#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ১৪
#রুবাইদা_হৃদি (sheikh ridy rahman)
ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই বারান্দা দিয়ে কাব্য ভাইয়া আমার রুমে এসেছে সেটা আমি টের পাই নি৷ উনি আমার কঁপালে পড়ে থাকা চুল গুলো একবার ঠিক করছেন তো আরেকবার বিগড়ে দিচ্ছেন৷ মাঝে মাঝে আমার দিকে ঝুকে আমার উঠে বসে পড়ছেন৷ আমার ঘুম তখন হালকা হয়ে এসেছে৷ উনি আমার কানের কাছে এসে বললেন,
–‘ আমার অনাগত বাচ্চারা কেমন আছে! ‘
আমি ঘুমের ঘোরেই জবাব দিলাম,
— ‘ বাচ্চা আসবে কোথা থেকে কাব্য ভাইয়া, আপনার লেনদেনের প্রক্রিয়া এখনো তো বুঝতেই পারি নি৷ ‘
তিনি হাসছেন৷ সেই হাসির শব্দ গুঞ্জন তুলেছে আমার ঘরের প্রতিটা কোণায় সাথে আমার কানের মাঝে৷ সপ্নেও বুঝি মানুষটাকে অনুভব হয় আমার৷ আমি আবারও বিরবির করে বললাম,
–‘ আপনি হাসবেন না! আপনার হাসিতে কিছু একটা আছে যা আমাকে মুগ্ধ করে তুলে৷ ‘
–‘ কি করে তুলে৷ ‘
–‘উহু,ঘুমের মাঝে এসেও আমাকে জ্বালাচ্ছেন কেন বলুন তো৷ বললাম না মুগ্ধ করে তুলে৷ ‘
–‘ তাই বুঝি৷ ‘
–‘ আপনার সাথে পরে কথা হবে৷ এখন যান তো আমার সপ্ন থেকে৷ ‘
তার হাসির শব্দ আবার আছড়ে পড়ছে৷ আমি বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুচকে নিই৷ ঘুমের রেশ কাটাতে ইচ্ছা হচ্ছে না যার জন্য সপ্ন থেকে কাব্য নামক মানুষ টাকে তাড়াতে পারছি না৷
–‘ আমি চলে গেছে খুব কি মিস করবি আমায় নীতু? ‘
চলে গেলে শব্দটা শুনে আমার ঘুম ছুটে গেছে৷ সত্যিই উনি চলে যাবেন?আমি চোখ খুলতেই উনাকে আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখেই হুড়মুড় করে উঠে বসি৷ আমি উঠে বসতেই উনি চোখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকায়৷ ব্যাপার টা বুঝতে পেরে লজ্জায় পড়বো না অস্বস্তিতে বুঝে উঠার আগেই উনি বললেন,
–‘ তোর পাশেই ওড়না রাখা! রাতে ঘোমটা দিয়ে শুতে পারিস না ফাজিল মেয়ে৷ খোল চুলে ঘুমালে শয়তান প্রস্রাব করে জানিস? ‘
আমি পাশে থাকা ওড়না শরীরে জড়িয়ে তার দিকে তাকালাম৷ তার ডান কানের পিঠের তিল টার দিকে নজর আটকে গেলো৷ সূর্যের আলো পড়ায় সেই তিলটা লাল বোঝা যাচ্ছে৷ আদেও কি লাল?আমি আজ প্রথম দেখেই প্রেমে পড়ছি৷ উহু! মানুষটার না সেই তিলটার৷ সে এখনো অন্যদিকে মুখ করে বসে আছে৷ আমি নজর সরিয়ে বললাম,
–‘ আপনি আমার রুমে কি করেন? ‘
উনি আমার দিকে তাকালেন৷ আমি চুল গুলো খোপা করতে নিলেই উনি বলেন,
–‘ ঘুম কুমারী তোমায় ওই খোলা চুলেই বড্ড মানায়৷ ‘
