রৌদ্দুরে প্রেমের বৃষ্টি পর্ব-১০+১১

0
3483

#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ১০
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)

আমার কোমরে হাত দিয়ে একহাতে জড়িয়ে বাসের সিটে হেলান দিয়ে শুয়ে আমায় ধরে রেখেছেন কাব্য ভাইয়া৷ আর অন্যহাতে মোবাইল চালাচ্ছেন৷ ইচ্ছা হচ্ছে,জানালা ভেঙে বের হয়ে যাই৷ উফ!অসহ্য একটা৷ এতোক্ষণ ওই মেয়ের সাথে থেকে বাসে উঠার পর আমাকে মনে পড়েছে তার৷ বাসায় থেকে আসার সময় গাড়ি নিয়ে আসেনি সে৷ তাহলে নাকি ধরা পড়ে যাবে৷ উনার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে,আমি উনার গোপন প্রেমিকা৷ গোপালগঞ্জ মেইন পয়েন্টে এসে বাসে উঠিছি৷ আর এখান থেকে রাতারগুল যেতে দু ঘন্টার উপর লাগবে৷ এই দুই নামক সংখ্যাটা বড্ড খারাপ৷ গত দুই তারিখে উনার মিথ্যা কথার জালে ফেঁসেছি আবার দুটো দিন আবার দুই ঘন্টা৷ দুই নামক শনি লেগেছে আমার কঁপালে৷ থেকে থেকে উনি তার হাতের বাঁধন শক্ত করছেন আবার কখনো আলগা৷ উনার দিকে তাকিয়ে দেখি এখনো ফোনে পড়ে আছেন৷ কিছুক্ষণ পর পর ভ্রুকুচকে ফেলছে৷ চেহারা দেখে মনে হচ্ছে প্রচুর বিরক্ত উনি কিছু একটা নিয়ে৷ তার ছোট ছোট চুল গুলো কপালে এসে বাড়ি খাচ্ছে৷ উনি বিরক্তি নিয়ে হাত দিয়ে ঠেলে দিচ্ছেন আবার সেই চুল এসে উনাকে বিরক্ত করছে৷ আমি তাকিয়ে আছি উনার মুখে৷ তার চেহারায় মায়া আছে যেটা কাটানো কারো পক্ষে সম্ভব নয়৷

–‘দেখে দেখে আমার উপর নজর লাগা ভালো করে যাতে কোনো পেত্নী আশেপাশে ঘেষতে না পারে৷’

উনার কথা শুনে নজর লুকাতে চেষ্টা করতেই উনি মোবাইল পকেটে রেখে আমাকে আরেকটু জড়িয়ে ধরে বললেন,

–‘নীতু বেবি কি রাগ করছে আমার উপর৷’

উনার টেনে টেনে কথা বলার ধরণ দেখে আমি হেসে উঠলাম৷ উনি আমার অবাধ্য চুল গুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে বললেন,

–‘দ্যাট’স লাইক এ গুড গার্ল৷’

আজ তাকে অন্য কাব্য ভাইয়া লাগছে৷ বদরাগী কাব্য ভাইয়া আর এই কাব্যের মধ্যে বিস্তর তফাৎ৷ আজ একটুও খারাপ লাগছে না তার সাথে৷ বাসস্ট্যান্ডের ওই মেয়েটার কথা মনে হতেই আমার হাসি নিমিষেই মিলিয়ে যায়৷ উনার থেকে ছাড়া পাবার চেষ্টা করি৷ উনি আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বললেন,

–‘ছোট বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে না থেকে কেও একজন প্রশ্ন করতেই পারে৷ আমি আজ তার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত৷ সে এই বাসেই সব প্রশ্নের ঝুড়ি শেষ করবে সেটা আগে কথা দিতে হবে৷ বাস থামার পরে সে একটাও প্রশ্ন করলে তাকে সাঁপ ধরিয়ে দিবো সেই ছোটবেলার মতো৷’

আজ তাকে খুব আদুরে লাগছে আমার কাছে৷ ইচ্ছা হচ্ছে তার নামানো গালটা একটু টেনে দিই৷ সেই আশা বাদ দিয়ে আমি অন্য সব প্রশ্ন বাদ দিয়ে ঠোঁট উল্টে বললাম,

