। আমার মেয়ে পছন্দ না। আবারও অনেক চেচামেচি, ঝগড়াঝাটি হয় আম্মুর সাথে। শেষে এই কথা বাবার কানেও পৌঁছে যায়।
আমি সহ আমাদের বাসার সবাই বাবাকে বাঘের মত ভয় পায়। বাবা লম্বাতে ৬ ফুটের বেশি লম্বা, আবার স্বাস্থ্য ও মাশাল্লাহ অনেক ভালো। বাবা যদি তার গম্ভীর কন্ঠে কাউকে ধমক দেন, তার পা কাঁপতে থাকে, এমন ভয় পায় সবাই বাবাকে। তেমনি ভাবে আমিও খুব ভয় পায় বাবাকে।
আমি বাবার সব কথা মেনেই চলি সব সময়। কিন্তু গতকাল মেয়ে দেখে এসে বাবার সামনেও সাহস করে বলি এই কালো মেয়ে আমার পছন্দ না, আমি বিয়ে করবো না। এই নিয়ে বাবার সাথেও আমার কথা কাটাকাটি হয় গতকাল রাতে। বাবার একটায় কথা, তাদের এই মেয়ে পছন্দ হয়েছে ও মেয়ের বাবাকে সে কথা দিয়েছে, তাই বিয়ে করলে এই মেয়েকেই করতে হবে। আমায় খুব বকাঝকা করে বিয়ের জন্য রাজি না হওয়ার জন্য।
আমায় অনেক বকাঝকা করে শেষে বাবা মেয়ের বাড়ি ফোন করে বলে, বিয়ের সব দায়িত্ব আমাদের ও আগামী কালই বিয়ে হবে।
সেই হিসাবে আজ আমায় জোর করে নিয়ে গিয়ে বাবা নিজে পাশে দাড়িয়ে থেকে আমার বিয়ে দিয়ে দেন, আমার হাজার আপত্তি থাকা সত্ত্বেও। আমার একটা কথাও কেউ সিরিয়াস ভাবে শোনে নাই কেউ। আমার আপত্তি সত্ত্বেও আমায় বিয়ে করতে হলো।
তাই জোর করে বিয়ে নাহয় দিতে পারছে কালো মেয়ের সাথে। তাই বলে আমার থেকে তো আর ভালোবাসা, আদর দেওয়াতে পারবে না বউকে। সেই রাগে রাগে আমি বাসর ঘরে না ঢুকে বাইরে দাড়িয়ে আছি, না যাবো বাসর ঘরে, না পাবে ওই কালো মেয়ে আমার থেকে কোনো আদর ভালোবাসা।
— মেয়েটি শুধু কালো বলে আমি তাকে এতো ঘৃণা করি তা কিন্তু না। ঘটনা টি আরো ৬ মাস আগের ঘটনা। তাহলে শুনুন —
আমি মোঃ আসলাম হোসেন শুভ। আমার বাসা ফরিদপুর। আমি ফরিদপুর শহরের মধ্যে নতুন একটা রেস্তোরাঁ খুলছি বছর খানেক আগে । আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিলো, আমি নিজে কিছু করবো, নিজের স্বপ্নের মত সাজিয়ে। তাই ২৩ বছর বয়সেই সাহস করে রেস্তোরাঁ খুলে বসি। গত এক বছরে ভালোই চলছে আমার রেস্তোরাঁ। আগের চেয়ে আরো সুন্দর করে সাজিয়ে ফেলছি রেস্তোরাঁ।
আমার একটা রিলেশন ছিলো দুই বছরের। অনেক ভালোবাসতাম মেয়েটাকে, নাম তার সাদিয়া। দেখতে খুব সুন্দরী মেয়ে। এলাকার অনেক ছেলের ক্রাশ ছিলো আমার EX সাদিয়া। আমি তাকে এতোটা ভালোবাসতাম, ওর জন্য সব করতে রাজি ছিলাম। মাসে মাসে নতুন দামি ড্রেস, সাথে কত রকমের কসমেটিক কিনে দিতাম। যখন যা বলতো, তাই করতাম। প্রতিদিন আমার রেস্তোরাঁর বিরিয়ানি না খেলে নাকি ওর ভালো লাগতো না, তাই আমিও ওর কথা শুনে প্রতিদিন রান্না শেষে ওর বাড়ি বিরিয়ানি পাঠিয়ে দিতাম।