চকিত হয়ে তার দিকে তাকাতেই উনি আমার অর্ধেক বাঁধা চুল নিজের হাত দিয়ে এলোমেলো করে দিয়ে উঠে দাঁড়ান৷ আমি জোরে, ‘ অসহ্য ‘ বলতেই উনি একগাল হেসে বললেন,
— ‘ অসহ্য বল আর যাই বল,, আমি ছাড়া তোর উপায় যে নাই৷ ‘
আমি মেঝেতে পা দিয়ে জোরে আঘাত করে নামতেই উনি আবার হেয়ালি করে বললেন,
–‘ আমার বাপের হার্ট এমনি দূর্বল! তোর হাতির মতো ওজন নিয়ে মেঝেতে ধুপ ধাপ করলে নির্ঘাত আমাদের শত বর্ষ পুরোনো বাসা ভেঙে পড়বে৷ ‘
মূহুর্তেই রাগ বেড়ে আকাশ ছুয়েছে আমার৷ আমি উনার কাছে গিয়ে আঙুল উচিয়ে বললাম,
— ‘ কথায় কথায় এমন আরেকদিন বললে আপনাকে চা বাগানের সাঁপ ধরিয়ে দিবো বলে দিলাম৷ সাঝ সকাল বেলা আমাকে জ্বালানো ছাড়া আর কোনো কাজ পান নি আপনি৷ ‘
উনি আমার আঙুলে চুমু দিতেই আমি চোখ বড়বড় করে তার দিকে তাকাতেই উনি সব গুলো দাঁত বের করে হেসে বললেন,
–‘ ওলে বাবা,পিচ্চির এতো রাগ কোথা থেকে আসলো৷ আমি তো ভয় পেয়ে যাচ্ছি! ‘
–‘ উফ! অসহ্য…’
আমি আবারও জোরে পা ফেলে চলে যেতে নিলেই উনি বললেন,
–‘ তোর ভার্সিটি তে ভর্তি করানোর মতো মহৎ মূল্যবান কাজ আমার মতো অধমের ঘাড়ে পড়েছে৷ তাই মহারাণী কে ডেকে তোলার জন্যই এসেছিলাম৷ পাঁচমিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে আমার সাথে বের হবি তা না হলে তোকে চা বাগানের সাপের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো৷ ‘
তার খাপছাড়া কথা শুনে হাসি পেলো আমার৷ আমি মুচকি হাসতেই উনি সুর টেনে বললেন,
–‘ এতো হাসি না,
পুরো রাক্ষসীর হাসি!’
আমি ঘুরে কিছু বলার আগেই উনি পকেটে হাত গুজে লাফিয়ে বারান্দা দিয়ে তার বারান্দায় চলে যান৷ অদ্ভুত! তার সব কিছুই এখন অদ্ভুত….
_____________________
ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত কোলাহলের ভীর ঠেলে আমরা হাঁপিয়ে যাচ্ছি ক্ষণে ক্ষণে৷ চারদিকে গাড়ির কালো ধোঁয়া! থেকে থেকে হকারের হাক ডাক৷ আর শুষ্ক আবহাওয়ার তীব্র গরম৷ সব মিলিয়ে প্রচুর বিরক্ত আমি৷ গাড়ির ভেতরে এসি ছাড়লে আমার বমি পায় এই জন্য এসি নামক জিনিস ছাড়তে তীব্র বারণ আমার৷ আমি ঝিম মেরে বাইরের জ্যাম দেখে চলেছি৷ আর উনি ড্রাইভিং সিটে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে আছেন৷ তার চোখে-মুখে কোনো বিরক্তির ছাঁপ নেই৷ তিনি উপভোগ করছেন সব কিছু মনে হচ্ছে৷ প্রায় এক ঘন্টা আগে আমার ভর্তির যাবতীয় কাজ সেরে ভার্সিটি থেকে বের হয়েও বাসায় পৌছাতে পারি নি৷ আমি বিরক্তির সুরে বললাম,