–‘ওই মেয়েটা কে?যে বাসস্ট্যান্ডে আপনার সাথে ক্লোজ হয়ে কথা বলছিলো৷’

উনি হেসে উঠে আমার মাথায় আলতো ধাক্কা দিয়ে বললেন,

–‘তুই বোকা আস্ত একটা বোকা’ই থেকে যাবি৷ সেটা আমার আন্টি ছিলো গর্দভ৷ তোর ফুঁপির মামার মেয়ে ছিলো৷ তুই চিনিস না?সিরিয়াসলি!এই এক জ্বালা নানা-দাদা জন্য নিজের সমান মেয়েরা আন্টি লাগে৷ আর তোর মতো হাদারাম তাদের নিয়ে উল্টাপাল্টা মিনিং বের করে৷’

উনার কথা শুনে আন্টির কথা মনে পড়লো আমার৷ ইশ!রুপা আন্টিকে না চিনেই কতো কিছু ভেবেছি৷

–‘আর কিছু?’

–‘হুম অনেক কিছু জানার আছে৷’

–‘তোর কাছে আর বাইশ মিনিট আছে!যা বলার জলদি এই বাইশ মিনিটের মধ্যে বলে শেষ কর৷’ উনি ঘড়ি দেখে টাইম সেট করতেই আমি আওড়ালাম দুইয়ে দুই বাইশ!আবার দুই?

–‘ one minute have gone.’

উনার কথা শুনে তাড়াহুড়ো করে বললাম,

–‘আমার সাথে আপনার রেজিষ্ট্রি হয় নি তাহলে মিথ্যা কেন বললেন?’

–‘ রেজিষ্ট্রি তোর বিয়ের দুদিন আগেই হয়ে গেছে৷’ উনি বাসের সিটে আবার গাঁ এলিয়ে দিলেন৷ আমি অবাক হয়ে বললাম,’মানে?’

উনি আমাকে আবার জড়িয়ে ধরে বললেন,
–‘তোর ভার্সিটির রেজিষ্ট্রেশনের জন্য যে সাইন দিয়েছিলি ওইটা বিয়ের রেজিষ্ট্রেশন ছিলো৷’

আমি বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছি৷ উনি গা দুলিয়ে হেসে উঠলেন৷ উনি চোখ বন্ধ করে বললেন,

–‘ভাব নীতু ভাব!ভাবার জন্য তোর কাছে দুইমিনিট আছে৷তারপর আরো কিছু বলার থাকলে জলদি বলবি৷’

আমি ভাবতে ভাবতে উনার বুকের উপর মাথা রাখি অজান্তেই৷ আর উনি আরেকটা হাত আলতো করে আমার মাথায় রাখে৷
বিয়ের আগের দিন লাস্ট রেজিষ্ট্রেশনের ডেট ছিলো৷ আমি তাড়াহুড়ো করে বের হতেই দেখি কাব্য ভাইয়া বাসার সামনে হাতে হাত গুজে নিজের স্টাইলে দাঁড়িয়ে আছেন৷ আমি উনায় দেখে কেমন আছে জিজ্ঞাসা করে পাশ কেটে সরে যেতে চাইলে উনি গম্ভীর মুখে বলেন,

–‘তোর ভার্সিটি আজ অফ৷ এমাজউদ্দীন স্যার তার বাসার অপজিটে গিয়ে সাইন করে দিয়ে আসতে বলেছ৷’

আমি উনার কথা অনায়াসে বিশ্বাস করে নেই৷ কারণ আমাদের সবার দৃঢ় বিশ্বাস,কাব্য দ্যা গ্রেট ব্রিলিয়ান্ট ট্যালেন্টেট মানুষ যা বলে তাই সত্যি৷ উনি আমাকে তার সাথে করেই নিয়ে যায়৷ যেতেই একজন মানুষ এসে বলে তাকে স্যার পাঠিয়েছে সাইন করে নিয়ে যেতে৷ আর আমিও তাড়াহুড়ো করে না দেখেই সাইন করে দেই৷