কিন্তু আমার ফ্যামিলির কারো পছন্দ ছিলো না ওই মেয়েকে। আমার মা-বাবার সামনে তো ওই মেয়ের নাম নিলেও রাগ হয়ে যেতো। তারা সব সময় বলবো, মেয়েটার চরিত্র তেমন ভালো না, সাদিয়া নাকি রাস্তা দিয়ে ঠিক মত পোশাক ঠিক রেখে চলাচল করে না। আরো অনেক ছেলেদের সাথে হাসাহাসি করে রাস্তায় হাটাহাটি করার সময়, মাঝে মাঝেই নাকি এমন দেখতে পাওয়া যায়।
অবশ্য আমি নিজেও দেখছি ওমন হাসাহাসি করতো রাস্তা ঘাটে। আমি কিছু বললে বললো, বিয়ের পর আর করবে না, তাই বিয়ের আগে জীবন উপভোগ করছে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়ে। যেই সব ছেলেদের সাথে ঘুরতে যায়, তারা নাকি সবাই তার চাসতো বা খালাতো ভাই। খুব ভালোবাসতাম তাকে, তাই তার সবই হাসিমুখে মেনে নিতাম।
একটা জিনিস কি, আমার বন্ধুরাও সাদিয়াকে পছন্দ করতো না। তাদের চোখে নাকি সাদিয়া অনেক খারাপ মেয়ে, এমনি বলতো সব সময় বন্ধুরা। এই নিয়ে অনেক কথা কাটাকাটি হয়েছে আমার সাথে বন্ধুদের।
হয়তো ভুল টা আমারই ছিলো। তার প্রমাণ ও একদিন পেলাম আমি। একদিন দুপুর ১২ টার দিকে আমি রেস্তোরাঁয় কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছি। এমন সময় আমার বেস্ট ফ্রেন্ড নাইমের ফোন এলো…
নাইমঃ তুই এখন কোথায় শুভ..?
আমিঃ আমার রেস্তোরাঁয়। কেনো রে দোস্ত?
নাইমঃ এখুনি একটু পার্কে আসতে পারবি?
আমিঃ না রে। আমি এখন খুব ব্যস্ত।
নাইমঃ আরে আস তো একটু৷ তোর ভালোর জন্য বলছি।
আমিঃ আরে ভাই, সত্যি আমার দোকানে এখন অনেক কাজের চাপ।
নাইমঃ এখানে আসলে একটা জিনিস দেখতে পাবি। সব সময় তো তুই শুধু আমাদের ভুল বুঝিস, আজ নিজ চোখে দেখবি তুই…
আমিঃ হা হা। এবার বুঝতে পারছি কেনো ডাকছিস। নিশ্চয়ই তুই গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিস এবং টাকার দরকার তোর, তাই নিজের গার্লফ্রেন্ডের সামনে আমায় আলু দিয়ে খরচ করাবি…
নাইমঃ আরে ধুর। এখানে এসে দেখে যা ভাবি কি করছে।
আমিঃ ভাবি মানে?
নাইমঃ সাদিয়া ভাবি রে।
আমিঃ ফাজলামি করার জায়গা পাশ নাই। আমি এই কিছুক্ষণ আগে কথা বলছি সাদিয়ার সাথে, সাদিয়া বললো ও এখন গোসল করে ঘুমাবে। তাহলে পার্কে গেলো কিভাবে?.. (রাগ হয়ে)
নাইমঃ বিশ্বাস কর দোস্ত। তুই একবার এসে দেখে তো যা, যদি আমি মিথ্যা বলি তাহলে যত শাস্তি দিতে ইচ্ছা হয় দিবি তখন আমায়…
আমিঃ যদি মিথ্যা বলিস, তাহলে কিন্তু তোর খবর আছে।
নাইমঃ হুম। আমি রাজি….