–‘ চলুন হেটে বাসায় যাই! এই জ্যামে বসে থাকতে থাকতে বুড়ি হওয়া ছাড়া উপায় নেই৷ ‘
–‘ গাড়ির দরজা খোলাই আছে চাইলে নেমে হেটে যেতেই পারিস৷ ‘ উনার নিরুত্তাপ উত্তর শুনে কিছুই বললাম না আমি৷ ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার পর থেকেই এমন করছেন উনি৷ আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ালাম৷ তার ভেতর বোঝার উপার আমার নেই৷ সব কিছুতে তার গোপনীয়তা৷ এই গোপনীয়তা দূর করে তার মন খুলে পড়ার সাধ্য বোধহয় আমার নেই৷ গাড়ির হর্ণ কানে আসতেই উনি গাড়ি সামনে নিলেন৷ তারপর আবার সেই নীরবতা জ্যামের ছড়াছড়ি৷
–‘ আমি চলে যাবো বুধবারে৷ ‘
–‘ হ্যাঁ! তো? ‘
আমার ভাবেলাশীন উত্তর শুনে চুপ থেকে বললেন,
–‘ যদি বলি ,আমার যাওয়া না যাওয়া তোর উপর ডিপেন্ড করছে? ‘
আমি তার দিকে তাকালাম৷ চোখ দুটো কিছু মূহুর্তের মাঝেই লাল হয়ে উঠেছে ৷ আমি অবাক হয়ে বললাম,
–‘ মানে? ‘
গাড়ি স্টার্ট দিতেই একটানে বাসার সামনে এসে পড়লেন চোখের পলকে৷ আমি এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছি৷ কি বলতে চাইছেন আবার উনি?
___________________
বাড়ির ভেতর উৎসব মুখোর পরিবেশ৷ কোলাহল মুক্ত বাসা হঠাৎ করেই মানুষের আনাগোনায় ভরে উঠেছে৷ বাসায় ঢোকার পর থেকে একের পর এক শক খাচ্ছি আমি৷ কাব্য ভাইয়া চুপ! কাব্য ভাইয়ার ফুঁপাতো বোন ইরা আমার দিকে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে বলল,
–‘নীতু বেবি! আমাদের ক্রাশ বয় কাব্য তাহলে তোমার৷ আই ফিল হিংসে হিংসে৷ ‘
আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি৷ ও আমায় ছেড়ে দিয়ে হাতের উপর গুতা দিয়ে মুচকি হেসে বলল,
–‘ হয়েছে আর নাটক করতে হবে না! আমরা সব বুঝি৷ একটু পর আমাদের পুরো গ্যাং আসবে৷ আজ রাতে ধামাকা হবে৷ ‘
আমি ওর কথার রেশ বুঝতে না পেরে শুধু হাসলাম৷ একে একে সবাই আমার সাথে কুশল বিনিময় করছে৷ কোথাও ফুঁপি আর জিনিয়াকে দেখতে না পেয়ে কপাল কুঁচকে এলো আমার৷ হচ্ছেটা কি আজ? আজ বাসায় কারো বার্থডে নাকি? না তো অক্টোবরে কারো বার্থডে নেই৷ তবে ফুঁপি আর ফুঁপার বিবাহ বার্ষিকী? ধূর ছাই! সেটাও তো চলে গেছে৷
আমাকে সোফায় বসিয়ে নানা গাল গল্প করছেন কাব্য ভাইয়ার দূর সম্পর্কের দাদু৷ আমি তার কথার মানে বুঝতে পারছি না৷ হঠাৎ উনি আমার হাত টেনে নিয়ে বললেন,
–‘ তোমার ভাগ্যে কাব্য আছিলো! অনেক সুখী হও দাদু৷ আমি প্রাণ ভরে দোয়া করি৷ ‘