আমি আবারও একধাপ অবাক হয়ে যাই৷ নীতু তোর জীবন তুই শেষ করেছিস৷ প্রচুর বোকা নীতু তুই প্রচুর বোকা৷ আমি উনার থেকে মাথা উঠিয়ে কেঁদে দিয়ে বললাম,

–‘এইটা ঘোর অন্যায় কাব্য ভাইয়া!আমাকে আপনি বোকা বানিয়েছেন৷’

উনি চোখ খুলে তাকিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন,

–‘তোর বাপ মানে আমার মামু কথা শুনলে এমন স্টেপ নিতে কেও চাইতো না৷ আর তোকে আমি বোকা বানিয়েছি দেখে সবাই পারবে নাকি?ইউ আর মাই স্ট্রোং লেডি৷’

–‘একদম ভালো হয় নি কাব্য ভাইয়া৷আপনি অন্যায় করেছেন৷’

–‘একদম চুপ৷’উনি আমায় জোরে এক ধমক দিতেই আশেপাশের মানুষ আমাদের দিকে তাকালেন৷ আর উনি সবার দিকে অগ্নি চোখে তাকাতেই সবাই ঘুরে যায়৷ তার ধমক শুনে কান্নার পরিমাণ বেড়ে যায় আমার৷ উনি মিষ্টি হেসে আমাকে বললেন,

–‘আর একফোটা পানি পড়লে তোর চোখ টেনে তুলে ফেলবো৷ আমি তোকে এইজন্যই বলতে চাইনি৷ আর তোর কাছে আমি অধিকার চেয়েছি?ওইটা জাস্ট একটা নাটক ছিলো প্রমাণ দেওয়ার জন্য৷’

উনার মিষ্টি মুখে চিবানো কথা শুনে কান্না থেমে যায় আমার৷ উনি আবার ঘড়ি দেখে বলেন,

–‘তোর আজকের সময় শেষ নীতু৷ এমন একটা দিন আসবে যেখানে কোনো ধরা বাধা সময় থাকবে না তোর আর আমার মাঝে৷ সেইদিন টার অপেক্ষা কর৷ তোর মনের মাঝে হাজারো প্রশ্নের উত্তর মিলবে একদিন৷ আর অপেক্ষার ফল সব সময় মিষ্টি হয়৷’

উনার কথা শুনে তাকিয়ে আছি আমি৷ উনি আমার কপালে উষ্ণ পরশ দিতেই আমি চমকে উঠি৷ আবার উনি কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলেন….
চলবে…..

#রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ১১
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)
কাব্য ভাইয়া আমাকে কোলে উঠিয়ে হাঁটু সমান কাঁদা আর পানির মধ্যে দিয়ে অনায়াসে হেঁটে চলেছেন৷ উনার মুখে অমায়িক হাসি৷ আমি একহাতে উনার গলা আঁকড়ে ধরে লজ্জায় মরে যাচ্ছি৷ আমার জুতো ছিড়ে গেছে বাস থেকে নামার পর আর পিছন থেকে কিছুতে আটকে আমার জামার পিছনে কিছুটা অংশ ছিড়ে গেছে৷ কাব্য ভাইয়া কিছু না বলেই সবার সামনে কোলে উঠিয়ে হাঁটা ধরে৷ আশেপাশের মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে৷ এখনো সূর্য পশ্চিম আকাশে উঁকি দিয়ে আছে৷ তার হালকা কমলা রাঙা আলোক রশ্মি কাব্য ভাইয়ার মুখের উপর পড়ছে৷ উনার চোখে মুখে উপচে পড়া খুশির ঝলক৷ এখন তাকে দুনিয়ার সবচেয়ে ইনোসেন্ট পার্সোন লাগছে৷ এই কাব্য ভাইয়াকে আমি একদম চিনি না৷ তবে তার মতো অসভ্য দুনিয়ায় আর কেও আছে কিনা সন্দেহ৷ তখন বাসে আমার দিকে ঝুঁকে বলেছিলেন,

–‘তোর আর আমার বাসর কিন্তু হয় নি নীতু! যদি তোর বিয়ে নিয়ে ডাউট থাকে তাহলে এইজায়গার কোনো কাজী অফিসে গিয়ে আবার রেজিস্ট্রি করে ফেলি কি বলিস? তারপর এই রাতারগুল ফরেস্টে আমাদের পানিময় বাসর হবে৷’

ছিঃ!উনি কতোটা নির্লজ্জ ভাবতেই কেমন লাগে৷ আমি বিরবির করে বললাম,

–‘আপনি প্রচুর অসভ্য কাব্য ভাই৷’

উনি আমার দিকে দ্রুকুচকে তাকিয়ে বললেন,
–‘কিছু বললি!’