~ আমি রেস্তোরাঁর দায়িত্ব কর্মিদের হাতে দিয়ে সরাসরি পার্কে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি নাইম পার্কের গেটে দাড়িয়ে আছে। আমায় দেখে আমার কাছে এসে হাত ধরে পার্কের মধ্যে নিয়ে গেলো। নাইম নাকি গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরতে এসে সাদিয়াকে পার্কে মধ্যে দেখছে।
আমায় নিয়ে গেলো পার্কের পিছনের সাইডে একটা ঝোপঝাড় জায়গায়। ওখানে ঝোপের দিকে হাত দিয়ে নাইম বললো, দেখ দোস্ত ওটা কে…
আমি তাকিয়ে দেখি আমার গার্লফ্রেন্ড সাদিয়া একটা ছেলের কোলের উপরে বসে কি সব নোংরামি করছে ছেলেটার সাথে। জরিয়ে ধরে বাজে ভাবে কিস করছে ওই ছেলেকে।
ওমন একটা দৃশ্য চোখের সামনে দেখে মনের মধ্যে কত বড় আঘাত পেয়েছি বুঝাতে পারবো না। যেই সাদিয়ার কখনো হাত ধরি নাই, যদি মাইন্ড করে তাই। আর সেই সাদিয়াকে আজ পার্কে অন্য ছেলের সাথে নোংরামি করতে দেখবো কখনো ভাবি নাই।
আর আমি এতোদিন এই মেয়ের হয়ে আমার মা-বাবার সাথে কত ঝগড়া করছি, আবার বন্ধুদের কথা বিশ্বাস করি নাই, আরো উল্টো তাদের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিলাম প্রায়। আজ এখন বুঝতে পারছি কত বড় ভুল করছিলাম। সবাই যে বলতো সাদিয়া খারাপ মেয়ে, আজ নিজের চোখে সেটার প্রমাণ পেলাম।
বন্ধুকে কি বলবো, কিছু বুঝতে পারছি না। মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের করতে পারছি না। কিছুক্ষণ ওদের নোংরামি দেখে আমার বন্ধু নাইমের হাত ধরে বাড়ি আসার উদ্দেশ্য পিছনের দিকে টান দিলাম ~
নাইমঃ কি দোস্ত, সাদিয়াকে কিছু বলবি না এর পরেও…
আমিঃ বাদ দে দোস্ত। এদের মত মেয়েদের আর কিছু বলার আছে (খুব কষ্টে মনে)
নাইমঃ কিসের বাদ দে, তোর সাথে এমন বেইমানি করলো, আর তুই কিছু বলবি না?
আমিঃ বলে কি লাভ আছে আর বল? চল বাড়ি চল তো…
নাইমঃ চুপ, তুই ছেড়ে দিলেও আমি ছাড়বো না৷
~ বলে নাইম কয়েক পা এগিয়ে সাদিয়ার কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ালো। তখনো সাদিয়া আর সেই ছেলে নোংরামি করতে ব্যস্ত। আশেপাশে কি হচ্ছে তার খোঁজ নেই মনে হয় দুইজনের কাছে ~
নাইমঃ ওই সাদিয়া ভাবি, খুব আনন্দে আছেন মনে হচ্ছে..? (জোর কন্ঠে)
~ সাদিয়া পিছনে তাকিয়ে আমাকে ও নাইমকে দেখে চমকে উঠে তাড়াতাড়ি ওই ছেলের কোল থেকে উঠে ৩-৪ পা সরে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। কোনো কথা নেই সাদিয়ার মুখে। মুখে একটা ভয়ের ছাপ। মুখে কিছু একটা বলতে গেলেও, বার বার আটকে যাচ্ছে ~
আমিঃ এখানে কি হচ্ছে সাদিয়া.? (ধমক দিয়ে)
~ সাদিয়া চুপ ~
আমিঃ ছি ছি, তুমি এতো নোংরা মেয়ে। আগে যদি জানতাম তুমি এতো নোংরা, ছি ছি…
সাদিয়াঃ বিশ্বাস করো শুভ, এটা আমার খালাতো ভাই…
আমিঃ তোমার এই কথা বলতে একটুও লজ্জা হচ্ছে না? (রাগী ভাবে)
সাদিয়াঃ তুমি আমায় বিশ্বাস করো না শুভ.?
আমিঃ আমি নিজ চোখে তোমাকে নোংরামি করতে দেখছি, এর পরেও বিশ্বাস করতে বলো? ছি ছি..
~ সাদিয়া দৌড়ে এসে আমার পা জরিয়ে ধরলো ~
সাদিয়াঃ আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আর কখনো এমন করবো না।
— নাইম আমার হাত ধরে বললোঃ দোস্ত, এই মেয়ের কথা একদিন বিশ্বাস করবি না, এই মেয়ে এর আগেও অনেক ছেলের সাথে পার্কে এসে এমন করছে। তুই তো আমাদের কথা বিশ্বাস করতি না।
সাদিয়াঃ শুভ, তুমি নাইমের কথা একদম বিশ্বাস করবে না। আসলে আমি সুন্দরী তো, নাইম আমাকে পায় নাই, তাই তোমার ও আমার মধ্যে ঝগড়া লাগিয়ে দিচ্ছে এমন বলে…
আমিঃ ওই মেয়ে পা ছাড় বলছি… (রাগী কন্ঠে)
সাদিয়াঃ শুভ তুমি…
আমিঃ চুপ নোংরা বাজে মেয়ে। তোর কথা আমি বিশ্বাস করবো তাই ভাবছিস??