আবারও কঁপাল কুচকে এলো আমার৷ আমাদের বিয়ের কথা এতোদূর পর্যন্ত গড়ালো কিভাবে সেটাই বোঝার চেষ্টা চালাচ্ছি আর চেনা মুখ খুজে বেড়াচ্ছি৷ হঠাৎ কাব্য ভাইয়ে নজরে পড়তেই বিষম খাই আমি৷ সে হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পড়ে সিড়ি দিয়ে নামছেন রাহুল ভাইয়ার সাথে কথা বলতে বলতে৷ হলুদ রঙ তার উপর ফুঁটে উঠেছে একদম৷ ইরা আমার পাশে বসে মুখ টিঁপে হেসে ওই দাদুটাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–‘ দেখেছো দাদু,তোমার হবু নাতী বউ বড্ড বেহায়া৷ এখনি কেমন চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে তোমার নাতি কে আর বিয়ের পর…’
ও আর কিছু বলার আগেই দাদু ওকে থামিয়ে দিয়ে হাসি হাসি মুখ নিয়ে আমার মুখে আদর করে বললেন,
–‘ সর্বোচ্চ সুখ তোমার কোলে এসে ভর করুক৷ ‘
আমি আবার অবাক চোখে তাকাতেই কোথা থেকে ফুঁপি এসে তাড়া দিয়ে বলল,
–‘ এ কি নীতু!তুই এখনো এখানে বসে আছিস৷ কতো কাজ বাকি…আমার সাথে আয়! এই ইরা ওকে আমার ঘরে নিয়ে আয়তো জলদি৷ ‘
ফুঁপি ঝড়ের বেগে এসেছিলো৷ কালবৈশাখীর বেগে আবার কোথায় যেন হারিয়ে গেলো৷ ইরা আমার হাত ধরে টান দিতেই আমি ওকে প্রশ্ন করি,
–‘ এই সব কি হচ্ছে ইরা? তুমি কিছু জানো!’
ইরা আবারো আমার হাতে হালকা থাপ্পর মেরে বলল,
–‘ইশ!ঢং,সব কিছু গুছিয়ে এখন ন্যাকা সাজা হচ্ছে তাই না?’
আমি আবার ন্যাকামো কোথায় করলাম! বাসায় হচ্ছেটা কি আজ?
ফুঁপির রুমে পৌছাতেই আবার ফুঁপি ঝড়ের বেগে আমায় বলল…..
চলবে……
#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ১৫
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)
লাল পাড়ের হলুদ রঙের শাড়ি পড়ে বসে আছি আমি৷ কাঁচা ফুলের সৌরভ ভেসে আসছে আমার শরীর থেকে৷ গোটা কয়েক মানুষ আমাকে আর কাব্য ভাইয়াকে ঘিরে মাতামাতি করছে৷ কাব্য ভাইয়া নিরলস ভাবে বসে আছে৷ আমিও সেইভাবেই বসে আছি৷ হটাৎ কাব্য ভাইয়া আমার হাতে হালকা ছুয়ে দিতেই আমি তার দিকে তাকাই৷ উনি ইশারা করে বললেন,’ সব শেষ হলে তার সাথে যেন যাই আমি৷ ‘
আমিও ইশারায় ” হ্যাঁ “বলতেই পাশে থেকে কাব্য ভাইয়ার ফুঁপাতো ভাই সাদিদ ভাইয়া আর রাহুল ভাইয়া সহ বাকিরা হই হই করে উঠে৷ কাব্য ভাইয়া চোখ গরম করে তাকাতেই মোস্তাকিম ভাইয়া বললেন,
–‘ চোখ গরম করে লাভ নেই দোস্তো! তোমার উপর চোখ গরম করার মানুষ পাশেই আছে, তাই না নীতু৷ ওহ,সর্যি! ভাবিইইইইই….’
মোস্তাকিম ভাইয়ের কথায় আবারও হাসির রোল পড়ে গেলো । আমি নিজের শাড়ি মুঠ করে ধরে বসে আছি। কাব্য ভাইয়া রাগীভাবে বললেন,
–‘ তোদের ডাকা হয়েছে কি জন্য ?’