আমি উনার কথা শুনে দুদিকে মাথা দোলালাম৷ যার অর্থ না৷ বাসা থেকে বের হয়েছিলাম আড়াইটার দিকে৷ এখন বাজে সাড়ে চারটা৷ একটু পর সন্ধ্যা নামবে আর এই সময় উনি ঘুরবেন৷ উনায় বোধহয় প্রথম দেখলাম এই সন্ধ্যা সময় ঘুরবেন রাতারগুলে৷ সিলেটে থাকলেও বাবা কখনো কোথাও ঘুরতে যেতে দেয় নি৷ একমাএ আমি নামক প্রাণী যে কিনা সিলেটে থেকেও কোনো জায়গা চিনি না৷ আর দেশের বাহিরের মানুষ সমস্ত কিছু ঘুরে দুনিয়া উদ্ধার করে ফেলছে৷ এইসব ভেবে নিজেকে ভীনগ্রহের প্রাণী মনে হচ্ছে৷

–‘তোর মতো আলুর বস্তাকে কোলে উঠিয়ে আমার অর্ধেক জীবন শেষ করে ফেলেছি আমি৷ এইখান থেকে ফেরার পর আর বাঁচবো কিনা সন্দেহ৷’

উনার অপমানের সুরে কথা শুনে আমি তীক্ষ্ণ ভাবে বললাম,

–‘আপনাকে কোলে উঠাতে বলেছি আমি?আমাকে নিজে কোলে উঠিয়ে আবার কথা শুনাচ্ছেন৷ এইটা ঘোর অন্যায়৷ আমাকে ছাড়ুন আমি নামবো৷’

–‘এসে পড়ার পর নামতে সবাই চায়৷’

উনি আমাকে নামিয়ে দিয়ে নিজের ব্লেজার খুলে পড়িয়ে দিলেন যাতে ছেড়া অংশ দেখা না যায়। উনি সামনে এক পাঁ এগিয়ে আবার ঘুরে আমার ব্যাগ উনার হাতে নিয়ে বললেন,

–‘জাস্ট রিডিকুলাউস!এতো বড় মেয়ে সে তার ব্যাগে তালা লাগিয়ে চাবি বাসায় ফেলে রেখে এসেছে৷ তোর বুদ্ধি হাটুর নিচে বললেও ভুল হবে৷’

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উনি নৌকা ভাড়া করতে এগিয়ে গেলেন৷ আমি উনার পিছু পিছু যেতেই কিছু মেয়ে এসে ঘিরে ধরে আমায়৷ এইখানের স্থানীয় হবে হয়তো৷ আমার সামনে এসে আমার বয়সী এক মেয়ে বলে,

–‘আপনার কি হয় উনি৷’

আমি অবাক চোখে কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে উনাদের ইশারায় বলি তার কথা বলছে কিনা৷ মেয়েগুলো হই হুল্লোড় করে হ্যাঁ বলতেই আমার মুখে হাসি ফুঁটে উঠে। আমি ভাব নিয়ে বললাম,

–‘আপনারা জেনে কি করবেন?’

একটা মেয়ে মন খারাপ করে বলল,

–‘বলেন না আপু! উনায় দেখে আমরা প্রত্যেকে ক্রাশ খেয়েছি৷ যদিও আমি প্রথম দেখায় একপ্রকার ভালোবেসে ফেলেছি৷’

মেয়েটার কথা শুনে বড্ড মায়া লাগলো আমার তবে মেয়েটার জন্য নয় কাব্য ভাইয়ার জন্য৷ আমি মুখে বিস্তর হাসি টেনে বললাম,

–‘ওও ওইটা! সে আমার বডিগার্ড৷ কিন্তু মাথার তার ছিড়া৷ কি আর বলবো আপু এতো সুন্দর একটা ছেলে কাজ টাজ পায় না দেখে আমার বাবা আমার ব্যাগ উঠানোর জন্য রেখে দিয়েছে৷ জানেন আপু,ছেলেটার না বিয়ে হচ্ছে না৷ বলেন তো কেন?’