~ সাদিয়া পা ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলো ~
আমিঃ তোর রূপের অনেক বরাই, তাই না?… আজ আমি কথা দিলাম, তোর থেকে সুন্দরী মেয়ে আমি যদি বিয়ে করতে না পারি, তাহলে বলিস…
সাদিয়াঃ আর আমাদের এতো দিনের সম্পর্ক?
আমিঃ কিসের সম্পর্ক রে? চরিত্রহীন মেয়ে, তোর কাছে আবার সম্পর্কের মূল্য আছে নাকি।
~ নাইম আমার হাত ধরে বললো, “বাদ দে দোস্ত, এর মত মেয়ের সাথে কথা বলাও পাপ”…
আমি আর নাইম পার্ক থেকে বের হয়ে গেলাম। খুব কষ্ট হচ্ছিল মনের মধ্যে, যার জন্য আমি মা-বাবা কে কষ্ট দিয়েছি আর সেই মেয়ে এতো খারাপ। খুব ঘৃণা হচ্ছিল সাদিয়ার উপর, শুধু ওই ছেলের সাথে নোংরামি করা দৃশ্য চোখে ভাসছিলো।
বাসায় এসে মন খারাপ করে থাকায়, সবাই আমায় জিগ্যেস করলো কি হয়েছে। পরে আমি সব কাহিনি খুলে বললাম। আম্মু তখন বুঝালো, তোকে তো আগেই বলছিলাম ওই মেয়ে তেমন ভালো না, আরো অনেক কিছু।
বাবা বললো, “যা হওয়ার হয়েছে, তোকে খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিবো এবং মেয়ে আমাদের পছন্দের”
আমিও বাবার প্রতি সম্মতি দিলাম। অনেক জায়গায় মেয়ে দেখা হয়েছিল গত ৬ মাসে। কিন্তু মামার দেওয়া এই মেয়ে, বর্তমানে যে আমার বউ, তাকেই আমার মা-বাবা পছন্দ করে ফেললো। মেয়েটা অনেক কালো, সেই জন্য আমার পছন্দ না।
কালো বলে যে ঘৃণা করছি তা না, সাদিয়াকে বলছিলাম তার থেকে সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করবো, কিন্তু এখন বিয়ে করতে হলো আরো কালো মেয়ে। এই জন্যই এখন ওই মেয়ে ও আম্মু আব্বুর উপর রাগ লাগছে খুব। সাদিয়া যদি শোনে আমি কালো মেয়ে বিয়ে করছি, তাহলে তো হাসবে। এটা ভেবেই মাথা গরম হচ্ছে।
এর মধ্যে আম্মু গিয়ে বাবাকে ডেকে আসলো ≈≈
আব্বুঃ শুভ এতো রাতে এখনো বাইরে কি করছে..?..(ধমক দিয়ে)
~ বাবার এক ধমকে আমার অবস্থা খারাপ, হাত পা কাপছে ~
নিলা ভাবিঃ শুভ ওর রুমে যাচ্ছে না।
আব্বুঃ কেনো যাবে না?
আমিঃ তোমাদের কথায় আমি বিয়ে করছি। তাই বলে সব কথা আমি শুনতে পারবো না। ওই কালো মেয়েকে আমার পছন্দ হয় নাই (খুব ভয় নিয়ে)
আব্বুঃ এতো রাতে ঝামেলা করিস না, যা রুমে যা বলছি…
আমিঃ না আমি যাবো না। ওই মেয়েকে আমার রুম থেকে বের করে দেও, তারপর আমি যাবো।
আব্বুঃ তার আগে যাবি না তো??
আমিঃ না…
— আব্বু, আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললোঃ এই শুভর আম্মু, আমাদের বাড়িতে…………………(..#চলবে..)
বিঃদ্রঃ এটা ছিলো “রোমান্টিক কালো বউ” গল্পের সূচনা পর্ব। গল্প তো মাত্র শুরু। আশা করি সবাই গল্প পুরোটা পড়বেন।