পাশে থেকে রাহুল ভাইয়া কাব্য ভাইয়ের মুখে হলুদ লাগিয়ে বললেন,
–‘তোকে হলুদ লাগানোর জন্য ।’
–‘ শুধু ওকে না পিচ্চিকেও লাগানোর জন্য।’ হলুদের বাটি থেকে হলুদ উঠিয়ে আমার মুখে লাগিয়ে দিয়ে বললেন তমা আপু । এতোটুকু সময়ের মধ্যে সব আসলো কি ভাবে আর এতো আয়োজন হলো কিভাবে সেটা ভেবেই আমি পাগলপ্রায়। ফুঁপি তখন আমায় ডেকে শাড়ি আর ফুলের গহনা গুলো দিয়ে বলেছিলো,
–‘ নীতু ,আম্মু! আজ তোর আর কাব্যের হলুদ হবে আর কাল ধর্মীয় ভাবে বিয়ে ।’
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ফুঁপি তাড়া দিয়ে বলল,
–‘তোর হাজার প্রশ্নের উত্তর আমি শর্ট করে দিচ্ছি,
আমি প্রশ্নের উত্তরের জন্য তাকিয়ে আছি ফুঁপির দিকে । ইরা রুমের দরজা বন্ধ করতেই ফুঁপি পেটিকোট আর ব্লাউজ আমার হাতে দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পাঠিয়ে বলল,
–‘ এইগুলো পড়ে জলদি আয় আমি তোর প্রশ্নের উত্তর শাড়ি পড়াতে পড়াতে দিবো কারণ হাতে একদম সময় নেই।’
আমিও বাধ্য মেয়ের মতো সব শুনলাম । আমি ফিরে আসতেই ফুঁপি শাড়ি পড়াতে নিলে ফুঁপির হাত ধরে বললাম,
–‘ আমি যতদূর ভাবতে পারছি,আজ আমার আর কাব্য ভাইয়ার হলুদ !কিন্তু কেন? সে তো বিয়ে করে,,
ফুঁপি আমার কথার মাঝে ইরাকে ইশারা দিয়ে দেখাতেই আমি চুপ হয়ে যাই। কারণ ওরা এখনো বিয়ের ব্যাপারটা জানে না । ফুঁপি ইরাকে সব হয়েছে কিনা দেখার জন্য বাইরে পাঠিয়ে দিতেই আমি আবারো বলি,
–‘ কাব্য ভাইয়ার আর আমার বিয়ের রেজিস্ট্রি হয়ে গেছে এইটা এখানের সবাই জানে ফুঁপি,তাহলে আবার এইসব কেন? ‘
ফুঁপি আমার শাড়ি পেঁচিয়ে কুঁচি ঠিক করে বললেন,
–‘তোরা বাসায় থেকে ভার্সিটিতে যাওয়ার পর আমির বাসায় এসেছিলো পুলিশ নিয়ে ।’
ফুঁপির কথা শুনে জোরে ‘মানে’ বলতেই ফুঁপি বললেন,
–‘মানে,আমির পুলিশকে বলেছে তোকে কাব্য জোর করে উঠিয়ে এনেছে!”আমির” কতটা খারাপ ভাবা যায়? ও বাড়িতে পুলিশ নিয়ে এসেছে কাব্যকে মিথ্যা কেসে ফাঁসাতে।’
আমি ভয়ে ফুঁপির হাত আঁকড়ে ধরলাম । ফুঁপি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
–‘পুলিশের সামনে আমি আর তোর ফুঁপা তোদের রেজিস্ট্রি পেপার দেখাতে আমির আবার বলে এইটা নাকি ভুয়া । আমি উপায় না পেয়ে কাব্যকে ফোন দিই।’
প্রিন্সিপালের রুমে থাকতে কাব্য ভাইয়ার ফোন এসেছিলো আর সে ফোন নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তারমানে ওইটা ফুঁপির ফোন ছিলো । আমি কুঁচি ধরে বললাম, ‘তারপর আমিরকে কিভাবে মানালে!’
ফুঁপি লাস্ট কুঁচি ঠিক করে বলল,
–‘ কাব্যকে তো চিনিস, ও ডিরেক্ট বলেছে তুই ওর বউ আর বিশ্বাস না হলে কাল যেন বাসায় আসে ,তোদের ধর্মীয় ভাবে কাল বিয়ে হবে । পুলিশ আমিরকে নিয়ে বেরিয়ে যায় আর বলে যায়,কাল আসবে তারা। কিন্তু আমির নাছোড়বান্দা সে শাসিয়ে যায়,তোকে যেখানে পাবে সেখান থেকেই উঠিয়ে নিবে। কারণ সে তোদের বিয়ে মানে না আর তার দৃঢ় বিশ্বাস তোদের বিয়েটা নাটক ।’
ফুঁপির কথায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম । এই কথাটা আমিও বিশ্বাস করতাম না আর আমির তো চালাক মানুষ ।আমি আবার বললাম,
–‘ তাহলে এইসব কি আমির কে বিশ্বাস করানোর জন্য ?’
ফুঁপি হেসে বলল,
–‘একদম না,কাব্যের সাথে আমার নীতুকে একদম পাকাপোক্ত ভাবে বেঁধে রাখার জন্য। যাতে কেও প্রশ্ন না করতে পারে,তুই কে?’
কাব্য ভাইয়ার সাথে বেঁধে রাখার জন্য? সেটা তো এমনিতেও আছি । আমি আবার বললাম,
–‘ ফুঁপা আর বাবা মেনে নিবে হ্ঠাৎ করে এইসব হওয়ায়।’
ফুঁপি কিছু একটা খুজছে! আমার কথা শুনে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
–‘ কাব্য বুধবারে চলে যাবে! ও ছাড়া তোকে প্রোটেক্ট করার কেও নেই। বড় ভাই তার ব্যবসায়ীক ঝামেলার কথা আমায় খুলে বলেছে। আর কি জন্য তোকে এতো তাড়াতাড়ি ওই আমিরের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলো সেটাও বলেছে । সব শুনে আমি স্তব্ধ হয়েছিলাম । আমির তোর বাবার কোম্পানির নামে কেইস করেছে আর সেটা থেকে মুক্ত পাওয়ার উপায়ে তোকে চেয়েছে। কতোটা নিঁচু মনের ভাবা যায়? তাই তারা দুজনে মিলেই আবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তোদের বিয়ে দেওয়ার । কাব্য এমনিতেও চলে যাবে তাই সবাই সব মেনে নিয়েছে,,,,আর আমি মনে করি,কাব্য তোর ভাগ্যে ছিলো তাইতো এতো কিছু । তা না হলে বল তো,আমার ছেলে কেন এতোবড় একটা স্টেপ নিবে।’
ফুঁপির কথা শুনে সব মেনে নিয়েছি। তার আর আমার বিয়েটা যেখানে হয়ে গিয়েছে সেখানে আমার কি বলার থাকতে পারে? তখন না হয় জানতাম না কিন্তু এখন জেনেই তার সাথে আবদ্ধ হই । সে তো চাইলেও আমার স্বামী না চাইলেও আমার স্বামী। তার সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ আমি।যে সম্পর্কে কোনো নাম নেই,,
______________________
সোনালি রাঙা চাঁদের আলো এসে পড়ছে ছাদে৷ পূর্ণ থালার মতো চাঁদ উঠেছে আজ সেই রাতারগুলের রাতের মতো৷ কাব্য ভাইয়া আমার পাশেই বসে আছেন আর রাহুল ভাইয়াদের সাথে কালকের প্ল্যানিং করে নিচ্ছেন৷ তার গাঁলে,হাতে হলুদ ছোঁয়ানো৷ চাঁদের আলো আর লাইটের হালকা আলোয় সেই হলুদে মোড়া কাব্য ভাইকে দেখে কিছু একটা হচ্ছে আমার মনের কিনারায়৷ যে মানুষটাকে আমি এড়িয়ে চলতাম আর সেই কিনা সারাজীবনের পথচলা আমার৷ কোনোকিছুতে খুশী হতে পারছি না৷ তবে তার একটা কথা মনে পড়ছে, ‘যা হচ্ছে হতে দেনা নীতু! জানিস তো অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়৷ ‘
আমি চোরা চোখে তাকে দেখে চলেছি৷ আজ উনার মুখটা সবচেয়ে সুন্দর ভাবে অনুভব করলাম আমি৷ নিতান্তই সে একজন সুপুরুষ! খোঁচা খোঁচা দাড়ি৷ বা পাশের উঁচু দাত৷ হাসলেই সেই দাঁত উঁকি দেয়৷ দেখতে অমায়িক লাগে৷ ইশ!এতো সুন্দর বুঝি কারো হাসি হয়? তার সবকিছু সুন্দর৷ তবে কি তার প্রতি আমার ভেতরে কিছু একটা আছে? কিন্তু কেন?সে আমার স্বামী এইটা বলে৷ তাকে তো আমি মানতে পারছি না আবার দূরে সরাতেও পারছি না৷ ঘুরেফিরে একটা কথাই মনে হচ্ছে, ‘ যা হচ্ছে সেটা ভালোই হচ্ছে৷ কারণ এই মানুষটা ভুল করতেই পারেন না৷’
‘রুপালি থালার ন্যায় চাঁদের আলোয়,
দেখেছিলাম তাকে!
‘অদ্ভুত এক মায়াময় তার মুখের হাঁসি,
অজানা এক ভালোলাগার,
এই খেলায়! ‘
বিরবির করে এই কথাটুকু বলতেই আমার গালে ঠান্ডা কিছুর ছোঁয়া পেতেই চমকে উঠি আমি৷ কাব্য ভাইয়া হলুদ লাগিয়েছে আমার গালে৷ আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সে আমি আর ফুল ছাড়া কোথাও কেও নেই৷ উনি দুইহাতে হলুদ উঠিয়ে আমার গালে আবার লাগিয়ে বললেন,
–‘ আমার প্রেমে পড়ে যাচ্ছিস মনে হচ্ছে? প্রেমে পড়িস না আমার বউয়ের কষ্ট হবে৷ ‘
আমি দ্রুকুচকে তাকাতেই উনি হেসে উঠেন৷ আবার সেই দাঁতের ঝিলিক৷ আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি৷ উনি নিজের গালের সাথে আমার গাল ঘষা দেন৷ আমি মূহুর্তেই চমকে ‘ আউচ ‘ বলে আমার গালে হাত দিই৷ তার দাড়ির খোঁচা আমার গালে লেগেছে৷ উনি আবার হেসে বললেন,
–‘ তুই তো হলুদ লাগাবি না তাই আমিই লাগিয়ে নিলাম৷ ‘
উনার কথা শুনে পুরো হলুদের বাটি উঠিয়ে তার মুখে ঢেলে দিতেই উনি আমার হাত ধরে ফেলেন৷ আমি আমতা আমতা করে বললাম,
–‘ হাত ছাড়ুন!আপনাকে হলুদ লাগাই নি বলছিলেন না? এখন লাগাতে দিচ্ছেন না কেন!’
উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল,
–‘ আমি তো হাতের ছোঁয়ার হলুদ লাগাবো না৷ ‘
আমি পিছন দিকে ঝুকে বললাম,
–‘ তাহলে? ‘
উনি আবার আমার গালের সাথে তার গাল লাগিয়ে হলুদ লাগিয়ে দিলেন৷ আমি চোখ বন্ধ করে বসে আছি৷ আজ সব কিছুতে কাব্য ভাইয়ার না নিজের স্বামীর গন্ধ পাচ্ছি!
চলবে……
(কাব্য আর নীতুর বিয়ে! কেমন ফিল হচ্ছে সবার?আমি সাইলেন্ট পাঠকদের দেখতে চাই🙃
ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন৷)