–‘কেন?’

আমার কথা শুনে সবাই কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে একসাথে বলে উঠলো৷ উনাদের আগ্রহ দেখে প্রচুর হাসি পেলো আমার৷ হাসলে একদম চলবে না৷ তাই নিজেকে সামলিয়ে দুঃখী দুঃখী ফেস করে বললাম,

–‘একটু পর পর উনার উপর জ্বীন ভর করে৷ আর তখন সামনে যাকে পায় উঠিয়ে আছাড় মারেন৷’

মেয়েগুলো আমার কথা শুনে ভয় পেয়েছে মনে হচ্ছে৷ আমি আরো উৎসাহ নিয়ে বললাম,

–‘তারপর পাগলের মতো আচরণ করে আর কামড়ে দেয়….
–‘তারপর?’
–‘তারপর…..

কাব্য ভাইয়া মেয়েগুলো পিছনে মুখে হাসি টেনে রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে৷ উনার কন্ঠ শুনে আমি ভয়ে চুপসে গেলাম৷ আজ তোর শেষ দিন নীতু৷ এই কাব্য নামক মানুষটা তোকে এই রাতারগুলের স্বচ্ছ পানিতে চুবিয়ে মারবে৷ উনি আমার পাশে এসে দাঁড়াতেই মেয়ে গুলো জোরপূর্বক হেসে চলে যেতে নিলেই কাব্য ভাইয়া বললেন,

–‘তারপর শুনে যাবেন না আপনারা?’

মেয়েগুলোর একজন না বলতেই উনি আমার হাত ধরে বললেন,

–‘এইটা হচ্ছে আমার বউ৷ আর এর মাথায় তীব্র সমস্যা আছে৷ উল্টাপাল্টা বলে আর কি৷ একে পাবনা থেকে নিয়ে এসেছি কয়েকদিন আগে৷ আর তার প্রধান কাজ হলো আমার নামে উল্টাপাল্টা কথা বলা৷’

মেয়েগুলো বিস্ফোরিত চোখে আমাদের দুইজনের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের জাঁলে নিজেই ফেঁসেছি। আমি কাঁচুমাচু করে উনার পিছনে গিয়ে দাঁড়াই। ইশ! এতোগুলো মেয়ের সামনে ইজ্জতের ফালুদা হয়ে গেলো। মেয়ে গুলো যাওয়ার জন্য আবার পাঁ বাড়াতেই উনি জোরে বলেন,

–‘হেই গার্লস,

উনারা আবার পিঁছু ঘুরতেই উনি একগাল হেসে বলেন,

–‘আপনাদের এখানে কোনো ভালো রিসোর্ট আছে থাকার জন্য? এই পাগলটাকে নিয়ে রাতে কোথায় থাকবো বলেন তো। কারণ পাগলের পাগলামী রাতে বাড়ে।’

উনার চোখে মুখে আতংকের ছাঁপ।এইবার বেশী বেশী হচ্ছে। আমি উনার হাত ধরে একটানে নিয়ে আসলাম ওই মেয়েগুলোর সামনে থেকে। উনি উল্টে আমার হাত ধরে হেঁচকা টান মেরে চোখ মেরে বললেন,

–‘কেসা লাগা বেবি!’

উনার চোখের দিকে তাকিয়ে স্থির ভাবে বললাম,

–‘একদম বাজে,আপনার মতোই বাজে।’
–‘বাজে…

উনি আমার দিকে মুখ এগিয়ে আনতেই পিছন থেকে কারো ডাকে থমকে সরে মুচকি হেসে বললেন,

–‘শোধে আসলে সব উসুল করবো! ওয়েট কর ঘড়ি ধরে।’
___________________________

সবুজ পানির উপর নীল আকাশ। উহু! নীল নয় হলদে আর কমলা রঙের আকাশ। সারি সারি গাছের মেলা। নৌকার চলার শব্দ।অপরুপ সৌন্দর্য। চোখের ভাষায় বললেও সেই সোয়াম্প ফরেস্টের অপরুপ মহিমা কম পড়বে। চারদিকে বিভিন্ন গাছ পানির উপর মাথা চারা দিয়ে দাড়িয়ে আছে। কোথায় যেন একটা ডাহুক ডেকে চলেছে ক্ষীণ স্বরে।বৈঠার শব্দ আর ডাহুকের শব্দের অন্য এক সুর তুলছে এই নিস্তব্ধ পুরি তে । আমি ঘোর মাখা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছি। সব যেন সবুজের খেলা। চির সবুজ! সবুজ বুঝি এতো সুন্দর হয়?রাতারগুল না আসলে জানতেই পারতাম না। আমার চোখের কোণায় জ্বল এসে জমা হতে শুরু করে। এতো সুন্দর আমি আগে কখনো দেখি নি। হ্ঠাৎ চোখের পাশে কারো হাতের ছোয়া পেতেই টুপ করে সেই পানি তার হাতের উপর পড়ে। কাব্য ভাইয়া সেই পানিটুকু সবুজ এই জ্বলের প্রান্তরে ভাসিয়ে দেয়। আমাকে টেনে তার কাছে নিয়ে চারদিকে তাকিয়ে বললেন,

–‘এই সৌন্দর্য একা অনুভব করতে হয়!নিস্তব্দ ভাবে। যেখানে কোনো ক্যামেরা আর মানুষের শব্দ থাকবে না।’

আমি উনার হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,

–‘সব এতো সুন্দর কেন কাব্য ভাইয়া।’

–‘তোর চোখ সুন্দর তাই সব কিছু তোর কাছে সুন্দর লাগে।’

আমি উনার দিকে ঘুরে ছলছল চোখে তাকিয়ে বললাম,
–‘উহু! প্রকৃতি সুন্দর।’

উনি আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলেন। আজ ছুটোছুটির কোনো তাড়া নেই আমার। ছাউনির ওইপাশে মাঝি নৌকা চালাচ্ছেন। তাই এইপাশের কিছু উনি দেখতে পাবেন না।

–‘এই সন্ধ্যা তোর আর আমার নীতু!’
–‘হু’
–‘হু,কি?’
–‘এই সন্ধ্যা আপনার আর আমার।’

উনি চলন্ত নৌকার মাঝে উঠে দাঁড়িয়ে আমার মুখোমুখি আবার বসে বললেন,

–‘এই সন্ধ্যার বুকে তোর আর আমার নাম লিখি ,আমার অক্ষরে?’

আমার মনযোগ তখনো পানি আর গাছের ভেতর আটকে আছে।তার দিকে না তাকিয়ে বললাম,
–‘হুম লিখুন!’

উনি আমার মুখের উপর ফুঁ দিতেই আমার দৃষ্টি উনার দিকে যায়। আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,

–‘ডিস্টার্ব করছেন কে…….

আর কিছু বলার আগেই উনি আমার ঠোঁট জোড়া তার ঠোঁটে আটকে ফেললেন। আমি চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছি। উনার হাত দিয়ে সরাতে চাইলে উনি আমার চুলের পিছনে হাত গুজে দেন।
অনেকটা সময় পর আমায় ছেড়ে দিয়ে বললেন,

–‘তোর আর আমার প্র‍থম অক্ষরের সাক্ষী এই রাতারগুল। জানি না আর কবে তোকে কাছে পাবো!তাই এইটা আমার খুব করে প্রয়োজন ছিলো।প্রত্যেকটা দিন আজকের এই সন্ধ্যা সাক্ষী হয়ে থাকবে তোর আর আমার নামে। আমার অনুপস্থিতি তোকে মনে করাবে আজকের সন্ধ্যা।’

আমি উনার দিকে একনজরে তাকিয়ে আছি। কি থেকে কি হলো সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আমি ঠোঁটে হাত দিতেই উনি হাত সরিয়ে বলেন,

–‘আজ যা হচ্ছে হতে দে নীতু।’

আমি উনার হাত সরিয়ে দিয়ে রেগে বললাম,

–‘কেন হতে দিবো?বলুন কেন!’
উনি আমার দুই বাহু ধরে বললেন,
–‘কারণ…

চলবে…..
ভুল ক্রটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে